বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কথা জাসদ বিশ্বাস করে না by ওয়ালিউল হক
দল
হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল
(জাসদ) সে কথায় বিশ্বাস করে কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদে খসড়া সংবিধান বিল উত্থাপিত হওয়ার পর জাসদের পক্ষ থেকে ২০ অক্টোবর খসড়া সংবিধানের ব্যাপারে একটি পর্যালোচনামূলক বিবৃতি দেয়া হয়েছিল। আ স ম আবদুর রব ও শাজাহান সিরাজের নামে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণার বিষয়ে যে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছিল, তা হলো এই যে, ‘প্রস্তাবনায় ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চকে স্বাধীনতা ঘোষণার তারিখ বলে খসড়া সংবিধানে যে কথা লেখা হয়েছে, তার সত্যতা কোথায়?’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেনÑ এ কথাকে জাসদের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল।
গণকণ্ঠের তৎকালীন সাংবাদিক মহিউদ্দীন আহমদের লেখা ‘জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বই থেকে জানা যায়, জাসদের নেপথ্য নেতা ও প্রধান তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি স্বীকার করতেন না। তবে তিনি মনে করতেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়েছে।’ মহিউদ্দীন আহমদ লিখেছেন, ‘২৫ শে মার্চ সন্ধ্যায় একটি স্বাধীনতার ঘোষণা শেখ মুজিবের ধানমন্ডির বাড়িতে লেখা হয়েছিল এবং সিরাজুল আলম খান নিজে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। ঘোষণার খসড়াটি তাজউদ্দীন ঠিকঠাক করে দেন। এতে বলা হয়; দি এনিমি হ্যাজ স্ট্রাক। হিট দেম ব্যাক। ভিক্টরি শ্যাল বি আওয়ার্স। ইনশাআল্লাহ। জয় বাংলা’ (শত্রু আঘাত করেছে। তাদের প্রত্যাঘাত করতে হবে। জয় আমাদের হবেই ইনশাআল্লাহ)।
সিরাজুল আলম খান ২৫ মার্চ ঢাকার লালবাগ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কামরায় বসে রাত কাটিয়েছিলেন। তিনি ওই কর্মকর্তার টেবিলের ওপর এই ঘোষণার একটি কপি দেখেছিলেন। তার মতে, বঙ্গবন্ধু বিষয়টি অবহিত ছিলেন কিন্তু তিনি নিজে কোন ঘোষণা দিয়ে যাননি (পৃষ্ঠা : ৮৬)।
এরপর ১৯৭২ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাসদের প্রথম কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির পক্ষ থেকে যে বক্তব্য পেশ করা হয়েছিল, তাতেও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয়েছিল। আহ্বায়ক কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া আ স ম আবদুর রবের ওই বক্তৃতায় বলা হয়েছিল, ‘পঁচিশে মার্চের আগে স্বাধীনতা সম্পর্কে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কী মনোভাব ছিল তা দেশবাসীর সবার জানা। নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের ক্ষমতার মসনদে আরোহণের স্বপ্নে ছিল বিভোর। স্বাধীনতার সপক্ষে কথা বলার জন্য বাংলাদেশের যুবসমাজ বিশেষ করে ছাত্রলীগের কর্মীদের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ চিহ্নিত করেছিল বিদেশী শক্তির এজেন্ট হিসেবে।
পঁচিশ মার্চ রাত্রি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা সম্পর্কে জনগণকে কোন নির্দেশ তো দেয়নি বরং পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলেছিল। বস্তুত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার জন্য তারা কোন পদ্ধতি বা প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা চিন্তাও করতে পারেনি। তাই বাংলাদেশের সংগ্রামী যুবসমাজকেই গোপনভাবে আওয়ামী লীগের আপসমূলক আলোচনার আড়ালে যৎসামান্য প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলগুলো স্বাধীনতার আন্দোলন সম্পর্কে পোষণ করতো নমনীয় ও আপসকামী মনোভাব। পরিণামে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছিল জাতিকে সঠিক পথের নির্দেশ দিতে। তাই কোন প্রকার নেতৃত্ব ও নির্দেশ ছাড়াই স্বতন্ত্রভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের বিপ্লবী জনতা। যুবসমাজের নেতৃত্বে কারখানার শ্রমিক, গ্রামের কৃষক, ছাত্র-জনতা যুদ্ধের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছিল’ (আলতাফ পারভেজ লিখিত ‘মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী : ইতিহাসের পুনর্পাঠ, পৃষ্ঠা : ৪৭৮)।
আ স ম আবদুর রবের ওই বক্তব্য পর্যালোচনা করলে যে তিনটি কথা বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে : ১. আওয়ামী লীগ ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত অখণ্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিল; ২. বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার জন্য তারা ছাত্রলীগের নেতাদের বিদেশী শক্তির এজেন্ট মনে করতেন; ৩. আওয়ামী লীগ নেতারা একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনি স্বাধীনতাযুদ্ধ কার নেতৃত্বে, কিভাবে পরিচালিত হবে সে নির্দেশনাও তারা জাতিকে দিতে পারেননি।
