হাসপাতালেই ১৪ বছর by আব্দুল আলীম
তখন
ওসমান গনির বয়স মাত্র ১২ বছর। সে সময়ের একটি দুর্ঘটনা তার জীবনকে বদলে
দেয়। আর এই বদলে যাওয়া জীবনের কেটে গেছে ১৪টি বছর। এখন গনির বয়স ২৬ বছর।
শিশু থেকে এখন যুবক। কিভাবে কৈশোর কেটেছে গনি নিজেই জানে না। ১৪ বছর ধরেই
আছেন হাসপাতালে। নিচ্ছেন চিকিৎসা। হাফ প্যান্ট পরে হাসপাতালে এসে এখন
দাড়ি-গোঁফ সবই উঠেছে। পরিবর্তন হয়েছে চেহারারও। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হয়ে
ওঠেননি তিনি। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ওসমান গনির বাড়ি। ঢাকা মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের তিন তলার প্রায় সব
রোগীর কাছেই পরিচিত মুখ। ডাক্তার এবং স্টাফরাও গনিকে চেনেন এক নামে।
প্রশ্ন হলো কি সেই দুর্ঘটনা- যার জন্য তাকে ১৪ বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ওসমান গনি জানান, ২০০১ সালের কথা। তার বয়স তখন ১২ বছর। চট্টগ্রাম থেকে রেলগাড়ি সবে মাত্র ছেড়েছে। দৌড়ে উঠতে গিয়ে পা আটকে যায় দরজার আংটায়। চাকার ঘষা ও চাকার উপরের লোহার সঙ্গে বাড়ি খেতে থাকে তার দুই পা। মুহূর্তেই দুই পায়ের তালু থেকে হাঁটু পর্যন্ত মাংস উড়ে যায়। কিছুদূর গিয়ে প্যান্ট ছিঁড়ে রেল লাইনে পড়ে যান তিনি। ট্রেন চলে যায়। রেললাইনের পাশের মানুষজন মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ৯ মাস চিকিৎসার পর পায়ে অপারেশন করা হয়। উরুর একাংশ থেকে মাংস কেটে খুবলে যাওয়া অংশে লাগানো হয়। যা এখনও পুরোপুরি ভালো হয়নি। এখনও মাঝে মধ্যে সার্জারি করে বিভিন্ন অংশের মাংস কেটে ক্ষতস্থানে লাগানো হয়। তার দুই পায়ের ব্যান্ডেজবিহীন অংশ লক্ষ্য করে দেখা যায়, হাতের মতো দুটি পা চিকন। কোথাও কোন মাংস নেই। পায়ের তালুতে কোন চামড়া নেই। সরাসরি হাড় দেখা যায়। সার্জারি করে পায়ের এক অংশের মাংস কেটে গোড়ালিতে লাগানো হয়েছে। তবে তা এখনও পুরোপুরি জোড়া লাগেনি।
অভাব অনটনের সংসার। চিকিৎসার খরচ যোগানো কষ্টের। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও অর্থাভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। সে সময় চিকিৎসকরা তাকে রিলিজ দেয়। বাড়িতে গিয়ে নিজে নিজে ড্রেসিং করার পরামর্শ দেয়। প্রথমবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সার্জারি করে বড়িতে গিয়ে ভালোই কাটছিল। ৩ মাস পর তার ওই ক্ষত স্থানে ইনফেকশন দেখা দেয়। হাসপাতালের শরণাপন্ন হলে অবস্থা খারাপ দেখে আবার সার্জারি করে। এরপর কেটে যায় আরও ৯ মাস। পায়ের উপরের অংশ থেকে চামড়া কেটে গোড়ালির ক্ষতস্থানে আবার স্কিন সার্জারি করে। একসময় আবার তাকে রিলিজ দেয়া হয়। ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ড্রেসিং করতে থাকে। একসময় দেখে ঘঁষতে ঘঁষতে সার্জারি করা চামড়া ওঠে যায়। ডাক্তার দেখানোর পর পরামর্শ দেয় সয়ে সয়ে আবারও ড্রেসিং করতে। তখন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল যেন তার বাড়ি হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে হাসপাতালে দারোয়ানি শুরু করে। সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গেটে দাঁড়িয়ে বসে থাকা ছিল তার কাজ। হাসপাতালে থাকে। হাসপাতালের খাবার খায়। সেখানেই দারোয়ানি করে। এখানে আসা রোগীরা সুস্থ হয়ে চলে যাওয়ার সময় যে বকশিশ দিয়ে যায় সেটা দিয়ে চলে যায় তার।
