পবিত্র কোরআনের আলো-শয়তানি চক্রান্ত থেকে রক্ষায় অনুসরণীয় আদর্শ

৫১. কা-লা মা- খাতবুকুন্না ইয রা-ওয়াত্তুন্না য়ূসুফা 'আন নাফসিহী, কুলনা হা-শা লিল্লা-হি মা- 'আলিমনা- 'আলাইহি মিন সূ-ইন, কা-লাতিম রা'আতুল 'আযীযিল আ-না হাসহাসাল হাক্কু, আনা রা-ওয়াত্তুহূ 'আন নাফসিহী ওয়া ইন্নাহূ লামিনাস সা-দিকীন।
৫২. যা-লিকা লিয়া'লামা আন্নী লাম আখুনহু বিল গাইবি ওয়া আন্নাল্লাহা লা- য়াহদী কাইদাল খা-ইনীন। সুরা ইউসুফ। ১২ পারা এখানে শেষ হলো।
অনুবাদ : ৫১. বাদশাহ মহিলাদের বলল, তোমাদের অবস্থা কেমন হয়েছিল যখন তোমরা ইউসুফকে ফুসলাচ্ছিলে? তারা বলল, আল্লাহ মাফ করুন, আমরা তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র দোষ খুঁজে পাইনি। আজিজের স্ত্রী বলল, এবার সত্য ঘটনা সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। আমিই তাঁকে ফুসলিয়েছিলাম। প্রকৃতপক্ষে সে সম্পূর্ণ সত্যবাদী।* ৫২. (কারাগারেই এসব ঘটনা জেনেছিলেন ইউসুফ (আ.)। তখন তিনি বললেন,) আমি এসব এ জন্য করেছি,* যেন আজিজ জেনে নিতে পারেন, আমি গোপনে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। তাছাড়া আল্লাহ কখনো বিশ্বাসঘাতকদের প্রতারণাকে এগোতে দেন না।*
তাফসির : * বাদশাহ আজিজের স্ত্রী জুলায়খার আমন্ত্রণে উপস্থিত মহিলাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যই এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন। বাদশাহ তাদের জিজ্ঞেস করলেন, বল তো, তোমরা আমন্ত্রিত হয়ে আসার পর নিজেদের কুমতলব চরিতার্থ করতে চেয়েছিলে যখন, তখন কী ঘটেছিল? এখানে বর্ণনাভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে, বাদশাহ উপস্থিত সব মহিলার কাছ থেকেই উত্তর জানতে চেয়েছিলেন। বাস্তবে স্ত্রী জুলায়খাকে লক্ষ করেই প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন। জবাবে আমন্ত্রিত সব মহিলাই সমস্বরে বলে উঠল, আল্লাহ মাফ করুন, আমরা তাঁর মধ্যে কোনো দোষ খুঁজে পাইনি। পরে জুলায়খা বলল, ইউসুফ যা বলেছে, সবই সত্য বলেছে। আমিই তাঁকে কুমতলবে ফুসলিয়েছিলাম। তাতে তাঁকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়নি।
* আজিজের স্ত্রী হিসেবে আমি এই স্বীকারোক্তি এ জন্যই দিয়েছি, যেন আমার স্বামী বুঝতে সক্ষম হন, আমি তার অবর্তমানে চরম কোনো খেয়ানত করিনি। অবশ্য ইউসুফের প্রতি লোভ করেছিলাম; তা সত্য হলেও তাকে তাতে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমার স্বীকারোক্তির ফলে তিনি জানার পাশাপাশি বিশ্বাস করবেন, আমিও দোষমুক্ত।
* আল্লাহ তায়ালা বিশ্বাসঘাতকদের সাফল্য দেন না। তাদের ষড়যন্ত্র বেশি দিন চলতে দেন না। ষড়যন্ত্র করে কারো ক্ষতি করা ভালো মানুষের কাজ নয়। শয়তান চির অভিশপ্ত হওয়ায় সে সদা নানামুখী ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতায় নিয়োজিত থাকে। শয়তানের ষড়যন্ত্র বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পেলেও সে মহিলাদের মাধ্যমেই তা বেশি করে থাকে। এটি তার জন্য তুলনামূলক সহজ কাজ। নবী-রাসুল যুগে যুগে আগমন করেছেন। প্রিয়তম রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর পর আর কোনো নবী-রাসুলের আগমন ঘটবে না। শয়তান কিন্তু আগের মতোই আছে। এমনকি তার সাঙ্গপাঙ্গরা নতুন নবী-রাসুল আবির্ভাব না হওয়ার সুযোগে অতিমাত্রায় শয়তানি তৎপরতা পরিচালনা করছে। এ ক্ষেত্রে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণময় জীবন নিশ্চিত করতে চাইলে প্রত্যেককে অবশ্যই কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করতে হবে। বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) তা-ই বলে গেছেন। একমাত্র এই আলোকিত পথে চললেই শয়তানি সব ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। ইউসুফ (আ.)-এর আলোচ্য ঘটনার পরতে পরতে তা-ই প্রমাণ হচ্ছে।
তাফসিরে ইবনে কাছির অবলম্বনে হাসানুল কাদির


No comments

Powered by Blogger.