পুলিশের সেবা হ্রাস-পেশাদারিত্ব গড়ে উঠবে কবে?

পুলিশে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকরা ভালোই জানেন। থানায় গিয়ে সেবা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। প্রতিকারের প্রত্যাশা করা অর্থবান-ক্ষমতাবানদেরই সাজে। সুতরাং বহু চর্চিত এসব অভিযোগ যখন পুলিশের বিরুদ্ধে তোলা হয় তারা সেগুলো তেমন গায়ে মাখে না। কিন্তু মঙ্গলবার এসব জানা অভিযোগ যখন পুলিশেরই একজন শীর্ষ কর্মকর্তা, বর্তমানে আইজি পদমর্যাদাপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশের সমন্বয়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ


কর্মকর্তাদের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন, তখন সবারই চোখ কপালে ওঠার কথা। নিজের সার্ভিসের করুণ অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই ওই পুলিশ কর্তার বিবেক দংশিত হয়েছে। সে কারণেই হয়তো তিনি অনেকের বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও এসব বিষয় মঙ্গলবার আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় সভায় চাঁচাছোলাভাবে তুলে ধরেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের কাজের সমন্বয়হীনতা, পুলিশের প্রতি মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা এবং নানা সীমাবদ্ধতার যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেন, সেগুলোও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারেননি। আসলে এসব অভিযোগ এতটাই প্রকাশ্য যে, কোনো সরকারের পক্ষেই এগুলোকে পাশ কাটিয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয়। কেন পুলিশ থানায় জনগণকে প্রতিশ্রুত সেবা প্রদান করে না? এ ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের ঘাটতি ও পুলিশ জনগণের সেবক, প্রভু নয়_ এই মানসিকতা গড়ে না ওঠাকে দায়ী করা চলে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করাও এ জন্য কম দায়ী নয়। এর সঙ্গে পুলিশের রিত্রুক্রটিং থেকে শুরু করে পোস্টিং, পদোন্নতি প্রায় সবক্ষেত্রেই দুর্নীতির সর্বনাশা প্রভাব বিস্তার যুক্ত হয়। যাত্রাতেই যে পুলিশটি দুর্নীতি নামক সামাজিক ব্যাধিকে সঙ্গী করে কর্মজীবন শুরু করেন, তার কাছে কতটুকুু ন্যায়পরায়ণতা আশা করা যায়! তার ওপর ভালো জায়গায় পোস্টিং পেতে গেলে নজরানার অর্থের পরিমাণও পিলে চমকানোর মতো অঙ্কে বাড়তে থাকে। যিনি বা যারা এভাবে পোস্টিং নেন, তারা তাদের ঘুষ হিসেবে ব্যয় করা অর্থ দায়িত্ব পাওয়ার পরমুহূর্ত থেকেই তোলার চেষ্টা করেন। এ জন্য গাজীপুরের ডিসিকে ওসির বিরুদ্ধে থানায় জিডি পর্যন্ত করতে হয়েছে। কারণ ওসি নিশ্চয়ই এতটা ক্ষমতাবান যে, বিনা অপরাধে সাধারণ মানুষকে থানায় আটক রেখে নির্যাতন চালিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এসপি কিছু করতে পারবেন বলে নিজেই আস্থাবান ছিলেন না। এভাবেই পুলিশের দায়িত্বশীলতাও উবে যায়। জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রভাব খাটানোর কারণে নির্দিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তা তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অনেক সময় তোয়াক্কা করেন না। এই প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা রোগ বিস্তৃত হয় ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার পুলিশকে মানবাধিকার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা আশা করব, পুলিশ তার এই প্রত্যাশা পূরণ করুক। তবে এ জন্য পুলিশকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান যথেষ্ট নয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থাও কার্যকর করা চাই। তাহলে এ বিষয়ে উন্নতিযোগ লক্ষ্য করা যাবে। রিত্রুক্রটিং থেকে শুরু করে সর্বত্র বিস্তৃত দুর্নীতির বিষবৃক্ষকে উপড়ে ফেলতে হবে এবং পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। থাকতে হবে পেশাদারি মনোভাব। তাহলেই পুলিশ তার দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন কর্তব্যকে সুচারুরূপে সম্পাদন করতে পারবে। তখন মানুষ থানায় গিয়ে পুলিশের কাছ থেকে প্রতিকার ও ভালো ব্যবহার আশা করতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.