চ্যানেল নেবেন-গো চ্যা-নে-ল! -সময়ের প্রতিবিম্ব by এবিএম মূসা
বৈঠকের স্থান: একজন মন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। আলোচ্য বিষয়: সদ্য অনুমতিপ্রাপ্ত একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অংশীদারি তথা মালিকানা বিক্রয়। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ: ১. মন্ত্রী মহোদয়, ২. একজন প্রতিমন্ত্রী ও তাঁর দুজন নিকটাত্মীয়, যাঁরা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন ১০টি অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের একটি পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। ৩. একটি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিকের প্রকাশক-শিল্পপতি। ৪. প্রতিবেদক স্বয়ং যিনি মন্ত্রী ও প্রকাশক-শিল্পপতির বিশেষ অনুরোধে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অর্থাত্ আমি নিজেও প্রায় দুই বছরের অধিক সময় অপেক্ষা করছি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুমতির জন্য। জনশ্রুতি হচ্ছে, চ্যানেল বণ্টনে প্রাপ্তির দলীয় আনুগত্যের নিরিখে যোগ্য বিবেচিত হইনি। কারণ চ্যানেলের লাইসেন্সপ্রাপ্তির ‘যোগ্যতা বিবেচনার’ মানদণ্ড নাকি ছিল ‘নির্ভেজাল’ আওয়ামী লীগার বা অন্ধ সমর্থক হতে হবে, নিঃসংশয়ে ‘আমাদের লোক’।
আলোচনা-বৈঠকে কথিত চ্যানেলের লাইসেন্সপ্রাপ্তদের পক্ষে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশক-শিল্পপতির লেনদেন নিয়ে আলোচনা চলছে। নিজস্ব চ্যানেলটি পাইনি বলে আভাস দেওয়া হলো, তার পরও কোন বিবেচনায় আমাকে অন্য চ্যানেলের একজন অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলো বুঝলাম না। আমার এই ব্যবসায়িক আলোচনায় কোনো আগ্রহ ছিল না। বৈঠক ছেড়ে চলে গেলাম দোতলায়, স্নেহাস্পদ মন্ত্রী মহোদয়ের সুশীলা স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করতে। কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে জানলাম, লেনদেন-আলোচনা ভেঙে গেছে। কয়েক দিন পর পত্রিকার প্রকাশক-শিল্পপতি টেলিফোন করে জানালেন, আওয়ামী লীগের একজন উচ্চপর্যায়ের নেত্রীর ছেলে অংশীদারে ভিত্তিতে আরেকটি প্রস্তাবিত চ্যানেলে পুরো অর্থ লগ্নি করে অর্ধেক মালিকানা নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। আরও তিন-চারজন বেসরকারি চ্যানেলের লাইসেন্সপ্রাপ্তির দাবিদার তাঁদের পসরা নিয়ে শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের দরজায় টোকা দিচ্ছেন বলেও খবর পেয়েছি। প্রসঙ্গত বলতে হচ্ছে যে ১০টি চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, এর মধ্যে একটি আমার সংবিধিবদ্ধ ‘একাত্তর’ নামটিও দখল করেছেন। শুনে অবাক হইনি। বর্তমান সরকারের একদল সর্বগ্রাসী বিশাল নদী, জমি-জিরাত ও বাড়িঘর দখল করছে, এ তো মাত্র তুচ্ছ একটি ‘নাম’।
মনে হচ্ছে, নতুন বেসরকারি চ্যানেলের লাইসেন্স প্রদান নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে তেলেসমাতি কারবার চলছে। সব শুনে ভাবছি, কী মধু না-জানি বেসরকারি চ্যানেলে! বর্তমানে যে আটটি বেসরকারি চ্যানেল চালু আছে, একটি ব্যতীত বাকি সবই কোটি কোটি টাকা লোকসানে চলছে। একটি বাদে বাকিগুলো দলীয় আনুগত্যের বিবেচনায় বিএনপির সরকারের আমলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত। এর চারটিই কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে হাতবদল হয়ে গেছে। একটি বিএনপি ঘরানার মালিকের কাছ থেকে আওয়ামীপন্থী দুই সাংসদ কিনে নিয়েছেন। এসব চ্যানেল সওদাগিরির বিশেষত্ব হচ্ছে, বিএনপির আমলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রুগ্ণ চ্যানেলগুলো কিনে নিয়েছেন একই রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী শিল্পপতিরা। বর্তমান আওয়ামী লীগ ঘরানার লাইসেন্সপ্রাপ্ত বলে প্রচারিত চ্যানেল ফেরিওয়ালারা সমমতাবলম্বীদের কেউ প্রস্তাবিত বেসরকারি চ্যানেলের স্বত্ব কিনবেন কি না তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, তথাকথিত অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি চ্যানেলের সম্ভাব্য ক্রেতা হচ্ছেন যাঁর বিরুদ্ধে একাত্তরে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে এমন একজন শীর্ষস্থানীয় বিএনপির নেতা। হাওয়া থেকে পাওয়া খবরটি সত্যি কি না জানি না, তবে বৈঠকে তাঁর অনুসারী কয়েকজনের উপস্থিতিতে আমার মনেও সেদিন এমন একটি সন্দেহ উঁকি মেরেছিল।
