কেন পরবাসে সর্বহারার দল?
ইউরোপগামী শরণার্থীর ঢল ও ভূমধ্যসাগরে তাদের ‘মৃত্যুর মহড়া’ আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে সারা দুনিয়ায়। কিন্তু কারা এ ভিটেমাটি হারা অসহায় শরণার্থীদল? কি কারণে স্বদেশ ছেড়ে পরবাসে পালাচ্ছে? কেনই বা ডুবে মরছে ভূমধ্যসাগরের নোনা জলে? প্রশ্নগুলোর জবাব হয়তো অনেকেরই জানা নেই। জানা নেই প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ইউরোপে পাড়ি জমানো এ মানুষগুলো কি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। জানা-অজানা দ্বন্দ্বের মাঝে ঝাপসা হয়ে যাওয়া এসব প্রশ্নের সমাধান নিয়ে যুগান্তর পাঠকদের জন্য আজকের এ বিশেষ আয়োজন। যে কারণে বাড়ছে শরণার্থী সংখ্যা : জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বে মোট বাস্তুহারা সহায়-সম্বলহীন আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা ৬ কোটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটাই সর্বোচ্চ। আর এ মহাঅমানবিক পরিস্থিতির মূলে রয়েছে গত পাঁচ বছরে ভয়ানক আকারে ছড়িয়ে পড়া ১৫টি নতুন সংঘাত। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও আফ্রিকায় চলমান নৈরাজ্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।
মধ্যপ্রাচ্য আখ্যান : ২০১১ সালের কথা। একনায়ক শাসকদের হটিয়ে গণতন্ত্রের সুগন্ধি ছড়ানোর সৌখিনতায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আরব বসন্তের ঝড় ওঠে। মার্কিন মদদে প্রখর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণতন্ত্রকামীরা। কিন্তু আখেরে সফল হতে ব্যর্থ হয়। জনগণের স্বাধীনতার চেতনা রূপ নেয় গৃহযুদ্ধের। সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাকসহ কয়েকটি দেশে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা। এ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মারাত্মক শিকার হয় নিরীহ সাধারণ জনগণ। মূলত তখন থেকেই ‘শরণার্থী আখ্যান’ শুরু। সিরিয়া-ইরাক ছেড়ে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় নেয় তুরস্কসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। আশানুরূপ আশ্রয় মেলেনি উপসাগরীয় দেশগুলোয়। এজন্য সমালোচনায়ও পড়েছে তারা। ২০১১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সিরীয় শরণার্থীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখে। ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থানে নতুন আতংক সৃষ্টি হয় এ এলাকায়। এ জঙ্গিগোষ্ঠীর রোষানলে বাস্তুহারা হয় আরও ৩০ লাখ। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান থেকেও এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ৪৩ হাজার শরণার্থী।
আফ্রিকার কালো অধ্যায় : হীরা-জহরত-সোনা-রূপার আকর আফ্রিকা পশ্চিমা গোষ্ঠীর আয়েশী জীবন ব্যবস্থার প্রধান উৎস। বরাবরই অভিযোগ রয়েছে এ অঞ্চলের নির্বোধ জাতিগুলোকে সম্পদ দখলের মরীচিকায় ডুবিয়ে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে অন্তর্কলহ জিইয়ে রাখছে তারা। ভূখণ্ডনাশী এসব কূটচক্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে সোমালিয়া, সুদান, দ. সুদান, লিবিয়া নাইজেরিয়ার মতো অনেক দেশ। অন্যদিকে মার্কিন আশীর্বাদপুষ্ট ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী আল শাবাব, বোকো হারামের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হিংস কর্মকাণ্ডে দেশগুলো উত্তাল। জীবন শংকিত নিরীহ মানুষের। অনির্দিষ্টকালের এ অচলাবস্থা আফ্রিকার ১০ লক্ষাধিক মানুষকে ঘরবাড়ি হারা করে রাস্তায় বসিয়েছে। অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে তাদের বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষা। মানুষগুলো কোথায় যাচ্ছে : এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা যুদ্ধ-সংঘাত বিদ্রোহের আগুনে তছনছ। দিশেহারা মানুষগুলো একটা নিরাপদ জীবনের হাতছানিতে পাগলের মতো ছোটাছুটি করছে। যুদ্ধে খাদ্য-বাসস্থানের অভাবে ও জীবন শংকা এড়াতে পালাতে শুরু করে ভিটেমাটি ছেড়ে। কাছাকাছি হওয়ায় প্রথমেই আশ্রয় নেয় তুরস্কে। পরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেখান থেকে ইউরোপ, আমেরিকায়ও পাড়ি দেয়া শুরু করে তারা। যেভাবে দেশ ছাড়ছেন : যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেক যুদ্ধের সম্মুখীন হন শরণার্থীরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় অবৈধভাবে ভিনদেশের সীমানায় অনুপ্রবেশ করতে হয় তাদের। বৈধ রুটে চলাচল রুদ্ধ হয়ে গেলে বেছে নেয় ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা। ভূমধ্যসাগর ট্রাজেডি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপমুখী বৃহত্তম শরণার্থী সংকট জন্ম দিয়েছে ভয়াবহ বিয়োগান্তক নাটকের। অবৈধ পথে বাগড়া পাওয়ায় অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগরের বুকচিরে ইতালি, গ্রিস স্পেনসহ উপকূলীয় দেশগুলোয় যেতে চেষ্টা করছেন অসহায় শরণার্থীরা। সুন্দর জীবনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করা এসব মানুষের অনেকেই হারিয়ে গেছে সাগরে।
জাতিসংঘের জরিপ অনুযায়ী সাগরে সলিল সমাধি হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। এত মানুষ মারা গেলেও একটুও মন গলেনি বিশ্বমোড়লদের। সম্প্রতি সিরীয় শিশু তিন বছরের আয়লান কুর্দির নিথর দেহ গণমাধ্যমে প্রকাশের ফলে তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় ফেটে পড়ে বিশ্ব। টনক নড়লে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিতে এখন ব্যতিব্যস্ত তারা। কারা আশ্রয় দিচ্ছে? : মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থীদের প্রায় ৩০ লাখ বাস্তুহারাদের আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক। ব্যয় করেছে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। সম্প্রতি জি২০ সম্মেলনে এ কথা বলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। দেশটিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পরবর্তী লক্ষ্য স্থল হয় ইউরোপ। এ পর্যন্ত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শরণার্থী গ্রিসে পৌঁছেছে। ইতালিতেও স্থান নিয়েছে ১ লাখ। সমৃদ্ধশালী জার্মানিতে পৌঁছেছে আরও ৭০ হাজার। এছাড়া মানবতাবাদী যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় দিয়েছে মাত্র ১৫০০ সিরীয় শরণার্থীকে। কি জুটছে শরণার্থীদের কপালে? : শরণার্থী সংকটের প্রধান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ন্যাশন হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর) ১৯৫১ সালেই বাস্তুহীন মানুষের সুরক্ষা দিতে বিধান তৈরি করেছে। কিন্তু এসব মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে দায়িত্বশীল দেশগুলো। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। কেউ মরছে সাগরে ডুবে। কেউ মরছে লরিতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে। আবার কেউ মরছে খাদ্যাভাবে।
অন্যদিকে অধিকাংশই ধুঁকছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আতংকে। ইউরোপের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবোস্ট্যাট জানিয়েছে ২০১৪ সালে ইউরোপে শরণার্থীর মর্যাদা পেতে আবেদন করেছে ৬ লাখ ৬২ হাজার। চলতি বছরে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলেও আশংকা করা হচ্ছে। কিন্তু বিপুল এ জনসমষ্টিকে বৈধ প্রটেকশন দিলে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তাই এদেরকে শরণার্থী না বলে অবৈধ অভিবাসী বলে আখ্যা দিচ্ছে তারা। সীমান্তে গড়ে তুলছেন ধারালো কাঁটাতারের বেড়া। মজুদ করছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দর কষাকষির বাকযুদ্ধে নেমেছে এ মানুষগুলোর ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে। ইউবোস্ট্যাটের মতে ইউরোপে