ওসমান গনি বলেন, এভাবে চলতে চলতে আবার পায়ের ঘা বেড়ে যায়। হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে নিজেই ড্রেসিং করতে থাকি। পরে আমার মা চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী মেডিক্যালে নিয়ে যান। সেখানেও একই চিকিৎসা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। শরীরের রক্ত কমে যায়। রক্ত দেয়া ও পরীক্ষার জন্য ডাক্তার রক্তের গ্রুপ জানতে চায়। তখন রক্তের গ্রুপ বলতে না পারায় আর রক্ত দেয়া হয়নি। ডাক্তাররাও নিজেদের কাছে না রেখে ঢাকা মেডিক্যালে আসার পরামর্শ দেয়। ইতিমধ্যে আমার দুর্ঘটনার ৮ বছর পার হয়ে গেছে। ২০০৯ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসলে শ্যামলী পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওখানে ছিলাম ৪ মাস। হাসপাতালের খাবার ভালো না। এছাড়া, বাড়িতে দিনে ৩/৪ বার খেতাম। এখানে দুইবার খাবার দেয়া হতো। তাও আবার ঠিক মতো খেতে পারতাম না। হাসপাতালে থেকে না খেয়ে আমার শরীর আরও কমে যায়। তবে পঙ্গু হাসপাতাল থেকে রক্ত পরীক্ষা করে আমার রোগ ধরা পড়ে। ওই হাসপাতালের ডাক্তার বলেছেন থেলাসিমিয়া হয়েছে। তিনি বলেন, থেলাসিমিয়া কোন খারাপ রোগ না। তবে ২/৩ মাস পর পর রক্ত দিতে হবে। এভাবে চলতে থাকে রক্ত দেয়া। এর পর শরীরের কিছুটা উন্নতি হতে থাকে। এখন ৪/৫ মাস পর পর রক্ত দিতে হয়।
পঙ্গু হাসপাতালে ১ বছর থাকার পর ২০১০ সালে আবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঠানো হয়। এখানে এসে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলতে থাকে। আগের মতো ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করাই ছিল কাজ। এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে প্রথম সার্জারি করে। উরু থেকে চামড়া নিয়ে পায়ের গোড়ালিতে লাগানো হয়। ৫ দিন পর খুলে ভালো দেখে ছুটি দিয়ে দেয়। বাড়ি যাওয়ার ২ সপ্তাহ পর দেখা যায়- যে চামড়া লাগানো হয়েছিল তা ফুটো ফুটো হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আবার হাসপাতালে চলে আসি। এখানকার প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. সুমি ম্যাডামের অধীনে চিকিৎসা নিতে থাকি। এবার ভর্তি হওয়ার পর দেখা যায় ৩ মাস পার হলেও ক্ষতস্থানে লাগানো চামড়া লাল হয় না। তখন পায়ের সার্জারি করা জায়গার চামড়া লাল করার জন্য ব্যাগ মেশিন লাগানো হয়। দুই সপ্তাহ পর চামড়া লাল হয়। পরে ঈদ চলে আসলে দুই সপ্তাহের ছুটিতে বাড়ি যাই। আবার ছুটি শেষে হাসপাতালে আসি। অপারেশনের ডেট হয়। কিন্তু সিরিয়াল পাওয়া যায় না। তাই দেরি হয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে ওমিওপ্রাজল এবং প্যারাসিটামল দেয়া হয়। বাকি ওষুধ কিনে নিতে হয়। ওসমান গনি জানায়, আকিজ গ্রুপের একটা ফান্ড আছে। সেখান থেকে দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য করা হয়। এই হাসপাতালের ডা. শাহিনের অধীনে আমি চিকিৎসা নিচ্ছি। তিনি আমাকে আকিজ গ্রুপের অফিসে যেতে বলেন। ৩৭, দিলকুশা আকিজ গ্রুপের অফিসে গিয়ে কাগজ দেখালে সেখান থেকে টাকা দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করা হয়। প্রথমে আমাকে ৪ হাজার টাকা দেয়। পরে কয়েকবার সার্জারির সময় ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত সহযোগিতা দিয়েছে। এভাবেই চিকিৎসায় চিকিৎসায় কেটে গেছে ১৪টি বছর।
