মেসে মেসে বাজিকর by পিয়াস সরকার
বাজির
নেশায় মত্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এ নেশায় পড়ে অনেকেই হারাচ্ছেন
নিজের ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন। এমন কি গ্রাম থেকে পাঠানো মাসের খরচও নিমিষে
হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে ইদানীং বাজির প্রবণতা নেশায় রূপ
নিয়েছে। সব হারিয়েও শেষ নয়। আশ্রয় নেয় নানা মিথ্যার। পরিবারের কাছে মিথ্যা
বলে আনে বাড়তি টাকা। কেউবা ধারকর্জ করে। রাজধানীর বেশিরভাগ মেসে এখন বাজি
কমন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক এবং ক্লাব ক্রিকেট ম্যাচ,
ফুটবল ম্যাচেই বেশি বাজি ধরে শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের পছন্দের তালিকার
শীর্ষে ক্রিকেট। বাজির টাকার পরিমাণ ঠিক করে একটি দল পছন্দ করে এক
শিক্ষার্থী বিপক্ষে দল পছন্দ করবে আরেক জন। যার পক্ষে ফল যাবে সেই বিজয়ী।
এর সঙ্গে থাকে টস, প্রথম বলে কত রান, প্রথম ওভারের রান এভাবে বিভিন্ন ওভার
সহ মোট রান ইত্যাদি। জোড়- বিজোড় নিয়ে ভিন্ন ধারার বাজি ইদানীং শুরু হয়েছে।
যেমন বাংলাদেশ বনাম ভারতের খেলায় এক পক্ষ বলবে তামিম ইকবাল জোড় রান করবে,
আরেক বাজিকর বলবে বিজোড়। তামিম ইকবাল ১০০ রান করলে পকেটপূর্তি হবে জোড় বেছে
নেয়া বাজিকরের।
বাজির অর্থের পরিমাণটা মোটেও কম নয়। ১ হাজার টাকা সর্বনিম্ন বাজি। একজন বাজিকর প্রতি ম্যাচে ৮ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার বাজি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই পরিমাণ ৪০ থেকে ৫০ হাজারের ঘরেও পৌঁছায় প্রায়ই। আবার খেলা হচ্ছে বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ডের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিতে চাইলে গুনতে হবে অধিক টাকা। যেমন বাংলাদেশ জিতলে পাবে ১ হাজার টাকা হারলে দিতে হবে ২ হাজার, ৩ হাজার বা ততোধিক টাকা। মেসে মেসে এই বাজি ভয়াল রূপ ধারণ করছে। মেসের সদস্যদের পাশাপাশি বন্ধু, এলাকার পরিচিত, বন্ধুর বন্ধু এমনকি অচেনা ব্যক্তির সঙ্গেও হয়ে থাকে বাজি।
বাজির মোহে শিক্ষা জীবন বাজির মুখে ফেলে দিয়েছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আবিব। প্রথম ঢাকায় এসে উঠেন মেসে। সেখানেই জড়িয়ে পড়েন বাজির নেশায়। আবিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা দিয়ে কয়েকবার বাজি খেলি। রেজিস্ট্রেশন না করায় আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়। নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করি মেস বদল করি এবং বাবা-মাকে না জানিয়েই ভর্তি হই ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। প্রথম তিন সেমিস্টার খুব ভালো রেজাল্ট হয় কিন্তু আবার জড়িয়ে পড়ি বাজিতে। এখন আমার লেখাপড়া বন্ধ, বাড়ি থেকে টাকা নেই আর বাজি খেলি। বাজিতে জিতলে সেই টাকা কীভাবে যেন খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়, জমাতে পারি না। শুধু আমি না বাজির টাকা কেউই ধরে রাখতে পারে না।
