মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গনে ঝুঁকিতে ২০ গ্রাম
মৌলভীবাজারের
রাজনগর উপজেলার মনুনদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের ২২টি স্থানে ভাঙ্গনের
সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙ্গনের ফলে অসংখ্য বসত-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে
গেছে। মারাত্মক ঝুকিতে রয়েছে নদী তীরবর্তী ২০টি গ্রামের আরো শতাধিক
বাড়ি-ঘর। এনিয়ে ওই এলাকার মানুষদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর
অভিযোগ, বারবার যোগাযোগ করার পরও তাদের এ চরম বিপদের মুহুর্তে পানি উন্নয়ন
বোর্ড কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে না।
এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পানি
উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা ভাঙ্গনস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে স্থানীয়রা
জানান। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলায় মনুনদীর উভয়তীরে ২০টি
গ্রামের শতশত বাড়ি-ঘর ভাঙ্গনের ঝুকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙ্গনের ফলে অসংখ্য
বসত-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের
প্রায় ২২টি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ভাঙ্গনের ঝুকিতে রয়েছে
নদী তীরবর্তী বিভিন্ন মসজিদ ও বহু কবরস্থান। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার
যোগাযোগ করার পরও তাদের এ চরম বিপদের মুহুর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ
ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে না। এনিয়ে স্থানীয়দের
মাঝে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে। দুর্গত লোকজন জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান
ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা ভাঙ্গনস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে
ভাঙ্গন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়ায় অব্যাহত ভাবে বাঁধ ভেঙ্গে অসহায়
মানুষের শেষ সম্বল বসত-ভিটা টুকু নদীতে বিলীন হচ্ছে। এ ব্যাপারে টেংরা
ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের জহির আলী(৭২) ও মান্নান মিয়া(৭০) বলেন, ‘আমরা
বহুবার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে বাঁধ মেরামতের জন্য দাবী জানিয়ে
আসছি। তারা কয়েকবার তা পরিদর্শন করে বাঁধ মেরামতের আশ্বাস দেন। কিন্তু
এরপর আর কোন খবর করেন না। তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে ব্যার্থ হয়েিেছ।
মনে হচ্ছে আল্লার ঘর মসজিদ, শেষ ঠিকানা কবরস্থান ও আমাদের বাড়ি-ঘর রক্ষা
করতে পারবোনা।’ এদিকে হরিপাশাু গ্রামের অসুস্থ মছব্বির মিয়া(৬৫) কান্না
জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘পাউবো কর্তৃপক্ষের লোকজন পরিদর্শণে আসলে অনেক অনুনয়-বিনয়
করে বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব যেন ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
অন্যতায় মৃত্যুর মুহুর্তে বসত-ভিটা হারিয়ে সন্তানদের আশ্রয়হীন রেখে মরতে
হবে।’ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মনুদনীর উভয় তীরে শ্বাসমহল, হরিপাশা,
উজিরপুর, পন্ডিতনগর, তারাপাশা, কামারচাক, কান্দিরকুল, আকুয়া, ভাঙ্গারহাট,
একামধু, আদিনাবাদ, মালিকানা, কোনাগাঁও, শ্যামেরকোনা, মুর্তিকোনা, কাজিরচক,
জাঙ্গালিয়া, দস্তিদারের চক, খাসপ্্েরমনগর, প্রেমনগর সহ ২২টি স্থান ভাঙ্গনের
ঝুকিতে রয়েছে। এসব ভাঙ্গন মেরামতে চলতি বছর কোন কাজ হয়নি। শ্বাসমহল এলাকায়
গত ২০১১-১২ অর্থবছরে ভাঙ্গন রোধে মাত্র ৪০মিটার ব্লক ফেলা হয়েছিল। এর পর
আর কোন কাজই হয়নি। এ ব্যাপারে টেংরা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ টিপু খান বলেন,
মনু তীরবর্তী ২০টি গ্রামের মানুষ ভাঙ্গনের আশংকায় দিনাতিপাত করছে। ইতোমধ্যে
এসব এলাকায় অনেকের বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বিষয়টি সমাধানে
ইউনিয়ন পরিষদের কিছুই করার নেই, তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে দ্রুত
ব্যবস্থা নিতে বার বার জোর দাবী জানানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের
কার্যত কোন পদক্ষেপ দেখছিনা। দুর্গত মানুষের কথা চিন্তা করে মৌলভীবাজার
পাউবো’ কর্তৃপক্ষকে আবারোও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দুর্গত মানুষের হয়ে জোর
দাবী জানাচ্ছি। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয়
ইন্দ্রশংকর চক্রবর্তী জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে কাজ করা যাচ্ছে না।
পানি কমলেই ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। তবে
ভাঙ্গন স্থায়ী ভাবে রোধ করার জন্য ডিপিপি প্রস্তাব রয়েছে। আগামী শুস্ক
মৌসূমে এর বাস্থবায়ন করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
No comments