প্রতারক চক্রের হাত কত লম্বা?-লিবিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি

প্রবাসে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্ভাগ্যের কবলে পড়ার খবর মোটামুটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার খবর এসেছে লিবিয়া থেকে: ৩২২ জন বাংলাদেশি সেখানে ক্যাম্পের মধ্যে মানবেতর জীবনে পড়ে আছেন। তাঁরা সবাই টাকার বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে কাজের আশায় লিবিয়ায় অনুপ্রবেশ করেছেন। কিন্তু কাজের অনুমতিপত্র ছাড়া, এমনকি বিনা পাসপোর্টে কে তাঁদের কাজ দেবে? লিবীয় পুলিশের চোখে তাই তাঁরা অবৈধ প্রবেশকারী। লিবিয়ার আল-কুফরা শহরের


একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে এ রকম ৩০৬ জন আটক অবস্থায় আছেন, আরেকটি ক্যাম্পে রয়েছেন আরও ১৬ জন।
স্বদেশে যাঁদের ভাগ্য ফেরে না, তাঁদের অনেকেই প্রবাসযাত্রাকে ভাগ্য ফেরানোর সদর দরজা বলে ভাবতে ভালোবাসেন। চারপাশের অনেকেই এই পথে স্বাবলম্বী হওয়ায় তাঁরাও আশায় বুক বাঁধেন। তারপর জমি-গয়না বেচে, ঋণ করে টাকা তুলে দেন কোনো দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধির কাছে। বাস্তবে দেখা যায়, তাঁদের অনেকেই প্রতারিতই হন। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে এ রকম বিপদে পড়া বাংলাদেশিদের খবর জানা যাচ্ছে।
লিবিয়ার ঘটনায় দেখা গেল, লিবিয়ার বাংলাদেশি দূতাবাসের দিক থেকে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা তেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তাঁদের খবরটি পর্যন্ত প্রথম আলো জানতে পেরেছে লিবিয়ায় কর্মরত এক প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকের মাধ্যমে। এই ৩২২ জন বাংলাদেশি প্রতিবেশি বিভিন্ন দেশ হয়ে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছেন। জানা দরকার, যাত্রাপথের অন্য দেশগুলোতে কতজন আটকা পড়েছেন?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত প্রতারক চক্রের নেটওয়ার্কও উন্মোচিত হওয়া দরকার। বরাবর দেখা যায়, জনশক্তি রপ্তানি তদারকি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা কিংবা সরকারি কর্মকর্তারা ‘প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলে হম্বিতম্বি করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও দালালদের দোহাই দিয়ে পার পেতে চায়। সম্প্রতি নতুন অভিবাসন আইনের খসড়া প্রণীত হয়েছে, যাতে দালালদের নিবন্ধন নম্বর ও পরিচয়পত্র দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। এখন এর বাস্তবায়ন জরুরি। সেই সঙ্গে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। দেশে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় আরও সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.