বাজির আবার দালাল রয়েছে। দালালদের বলা হয় ‘পেটিসখোর’। তাদের কাজ বাজির পার্টি ঠিক করে দেয়া। পেটিসখোররা পার্টি ঠিক করে দেয় এবং তার মাধ্যমে লেনদেন করে। এতে তার লাভ হয় ১০ শতাংশ। আবার কম দামে বাজি কিনে রেখে তারা পরে বেশি দামেও বিক্রি করে। শিক্ষার্থী আসিফ একজন পেটিসখোর। তিনি বলেন, পেটিস খেয়ে নিদাহাস ট্রফিতে লাভ করেছি ১২ হাজার টাকা। তবে অনেক ঝুঁকি আছে এতে, টাকা ঠিকমতো দিতে চায় না। হারলে ফোন বন্ধ করে রাখে, কম টাকা দেয়। এসব টাকা আবার সময়মতো বুঝিয়ে দিতে হয় পার্টিকে। টাকার লেনদেন সাধারণত বিকাশের মাধ্যমে হয়; তার থেকে আমার অংশ কেটে নেই। ২০১৭ সালের জুনে জিম্বাবুয়ে সিরিজ খেলতে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে জিম্বাবুয়ে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয় করেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। লঙ্কানরা হারলে সেই চোট এসে লাগে ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রেজওয়ানের উপরে। ৪২ হাজার টাকা হেরেছেন শুধু শেষ ম্যাচেই। সময়মতো টাকা না দেয়ায় ল্যাপটপ জোরপূর্বক হাতিয়ে নেয় পার্টি। কিন্তু পরে টাকা দিলেও ফেরত দেয়নি ল্যাপটপ বরং ল্যাপটপের কথা অস্বীকার করে মারধর করা হয় তাকে। হাতে টাকা না থাকায় কেনই বা বাজি ধরলেন- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ধারণা করিনি সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলঙ্কা হারবে।
কয়েকজন সদস্য নিয়ে বাজি খেলার জন্য রয়েছে বেশকিছু দল। এগুলোর নাম ঢাকা ক্লাব, স্পোর্টস লাভার, আমরা আমরাই তো, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, চিলি সস বেটিং, সুইট অকটাগন, টাইগার্স টেরিটরি ইত্যাদি। এসব দলে সাধারণত সদস্য সংখ্যা থাকে ১৫ থেকে ২০ জন। কোনো খেলাকে কেন্দ্র করে দল নির্বাচন করে বাজির মূল্য নির্ধারণ করে দলের সদস্যরা। নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বাজি কেনে। আবার দলগত ভাবেও বাজি ধরা হয়। লাভ কিংবা লোকসান দলের সবাই ভাগাভাগি করে নেন সেই টাকা। দলগত বাজি নিয়েও শোনা যায় সমস্যার কথা। উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জীবন রহমান। তিনি বলেন, একবার আমাদের দলের তিনজন সদস্য নিজেদের মধ্যে গুপ্ত দল তৈরি করেছিল। ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার খেলায় ভারতের বাজি ১ হাজার ৪০০ টাকায় কিনলেও তারা আমাদের বলে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে কিনেছে। এটা ধরা পড়ার পর আমরা তাদের দল থেকে বের করে দেই। এই নিয়ে কথা কাটাকাটি এমনকি হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছিল। তারা দল ছাড়া হয়ে নিজেরা নতুন দল গঠন করে নাম দেয় টাইগার্স টেরিটরি।
বাজির অর্থের পরিমাণটা মোটেও কম নয়। ১ হাজার টাকা সর্বনিম্ন বাজি। একজন বাজিকর প্রতি ম্যাচে ৮ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার বাজি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই পরিমাণ ৪০ থেকে ৫০ হাজারের ঘরেও পৌঁছায় প্রায়ই। আবার খেলা হচ্ছে বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ডের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিতে চাইলে গুনতে হবে অধিক টাকা। যেমন বাংলাদেশ জিতলে পাবে ১ হাজার টাকা হারলে দিতে হবে ২ হাজার, ৩ হাজার বা ততোধিক টাকা। মেসে মেসে এই বাজি ভয়াল রূপ ধারণ করছে। মেসের সদস্যদের পাশাপাশি বন্ধু, এলাকার পরিচিত, বন্ধুর বন্ধু এমনকি অচেনা ব্যক্তির সঙ্গেও হয়ে থাকে বাজি।
