ইরান সামরিক শক্তিতে এগিয়ে, তবুও ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণ কী? -আল-জাজিরার বিশ্লেষণ

সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধান শহরগুলোতে অন্তত ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) জানায়, এ হামলা গাজায় চলমান ইসরায়েলি সহিংসতা, লেবাননে সাম্প্রতিক বিমান হামলা, এবং আইআরজিসি, হামাস ও হিজবুল্লাহ নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, এ হামলায় তেলআবিবের তিনটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু ছিল এবং তেহরান প্রথমবারের মতো ‘ফাতাহ’ হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করেছে। তবে আল-জাজিরা এ তথ্য নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাই করতে পারেনি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পাল্টা প্রতিশোধের ঘোষণা দেন এবং ইরানের এ আক্রমণকে ‘বড় ভুল’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ইরানকে এর মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে এবং আক্রমণ প্রতিহত করতে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে।

বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের ফলে আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, সামরিক শক্তিতে ইরান ১৪তম এবং ইসরায়েল ১৭তম স্থানে রয়েছে। যদিও সামরিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ইরান তিন ধাপ এগিয়ে, তবু ইসরায়েল কেন এত প্রভাবশালী, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

সেনাসংখ্যা ও সামরিক ব্যয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস)’ অনুযায়ী, ইরানের সামরিক বাহিনীতে ৬ লাখ ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে, যেখানে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন শাখায় সদস্য রয়েছে। বিপরীতে, ইসরায়েলের সক্রিয় সেনাসদস্য ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ এবং তাদের রিজার্ভ সেনার সংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার।

সামরিক ব্যয়ে ইরান ২০২৩ সালে ১০.৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, যেখানে ইসরায়েল ২৭.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। সামরিক খাতে ইসরায়েলের এই অতিরিক্ত ব্যয় তার আধুনিক অস্ত্রাগার এবং উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলায় সহায়ক।

স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী ইরান স্থলবাহিনীতে বেশ শক্তিশালী, ১০ হাজার ৫১৩টি ট্যাংক এবং ৬ হাজার ৭৯৮টি কামান নিয়ে। তবে ইসরায়েল আধুনিক ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান দিয়ে এই ঘাটতি পুষিয়ে নেয়। বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রে ইসরায়েলের উন্নত যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টারগুলো ইরানের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। নৌবাহিনীতে ইরান শক্তিশালী হলেও, ইসরায়েলের পাঁচটি সাবমেরিন এবং উন্নত প্যাট্রোল যুদ্ধজাহাজ আঞ্চলিক নিরাপত্তায় একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

আকাশ প্রতিরক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বেশ কার্যকর, যা বহু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম। অন্যদিকে, ইরান বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। তাদের কাছে রয়েছে রাশিয়ার তৈরি এস-৩০০ এবং নিজস্ব বাভার-৩৭৩ ব্যবস্থা। তবে ইসরায়েলের আয়রন ডোম এবং অন্যান্য উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি তাদের আকাশসীমা সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম।

পারমাণবিক সক্ষমতা ইসরায়েলের আনুমানিক ৯০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যা তাদের সামরিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেনি, তবে তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করে তুলেছে, যা ভবিষ্যতে একটি ঝুঁকি হতে পারে।

ইসরায়েলের দাপটের কারণ
ইসরায়েলের সামরিক ব্যয়, উচ্চ প্রযুক্তি, কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইরানের চেয়ে এগিয়ে রাখে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনও তাদের প্রভাবশালী করে তুলেছে। সামরিক শক্তির পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, এই শক্তি এবং মিত্রদের সহায়তায় ইসরায়েল আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে সক্ষম।

ইরান সামরিক র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকলেও, আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশলগত মিত্রদের সমর্থনে ইসরায়েল এখনো আঞ্চলিক শক্তির শীর্ষে অবস্থান করছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি : সংগৃহীত

No comments

Powered by Blogger.