বড়পুকুরিয়ার কয়লা উত্তোলনে উন্মুক্ত খনি by মুশফিকুর রহমান
১০ জুলাই জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিন মাস পর বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্রের উত্তরাংশে উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনি নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। তাঁর আশাবাদ, এই সময়ের মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) কয়লাক্ষেত্রের হাইড্রোলজিক্যাল মডেলিংয়ের চলমান কাজ শেষ করতে পারবে। উন্মুক্ত খনি নির্মাণের প্রয়োজনে বাংলাদেশে কয়লাক্ষেত্রের নির্ধারিত জায়গায় ডি-ওয়াটারিং বা বিদ্যমান ভূগর্ভস্থ জলস্তর থেকে ধারাবাহিকভাবে পানি অপসারণ
করতে হবে। কয়লা উত্তোলনের প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড যাতে নিরাপদে, শুকনো জায়গায় করা সম্ভব হয়, সে জন্য এটি প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত।
এ মাসেরই প্রথম সপ্তাহে আইডব্লিউএম এক সেমিনারে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্রের হাইড্রোলজিক্যাল মডেলিংয়ের অগ্রগতি জানিয়েছে। কয়েক বছর ধরে সরকারের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটি খনি উন্নয়নের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের সম্ভাব্য মডেলিং নিয়ে কাজ করছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উন্মুক্ত কয়লাখনি নির্মাণের প্রয়োজনে বড়পুকুরিয়ার সংশ্লিষ্ট অংশ থেকে বছরে প্রায় ৩৪৪ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি উত্তোলন করতে হবে এবং আইডব্লিউএম সেখানে ডি-ওয়াটারিং অপারেশন ব্যবস্থাপনা সম্ভব বলে মনে করে। স্মরণ করা যেতে পারে যে দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রযোজ্য কয়লাক্ষেত্রে উন্মুক্ত কয়লাখনি নির্মাণ নিয়ে অনেক দিন ধরে নানা রকমের কল্পনাপ্রসূত গালগল্প ছড়ানো হয়েছে। সরকার এত দিন বড় আকারে কয়লা উত্তোলনে যেহেতু আগ্রহ দেখায়নি, সে কারণে প্রচারক দল এবং হাতুড়ে বিশেষজ্ঞদের একটানা বিরূপ প্রচারণার ক্ষেত্রে দ্বিধা ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আইডব্লিউএমের গবেষণা এ ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত নির্মাণে সহায়ক হবে।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকার বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্রের অগভীর উত্তরাংশে সীমিত পরিসরে একটি উন্মুক্ত কয়লাখনি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখান থেকে উত্তোলিত কয়লা দিয়ে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথাও মন্ত্রী জানিয়েছেন। খনি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ একই সঙ্গে পরিচালনার মাধ্যমে পাঁচ বছরের মধ্যে বড়পুকুরিয়া থেকে বাড়তি এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনের কথাও মন্ত্রী জানিয়েছেন।
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সরকার আমদানি করা কয়লা দিয়ে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রাথমিকভাবে কয়লা আমদানি এবং তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন যত সহজে বাস্তবায়নযোগ্য বলে ভাবা হয়েছিল, বাস্তবে তা তত সহজ নয়। বড় পরিসরে কয়লা আমদানি বাংলাদেশের জন্য নানা কারণে চ্যালেঞ্জিং। গৃহীত উদ্যোগের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি তৈরির পরিকল্পনা সত্ত্বেও স্পষ্ট হয়েছে যে কয়লা আমদানির প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো অনুপস্থিত। প্রতিটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিজের জন্য এসব অবকাঠামো সুবিধা নির্মাণ করতে চাইলে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণব্যয় বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। প্রকারান্তরে তার ফলে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যাবে। এখন চেষ্টা চলছে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবশ্যিক অনুষঙ্গ হিসেবে আলাদা বন্দর/জেটি নির্মাণ না করে কীভাবে একক গভীর সমুদ্রবন্দর সুবিধা গড়ে কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানি নিশ্চিত করা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি সমন্বিত কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিপুল পরিমাণ সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে সেখানে অবকাঠামো গড়তে হবে এবং তা সময়সাপেক্ষ।