জাসদের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মেজর (অব:) এম এ জলিল ও অন্যতম শীর্ষনেতা কাজী আরেফ আহমদের লেখাতেও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। মেজর জলিল তার ‘সীমাহীন সমর’ গ্রন্থে স্বাধীনতাযুদ্ধে তার অংশগ্রহণ সম্পর্কে অনেক কিছু লিখেছেন। তার মতে, ‘বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় নৈরাশ্যের অন্ধকারে সমগ্র জাতির দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল।’ আবার ২৫ মার্চ আহূত গণপরিষদের বৈঠককে সামনে রেখে ভুট্টো-ইয়াহিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধুর আলোচনার বিষয়টিকেও তিনি কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন।
ওই বইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে তিনি যা লিখেছেন তা নিচে তুলে দেয়া হলোÑ ‘রেডিওতে মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণা শুনলাম। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সেই সঙ্গে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে নিজেকে সরকার প্রধান বলে ঘোষণা করলেন। তিনি আরো ঘোষণা করলেন, পাকিস্তান সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর মুক্তিসংগ্রাম শুরু হয়েছে এবং চলতে থাকবে। এই ঘোষণা ঝিমিয়ে পড়া প্রতিটি মনে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করলো। কারণ, এই রকম ঘোষণা এ-ই প্রথম’ (সীমাহীন সমর, পৃ:- ২২১)।
কাজী আরেফ তার ‘বাঙ্গালির জাতীয় রাষ্ট্র’ বইয়ে ২৫ মার্চ রাত ও তার পরবর্তী কয়েক দিন তিনি কোথায় ছিলেন, স্বাধীন বাংলা নিউকিয়াসের কার কার সাথে কোথায় বৈঠক করেছেন তার বিশদ বর্ণনা দিলেও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি শুনেছেন বা তাকে কেউ বলেছে এমন কোনো কথা বলেননি। তবে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার কথা সংক্ষিপ্তভাবে হলেও লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘২৬-২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান-এর প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান শুনলাম’ (পৃষ্ঠা-১২৮)।
১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদে খসড়া সংবিধান বিল উত্থাপিত হওয়ার পর জাসদের পক্ষ থেকে ২০ অক্টোবর খসড়া সংবিধানের ব্যাপারে একটি পর্যালোচনামূলক বিবৃতি দেয়া হয়েছিল। আ স ম আবদুর রব ও শাজাহান সিরাজের নামে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণার বিষয়ে যে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছিল, তা হলো এই যে, ‘প্রস্তাবনায় ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চকে স্বাধীনতা ঘোষণার তারিখ বলে খসড়া সংবিধানে যে কথা লেখা হয়েছে, তার সত্যতা কোথায়?’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেনÑ এ কথাকে জাসদের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল।
গণকণ্ঠের তৎকালীন সাংবাদিক মহিউদ্দীন আহমদের লেখা ‘জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বই থেকে জানা যায়, জাসদের নেপথ্য নেতা ও প্রধান তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি স্বীকার করতেন না। তবে তিনি মনে করতেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়েছে।’ মহিউদ্দীন আহমদ লিখেছেন, ‘২৫ শে মার্চ সন্ধ্যায় একটি স্বাধীনতার ঘোষণা শেখ মুজিবের ধানমন্ডির বাড়িতে লেখা হয়েছিল এবং সিরাজুল আলম খান নিজে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। ঘোষণার খসড়াটি তাজউদ্দীন ঠিকঠাক করে দেন। এতে বলা হয়; দি এনিমি হ্যাজ স্ট্রাক। হিট দেম ব্যাক। ভিক্টরি শ্যাল বি আওয়ার্স। ইনশাআল্লাহ। জয় বাংলা’ (শত্রু আঘাত করেছে। তাদের প্রত্যাঘাত করতে হবে। জয় আমাদের হবেই ইনশাআল্লাহ)।
সিরাজুল আলম খান ২৫ মার্চ ঢাকার লালবাগ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কামরায় বসে রাত কাটিয়েছিলেন। তিনি ওই কর্মকর্তার টেবিলের ওপর এই ঘোষণার একটি কপি দেখেছিলেন। তার মতে, বঙ্গবন্ধু বিষয়টি অবহিত ছিলেন কিন্তু তিনি নিজে কোন ঘোষণা দিয়ে যাননি (পৃষ্ঠা : ৮৬)।
