আওয়ামী লীগের নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার অজুহাত সঠিক নয়: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংলাপে জাতীয় পার্টিকে না ডাকার পেছনে আওয়ামী লীগের তিনটি নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার অজুহাত ভ্রান্ত ও সঠিক নয়। আমার কাছে এটি খুবই অদ্ভুত মনে হয়েছে। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের দলের ইতিহাস আছে, দীর্ঘদিন রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা বলে এসেছি তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে জাতীয় পার্টি। কিন্তু হঠাৎ করে সংলাপে ডাকা হলো না শাস্তিস্বরূপ এবং সেটিকে ব্যাপকভাবে প্রচারণা করা হচ্ছে। যা আমাদের জন্য বিব্রতকর। গত শনিবার বিকালে রংপুর নগরীর দর্শনাস্থ পল্লী নিবাস বাসভবনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা ২৭০ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে তাকে সরকার সিএমএইচে নিয়ে যায় এবং মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধা দেয়। ওই সময় জাতীয় পার্টির ক্ষুদ্র একটি অংশ নির্বাচনে ছিল। সেই সময় রংপুরে নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনও হয়েছিল। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি’র স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এসেছিল। তাই সেই নির্বাচনকে তারাও বৈধতা দিয়েছিল বলেই পরবর্তীতে নির্বাচন করেছে।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে এসে সেই নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে। বিএনপি’র কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রায় ৪ বছর সংসদেও ছিল। ২০২৪ সালে আমরা নির্বাচনের না যাওয়ার ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগ আমাদের দলকে দু’ভাগে বিভক্ত করে রওশন এরশাদকে দলের প্রতীক, নাম ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার প্রক্রিয়া করেছিল। আমরা নির্বাচন বর্জন করলে রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করানো হতো। এরপরেও আমি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে আমার অফিস র‌্যাব, পুলিশ, এসবি, বিজিবি দিয়ে ঘিরে রেখেছিল, যা দেশবাসী জানে। পরবর্তীতে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার গ্যারান্টি দিলে আমরা নির্বাচনে আসি। তাই আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সঠিক নয়।  
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি একমাত্র দল যারা সন্ত্রাসবাদ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হাট দখল, জমি দখল, অবৈধ ব্যবসা, লুটপাটের সঙ্গে কখনো জড়িত ছিল না। বিএনপি’র আমলে আমরা হামলা-মামলার শিকার হয়েছি, আর আওয়ামী লীগের আমলে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বি। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে। মানুষ মিল-কারখানা চালাতে পারছে না, উপার্জন কমে যাচ্ছে। সরকারের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো- মানুষের নিরাপত্তা দেয়া, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা ও বেকারত্ব দূর করা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে তিনি বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। তবে তাদের দোষারোপ করা যাবে না। তারা ভগ্নস্তূপের মাঝে দায়িত্ব নিয়েছে। প্রশাসন নড়বড়ে, অর্থনীতি নাজুক, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এর ওপর মানুষের পাহাড় সমান প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এইচএম ইয়াসির আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আজমল হোসেন লেবু, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন প্রমুখ।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.