দেশের সীমিত প্রাকৃতিক গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এখনো প্রধান জ্বালানি। দেশের গ্যাস উত্তোলন এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, ভবিষ্যতে তা ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কয়েক বছরের মধ্যে স্বাভাবিক নিয়মে গ্যাসের মজুত আরও হ্রাস পাবে। দৈনিক উৎপাদনও দ্রুত হ্রাস পেতে থাকবে (বড় মাপের কোনো গ্যাসক্ষেত্রের আশু সংযোজন হচ্ছে না বিবেচনায় এমন প্রাক্কলন অবধারিত)। এদিকে গ্যাস সরবরাহের চাপ বাড়ছে। এই পটভূমিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দেরিতে হলেও সরকার এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগ দিতে চাইছে। আমদানিনির্ভর কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন উদ্যোগ দেশের মজুত কয়লা উত্তোলন এবং ব্যবহারের তুলনায় যে কোনো অংশে কম চ্যালেঞ্জিং নয়, এত দিনে তা স্পষ্ট হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ সে পটভূমিতেই ঘোষণা করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে বড়পুকুরিয়ায় যে ছোট ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি চালু হয়েছে, তার উৎপাদনক্ষমতা নগণ্য (বছরে মাত্র এক মিলিয়ন টন। পক্ষান্তরে এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে বছরে প্রায় তিন মিলিয়ন টন কয়লা প্রয়োজন হয়)। বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্রটি ১৯৮৫ সালে আবিষ্কৃত হলেও সেখানে নির্মিত ভূগর্ভস্থ খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে ২০০৫ সালে। ৬৬৮ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত ৩৯০ মিলিয়ন টন মজুতের বড়পুকুরিয়া ক্ষেত্রের কয়লা ১১৮ মিটার থেকে ৫০৩ মিটার গভীরতায় সঞ্চিত হয়েছে। ভূগর্ভস্থ খনি কেবল গভীর স্তর থেকে কয়লা তুলতে পরিকল্পিত। ফলে বড়পুকুরিয়া খনির উত্তরাংশের ২৭১ হেক্টর জায়গার প্রায় ১১৮ মিলিয়ন টন অগভীর স্তরের কয়লা ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি কখনো উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে পারেনি এবং তেমন পরিকল্পনা ভূগর্ভস্থ খনির জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি অবশিষ্ট ২৭২ মিলিয়ন টন মজুতের মধ্য থেকে খনির সম্পূর্ণ জীবনকালে মাত্র ২৫-৩০ মিলিয়ন টন উত্তোলনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পক্ষান্তরে বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে উন্মুক্ত খনির সাহায্যে দ্রুত ১১৮ মিলিয়ন টন মজুত কয়লার ১০০ মিলিয়ন টনের বেশি উত্তোলন করা সম্ভব।
এই প্রথম সরকার উন্মুক্ত কয়লাখনি নির্মাণ এবং সেখান থেকে কয়লা উত্তোলনের ঘোষণা দিল। যে কয়লাক্ষেত্রের জন্য যে পদ্ধতি প্রযোজ্য, তা প্রয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কয়লা উত্তোলনের কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এখন সামনে এগোনো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সমাবেশ যথাযথভাবে করা গেলে প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
ড. মুশফিকুর রহমান: খনি প্রকৌশলী। জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক।
করতে হবে। কয়লা উত্তোলনের প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড যাতে নিরাপদে, শুকনো জায়গায় করা সম্ভব হয়, সে জন্য এটি প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত।
এ মাসেরই প্রথম সপ্তাহে আইডব্লিউএম এক সেমিনারে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্রের হাইড্রোলজিক্যাল মডেলিংয়ের অগ্রগতি জানিয়েছে। কয়েক বছর ধরে সরকারের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটি খনি উন্নয়নের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের সম্ভাব্য মডেলিং নিয়ে কাজ করছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উন্মুক্ত কয়লাখনি নির্মাণের প্রয়োজনে বড়পুকুরিয়ার সংশ্লিষ্ট অংশ থেকে বছরে প্রায় ৩৪৪ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি উত্তোলন করতে হবে এবং আইডব্লিউএম সেখানে ডি-ওয়াটারিং অপারেশন ব্যবস্থাপনা সম্ভব বলে মনে করে। স্মরণ করা যেতে পারে যে দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রযোজ্য কয়লাক্ষেত্রে উন্মুক্ত কয়লাখনি নির্মাণ নিয়ে অনেক দিন ধরে নানা রকমের কল্পনাপ্রসূত গালগল্প ছড়ানো হয়েছে। সরকার এত দিন বড় আকারে কয়লা উত্তোলনে যেহেতু আগ্রহ দেখায়নি, সে কারণে প্রচারক দল এবং হাতুড়ে বিশেষজ্ঞদের একটানা বিরূপ প্রচারণার ক্ষেত্রে দ্বিধা ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আইডব্লিউএমের গবেষণা এ ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত নির্মাণে সহায়ক হবে।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকার বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্রের অগভীর উত্তরাংশে সীমিত পরিসরে একটি উন্মুক্ত কয়লাখনি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখান থেকে উত্তোলিত কয়লা দিয়ে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথাও মন্ত্রী জানিয়েছেন। খনি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ একই সঙ্গে পরিচালনার মাধ্যমে পাঁচ বছরের মধ্যে বড়পুকুরিয়া থেকে বাড়তি এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনের কথাও মন্ত্রী জানিয়েছেন।