১০টি বেসরকারি চ্যানেলের অনুমতি যে সরকারি দলের প্রতি নিখাদ আনুগত্যের ভিত্তিতে বিলি করা হয়েছে, তাতে আপত্তির কোনো কারণ নেই। বেসরকারি চ্যানেল বিতরণের কোনো বাঁধাধরা নিয়মকানুন বা নীতিমালা নেই। তদুপরি বর্তমানে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সংবাদপত্রের চেয়েও অধিকতর প্রভাবশালী মনে করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তি-কৌশল প্রয়োগের কারণে বেসরকারি টেলিভিশনেরও দর্শক রয়েছে সুদূর গ্রাম-গঞ্জে। চোখে দেখা আর কানে শোনা যেকোনো সংবাদ বা রাজনৈতিক মতামত ছাপার অক্ষরে দেওয়া তথ্য ও তত্ত্বের চেয়ে সাধারণ্যে অধিকতর প্রভাব ফেলছে। এ কারণে যেকোনো সরকার বা ক্ষমতাসীন দল ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তাঁদের মতের প্রতিফলন ও গৃহীত কার্যক্রমের প্রচার-প্রচারণাকে গুরুত্ব দেবেন বৈকি। অপর দিকে বর্তমানে কোনো ক্ষমতাধরের পক্ষে কোনো গণমাধ্যমের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নিলে দেশে-বিদেশে মহা হইচই শুরু হবে। তাই অনুগত দলীয় আপনজনদের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি প্রদানে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সেই অনুমতিপত্র নিয়ে সওদা হচ্ছে, তা তথ্য মন্ত্রণালয় কিংবা যিনি এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অথবা নেবেন তিনি জানেন কি না জানি না।
প্রধানমন্ত্রীর না-জানার কথা নয়। মাস তিনেক আগে আমার নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেলের আবেদনের ভাগ্য জানতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আলাপকালে আমার কাছে আফসোস করলেন, তাঁর বিগত সরকার নিজেদের মানে দলের প্রতি অনুগত লোকদের অনেকগুলো ব্যাংক আর বীমা কোম্পানির অনুমতি দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দুটি ছাড়া সবগুলো ‘তাঁদের’ রইল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরোক্ষে জানালেন, চ্যানেলের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি যেন না হয় তাই অনুমতি প্রদানে সতর্ক থাকতে হচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেসব ব্যাংক-বীমার মতোই চ্যানেলগুলো বিকিকিনির বাজারে শেষ পর্যন্ত আর ‘আমাদের’ থাকছে না। এর কারণ বোধহয় অন্ধ আনুগত্য না থাকলেও দুর্বলতা রয়েছে এমন পেশাজীবী অথবা সম্প্রচার-বিশেষজ্ঞ ঐতিহ্যবাহী দলটিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আরও কথা আছে, গণমাধ্যম নিয়ে সংবাদপত্র প্রকাশ অথবা টিভি চ্যানেলের অনুমতি প্রদানে যেকোনো ক্ষমতাসীন সরকার যে নীতি বা রীতি অনুসরণ করুক, সরকারি ছাপ পড়লে সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। এমনকি সরকারের কট্টর নির্ভেজাল পরম বশংবদ অনুসারীদের মধ্যেও নয়। অধুনালুপ্ত ট্রাস্ট পত্রিকা আর বাংলাদেশ টেলিভিশন সম্পর্কে জনগণের এই মনোভাবটি প্রস্তাবিত চ্যানেলের ভাগ্যবান অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও তা জানেন বৈকি। আবার মাসে কোটি টাকা লোকসান দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁদের নেই। তাই তো কথিত ভাগ্যবানদের অনেকেই ভাবছেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও।’ এসব কারণে হাতে পাওয়ার আগেই তাঁরা চ্যানেল পসরা নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। হায়রে, সওদাগিরিতে ‘আমাদের’ চ্যানেলগুলো শেষ পর্যন্ত ‘তাঁদের’ হয়ে যাচ্ছে!
