মহিউদ্দিন শীরুর সঙ্গে দেখা by শামীম আজাদ
একেকটি মৃত্যু আসে আর আমি আরও ছোট হয়ে যাই। প্রতিটি মৃত্যু আমার অসহায়ত্বকে বড় করে তোলে। আমার অসহায়ত্ব দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। আমার বড় একা একা লাগে। আমার যাওয়ার দিনের কথা মনে হয়। আমরা যে এসেছিলাম সেটাই বিস্ময়ের মতো লাগে। আমরা যে পৃথিবীর পথে পথে ধৈর্য ও প্রত্যাশা নিয়ে সেই দিনকে এই দিনের কাছে নিয়ে এসেছি কখন, জানতেও পারিনি।
কেবল প্রিয়জন চলে গেলে সে ঘোর কেটে যায়। ফালা ফালা হয়ে যায় প্রাত্যহিকীর বেড়াজাল। ধাই ধাই করে ছুটতে থাকে স্মৃতির ঘোড়া। ছুটতে থাকে পাগলের মতো। পথে পথে টান মেরে উপড়ে ফেলে একেকটি ক্যালেন্ডারের গাছ। প্রতিটিরই ফল ছিল, রূপ-রস-ঘ্রাণ ছিল। প্রতিটি সম্পর্কের শিকড় ছিল আর ছিল বীজ বপনের কাল। হঠাত্ করে প্রথিতযশা সাংবাদিক মহিউদ্দিন শীরুর প্রয়াণে মনে পড়ে যায় তাঁর কথা। আহা প্রথম দেখার কাল!
সম্ভবত ১৯৯৪ সাল। আমি বিলেত থেকে নাটক লেখার ওপর প্রশিক্ষণ পরিচালনা করতে দেশে গেছি। হাফমুন থিয়েটারের জন্য মাত্র একটি মঞ্চনাটক লিখেছি। তাও আবার মেরি কুপারের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধে। তখন কী-ই বা জানি নাটক লেখা নিয়ে। মেরি তখন স্বনামধন্য। আমারই মাথায় চাপল, যে মজা আমি পেয়েছি তার ভাগীদার করব আমাদের নাটকের তরুণদের। তাকে দেশে নিয়ে গেলাম আর আমি হলাম বাংলাদেশে লেগে থাকা তার নাভি কিংবা নোঙর। ঢাকায় ঢাকা থিয়েটার (হিমু) সমন্বয়ের কাজ করল আর সিলেটে সন্ধানী (আরজু)।
কিন্তু দেশে যাওয়ার আগেই এখান থেকে যার নাম, পরিচিতি ও অবস্থান সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত হলাম, তিনি মহিউদ্দিন শীরু। গীতিকার, কবি ও সাংবাদিক। সবচেয়ে বড় কথা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রসে সিক্ত তাঁর হূদয় কমল। বিলেতের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক সুরমার সূচনালগ্নে তিনিই তার ভিত গেড়ে দেন শক্ত হাতে। আর এখানেরই সাপ্তাহিক পত্রিকার শ্রী ও ছাঁদের যাচাই-বাছাইও তাঁর হাতে। বিলেতের তরুণ বাঙালি সাংবাদিকদের তিনি ছিলেন এক কঠিন কম্পাস। তাঁর স্বপ্ন কাগজ সুদিন, গ্রাম সুরমা যেন ম্লান মলাটে ঢেকে ফেলেছে পুরো ব্রিকলেন। তাঁর এ অকস্মাত্ প্রয়াণে পুরো বাঙালিপাড়া ঝুলে পড়েছে।
