প্রতিদিন বাড়ছে ডলারের দর, পাওয়াও যাচ্ছে না by মনজুর আহমেদ
বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ায় ডলারের দাম বাড়ছেই। আমদানির জন্য ডলার কিনতে ব্যাংকের ঘোষিত দরই এখন ৮৩ টাকা ৬০ পয়সা। আর অঘোষিত দর গিয়ে ঠেকেছে ৮৬ টাকায়। ডলারের দরের এই ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় ১৬ শতাংশ অবমূল্যায়নের কারণে যেকোনো পণ্য আনতে এখন ২৫ শতাংশ বেশি ব্যয় ধরতে হচ্ছে। আবার সেই ডলারও দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংককেই দেখা গেছে, প্রয়োজনীয় ডলার পেতে তারা
বাংলাদেশ ব্যাংকে ধরনা দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকেও মিলছে না প্রয়োজনীয় জোগান। মূলত ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টালসহ ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অতিরিক্ত জ্বালানি জোগাতেই বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল জোগান দিচ্ছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে। আগামী ছয় মাসে কেবল তেল আমদানি করতেই আগের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে।
সূত্র জানায়, ঘাটতি থাকায় আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। নতুন বছরের প্রথম লেনদেন দিবস ছিল মঙ্গলবার (আন্তর্জাতিক বাজারে প্রথা হচ্ছে বছরের প্রথম লেনদেন দিবসে লেনদেন বন্ধ থাকে। আর রোববার আন্তর্জাতিক বাজারে সাপ্তাহিক বন্ধ)। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত আদৌ লেনদেন হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। পরে বেলা একটার দিকে লেনদেন শুরু হয়। ওই দিন ৮২ টাকা ৫ পয়সা দরে মাত্র ২২ লাখ ডলার হাতবদল হয়। এর আগে সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর লেনদেন হয়েছিল এক কোটি ৬০ থেকে এক কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ কর্মদিবসে আন্তব্যাংকে ডলারের দাম ৮২ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর গতকাল বুধবার আন্তব্যাংকে ডলার বিক্রি হয়েছে ৮২ টাকা ১০ পয়সায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এর বেশি দর উঠতে দেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মাত্র ছয় মাস আগে এক হাজার কোটি ডলারের কিছু বেশি বিদেশি মুদ্রার মজুদ নিয়ে নানা ধরনের কথা বলা হচ্ছিল। একদল ব্যবসায়ী এই মজুদ ভেঙে আফ্রিকায় জমি কিনতে চাপ দেন। কিন্তু দ্রুতই পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন উল্টো অভিযোগ, আমদানির জন্য ডলার মিলছে না।
ডলারের চাহিদা ও সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় টাকার মানও দিনে দিনে কমছে। এক বছরের ব্যবধানে টাকার মূল্যমান কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে আন্তব্যাংকে প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো ৭১ টাকা ১৫ পয়সা। এখন ব্যয় হয় ৮২ টাকা ১০ পয়সার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য বিদায় নেওয়া ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী দীর্ঘদিন বৈদেশিক বিনিময় বিষয়ে কাজ করেছেন। গত ২৯ ডিসেম্বর শেষ কার্যদিবসে বৈদেশিক বিনিময় পরিস্থিতি নিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের একটা বড় বিদেশি ঋণের জোগান দরকার। তবে সেই ঋণ হতে হবে দীর্ঘ মেয়াদের এবং সস্তায়।’
বিপিসির আমদানি প্রাক্কলন: চলতি অর্থবছরের গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে বিপিসি বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করতে ব্যয় করেছে ২০০ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রা। আগামী ছয় মাসে এ জন্য ব্যয় হবে ৪০০ কোটি ডলার। বিপিসি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) এই তথ্য দিয়েছে। এর কিছু অর্থ আইডিবি ও অন্য সংস্থা থেকে পাওয়া যাবে। বাকি ৯৫ শতাংশই জোগান দিতে হবে দেশ থেকে।
এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩৬০ কোটি ডলার। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যয় হয় ২৪০ কোটি ডলার। তবে চলতি অর্থবছরে ব্যয় ধরা হচ্ছে ৬০০ কোটি ডলার। এ ব্যয় বাড়ারও সম্ভাবনা আছে।
অঘোষিত দর: একটি সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ৫০ লাখ ডলারের একটি রপ্তানি-আয় একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনে নেয়। স্বভাবতই এই ডলার বিক্রির দর হবে ৮৬ টাকা।
সামনে আরও চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত মঙ্গলবার দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল ৯৬৩ কোটি ৫৮ লাখ ৮৯ হাজার ডলার। শিগগিরই এশিয়ান ক্লিয়ারিং হাউসের (আকু) মাধ্যমে আমদানি ব্যয় মেটাতে পরিশোধ হবে প্রায় ৭৫ কোটি ডলার। ফলে মজুদ চলে আসবে ৯০০ কোটি ডলারের কিছু নিচে, যা দিয়ে মাত্র দুই মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সাধারণভাবে বলা হয়, অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ মজুদ থাকা প্রয়োজন।