আশ্রয় পেতে আবেদন করেছে প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার। এগুলো কখন কার্যকর হবে তার ঠিক নেই। দুঃখের বিষয় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৬ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। ইতিমধ্যে ১৫শ’ শরণার্থীর নিরাপত্তা দিচ্ছে তারা। যদিও মধ্যপ্রাচ্যে বাস্তুহারাদের জন্য প্রায় ৪০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। কিন্তু এ ভয়াবহ সংকট মোকাবেলায় যে তৎপরতার দরকার সে তুলনায় এসব পদক্ষেপ খুবই অপ্রতুল। এজন্যই অন্ধকারে রাত্রিযাপন, খাদ্যের অভাবে শীর্ণ অবস্থা।
মধ্যপ্রাচ্য আখ্যান : ২০১১ সালের কথা। একনায়ক শাসকদের হটিয়ে গণতন্ত্রের সুগন্ধি ছড়ানোর সৌখিনতায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আরব বসন্তের ঝড় ওঠে। মার্কিন মদদে প্রখর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণতন্ত্রকামীরা। কিন্তু আখেরে সফল হতে ব্যর্থ হয়। জনগণের স্বাধীনতার চেতনা রূপ নেয় গৃহযুদ্ধের। সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাকসহ কয়েকটি দেশে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা। এ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মারাত্মক শিকার হয় নিরীহ সাধারণ জনগণ। মূলত তখন থেকেই ‘শরণার্থী আখ্যান’ শুরু। সিরিয়া-ইরাক ছেড়ে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় নেয় তুরস্কসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। আশানুরূপ আশ্রয় মেলেনি উপসাগরীয় দেশগুলোয়। এজন্য সমালোচনায়ও পড়েছে তারা। ২০১১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সিরীয় শরণার্থীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখে। ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থানে নতুন আতংক সৃষ্টি হয় এ এলাকায়। এ জঙ্গিগোষ্ঠীর রোষানলে বাস্তুহারা হয় আরও ৩০ লাখ। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান থেকেও এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ৪৩ হাজার শরণার্থী।
আফ্রিকার কালো অধ্যায় : হীরা-জহরত-সোনা-রূপার আকর আফ্রিকা পশ্চিমা গোষ্ঠীর আয়েশী জীবন ব্যবস্থার প্রধান উৎস। বরাবরই অভিযোগ রয়েছে এ অঞ্চলের নির্বোধ জাতিগুলোকে সম্পদ দখলের মরীচিকায় ডুবিয়ে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে অন্তর্কলহ জিইয়ে রাখছে তারা। ভূখণ্ডনাশী এসব কূটচক্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে সোমালিয়া, সুদান, দ. সুদান, লিবিয়া নাইজেরিয়ার মতো অনেক দেশ। অন্যদিকে মার্কিন আশীর্বাদপুষ্ট ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী আল শাবাব, বোকো হারামের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হিংস কর্মকাণ্ডে দেশগুলো উত্তাল। জীবন শংকিত নিরীহ মানুষের। অনির্দিষ্টকালের এ অচলাবস্থা আফ্রিকার ১০ লক্ষাধিক মানুষকে ঘরবাড়ি হারা করে রাস্তায় বসিয়েছে। অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে তাদের বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষা। মানুষগুলো কোথায় যাচ্ছে : এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা যুদ্ধ-সংঘাত বিদ্রোহের আগুনে তছনছ। দিশেহারা মানুষগুলো একটা নিরাপদ জীবনের হাতছানিতে পাগলের মতো ছোটাছুটি করছে। যুদ্ধে খাদ্য-বাসস্থানের অভাবে ও জীবন শংকা এড়াতে পালাতে শুরু করে ভিটেমাটি ছেড়ে। কাছাকাছি হওয়ায় প্রথমেই আশ্রয় নেয় তুরস্কে। পরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেখান থেকে ইউরোপ, আমেরিকায়ও পাড়ি দেয়া শুরু করে তারা। যেভাবে দেশ ছাড়ছেন : যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেক যুদ্ধের সম্মুখীন হন শরণার্থীরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় অবৈধভাবে ভিনদেশের সীমানায় অনুপ্রবেশ করতে হয় তাদের। বৈধ রুটে চলাচল রুদ্ধ হয়ে গেলে বেছে নেয় ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা। ভূমধ্যসাগর ট্রাজেডি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপমুখী বৃহত্তম শরণার্থী সংকট জন্ম দিয়েছে ভয়াবহ বিয়োগান্তক নাটকের। অবৈধ পথে বাগড়া পাওয়ায় অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগরের বুকচিরে ইতালি, গ্রিস স্পেনসহ উপকূলীয় দেশগুলোয় যেতে চেষ্টা করছেন অসহায় শরণার্থীরা। সুন্দর জীবনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করা এসব মানুষের অনেকেই হারিয়ে গেছে সাগরে।