তখন সিলেটের বালাগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছেন বলে জানি না। শীরু ভাই, এত নিরুচ্চারী তিনি যে তাঁকে কেন্দ্র করেই একটি কলেজের সব কোলাহল, অগ্রযাত্রা ও স্থিতি কখনো বলেননি। কিন্তু তখন তাঁর অভিনিবেশ পূর্ণ সাংবাদিকতার কথা ও তাঁর হাতে তরুণদের হাতেখড়ি হয় পরম মমতায় তা জানি। জানি, সিলেটের প্রাগ্রসর মানুষদের তিনি অন্যতম। দেখা হলো আমাদের কেন্দ্র করে আয়োজিত সুধীজন সমাবেশে। হাতে একখানা বই বা ডায়েরি ছিল। এখন মনে হচ্ছে তাঁকে আমি বই ছাড়া কখনো দেখিনি। সুপক্ব গমের বর্ণ। দীপ্ত দুই চোখ। আর দৃঢ় কিন্তু মায়াধারী কণ্ঠস্বর। সেদিন কী বই ছিল তাঁর হাতে? তাঁর কবিতার, না গানের বই? নাকি হলে আসার আগে ‘বইপত্র’ থেকে নিয়ে এসেছেন সদ্য প্রকাশিত কোনো বই—নোম চমস্কি! আমি কখনো জানিনি। আজ মনে হচ্ছে, এত কাছাকাছি পেয়ে আমি একজন মহিউদ্দিন শীরুকেই পাঠ করতে পারিনি অথচ আমার অর্ধশতাব্দী কাল চলে গেছে।
শীরু ভাইয়ের প্রয়াণে আজ এসব ভাবনা এসে ভিড় করে মাথায়। আরও ভাবি কত ফল ধরলে তবে বৃক্ষ এত অবনত হয়। কত ধন ধারণ করলে আর কৃপণতা থাকে না। কতটা পথ হাঁটলে পরে মাথার ওপর পাখিদের ছায়া দেখা যায়। হায়রে শীরু ভাই, প্রথম দেখাতেও তা বুঝতে পারিনি। আপনি কেবল আপনার পুরোটা নাম বলেছিলেন। এদিকে তার আগে প্রেসক্লাবে (হয়তো, স্থানটি আজ আর মনে পড়ে না) সেই বিদেশিনী নাট্যকার সহকর্মীর সামনে ততক্ষণে স্থানীয় বুদ্ধিজীবী ও সুধীজনের বাচনে, বক্তব্যে ও বাগ্মিতায় আমরা বিমূঢ় হয়ে পড়েছি। খাবার খেতে ওঠার কালে পাশে এসে আপনি দাঁড়ালেন। চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিতেই আপনার কপালটুকু পরিষ্কার হয়ে ফুটল। সাদার মধ্যে একটি হালকা স্ট্রাইপ ফুলহাতা শার্ট ছিল গায়ে। আপনার পুরো নাম বলেই বিলেতের বন্ধুদের কুশল জিজ্ঞেস করেছিলেন। আর আমি হলের সমস্ত কথাবার্তা ছাপিয়ে উচ্চ স্বরে বলেছিলাম, আপনি সেই বিখ্যাত শীরু ভাই! আপনি আপনার শ্যামল গালে হাসির প্রভায় কৌতুকের তারা ঝরিয়ে বলেছিলেন, ওরা তাই বলেছে বুঝি!