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সরকার আমদানি করা কয়লা দিয়ে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রাথমিকভাবে কয়লা আমদানি এবং তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন যত সহজে বাস্তবায়নযোগ্য বলে ভাবা হয়েছিল, বাস্তবে তা তত সহজ নয়। বড় পরিসরে কয়লা আমদানি বাংলাদেশের জন্য নানা কারণে চ্যালেঞ্জিং। গৃহীত উদ্যোগের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি তৈরির পরিকল্পনা সত্ত্বেও স্পষ্ট হয়েছে যে কয়লা আমদানির প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো অনুপস্থিত। প্রতিটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিজের জন্য এসব অবকাঠামো সুবিধা নির্মাণ করতে চাইলে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণব্যয় বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। প্রকারান্তরে তার ফলে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যাবে। এখন চেষ্টা চলছে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবশ্যিক অনুষঙ্গ হিসেবে আলাদা বন্দর/জেটি নির্মাণ না করে কীভাবে একক গভীর সমুদ্রবন্দর সুবিধা গড়ে কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানি নিশ্চিত করা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি সমন্বিত কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিপুল পরিমাণ সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে সেখানে অবকাঠামো গড়তে হবে এবং তা সময়সাপেক্ষ।
দেশের সীমিত প্রাকৃতিক গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এখনো প্রধান জ্বালানি। দেশের গ্যাস উত্তোলন এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, ভবিষ্যতে তা ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কয়েক বছরের মধ্যে স্বাভাবিক নিয়মে গ্যাসের মজুত আরও হ্রাস পাবে। দৈনিক উৎপাদনও দ্রুত হ্রাস পেতে থাকবে (বড় মাপের কোনো গ্যাসক্ষেত্রের আশু সংযোজন হচ্ছে না বিবেচনায় এমন প্রাক্কলন অবধারিত)। এদিকে গ্যাস সরবরাহের চাপ বাড়ছে। এই পটভূমিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দেরিতে হলেও সরকার এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগ দিতে চাইছে। আমদানিনির্ভর কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন উদ্যোগ দেশের মজুত কয়লা উত্তোলন এবং ব্যবহারের তুলনায় যে কোনো অংশে কম চ্যালেঞ্জিং নয়, এত দিনে তা স্পষ্ট হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ সে পটভূমিতেই ঘোষণা করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে বড়পুকুরিয়ায় যে ছোট ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি চালু হয়েছে, তার উৎপাদনক্ষমতা নগণ্য (বছরে মাত্র এক মিলিয়ন টন। পক্ষান্তরে এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে বছরে প্রায় তিন মিলিয়ন টন কয়লা প্রয়োজন হয়)। বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্রটি ১৯৮৫ সালে আবিষ্কৃত হলেও সেখানে নির্মিত ভূগর্ভস্থ খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে ২০০৫ সালে। ৬৬৮ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত ৩৯০ মিলিয়ন টন মজুতের বড়পুকুরিয়া ক্ষেত্রের কয়লা ১১৮ মিটার থেকে ৫০৩ মিটার গভীরতায় সঞ্চিত হয়েছে। ভূগর্ভস্থ খনি কেবল গভীর স্তর থেকে কয়লা তুলতে পরিকল্পিত। ফলে বড়পুকুরিয়া খনির উত্তরাংশের ২৭১ হেক্টর জায়গার প্রায় ১১৮ মিলিয়ন টন অগভীর স্তরের কয়লা ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি কখনো উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে পারেনি এবং তেমন পরিকল্পনা ভূগর্ভস্থ খনির জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি অবশিষ্ট ২৭২ মিলিয়ন টন মজুতের মধ্য থেকে খনির সম্পূর্ণ জীবনকালে মাত্র ২৫-৩০ মিলিয়ন টন উত্তোলনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পক্ষান্তরে বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে উন্মুক্ত খনির সাহায্যে দ্রুত ১১৮ মিলিয়ন টন মজুত কয়লার ১০০ মিলিয়ন টনের বেশি উত্তোলন করা সম্ভব।
এই প্রথম সরকার উন্মুক্ত কয়লাখনি নির্মাণ এবং সেখান থেকে কয়লা উত্তোলনের ঘোষণা দিল। যে কয়লাক্ষেত্রের জন্য যে পদ্ধতি প্রযোজ্য, তা প্রয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কয়লা উত্তোলনের কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এখন সামনে এগোনো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সমাবেশ যথাযথভাবে করা গেলে প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
ড. মুশফিকুর রহমান: খনি প্রকৌশলী। জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক।
No comments