সিলেটে ৩ শ’ কোটি টাকার পাথর লুট
দেশের অন্যতম বড় কোয়ারি হচ্ছে জাফলং পাথর কোয়ারি। পর্যটনের সঙ্গে কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ার কারণে বিগত সরকারের শেষের ১০ বছর পুরোপুরি সিলগালা ছিল এ কোয়ারি। এ কারণে কোয়ারি অভ্যন্তরে স্তূপে স্তূপে পাথর জমা ছিল। কিন্তু ৫ই আগস্টের পর থেকে পাথর লুটপাটের কারণে এখন পূর্বের মতো কোয়ারি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত শনিবার কোয়ারি এলাকায় সাঁতার কাটতে গিয়ে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৪ই নভেম্বর জাফলংকে পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণার গেজেট প্রকাশ হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আবেদন করেছিল ২০১২ সালে। এরপর থেকে কয়েকটি ধাপে জাফলং থেকে বালু ও পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- জাফলংয়ে পাথর লুটের সঙ্গে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরান, বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আমজাদ বক্স সহ একটি প্রভাবশালী চক্রের নাম আলোচিত হচ্ছে। এদের নেতৃত্বে এখনো কোয়ারি এলাকায় পাথর লুট করা হচ্ছে। তারা জাফলংয়ের পাথর লুটপাটের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা ইমরান হোসেন সুমনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে ইমরান আহমদ সুমন অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে প্রশাসন সক্রিয় হয়ে জাফলংয়ের কোয়ারি এলাকার প্রবেশমুখে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছে। কিন্তু এই বেড়া ভেঙে পাথর লুট হচ্ছে।
কান্দুবস্তি ও নয়াবস্তি প্রতিবছরই ভারতের ডাউকির প্রবল স্রোতে তলিয়ে যায়। এ কারণে এলাকার মানুষ পানির ঢল থেকে বাঁচতে দু’টি গ্রামের উজানে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজেদের উদ্যোগে একটি বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। এক মাস ধরে পাথরখেকোরা ওই বাঁধে লুটপাট চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ইতিমধ্যে বাঁধের অর্ধেক অংশ ধ্বংস করা হয়েছে। বাঁধ থেকে কয়েক কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। এখনো প্রতিদিন বাঁধের অংশ থেকে পাথর লুট বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ব্যাপারে তারা প্রতিবাদ জানালেও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মহড়ার কারণে চুপ রয়েছেন। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ‘লুটের আগে সেখানকার কয়েকটি সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন আকারে অবহিত করা হয়েছে।’ সমপ্রতি জাফলং পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি সিলেটের একটি টিম। বেলা সিলেটের সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ সাহেদা বলেন- লুটপাট নয়, প্রকাশ্যেই পাথর তোলা হচ্ছে।
মেশিন ব্যবহার করে পাথর তোলা হচ্ছে। এ নিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সব কিছু অবগত করেছি। এরপরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এদিকে- জৈন্তাপুর উপজেলায় অবৈধভাবে বিভিন্ন বালুমহাল ও পাথর কোয়ারি থেকে সিন্ডিকেট চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জৈন্তাপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না গ্রামবাসী। বিভিন্ন সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে কতিপয় নেতাকর্মী বালুমহাল, পাথর কোয়ারিতে সক্রিয় আছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঁদা উত্তোলনের কথা প্রকাশ পেলেও ভয়ে মুখ খুলতে চায় না কেউ। চাঁদাবাজ উল্লেখ করে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয় অভিযুক্তরা হলেন- ইন্তাজ আলী, আব্দুল মান্নান, রহিম উদ্দিন, রহমান আলী, তাজউদ্দিন, মিজানুর রহমান, সামছুজ্জামান সেলিম, হারুন আহমদ, আহসান উল্লাহ, শুয়াইবুর রহমান ও তাদের লোকজন।
No comments