এত দিন পর আজ আর মনে নেই হুবহু কী কী কথা হয়েছিল। কিন্তু আপনি যে ঋদ্ধ ও নিরুচ্চারী জন সে আমি তখনই বুঝেছিলাম। তারপর সেবারই নাটক নিয়ে ভালো কথাবার্তা হলো, গান ও কবিতা নিয়েও। আপনার কাছ থেকেই শুনি বিদ্যুত দা (বিদ্যুত কর) আর হ্যারল্ডের (রশিদ) কথা।
সেবার শীরু ভাইয়ের বিদুষী ও বুদ্ধিমতী স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়নি। দেখিনি তাঁর চমত্কার সুসন্তানদের। তাঁর বাড়িতেও যাওয়া হয়নি। গেছি আরও পরে। কয়েকবার। আত্মীয় হয়ে গেঁথে গেছি। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের সঙ্গে প্রথম দেখার ক্ষণ ভোলা যায় না। আর সে মানুষের সমিল চেহারা দেখলে তাঁর কথা মনে পড়ে। কিন্তু আমি শীরু ভাইয়ের মতো কাউকে দেখিনি। পাইনি হাসিনা ভাবির মতো অত মায়াবতী নারী। তাঁরা ছিলেন দুজনে দুজনার।
আমাদের ট্রেন ঢাকা ছাড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে শীরু ভাই এলেন। আমি আর মেরি তখন ‘পারাবার’র জানালা দিয়ে উবু হয়ে আছি। এখনই ছাড়বে গাড়ি। আর আমরা ক্রমেই দূর থেকে আরও দূরে চলে যাব। তিনি ট্রেনে উঠে এলেন। বসলেন। গাড়ি ছেড়ে দেবে জেনেও কী অচঞ্চল! তারপর তাঁর বিলেতের বন্ধুদের সবার নাম করে শুভেচ্ছা জানাতে বলে হাতের বইটি দিলেন। সিলেটের একটি ডায়েরি, যা কি না সত্যিকার অর্থে সিলেটের গেজেট।
ট্রেন ছেড়ে দিলেও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। সব তরুণ-তরুণী হাত নাড়ছে। শীরু ভাই হাত নাড়ছেন। একসময় সিলেট ও মানুষ দুই-ই মিলিয়ে গেল। আমি সিটে বসে পাতা উল্টাতে থাকলাম সিলেটের ইতিবৃত্তে আর ইতিহাসে। আর বুঝলাম, মেঘ দেখে যারা জলের খবর বলতে পারে, তিনি তার একজন। কী করে বুঝেছিলেন অনাবাসী আমির জন্য এর বড্ড প্রয়োজন!
‘যে পাখি অমনি এসেছিলো তারে অমনি যেতে দিতে হয়।’ কারণ সে চলে যাবেই। যেন যাবার জন্যই এসেছিল, তবু যে সে পাখি আমাদের ডালে এসে কিছু কাল বসেছিল। গান গেয়ে আমাদের সাদামাটা ঘর-গৃহস্থালি আলোকিত করেছিল সেও তো আমাদের ভাগ্য।
বইটি আছে। মানুষ নেই। পাখিরা উড়ে গেলে তার পালক ফেলে যায়।
কেবল প্রিয়জন চলে গেলে সে ঘোর কেটে যায়। ফালা ফালা হয়ে যায় প্রাত্যহিকীর বেড়াজাল। ধাই ধাই করে ছুটতে থাকে স্মৃতির ঘোড়া। ছুটতে থাকে পাগলের মতো। পথে পথে টান মেরে উপড়ে ফেলে একেকটি ক্যালেন্ডারের গাছ। প্রতিটিরই ফল ছিল, রূপ-রস-ঘ্রাণ ছিল। প্রতিটি সম্পর্কের শিকড় ছিল আর ছিল বীজ বপনের কাল। হঠাত্ করে প্রথিতযশা সাংবাদিক মহিউদ্দিন শীরুর প্রয়াণে মনে পড়ে যায় তাঁর কথা। আহা প্রথম দেখার কাল!