এবিএম মূসা: সাংবাদিক।
আলোচনা-বৈঠকে কথিত চ্যানেলের লাইসেন্সপ্রাপ্তদের পক্ষে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশক-শিল্পপতির লেনদেন নিয়ে আলোচনা চলছে। নিজস্ব চ্যানেলটি পাইনি বলে আভাস দেওয়া হলো, তার পরও কোন বিবেচনায় আমাকে অন্য চ্যানেলের একজন অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলো বুঝলাম না। আমার এই ব্যবসায়িক আলোচনায় কোনো আগ্রহ ছিল না। বৈঠক ছেড়ে চলে গেলাম দোতলায়, স্নেহাস্পদ মন্ত্রী মহোদয়ের সুশীলা স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করতে। কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে জানলাম, লেনদেন-আলোচনা ভেঙে গেছে। কয়েক দিন পর পত্রিকার প্রকাশক-শিল্পপতি টেলিফোন করে জানালেন, আওয়ামী লীগের একজন উচ্চপর্যায়ের নেত্রীর ছেলে অংশীদারে ভিত্তিতে আরেকটি প্রস্তাবিত চ্যানেলে পুরো অর্থ লগ্নি করে অর্ধেক মালিকানা নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। আরও তিন-চারজন বেসরকারি চ্যানেলের লাইসেন্সপ্রাপ্তির দাবিদার তাঁদের পসরা নিয়ে শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের দরজায় টোকা দিচ্ছেন বলেও খবর পেয়েছি। প্রসঙ্গত বলতে হচ্ছে যে ১০টি চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, এর মধ্যে একটি আমার সংবিধিবদ্ধ ‘একাত্তর’ নামটিও দখল করেছেন। শুনে অবাক হইনি। বর্তমান সরকারের একদল সর্বগ্রাসী বিশাল নদী, জমি-জিরাত ও বাড়িঘর দখল করছে, এ তো মাত্র তুচ্ছ একটি ‘নাম’।
মনে হচ্ছে, নতুন বেসরকারি চ্যানেলের লাইসেন্স প্রদান নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে তেলেসমাতি কারবার চলছে। সব শুনে ভাবছি, কী মধু না-জানি বেসরকারি চ্যানেলে! বর্তমানে যে আটটি বেসরকারি চ্যানেল চালু আছে, একটি ব্যতীত বাকি সবই কোটি কোটি টাকা লোকসানে চলছে। একটি বাদে বাকিগুলো দলীয় আনুগত্যের বিবেচনায় বিএনপির সরকারের আমলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত। এর চারটিই কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে হাতবদল হয়ে গেছে। একটি বিএনপি ঘরানার মালিকের কাছ থেকে আওয়ামীপন্থী দুই সাংসদ কিনে নিয়েছেন। এসব চ্যানেল সওদাগিরির বিশেষত্ব হচ্ছে, বিএনপির আমলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রুগ্ণ চ্যানেলগুলো কিনে নিয়েছেন একই রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী শিল্পপতিরা। বর্তমান আওয়ামী লীগ ঘরানার লাইসেন্সপ্রাপ্ত বলে প্রচারিত চ্যানেল ফেরিওয়ালারা সমমতাবলম্বীদের কেউ প্রস্তাবিত বেসরকারি চ্যানেলের স্বত্ব কিনবেন কি না তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, তথাকথিত অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি চ্যানেলের সম্ভাব্য ক্রেতা হচ্ছেন যাঁর বিরুদ্ধে একাত্তরে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে এমন একজন শীর্ষস্থানীয় বিএনপির নেতা। হাওয়া থেকে পাওয়া খবরটি সত্যি কি না জানি না, তবে বৈঠকে তাঁর অনুসারী কয়েকজনের উপস্থিতিতে আমার মনেও সেদিন এমন একটি সন্দেহ উঁকি মেরেছিল।
