শিক্ষা-দারিদ্র্য যেন দেয়াল না হয়
মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও গরিব পরিবারের সন্তানদেরও উন্নতমানের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ থাকতে হবে_ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির এ আহ্বানের সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ নেই। এ জন্য বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর যে নির্দেশ তিনি দিয়েছেন, তাও সবাই সমর্থন করবেন। বস্তুত ওই প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই নানাভাবে বৃত্তি প্রদান করে আসছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোই কি সমাধান? একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীর কত অংশকে
বিনা খরচে পড়াতে পারবে, তারও নিশ্চয়ই সীমারেখা রয়েছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান যেভাবে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারে এবং তা যে মাত্রায় কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন থাকে; নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নাও হতে পারে। আমরা বরং প্রত্যাশা করতে পারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি পড়াশোনার ফি যুক্তিযুক্ত পর্যায়ে রাখার ব্যাপারেও সচেষ্ট হবে। সেখানকার পড়াশোনার খরচ জোগানো আমাদের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় অনেক পরিবারের জন্যই দুঃসাধ্য। ফলে সুযোগ থাকলেও অনেকের সাধ্যে কুলোয় না। খরচ কিছুটা কমানো হলে আরও বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিতে পারবে। মেধা নিশ্চিত করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বরং ভর্তি পরীক্ষায় ছাড় না দেওয়ার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। অস্বীকার করা যাবে না, কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেশের প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই প্রবল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ভর্তি হতে হয়। কিন্তু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে এখনও অর্থের জোরই ভর্তির প্রধান যোগ্যতা, তা অস্বীকার করা যাবে? রাষ্ট্রপতি যদিও দরিদ্র শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, তাতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও সাড়া দেওয়া উচিত। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যে হারে বেতন-ফি বাড়ছে, তা অনেক পরিবারের নাগালের বাইরে। বৃত্তিও খুব দৃশ্যমান নয়। এ নিয়ে দলবাজি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগও রয়েছে। আমরা চাই, উচ্চশিক্ষার জন্য মেধাই হোক একমাত্র মানদণ্ড। উন্নত জাতি গঠন করতে হলে এর বিকল্প নেই। শিক্ষার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য যেন দেয়াল হয়ে না দাঁড়াতে পারে।
No comments