সম্ভবত ১৯৯৪ সাল। আমি বিলেত থেকে নাটক লেখার ওপর প্রশিক্ষণ পরিচালনা করতে দেশে গেছি। হাফমুন থিয়েটারের জন্য মাত্র একটি মঞ্চনাটক লিখেছি। তাও আবার মেরি কুপারের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধে। তখন কী-ই বা জানি নাটক লেখা নিয়ে। মেরি তখন স্বনামধন্য। আমারই মাথায় চাপল, যে মজা আমি পেয়েছি তার ভাগীদার করব আমাদের নাটকের তরুণদের। তাকে দেশে নিয়ে গেলাম আর আমি হলাম বাংলাদেশে লেগে থাকা তার নাভি কিংবা নোঙর। ঢাকায় ঢাকা থিয়েটার (হিমু) সমন্বয়ের কাজ করল আর সিলেটে সন্ধানী (আরজু)।
কিন্তু দেশে যাওয়ার আগেই এখান থেকে যার নাম, পরিচিতি ও অবস্থান সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত হলাম, তিনি মহিউদ্দিন শীরু। গীতিকার, কবি ও সাংবাদিক। সবচেয়ে বড় কথা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রসে সিক্ত তাঁর হূদয় কমল। বিলেতের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক সুরমার সূচনালগ্নে তিনিই তার ভিত গেড়ে দেন শক্ত হাতে। আর এখানেরই সাপ্তাহিক পত্রিকার শ্রী ও ছাঁদের যাচাই-বাছাইও তাঁর হাতে। বিলেতের তরুণ বাঙালি সাংবাদিকদের তিনি ছিলেন এক কঠিন কম্পাস। তাঁর স্বপ্ন কাগজ সুদিন, গ্রাম সুরমা যেন ম্লান মলাটে ঢেকে ফেলেছে পুরো ব্রিকলেন। তাঁর এ অকস্মাত্ প্রয়াণে পুরো বাঙালিপাড়া ঝুলে পড়েছে।
তখন সিলেটের বালাগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছেন বলে জানি না। শীরু ভাই, এত নিরুচ্চারী তিনি যে তাঁকে কেন্দ্র করেই একটি কলেজের সব কোলাহল, অগ্রযাত্রা ও স্থিতি কখনো বলেননি। কিন্তু তখন তাঁর অভিনিবেশ পূর্ণ সাংবাদিকতার কথা ও তাঁর হাতে তরুণদের হাতেখড়ি হয় পরম মমতায় তা জানি। জানি, সিলেটের প্রাগ্রসর মানুষদের তিনি অন্যতম। দেখা হলো আমাদের কেন্দ্র করে আয়োজিত সুধীজন সমাবেশে। হাতে একখানা বই বা ডায়েরি ছিল। এখন মনে হচ্ছে তাঁকে আমি বই ছাড়া কখনো দেখিনি। সুপক্ব গমের বর্ণ। দীপ্ত দুই চোখ। আর দৃঢ় কিন্তু মায়াধারী কণ্ঠস্বর। সেদিন কী বই ছিল তাঁর হাতে? তাঁর কবিতার, না গানের বই? নাকি হলে আসার আগে ‘বইপত্র’ থেকে নিয়ে এসেছেন সদ্য প্রকাশিত কোনো বই—নোম চমস্কি! আমি কখনো জানিনি। আজ মনে হচ্ছে, এত কাছাকাছি পেয়ে আমি একজন মহিউদ্দিন শীরুকেই পাঠ করতে পারিনি অথচ আমার অর্ধশতাব্দী কাল চলে গেছে।
শীরু ভাইয়ের প্রয়াণে আজ এসব ভাবনা এসে ভিড় করে মাথায়। আরও ভাবি কত ফল ধরলে তবে বৃক্ষ এত অবনত হয়। কত ধন ধারণ করলে আর কৃপণতা থাকে না। কতটা পথ হাঁটলে পরে মাথার ওপর পাখিদের ছায়া দেখা যায়। হায়রে শীরু ভাই, প্রথম দেখাতেও তা বুঝতে পারিনি। আপনি কেবল আপনার পুরোটা নাম বলেছিলেন। এদিকে তার আগে প্রেসক্লাবে (হয়তো, স্থানটি আজ আর মনে পড়ে না) সেই বিদেশিনী নাট্যকার সহকর্মীর সামনে ততক্ষণে স্থানীয় বুদ্ধিজীবী ও সুধীজনের বাচনে, বক্তব্যে ও বাগ্মিতায় আমরা বিমূঢ় হয়ে পড়েছি। খাবার খেতে ওঠার কালে পাশে এসে আপনি দাঁড়ালেন। চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিতেই আপনার কপালটুকু পরিষ্কার হয়ে ফুটল। সাদার মধ্যে একটি হালকা স্ট্রাইপ ফুলহাতা শার্ট ছিল গায়ে। আপনার পুরো নাম বলেই বিলেতের বন্ধুদের কুশল জিজ্ঞেস করেছিলেন। আর আমি হলের সমস্ত কথাবার্তা ছাপিয়ে উচ্চ স্বরে বলেছিলাম, আপনি সেই বিখ্যাত শীরু ভাই! আপনি আপনার শ্যামল গালে হাসির প্রভায় কৌতুকের তারা ঝরিয়ে বলেছিলেন, ওরা তাই বলেছে বুঝি!