বাজির মোহে শিক্ষা জীবন বাজির মুখে ফেলে দিয়েছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আবিব। প্রথম ঢাকায় এসে উঠেন মেসে। সেখানেই জড়িয়ে পড়েন বাজির নেশায়। আবিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা দিয়ে কয়েকবার বাজি খেলি। রেজিস্ট্রেশন না করায় আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়। নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করি মেস বদল করি এবং বাবা-মাকে না জানিয়েই ভর্তি হই ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। প্রথম তিন সেমিস্টার খুব ভালো রেজাল্ট হয় কিন্তু আবার জড়িয়ে পড়ি বাজিতে। এখন আমার লেখাপড়া বন্ধ, বাড়ি থেকে টাকা নেই আর বাজি খেলি। বাজিতে জিতলে সেই টাকা কীভাবে যেন খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়, জমাতে পারি না। শুধু আমি না বাজির টাকা কেউই ধরে রাখতে পারে না।
বাজির আবার দালাল রয়েছে। দালালদের বলা হয় ‘পেটিসখোর’। তাদের কাজ বাজির পার্টি ঠিক করে দেয়া। পেটিসখোররা পার্টি ঠিক করে দেয় এবং তার মাধ্যমে লেনদেন করে। এতে তার লাভ হয় ১০ শতাংশ। আবার কম দামে বাজি কিনে রেখে তারা পরে বেশি দামেও বিক্রি করে। শিক্ষার্থী আসিফ একজন পেটিসখোর। তিনি বলেন, পেটিস খেয়ে নিদাহাস ট্রফিতে লাভ করেছি ১২ হাজার টাকা। তবে অনেক ঝুঁকি আছে এতে, টাকা ঠিকমতো দিতে চায় না। হারলে ফোন বন্ধ করে রাখে, কম টাকা দেয়। এসব টাকা আবার সময়মতো বুঝিয়ে দিতে হয় পার্টিকে। টাকার লেনদেন সাধারণত বিকাশের মাধ্যমে হয়; তার থেকে আমার অংশ কেটে নেই। ২০১৭ সালের জুনে জিম্বাবুয়ে সিরিজ খেলতে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে জিম্বাবুয়ে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয় করেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। লঙ্কানরা হারলে সেই চোট এসে লাগে ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রেজওয়ানের উপরে। ৪২ হাজার টাকা হেরেছেন শুধু শেষ ম্যাচেই। সময়মতো টাকা না দেয়ায় ল্যাপটপ জোরপূর্বক হাতিয়ে নেয় পার্টি। কিন্তু পরে টাকা দিলেও ফেরত দেয়নি ল্যাপটপ বরং ল্যাপটপের কথা অস্বীকার করে মারধর করা হয় তাকে। হাতে টাকা না থাকায় কেনই বা বাজি ধরলেন- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ধারণা করিনি সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলঙ্কা হারবে।
কয়েকজন সদস্য নিয়ে বাজি খেলার জন্য রয়েছে বেশকিছু দল। এগুলোর নাম ঢাকা ক্লাব, স্পোর্টস লাভার, আমরা আমরাই তো, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, চিলি সস বেটিং, সুইট অকটাগন, টাইগার্স টেরিটরি ইত্যাদি। এসব দলে সাধারণত সদস্য সংখ্যা থাকে ১৫ থেকে ২০ জন। কোনো খেলাকে কেন্দ্র করে দল নির্বাচন করে বাজির মূল্য নির্ধারণ করে দলের সদস্যরা। নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বাজি কেনে। আবার দলগত ভাবেও বাজি ধরা হয়। লাভ কিংবা লোকসান দলের সবাই ভাগাভাগি করে নেন সেই টাকা। দলগত বাজি নিয়েও শোনা যায় সমস্যার কথা। উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জীবন রহমান। তিনি বলেন, একবার আমাদের দলের তিনজন সদস্য নিজেদের মধ্যে গুপ্ত দল তৈরি করেছিল। ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার খেলায় ভারতের বাজি ১ হাজার ৪০০ টাকায় কিনলেও তারা আমাদের বলে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে কিনেছে। এটা ধরা পড়ার পর আমরা তাদের দল থেকে বের করে দেই। এই নিয়ে কথা কাটাকাটি এমনকি হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছিল। তারা দল ছাড়া হয়ে নিজেরা নতুন দল গঠন করে নাম দেয় টাইগার্স টেরিটরি।
No comments