৪ ভাই ও এক বোনের মধ্যে ওসমান গনি দুই নম্বর। ভাইবোন কারো এখনও বিয়ে হয়নি। বাবা চট্টগ্রাম বন্দরে সরকারি লেবার ছিল। এখন অবসরে আছেন। অভাবের সংসারে উন্নত চিকিৎসা তো দূরের কথা বাড়ি থেকে ঠিকমতো খবরই নিতে পারে না। এখন ওসমান খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কিছুটা হাঁটতে পারে। এভাবেই এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করেছে গনি। হাসপাতালই এখন লোকমানের ঠিকানা। নিজে যেমন চিকিৎসা নিচ্ছে তেমনি প্লাস্টিক সার্জারি রোগীদের ড্রেসিং, সেলাইনের ক্যানেলা লাগানো থেকে শুরু করে ইনজেক্শন দেয়া সবই এখন নিজেই করতে পারে। মাঝে মধ্যে হাসপাতালে রোগীদের বিশেষ প্রয়োজনে নার্সদের পাওয়া না গেলে সে এসব সেবা দেয়।
প্রশ্ন হলো কি সেই দুর্ঘটনা- যার জন্য তাকে ১৪ বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ওসমান গনি জানান, ২০০১ সালের কথা। তার বয়স তখন ১২ বছর। চট্টগ্রাম থেকে রেলগাড়ি সবে মাত্র ছেড়েছে। দৌড়ে উঠতে গিয়ে পা আটকে যায় দরজার আংটায়। চাকার ঘষা ও চাকার উপরের লোহার সঙ্গে বাড়ি খেতে থাকে তার দুই পা। মুহূর্তেই দুই পায়ের তালু থেকে হাঁটু পর্যন্ত মাংস উড়ে যায়। কিছুদূর গিয়ে প্যান্ট ছিঁড়ে রেল লাইনে পড়ে যান তিনি। ট্রেন চলে যায়। রেললাইনের পাশের মানুষজন মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ৯ মাস চিকিৎসার পর পায়ে অপারেশন করা হয়। উরুর একাংশ থেকে মাংস কেটে খুবলে যাওয়া অংশে লাগানো হয়। যা এখনও পুরোপুরি ভালো হয়নি। এখনও মাঝে মধ্যে সার্জারি করে বিভিন্ন অংশের মাংস কেটে ক্ষতস্থানে লাগানো হয়। তার দুই পায়ের ব্যান্ডেজবিহীন অংশ লক্ষ্য করে দেখা যায়, হাতের মতো দুটি পা চিকন। কোথাও কোন মাংস নেই। পায়ের তালুতে কোন চামড়া নেই। সরাসরি হাড় দেখা যায়। সার্জারি করে পায়ের এক অংশের মাংস কেটে গোড়ালিতে লাগানো হয়েছে। তবে তা এখনও পুরোপুরি জোড়া লাগেনি।
অভাব অনটনের সংসার। চিকিৎসার খরচ যোগানো কষ্টের। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও অর্থাভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। সে সময় চিকিৎসকরা তাকে রিলিজ দেয়। বাড়িতে গিয়ে নিজে নিজে ড্রেসিং করার পরামর্শ দেয়। প্রথমবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সার্জারি করে বড়িতে গিয়ে ভালোই কাটছিল। ৩ মাস পর তার ওই ক্ষত স্থানে ইনফেকশন দেখা দেয়। হাসপাতালের শরণাপন্ন হলে অবস্থা খারাপ দেখে আবার সার্জারি করে। এরপর কেটে যায় আরও ৯ মাস। পায়ের উপরের অংশ থেকে চামড়া কেটে গোড়ালির ক্ষতস্থানে আবার স্কিন সার্জারি করে। একসময় আবার তাকে রিলিজ দেয়া হয়। ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ড্রেসিং করতে থাকে। একসময় দেখে ঘঁষতে ঘঁষতে সার্জারি করা চামড়া ওঠে যায়। ডাক্তার দেখানোর পর পরামর্শ দেয় সয়ে সয়ে আবারও ড্রেসিং করতে। তখন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল যেন তার বাড়ি হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে হাসপাতালে দারোয়ানি শুরু করে। সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গেটে দাঁড়িয়ে বসে থাকা ছিল তার কাজ। হাসপাতালে থাকে। হাসপাতালের খাবার খায়। সেখানেই দারোয়ানি করে। এখানে আসা রোগীরা সুস্থ হয়ে চলে যাওয়ার সময় যে বকশিশ দিয়ে যায় সেটা দিয়ে চলে যায় তার।
ওসমান গনি বলেন, এভাবে চলতে চলতে আবার পায়ের ঘা বেড়ে যায়। হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে নিজেই ড্রেসিং করতে থাকি। পরে আমার মা চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী মেডিক্যালে নিয়ে যান। সেখানেও একই চিকিৎসা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। শরীরের রক্ত কমে যায়। রক্ত দেয়া ও পরীক্ষার জন্য ডাক্তার রক্তের গ্রুপ জানতে চায়। তখন রক্তের গ্রুপ বলতে না পারায় আর রক্ত দেয়া হয়নি। ডাক্তাররাও নিজেদের কাছে না রেখে ঢাকা মেডিক্যালে