‘কাঠগড়ায়’ দোনা সীমান্তের সাদ্দাম by মুফিজুর রহমান

সিলেট সীমান্তের আলোচিত দু’টি ঘটনা। একটি হচ্ছে বিচারপতি মানিক আটক ও অন্যটি আওয়ামী লীগ নেতা ইছহাক আলী খান পান্না হত্যা। এ দু’টি ঘটনা নিয়ে এখনো কানাইঘাটের  দোনা সীমান্তে তুমুল আলোচনা। বিরাজ করছে ক্ষোভও। আর এ দুটি ঘটনায় যার নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে সে হচ্ছে যুবলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন। সীমান্তের চোরাকারবারি সে। এর আগে চোরাচালানের অনেক ঘটনায় তার নাম উচ্চারিত হয়েছে। রয়েছে একাধিক মামলাও। সেই সাদ্দাম ও চোরাকারবারি চক্রের বিরুদ্ধে  বুধবার সিলেটের ডিআইজি’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পূর্ব লক্ষ্মী প্রসাদ ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন। আর এই অভিযোগেও তিনি তুলে এনেছেন বিচারপতি মানিক আটক ও পান্নার ঘটনা। তবে; ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনের দাবি- এ দুটি ঘটনা এলাকার মানসম্মান ক্ষুণ্ন করেছে। এতে এলাকার মানুষ বিব্রত। অভিযোগে নাজিম উদ্দিন সাদ্দাম ছাড়াও তার পিতা আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল হক, তার চোরাকারবারি চক্রের সদস্য খাসারিপাড়া গ্রামের কাওছার আহমদ, পাতিছড়া গ্রামের শামীম আহমদ, এরালিগুল গ্রামের জসিম উদ্দিন, মিকিরপাড়ার এনাম উদ্দিন, খাসারিপাড়ার শিহাব উদ্দিন, এরালিগুলের ইয়াছিন, মিকিরপাড়ার সেলিম আহমদ ও রাতছড়ার আবুল কালাম।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন; এ দু’টি ঘটনায় সাদ্দামের নাম আলোচিত হওয়ায় সে এখন আত্মগোপনে রয়েছে। বেশির ভাগ সময়ই বসবাস করছে  দোনা সীমান্তের ভারতের অংশে। অভিযোগে নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন- বিগত ১৫ বছর সাদ্দামের চক্রের সদস্য দোনা সীমান্ত এলাকাকে চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত করেছে। তাদের নেতৃত্বে ভারত থেকে গবাদিপশু, মাদক, ইয়াবা, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরণের চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করে। একই সঙ্গে তারা ভারতে মানব পাচার করে থাকে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় এতদিন তাদের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টা থাকায় অনেকেই সীমান্ত দিয়ে পালাতে পারেনি।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন- সাদ্দাম ও চক্রের চোরাচালানিদের সহযোগিতায় দোনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন ক্ষমতাচ্যুত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক এমপি রণজিৎ সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা বিধান কুমার সাহা, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, সাবেক বিচারপতি মানিক সহ বহু নেতা ও কর্মকর্তারা। এসব নেতা সাদ্দাম ও তার সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব নেতাকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়ায় সহযোগিতা করে। গত ২৩শে আগস্ট সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে পাচারকালে স্থানীয় জনতা আটক করে ফেলে। ওই সময় তার মানিকের সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্না হৃদরোগে বা যেকোনো ভাবে ভারত অংশে মৃত্যুবরণ করেন। আর বিষয়টি চোরাকারবারিদের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গোটা দেশে দোনা সীমান্তের নাম ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে দোনা সীমান্তে মানব পাচারের হিড়িক পড়ায় আসামিদের নাম ও ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ হয়। নাজিম উদ্দিন জানান, সাদ্দাম ও তার সহযোগীরা বিচারপতি মানিক জনতার হাতে আটক হওয়ার আগেই তার সঙ্গে থাকা ৬০ লাখ টাকা, ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও প্রয়োজনীয় মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন এসব ঘটনায় এলাকাবাসী সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি ডিআইজিকে অনুরোধ করেন। এদিকে; অভিযোগের ব্যাপারে একাধিকবার সাদ্দামের বাংলাদেশি ও ভারতের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- দেশ জুড়ে আলোচিত দু’টি ঘটনার পর থেকে সাদ্দাম ও তার সহযোগীরা ভারতে বেশির ভাগ সময় বসবাস করছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.