এরপর ১৯৭২ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাসদের প্রথম কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির পক্ষ থেকে যে বক্তব্য পেশ করা হয়েছিল, তাতেও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয়েছিল। আহ্বায়ক কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া আ স ম আবদুর রবের ওই বক্তৃতায় বলা হয়েছিল, ‘পঁচিশে মার্চের আগে স্বাধীনতা সম্পর্কে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কী মনোভাব ছিল তা দেশবাসীর সবার জানা। নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের ক্ষমতার মসনদে আরোহণের স্বপ্নে ছিল বিভোর। স্বাধীনতার সপক্ষে কথা বলার জন্য বাংলাদেশের যুবসমাজ বিশেষ করে ছাত্রলীগের কর্মীদের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ চিহ্নিত করেছিল বিদেশী শক্তির এজেন্ট হিসেবে।
পঁচিশ মার্চ রাত্রি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা সম্পর্কে জনগণকে কোন নির্দেশ তো দেয়নি বরং পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলেছিল। বস্তুত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার জন্য তারা কোন পদ্ধতি বা প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা চিন্তাও করতে পারেনি। তাই বাংলাদেশের সংগ্রামী যুবসমাজকেই গোপনভাবে আওয়ামী লীগের আপসমূলক আলোচনার আড়ালে যৎসামান্য প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলগুলো স্বাধীনতার আন্দোলন সম্পর্কে পোষণ করতো নমনীয় ও আপসকামী মনোভাব। পরিণামে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছিল জাতিকে সঠিক পথের নির্দেশ দিতে। তাই কোন প্রকার নেতৃত্ব ও নির্দেশ ছাড়াই স্বতন্ত্রভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের বিপ্লবী জনতা। যুবসমাজের নেতৃত্বে কারখানার শ্রমিক, গ্রামের কৃষক, ছাত্র-জনতা যুদ্ধের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছিল’ (আলতাফ পারভেজ লিখিত ‘মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী : ইতিহাসের পুনর্পাঠ, পৃষ্ঠা : ৪৭৮)।
আ স ম আবদুর রবের ওই বক্তব্য পর্যালোচনা করলে যে তিনটি কথা বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে : ১. আওয়ামী লীগ ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত অখণ্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিল; ২. বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার জন্য তারা ছাত্রলীগের নেতাদের বিদেশী শক্তির এজেন্ট মনে করতেন; ৩. আওয়ামী লীগ নেতারা একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনি স্বাধীনতাযুদ্ধ কার নেতৃত্বে, কিভাবে পরিচালিত হবে সে নির্দেশনাও তারা জাতিকে দিতে পারেননি।
জাসদের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মেজর (অব:) এম এ জলিল ও অন্যতম শীর্ষনেতা কাজী আরেফ আহমদের লেখাতেও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। মেজর জলিল তার ‘সীমাহীন সমর’ গ্রন্থে স্বাধীনতাযুদ্ধে তার অংশগ্রহণ সম্পর্কে অনেক কিছু লিখেছেন। তার মতে, ‘বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় নৈরাশ্যের অন্ধকারে সমগ্র জাতির দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল।’ আবার ২৫ মার্চ আহূত গণপরিষদের বৈঠককে সামনে রেখে ভুট্টো-ইয়াহিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধুর আলোচনার বিষয়টিকেও তিনি কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন।
ওই বইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে তিনি যা লিখেছেন তা নিচে তুলে দেয়া হলোÑ ‘রেডিওতে মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণা শুনলাম। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সেই সঙ্গে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে নিজেকে সরকার প্রধান বলে ঘোষণা করলেন। তিনি আরো ঘোষণা করলেন, পাকিস্তান সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর মুক্তিসংগ্রাম শুরু হয়েছে এবং চলতে থাকবে। এই ঘোষণা ঝিমিয়ে পড়া প্রতিটি মনে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করলো। কারণ, এই রকম ঘোষণা এ-ই প্রথম’ (সীমাহীন সমর, পৃ:- ২২১)।
কাজী আরেফ তার ‘বাঙ্গালির জাতীয় রাষ্ট্র’ বইয়ে ২৫ মার্চ রাত ও তার পরবর্তী কয়েক দিন তিনি কোথায় ছিলেন, স্বাধীন বাংলা নিউকিয়াসের কার কার সাথে কোথায় বৈঠক করেছেন তার বিশদ বর্ণনা দিলেও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি শুনেছেন বা তাকে কেউ বলেছে এমন কোনো কথা বলেননি। তবে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার কথা সংক্ষিপ্তভাবে হলেও লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘২৬-২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান-এর প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান শুনলাম’ (পৃষ্ঠা-১২৮)।
No comments