সাংবাদিক নির্যাতনকারীর শাস্তি হোক-এ কেমন সাংসদ?

তিনি একজন সাংসদ। তিনি মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদের একজন সভাপতি। তিনি বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের বলতে পারেন, ‘এদের গুলি করো।’ তিনি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরায় আঘাত করতে পারেন, কবজি মোচড়াতে পারেন একজন নারী সাংবাদিকের। তিনিই বলতে পারেন, ‘করুক রিপোর্ট...আমার কী করতে পারে, দেখি।’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি-প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির প্রতিবাদ অভিভাবকেরা করেছেন, সাংবাদিকেরা সেই সত্য যুগপৎ জনগণ ও


সরকারের সামনে তুলেও ধরেছেন। আমরা এখন দেখতে চাইব, মিরপুর-২ আসনের সাংসদ কামাল মজুমদারের এই বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়। এ রকম ঘৃণ্য আচরণের প্রতিকার না করা হলে, আইনের শাসন এবং গণতন্ত্রের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে।
সাংসদের আরেক পরিচয় আইনপ্রণেতা। যিনি আইন প্রণয়ন করেন, তিনি গুলি করার হুমকি দেন কীভাবে? কথার তোড়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে যুবকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ঘোরেন তাঁদের সঙ্গে পিস্তল-বন্দুক থাকে। নইলে কীভাবে তিনি গুলি করার হুমকি দেন? তিনি এবং তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন যেভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় সাংবাদিকদের হেনস্তা ও শারীরিক আঘাত করেছেন, তাতে মনে হয় তিনি জনপ্রতিনিধি নন, দাপুটে গডফাদার।
এ ঘটনায় মিরপুরের মনিপুর বিদ্যালয়ে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগটি আরও জোরালোই হলো। অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন, সেখানে সরকার-নির্ধারিত ফির বাইরেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতেও নেওয়া হচ্ছে লাখ পরিমাণ টাকা—অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতি করে দিয়েছিল যে রাজধানীর যেকোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাবদ পাঁচ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। ঢাকার বাইরে এই সীমা তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া ডোনেশন বা উন্নয়ন ফি নেওয়ার কোনো সুযোগও কোথাও রাখা হয়নি। কিন্তু মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ তো বটেই, ঢাকার নামীদামি বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অবৈধভাবে অর্থ নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিধিমালা করেই খালাস; বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সেই খোঁজ নেই।
সারা দেশেই প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি-প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে গেছে টাকার লেনদেন। বিনা রসিদে উন্নয়ন ফির নাম করে অসহায় অভিভাবকদের চাপ দিয়ে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংসদ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করার এই কুফল অস্বীকার করা যায় না।
শিক্ষামন্ত্রী এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তকাজও শুরু করা হয়েছে। আমরা আশা করব, স্কুল-কলেজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতির যুগল দূষণ বন্ধ হবে। একই সঙ্গে সাংসদ কামাল মজুমদারের প্রমাণিত দুষ্কৃতিরও শাস্তি হবে।

No comments

Powered by Blogger.