এদিকে ইতিমধ্যেই ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টালসহ যে ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে, তার অনেকগুলোর ক্ষেত্রে আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) মূল্য এখনো পরিশোধ হয়নি বা আংশিক পরিশোধ হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী মাসগুলোতে বিলম্বে পরিশোধ (ডেফার্ড পেমেন্ট) হিসেবে ব্যাংকগুলোকে এই দায় বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। চালু হওয়া ২০টিসহ ৪৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য চুক্তি হয়েছে। ফলে বাকিগুলোর যন্ত্রপাতি আমদানি ও সব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন হবে।
চাপের মধ্যে বৈদেশিক খাত: এ রকম এক পরিস্থিতিতে বৈদেশিক খাতের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যই সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি থাকলেও এর চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে আমদানি। এত দিন এই বাণিজ্য-ঘাটতি মেটানো হতো প্রবাসীদের পাঠানো আয় (রেমিট্যান্স) দিয়ে। বিশ্ব-অর্থনীতির মন্দা ও মধ্যপ্রাচ্য-সংকটে এই আয়ও কমে গেছে। এতে অক্টোবর মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়। তবে ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী-আয় এসেছে। তবে বড় সংকট দেখা দিয়েছে বৈদেশিক সাহায্য খাতে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে দাতারা। অন্যান্য খাতেও ব্যবহূত হচ্ছে না বৈদেশিক সাহায্য। প্রকল্প সাহায্য না এলেও স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে আমদানিও করা হয়েছে। এতে সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় চাপ তৈরি হয়েছে।
সংকট স্বীকার করে ঋণ: সরকার দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সংকটের কথা স্বীকার না করলেও বিদেশে ও ঋণ গ্রহণকারী সংস্থার কাছে তা বলছে। আইএমএফ প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার পেতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।
পাশাপাশি সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকেও বিশেষ মুহূর্তের সহযোগিতা বা ইমিডিয়েট রেসপন্স মেকানিজম (আইআরএম) থেকে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতি অর্থনৈতিক সংকট ও অতি প্রাকৃতিক দুর্যোগেই শুধু আইআরএম থেকে ঋণ পাওয়া যায়। গত ৮ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় এ অর্থ খরচের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিশ্বব্যাংকের যেসব ঋণ নানা কারণে ছাড় করানো যায়নি, ‘পাইপলাইনে’ থাকা এসব ঋণের পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ আইআরএমের আওতায় সরকার পাবে।
সূত্র জানায়, ঘাটতি থাকায় আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। নতুন বছরের প্রথম লেনদেন দিবস ছিল মঙ্গলবার (আন্তর্জাতিক বাজারে প্রথা হচ্ছে বছরের প্রথম লেনদেন দিবসে লেনদেন বন্ধ থাকে। আর রোববার আন্তর্জাতিক বাজারে সাপ্তাহিক বন্ধ)। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত আদৌ লেনদেন হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। পরে বেলা একটার দিকে লেনদেন শুরু হয়। ওই দিন ৮২ টাকা ৫ পয়সা দরে মাত্র ২২ লাখ ডলার হাতবদল হয়। এর আগে সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর লেনদেন হয়েছিল এক কোটি ৬০ থেকে এক কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ কর্মদিবসে আন্তব্যাংকে ডলারের দাম ৮২ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর গতকাল বুধবার আন্তব্যাংকে ডলার বিক্রি হয়েছে ৮২ টাকা ১০ পয়সায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এর বেশি দর উঠতে দেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মাত্র ছয় মাস আগে এক হাজার কোটি ডলারের কিছু বেশি বিদেশি মুদ্রার মজুদ নিয়ে নানা ধরনের কথা বলা হচ্ছিল। একদল ব্যবসায়ী এই মজুদ ভেঙে আফ্রিকায় জমি কিনতে চাপ দেন। কিন্তু দ্রুতই পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন উল্টো অভিযোগ, আমদানির জন্য ডলার মিলছে না।
ডলারের চাহিদা ও সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় টাকার মানও দিনে দিনে কমছে। এক বছরের ব্যবধানে টাকার মূল্যমান কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে আন্তব্যাংকে প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো ৭১ টাকা ১৫ পয়সা। এখন ব্যয় হয় ৮২ টাকা ১০ পয়সার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য বিদায় নেওয়া ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী দীর্ঘদিন বৈদেশিক বিনিময় বিষয়ে কাজ করেছেন। গত ২৯ ডিসেম্বর শেষ কার্যদিবসে বৈদেশিক বিনিময় পরিস্থিতি নিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের একটা বড় বিদেশি ঋণের জোগান দরকার। তবে সেই ঋণ হতে হবে দীর্ঘ মেয়াদের এবং সস্তায়।’
