রাজিবের চিকিৎসায় বোর্ড, সরকারি চাকরির আশ্বাস
দুই
বাসের চাপায় হাত হারানো রাজিব হোসেনের উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড
গঠন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুস্থ হলে রাজিবকে
মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
গতকাল রাজিবকে দেখতে গিয়ে তিনি এ আশ্বাস দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রাজিব জ্ঞান ফিরলেই ব্যথায়
আঁতকে উঠছেন। রাজিবের মেজ খালা খাদিজা বেগম বলেন, গতকাল রাতে সর্বশেষ একটু
চিকেন সুপ খেয়েছিল। এর পর থেকে রাজিব কথাও বলছে না কিছু খাচ্ছেও না। সিটি
স্ক্যানের রিপোর্টে ডা. বলেছেন, রাজিবের মাথার খুলিতে ফাটলের চিহ্ন রয়েছে
এবং ব্রেইনেও আঘাত পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে
রক্ত পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাজিবের ছোট দুই ভাই মেহেদী
হাসান ও হৃদয় হোসেন আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার সকালে ভাইকে দেখতে এসেছে।
প্রথমে ওদেরকে কিছু না জানালেও মেজ ভাই মেহেদী হাসান তার মাদরাসায় জাতীয়
একটি দৈনিকে বড় ভাই রাজীবের হাতকাটা ছবি দেখতে পায়। তখন মেহেদী খালাকে ফোন
করে বলে আমি ভাইয়াকে দেখতে আসবো। নিঃসন্তান খাদিজা বলেন, যাত্রাবাড়ী
সুপ্রিম মেডিকেল সার্ভিস নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করেন তিনি। বড়
খালার কাছে রাজিব মানুষ হলেও নিজের সন্তান না থাকায় ওদের তিন ভাইকে নিজের
সন্তানের মতো করেই সকল চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেছেন খাদিজা। রাজিবের
স্বপ্ন ছিল তিতুমীর থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করে এলএলবি করে ভালো একজন আইনজীবী
হওয়া এবং একটি সরকারি চাকরি করা। ইন্টামিডিয়েটের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই
রাজিব বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ যখন যে চাকরির বিজ্ঞপ্তি
দেখতেন তখন সেটাতেই দরখাস্ত করতেন। কম্পিউটার কম্পোজে ভালো দক্ষতা থাকায়
প্রায় সময়ই বলতেন খালা, যেকোনো দপ্তরের অন্তত কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে
জয়েন করতে পারলে ছোট ভাই দুটোকে মানুষ করা যেত। সম্প্রতি রাজিবকে তার
খালারা বিয়ে দেয়ার কথা বললে, রাজিব জানায় আগে প্রতিষ্ঠিত হবো তার পরে বিয়ে।
এ সময় খালা খাদিজা বেগম বলেন, রাজিব এতিম হওয়ার কারণে তাঁকে দেখার কেউ
নেই। এখন তো তাঁর এক হাত নেই। এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী
মোহাম্মদ নাসিম ঘোষণা দিয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ডান হাত হারানো রাজীব হোসেনের
চিকিৎসার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করবে। এ ছাড়া রাজীব সুস্থ হলে তাঁকে সরকারি
চাকরি দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র রাজীবের চিকিৎসা এবং
তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে যান মোহাম্মদ নাসিম। এ সময় নাসিম বলেন, রাজীব
মা-বাবা হারানো এতিম। এ কারণে সরকার তাঁর যাবতীয় চিকিৎসার খরচ বহন করবে।
তাঁর আরো দুই ভাইয়ের ভবিষ্যতের দিকটি খেয়াল রেখে তিনি সুস্থ হলে তাঁকে
সরকারি চাকরি দেয়া হবে। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী নাসিম বলেন,
রাজীব সুস্থ হওয়ার পর মেডিকেল বোর্ড যদি মনে করে, তাঁর হাত পুনঃস্থাপন করা
যাবে, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থাও নেয়া হবে। শমরিতা হাসপাতালের
বিলের বিষয়ে সাংবাদিকেরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সেখানে
কত খরচ হয়েছে, তার হিসাব নেয়া হবে। ওই টাকাও সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা
হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজশাহীর সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান
লিটনও উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার
জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, তাঁর অবস্থা এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়। এ
কারণে তাঁর সিটিস্ক্যান করানো হবে। রাজিবের চিকিৎসা নিয়ে গতকাল সকাল সাড়ে
নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান
শামসুজ্জামান শাহীনের নের্তৃত্বে সাত সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা
হয়েছে। শামসুজ্জামান শাহীন বলেন, আমরা তাকে সিটি স্ক্যানের পরীক্ষা
দিয়েছিলাম। ওই ফলাফলে দেখা গেছে তার মাথায় আঘাত রয়েছে। দুর্ঘটনার পর তাঁর
মাথার খুলিতে ফাটল ধরেছে। চোখের পেছনে মস্তিষ্কে পানি ও রক্ত জমেছে। এজন্য
ওষুধ দেয়া হয়েছে। যদি তাতে না সারে তাহলে অপারেশন করতে হবে। আপাতত তাঁর
অবস্থা স্থিতিশীল আছে।
গত মঙ্গলবার বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজিব হোসেন। এ সময় স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে পেরিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁ দিকে গা-ঘেঁষে পড়ে। দুই বাসের চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে পথচারীরা তাঁকে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে রাজীবের চিকিৎসা ব্যয়ের বিল এক দিনেই দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। স্বজনেরা সব টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি টাকা পরে দেবেন এমন লিখিত দেয়ার পর বিকালে রাজিবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া হয়। বুধবার অভিযুক্ত দুই বাস চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে রাজিব নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছে। ওই দুই চালককে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজিব হোসেন। এ সময় স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে পেরিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁ দিকে গা-ঘেঁষে পড়ে। দুই বাসের চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে পথচারীরা তাঁকে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে রাজীবের চিকিৎসা ব্যয়ের বিল এক দিনেই দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। স্বজনেরা সব টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি টাকা পরে দেবেন এমন লিখিত দেয়ার পর বিকালে রাজিবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া হয়। বুধবার অভিযুক্ত দুই বাস চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে রাজিব নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছে। ওই দুই চালককে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
No comments