আসার পরামর্শ দেয়। ইতিমধ্যে আমার দুর্ঘটনার ৮ বছর পার হয়ে গেছে। ২০০৯ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসলে শ্যামলী পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওখানে ছিলাম ৪ মাস। হাসপাতালের খাবার ভালো না। এছাড়া, বাড়িতে দিনে ৩/৪ বার খেতাম। এখানে দুইবার খাবার দেয়া হতো। তাও আবার ঠিক মতো খেতে পারতাম না। হাসপাতালে থেকে না খেয়ে আমার শরীর আরও কমে যায়। তবে পঙ্গু হাসপাতাল থেকে রক্ত পরীক্ষা করে আমার রোগ ধরা পড়ে। ওই হাসপাতালের ডাক্তার বলেছেন থেলাসিমিয়া হয়েছে। তিনি বলেন, থেলাসিমিয়া কোন খারাপ রোগ না। তবে ২/৩ মাস পর পর রক্ত দিতে হবে। এভাবে চলতে থাকে রক্ত দেয়া। এর পর শরীরের কিছুটা উন্নতি হতে থাকে। এখন ৪/৫ মাস পর পর রক্ত দিতে হয়।
পঙ্গু হাসপাতালে ১ বছর থাকার পর ২০১০ সালে আবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঠানো হয়। এখানে এসে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলতে থাকে। আগের মতো ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করাই ছিল কাজ। এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে প্রথম সার্জারি করে। উরু থেকে চামড়া নিয়ে পায়ের গোড়ালিতে লাগানো হয়। ৫ দিন পর খুলে ভালো দেখে ছুটি দিয়ে দেয়। বাড়ি যাওয়ার ২ সপ্তাহ পর দেখা যায়- যে চামড়া লাগানো হয়েছিল তা ফুটো ফুটো হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আবার হাসপাতালে চলে আসি। এখানকার প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. সুমি ম্যাডামের অধীনে চিকিৎসা নিতে থাকি। এবার ভর্তি হওয়ার পর দেখা যায় ৩ মাস পার হলেও ক্ষতস্থানে লাগানো চামড়া লাল হয় না। তখন পায়ের সার্জারি করা জায়গার চামড়া লাল করার জন্য ব্যাগ মেশিন লাগানো হয়। দুই সপ্তাহ পর চামড়া লাল হয়। পরে ঈদ চলে আসলে দুই সপ্তাহের ছুটিতে বাড়ি যাই। আবার ছুটি শেষে হাসপাতালে আসি। অপারেশনের ডেট হয়। কিন্তু সিরিয়াল পাওয়া যায় না। তাই দেরি হয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে ওমিওপ্রাজল এবং প্যারাসিটামল দেয়া হয়। বাকি ওষুধ কিনে নিতে হয়। ওসমান গনি জানায়, আকিজ গ্রুপের একটা ফান্ড আছে। সেখান থেকে দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য করা হয়। এই হাসপাতালের ডা. শাহিনের অধীনে আমি চিকিৎসা নিচ্ছি। তিনি আমাকে আকিজ গ্রুপের অফিসে যেতে বলেন। ৩৭, দিলকুশা আকিজ গ্রুপের অফিসে গিয়ে কাগজ দেখালে সেখান থেকে টাকা দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করা হয়। প্রথমে আমাকে ৪ হাজার টাকা দেয়। পরে কয়েকবার সার্জারির সময় ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত সহযোগিতা দিয়েছে। এভাবেই চিকিৎসায় চিকিৎসায় কেটে গেছে ১৪টি বছর।
৪ ভাই ও এক বোনের মধ্যে ওসমান গনি দুই নম্বর। ভাইবোন কারো এখনও বিয়ে হয়নি। বাবা চট্টগ্রাম বন্দরে সরকারি লেবার ছিল। এখন অবসরে আছেন। অভাবের সংসারে উন্নত চিকিৎসা তো দূরের কথা বাড়ি থেকে ঠিকমতো খবরই নিতে পারে না। এখন ওসমান খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কিছুটা হাঁটতে পারে। এভাবেই এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করেছে গনি। হাসপাতালই এখন লোকমানের ঠিকানা। নিজে যেমন চিকিৎসা নিচ্ছে তেমনি প্লাস্টিক সার্জারি রোগীদের ড্রেসিং, সেলাইনের ক্যানেলা লাগানো থেকে শুরু করে ইনজেক্শন দেয়া সবই এখন নিজেই করতে পারে। মাঝে মধ্যে হাসপাতালে রোগীদের বিশেষ প্রয়োজনে নার্সদের পাওয়া না গেলে সে এসব সেবা দেয়।
No comments