বিপিসির আমদানি প্রাক্কলন: চলতি অর্থবছরের গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে বিপিসি বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করতে ব্যয় করেছে ২০০ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রা। আগামী ছয় মাসে এ জন্য ব্যয় হবে ৪০০ কোটি ডলার। বিপিসি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) এই তথ্য দিয়েছে। এর কিছু অর্থ আইডিবি ও অন্য সংস্থা থেকে পাওয়া যাবে। বাকি ৯৫ শতাংশই জোগান দিতে হবে দেশ থেকে।
এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩৬০ কোটি ডলার। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যয় হয় ২৪০ কোটি ডলার। তবে চলতি অর্থবছরে ব্যয় ধরা হচ্ছে ৬০০ কোটি ডলার। এ ব্যয় বাড়ারও সম্ভাবনা আছে।
অঘোষিত দর: একটি সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ৫০ লাখ ডলারের একটি রপ্তানি-আয় একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনে নেয়। স্বভাবতই এই ডলার বিক্রির দর হবে ৮৬ টাকা।
সামনে আরও চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত মঙ্গলবার দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল ৯৬৩ কোটি ৫৮ লাখ ৮৯ হাজার ডলার। শিগগিরই এশিয়ান ক্লিয়ারিং হাউসের (আকু) মাধ্যমে আমদানি ব্যয় মেটাতে পরিশোধ হবে প্রায় ৭৫ কোটি ডলার। ফলে মজুদ চলে আসবে ৯০০ কোটি ডলারের কিছু নিচে, যা দিয়ে মাত্র দুই মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সাধারণভাবে বলা হয়, অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ মজুদ থাকা প্রয়োজন।
এদিকে ইতিমধ্যেই ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টালসহ যে ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে, তার অনেকগুলোর ক্ষেত্রে আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) মূল্য এখনো পরিশোধ হয়নি বা আংশিক পরিশোধ হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী মাসগুলোতে বিলম্বে পরিশোধ (ডেফার্ড পেমেন্ট) হিসেবে ব্যাংকগুলোকে এই দায় বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। চালু হওয়া ২০টিসহ ৪৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য চুক্তি হয়েছে। ফলে বাকিগুলোর যন্ত্রপাতি আমদানি ও সব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন হবে।
চাপের মধ্যে বৈদেশিক খাত: এ রকম এক পরিস্থিতিতে বৈদেশিক খাতের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যই সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি থাকলেও এর চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে আমদানি। এত দিন এই বাণিজ্য-ঘাটতি মেটানো হতো প্রবাসীদের পাঠানো আয় (রেমিট্যান্স) দিয়ে। বিশ্ব-অর্থনীতির মন্দা ও মধ্যপ্রাচ্য-সংকটে এই আয়ও কমে গেছে। এতে অক্টোবর মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়। তবে ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী-আয় এসেছে। তবে বড় সংকট দেখা দিয়েছে বৈদেশিক সাহায্য খাতে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে দাতারা। অন্যান্য খাতেও ব্যবহূত হচ্ছে না বৈদেশিক সাহায্য। প্রকল্প সাহায্য না এলেও স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে আমদানিও করা হয়েছে। এতে সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় চাপ তৈরি হয়েছে।
সংকট স্বীকার করে ঋণ: সরকার দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সংকটের কথা স্বীকার না করলেও বিদেশে ও ঋণ গ্রহণকারী সংস্থার কাছে তা বলছে। আইএমএফ প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার পেতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।
পাশাপাশি সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকেও বিশেষ মুহূর্তের সহযোগিতা বা ইমিডিয়েট রেসপন্স মেকানিজম (আইআরএম) থেকে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতি অর্থনৈতিক সংকট ও অতি প্রাকৃতিক দুর্যোগেই শুধু আইআরএম থেকে ঋণ পাওয়া যায়। গত ৮ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় এ অর্থ খরচের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিশ্বব্যাংকের যেসব ঋণ নানা কারণে ছাড় করানো যায়নি, ‘পাইপলাইনে’ থাকা এসব ঋণের পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ আইআরএমের আওতায় সরকার পাবে।
No comments