জাতিসংঘের জরিপ অনুযায়ী সাগরে সলিল সমাধি হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। এত মানুষ মারা গেলেও একটুও মন গলেনি বিশ্বমোড়লদের। সম্প্রতি সিরীয় শিশু তিন বছরের আয়লান কুর্দির নিথর দেহ গণমাধ্যমে প্রকাশের ফলে তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় ফেটে পড়ে বিশ্ব। টনক নড়লে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিতে এখন ব্যতিব্যস্ত তারা। কারা আশ্রয় দিচ্ছে? : মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থীদের প্রায় ৩০ লাখ বাস্তুহারাদের আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক। ব্যয় করেছে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। সম্প্রতি জি২০ সম্মেলনে এ কথা বলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। দেশটিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পরবর্তী লক্ষ্য স্থল হয় ইউরোপ। এ পর্যন্ত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শরণার্থী গ্রিসে পৌঁছেছে। ইতালিতেও স্থান নিয়েছে ১ লাখ। সমৃদ্ধশালী জার্মানিতে পৌঁছেছে আরও ৭০ হাজার। এছাড়া মানবতাবাদী যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় দিয়েছে মাত্র ১৫০০ সিরীয় শরণার্থীকে। কি জুটছে শরণার্থীদের কপালে? : শরণার্থী সংকটের প্রধান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ন্যাশন হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর) ১৯৫১ সালেই বাস্তুহীন মানুষের সুরক্ষা দিতে বিধান তৈরি করেছে। কিন্তু এসব মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে দায়িত্বশীল দেশগুলো। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। কেউ মরছে সাগরে ডুবে। কেউ মরছে লরিতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে। আবার কেউ মরছে খাদ্যাভাবে।
অন্যদিকে অধিকাংশই ধুঁকছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আতংকে। ইউরোপের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবোস্ট্যাট জানিয়েছে ২০১৪ সালে ইউরোপে শরণার্থীর মর্যাদা পেতে আবেদন করেছে ৬ লাখ ৬২ হাজার। চলতি বছরে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলেও আশংকা করা হচ্ছে। কিন্তু বিপুল এ জনসমষ্টিকে বৈধ প্রটেকশন দিলে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তাই এদেরকে শরণার্থী না বলে অবৈধ অভিবাসী বলে আখ্যা দিচ্ছে তারা। সীমান্তে গড়ে তুলছেন ধারালো কাঁটাতারের বেড়া। মজুদ করছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দর কষাকষির বাকযুদ্ধে নেমেছে এ মানুষগুলোর ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে। ইউবোস্ট্যাটের মতে ইউরোপে আশ্রয় পেতে আবেদন করেছে প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার। এগুলো কখন কার্যকর হবে তার ঠিক নেই। দুঃখের বিষয় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৬ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। ইতিমধ্যে ১৫শ’ শরণার্থীর নিরাপত্তা দিচ্ছে তারা। যদিও মধ্যপ্রাচ্যে বাস্তুহারাদের জন্য প্রায় ৪০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। কিন্তু এ ভয়াবহ সংকট মোকাবেলায় যে তৎপরতার দরকার সে তুলনায় এসব পদক্ষেপ খুবই অপ্রতুল। এজন্যই অন্ধকারে রাত্রিযাপন, খাদ্যের অভাবে শীর্ণ অবস্থা।
No comments