দিল্লিতে ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের প্রতিবাদ -২৫০ আবেদন যাচ্ছে বৃটেনে by ওয়েছ খছরু
সিলেট থেকে প্রতিদিন বৃটিশ ভিসা প্রার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। পারিবারিকভাবে সম্পর্ক ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন লন্ডন-সিলেট সম্পর্ক ব্যাপক। সিলেটের ঘরের কোণেই যেন লন্ডন। এ কারণে লন্ডন থেকে সিলেটে রয়েছে সরাসরি বিমান যোগাযোগ। দুই এলাকার রাজনীতিতেও বিশেষ করে সমানভাবে অবদান রাখছেন প্রবাসীরাও। ঢাকা থেকে দিল্লিতে ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের খবরে সম্পর্কচ্ছেদের আশঙ্কায় সিলেটজুড়ে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ভিসাপ্রাপ্তি ও ইন্টারভিউয়ে হয়রানির আশঙ্কা করছেন তারা। প্রবাসীদের স্বজনরা জানিয়েছেন, পারিবারিকভাবে বৃটেনের সঙ্গে এখন সিলেটের যোগাযোগ অনেক বেশি। হাতের কাছে ভিসা সেন্টার থাকায় সরাসরি গিয়ে ভিসার কাগজপত্র জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ভিসা সেন্টার সিলেট থেকে স্থানান্তর করা হলে জরুরি কাজে দৌড়াতে হবে দিল্লি। আর সিলেট থেকে দিল্লির যোগাযোগ মোটেও সহজ নয়। এদিকে, ঢাকা থেকে দিল্লিতে ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের খবরে উৎকণ্ঠিত সিলেটবাসী দুই দিনে আড়াই শ’ আবেদন করেছেন। বৃটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেয়ার জন্য গত দুই দিনে আড়াই শ’ আবেদন সংগ্রহ করেছে বৃটেন-বাংলাদেশ স্বার্থরক্ষা কমিটি। কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে বৃটিশ ভিসা সেন্টার দিল্লিতে স্থানান্তর না করার জন্য আবেদনের আকুতি জানিয়েছেন সিলেটের সব শ্রেণীর মানুষজন। আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, ‘আগামী সেপ্টেম্বর থেকে দিল্লি থেকে ভিসা প্রসেসিং শুরু হবে, যা বাংলাদেশের জনগণের জন্য সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ হবে। বৃটেন সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের ঢাকা ও সিলেটে কেবল আবেদন গ্রহণ করা হবে। আর ভারতের দিল্লিতে ভিসা প্রসেসিং শুরু করায় সিলেটবাসী হতাশ হয়েছেন। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশী ভিসাপ্রত্যাশীদের হয়রানির মাত্রা বাড়বে।’ আবেদনে তারা জানান, ‘বৃটেনের অর্থনীতিতে বাংলাদেশীদের কারি শিল্প ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবর্তে ভারতে ভিসা প্রসেসিং করা হলে বাংলাদেশীদের ভিসাপ্রাপ্তির হার কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ আবেদনগুলো সংরক্ষণ করছে ‘বৃটেন-বাংলাদেশ স্বার্থরক্ষা কমিটি’। কমিটির সভাপতি রিমাদ আহমদ রুবেল গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিন বৃহস্পতিবার নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টে খোলা জায়গায় তারা আবেদন গ্রহণ করেন। শতাধিক লোকজন প্রথম দিন আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, সিলেটের বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষরা এসে আবেদন করে যাচ্ছেন। আর এর মাধ্যমে তারা বৃটেনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।’ সংগঠনের সদস্য সচিব রাশেদুজ্জামান রাশেদ জানিয়েছেন, গতকাল বিকাল পর্যন্ত নগরীর আলীয়া মাদরাসা ময়দানে আড়াই শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। তিনি বলেন, এ আবেদনগুলো সংগ্রহ করার পর অনুবাদ করে পাঠানো হবে বৃটেন সরকারের কাছে। গতকাল সিলেট বিভাগ যুব পদকপ্রাপ্ত ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আকছার হাবিব, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন জালালাবাদ থানার সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, সুনামগঞ্জ ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজন তালুকদারসহ শতাধিক লোক আবেদন করেন। আর বৃহস্পতিবার আম্বরখানা বাজার কমিটির সেক্রেটারি গুলজার আহমদসহ বাজারের ব্যবসায়ীরা আবেদন করেন। এসব আবেদনে তারা ঢাকা থেকে দিল্লি বৃটেন ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের প্রতিবাদ জানান এবং এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। এদিকে, সিলেট বিভাগ স্বার্থরক্ষণ কমিটির সভাপতি রাজিউদ্দিন তালুকদার রাজু জানিয়েছেন, ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের প্রতিবাদে আজ দুপুরে কোর্ট পয়েন্টে তারা সমাবেশ করবেন। চলছে গণ-আবেদন, বৃটেনে আন্দোলন কমিটি: ভারতে বাংলাদেশের বৃটিশ ভিসা প্রসেসিংয়ের প্রতিবাদে গণ-আবেদন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে বৃটিশ-বাংলাদেশ স্বার্থরক্ষা কমিটির উদ্যোগে নেয়া হচ্ছে গণ-আবেদন। এ ছাড়া বহির্বিশ্বে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে বৃটেনে ৩ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনেও চলছে জোরালো আন্দোলন। গতকাল স্বার্থরক্ষা কমিটির নেতারা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। তারা জানান, গতকাল দুপুরে বৃটিশ-বাংলাদেশ স্বার্থরক্ষা কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার সমন্বয় কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সায়াদ আহমদ শাহীন, জাকির হোসেন সেলিম ও আবদুল আজিজ। এ কমিটি এক সপ্তাহের মধ্যে প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বৃটেনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এদিকে বিকালে নগরীর দরগা গেট এলাকায় গণ-আবেদন কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার শতাধিক ব্যক্তিরা অংশ নেন। এ সময় তারা বৃটিশ সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। আন্দোলনের অংশ হিসেবে চলছে অনলাইনেও জোর প্রচারণা। বৃটিশ-বাংলাদেশ স্বার্থরক্ষা কমিটির ফেসবুক পেজেও ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই শতাধিক লাইক ও দুই হাজারের মতো ভিউয়ার যোগ দিয়েছেন।
No comments