এত দিন পর আজ আর মনে নেই হুবহু কী কী কথা হয়েছিল। কিন্তু আপনি যে ঋদ্ধ ও নিরুচ্চারী জন সে আমি তখনই বুঝেছিলাম। তারপর সেবারই নাটক নিয়ে ভালো কথাবার্তা হলো, গান ও কবিতা নিয়েও। আপনার কাছ থেকেই শুনি বিদ্যুত দা (বিদ্যুত কর) আর হ্যারল্ডের (রশিদ) কথা।
সেবার শীরু ভাইয়ের বিদুষী ও বুদ্ধিমতী স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়নি। দেখিনি তাঁর চমত্কার সুসন্তানদের। তাঁর বাড়িতেও যাওয়া হয়নি। গেছি আরও পরে। কয়েকবার। আত্মীয় হয়ে গেঁথে গেছি। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের সঙ্গে প্রথম দেখার ক্ষণ ভোলা যায় না। আর সে মানুষের সমিল চেহারা দেখলে তাঁর কথা মনে পড়ে। কিন্তু আমি শীরু ভাইয়ের মতো কাউকে দেখিনি। পাইনি হাসিনা ভাবির মতো অত মায়াবতী নারী। তাঁরা ছিলেন দুজনে দুজনার।
আমাদের ট্রেন ঢাকা ছাড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে শীরু ভাই এলেন। আমি আর মেরি তখন ‘পারাবার’র জানালা দিয়ে উবু হয়ে আছি। এখনই ছাড়বে গাড়ি। আর আমরা ক্রমেই দূর থেকে আরও দূরে চলে যাব। তিনি ট্রেনে উঠে এলেন। বসলেন। গাড়ি ছেড়ে দেবে জেনেও কী অচঞ্চল! তারপর তাঁর বিলেতের বন্ধুদের সবার নাম করে শুভেচ্ছা জানাতে বলে হাতের বইটি দিলেন। সিলেটের একটি ডায়েরি, যা কি না সত্যিকার অর্থে সিলেটের গেজেট।
ট্রেন ছেড়ে দিলেও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। সব তরুণ-তরুণী হাত নাড়ছে। শীরু ভাই হাত নাড়ছেন। একসময় সিলেট ও মানুষ দুই-ই মিলিয়ে গেল। আমি সিটে বসে পাতা উল্টাতে থাকলাম সিলেটের ইতিবৃত্তে আর ইতিহাসে। আর বুঝলাম, মেঘ দেখে যারা জলের খবর বলতে পারে, তিনি তার একজন। কী করে বুঝেছিলেন অনাবাসী আমির জন্য এর বড্ড প্রয়োজন!
‘যে পাখি অমনি এসেছিলো তারে অমনি যেতে দিতে হয়।’ কারণ সে চলে যাবেই। যেন যাবার জন্যই এসেছিল, তবু যে সে পাখি আমাদের ডালে এসে কিছু কাল বসেছিল। গান গেয়ে আমাদের সাদামাটা ঘর-গৃহস্থালি আলোকিত করেছিল সেও তো আমাদের ভাগ্য।
বইটি আছে। মানুষ নেই। পাখিরা উড়ে গেলে তার পালক ফেলে যায়।
No comments