১০টি বেসরকারি চ্যানেলের অনুমতি যে সরকারি দলের প্রতি নিখাদ আনুগত্যের ভিত্তিতে বিলি করা হয়েছে, তাতে আপত্তির কোনো কারণ নেই। বেসরকারি চ্যানেল বিতরণের কোনো বাঁধাধরা নিয়মকানুন বা নীতিমালা নেই। তদুপরি বর্তমানে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সংবাদপত্রের চেয়েও অধিকতর প্রভাবশালী মনে করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তি-কৌশল প্রয়োগের কারণে বেসরকারি টেলিভিশনেরও দর্শক রয়েছে সুদূর গ্রাম-গঞ্জে। চোখে দেখা আর কানে শোনা যেকোনো সংবাদ বা রাজনৈতিক মতামত ছাপার অক্ষরে দেওয়া তথ্য ও তত্ত্বের চেয়ে সাধারণ্যে অধিকতর প্রভাব ফেলছে। এ কারণে যেকোনো সরকার বা ক্ষমতাসীন দল ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তাঁদের মতের প্রতিফলন ও গৃহীত কার্যক্রমের প্রচার-প্রচারণাকে গুরুত্ব দেবেন বৈকি। অপর দিকে বর্তমানে কোনো ক্ষমতাধরের পক্ষে কোনো গণমাধ্যমের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নিলে দেশে-বিদেশে মহা হইচই শুরু হবে। তাই অনুগত দলীয় আপনজনদের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি প্রদানে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সেই অনুমতিপত্র নিয়ে সওদা হচ্ছে, তা তথ্য মন্ত্রণালয় কিংবা যিনি এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অথবা নেবেন তিনি জানেন কি না জানি না।
প্রধানমন্ত্রীর না-জানার কথা নয়। মাস তিনেক আগে আমার নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেলের আবেদনের ভাগ্য জানতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আলাপকালে আমার কাছে আফসোস করলেন, তাঁর বিগত সরকার নিজেদের মানে দলের প্রতি অনুগত লোকদের অনেকগুলো ব্যাংক আর বীমা কোম্পানির অনুমতি দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দুটি ছাড়া সবগুলো ‘তাঁদের’ রইল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরোক্ষে জানালেন, চ্যানেলের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি যেন না হয় তাই অনুমতি প্রদানে সতর্ক থাকতে হচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেসব ব্যাংক-বীমার মতোই চ্যানেলগুলো বিকিকিনির বাজারে শেষ পর্যন্ত আর ‘আমাদের’ থাকছে না। এর কারণ বোধহয় অন্ধ আনুগত্য না থাকলেও দুর্বলতা রয়েছে এমন পেশাজীবী অথবা সম্প্রচার-বিশেষজ্ঞ ঐতিহ্যবাহী দলটিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আরও কথা আছে, গণমাধ্যম নিয়ে সংবাদপত্র প্রকাশ অথবা টিভি চ্যানেলের অনুমতি প্রদানে যেকোনো ক্ষমতাসীন সরকার যে নীতি বা রীতি অনুসরণ করুক, সরকারি ছাপ পড়লে সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। এমনকি সরকারের কট্টর নির্ভেজাল পরম বশংবদ অনুসারীদের মধ্যেও নয়। অধুনালুপ্ত ট্রাস্ট পত্রিকা আর বাংলাদেশ টেলিভিশন সম্পর্কে জনগণের এই মনোভাবটি প্রস্তাবিত চ্যানেলের ভাগ্যবান অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও তা জানেন বৈকি। আবার মাসে কোটি টাকা লোকসান দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁদের নেই। তাই তো কথিত ভাগ্যবানদের অনেকেই ভাবছেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও।’ এসব কারণে হাতে পাওয়ার আগেই তাঁরা চ্যানেল পসরা নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। হায়রে, সওদাগিরিতে ‘আমাদের’ চ্যানেলগুলো শেষ পর্যন্ত ‘তাঁদের’ হয়ে যাচ্ছে!
এবিএম মূসা: সাংবাদিক।
No comments