নির্বাচন কমিশনের ইউটার্ন by সিরাজুস সালেকিন
ভোল
পাল্টাতে একদমই সময় নিলো না নির্বাচন কমিশন। সময়ের ব্যবধান মাত্র ২৪
ঘণ্টা। নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এমন ইউটার্ন একেবারেই অভিনব।
মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানিয়েছিলেন, চার
দিন ভোটের মাঠে মোতায়েন থাকবে সেনা। তিন ব্যাটালিয়ন সেনা মোতায়েনের জন্য
চিঠিও দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে। পরদিনই গণেশ উল্টে গিয়ে পাঠানো হয়
নতুন চিঠি। সেনানিবাসেই থাকবেন সেনাসদস্যরা। রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুরোধে
স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে তাদের। গতকাল প্রধান নির্বাচন
কমিশনারও একই কথা বলেছেন।
নির্বাচন কমিশনের এমন ইউটার্নে বিস্ময় তৈরি হয়েছে চারদিকে। তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশিষ্টজনেরা। আর জনসাধারণ হয়ে পড়েছেন আতঙ্কিত। নিজেদের ভোট দিতে পারবেন কি-না এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসির সিদ্ধান্ত ভোটারদের সঙ্গে ঠাট্টা ছাড়া আর কিছু না। কারণ ভোটারদের স্বস্তির কথা চিন্তা করেই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ ছাড়া প্রধান বিরোধী জোট বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল শুরু থেকেই সেনা মোতায়েনের পক্ষে ছিলেন। এমনকি সিইসির সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রার্থীদের মতবিনিময় সভায় বেশির ভাগ প্রার্থী সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। অপরদিকে সেনাবাহিনী ছাড়াই সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, সিইসি হুকুম করলেই সেনা মোতায়েন হবে তা ঠিক নয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সেনা মোতায়েন ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে দাবি করেছিলেন। তার মতে, আগের সিটি নির্বাচনগুলো সেনা মোতায়েন ছাড়াই অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। তাই এবারও সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই।
গতকাল সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টেই থাকবে। কারণ, ক্যান্টনমেন্ট হচ্ছে ঢাকা মহানগরের মাঝখানে অবস্থিত। সেখান থেকে উত্তর এবং দক্ষিণে যেতে সহজ হবে। তাই তাদের ক্যান্টনমেন্টেই অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান নিলেও রিটার্নিং কর্মকর্তার ডাকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সাড়া দেবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনাবাহিনী ব্যবহারের সিদ্ধান্ত লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি রাস্তায় সেনাবাহিনীর টহল ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর পাশে সেনাবাহিনীর অবস্থান করানোর দাবি করেছেন। গতকাল বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব সম্পূর্ণ অবাস্তব এবং মানুষের মন ভোলানোর জন্য এই সশস্ত্র বাহিনীর তথাকথিত মোতায়েনের কথা বলা হচ্ছে। বাস্তবে এটার কোন মূল্য নেই। কারণ কোন কেন্দ্রে যদি গণ্ডগোল হয় বা আশেপাশে গণ্ডগোল হয় তবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে কামরাঙ্গীর চরেই হোক বা ধোলাইপাড়ে যেতে লাগবে এক ঘণ্টা। গণ্ডগোল তো একঘণ্টা লেগে থাকে না। স্ট্রাইকিং ফোর্স সেনানিবাসে থাকলে তারা শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে কোন প্রকার অবদান রাখতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। তবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেক্ষেত্রে আমাদের বলার কিছু নেই। আমরা চাই নির্বাচন অবাধ ও নির্বিঘ্নে হোক। সেনাবাহিনীর সেনানিবাসে অবস্থান সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, এটা কোন কাজে আসবে না। যে উদ্দেশ্যে সেনা চাওয়া হয়েছে সে উদ্দেশ্য সাধন হবে না। এটা আইওয়াশ ছাড়া কোন কিছু না। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট না এটা সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বোঝাই যাচ্ছে। যেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সব দল সব ব্যক্তি দাবি করতেছে তাদের অসুবিধা কি? দিতে আপত্তি কেন? কারণটা কি? যেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় এটা সবারই কাম্য হওয়া উচিত। যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করা দরকার। তারা সিদ্ধান্ত নিতে এতদিন সময় নিল। এখন বলছে তারা ক্যান্টনমেন্টে থাকবে এগুলো তো উনাদের জন্য ঠাট্টা করা হচ্ছে আর কি! সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সেনাবাহিনী পথেঘাটে দৃশ্যমান থাকলে লোকের একটা আস্থার জায়গা তৈরি হবে। ভোটকেন্দ্রে কোন ধরনের হাঙ্গামা হবে না। সেনাবাহিনী দৃশ্যমান থাকলে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তারা যদি ক্যান্টনমেন্টে বসে থাকে দৃশ্যমান না থাকে তাহলে সেনা মোতায়েনের যে উদ্দেশ্য সেটা তো অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এটা তো স্পষ্ট যে সরকারি দল যা চাইবে সেটাই তো হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারি দলের লোক যা চাইছে সেটাই তো হচ্ছে। ফলে সেনাবাহিনী থাকছে না। ইসির সিদ্ধান্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কি? নির্বাচনের দুইদিন আগে এ কথাটা অবাস্তব হয়ে যাচ্ছে। ফিল্ডটা যেভাবে আছে ওভাবেই থাকছে। সমান করার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন এটা নিয়ে খেলা করছে। সেনা যদি ব্যবহার করতে হয় তবে তাদের সেনানিবাসের বাইরে থাকতে হবে। কাজে লাগাতে হবে। উপজেলা নির্বাচনে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে ছিল। কিন্তু তাদের ব্যবহার করা হয়নি। এটা নির্ভর করে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করবে তারা সেনাবাহিনী ছাড়াই নির্বাচন করবে তবে তারা সব কিছুর যেন দায় নেয়। কারণ উপজেলা নির্বাচনে শেষদিকে অনেক অনিয়ম-সহিংসতা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এর দায় নেয়নি। নাগরিক হিসাবে আমরা এসব শুনতে চাই না। নির্বাচন কমিশনের এমন আচরণে প্রার্থীরা আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। এভাবে তারা চোখে ধুলা দিচ্ছেন। এবং মাধ্যম হিসাবে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করছেন।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত জানানোর পরের দিন বুধবার হঠাৎ করে চিঠি দিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশন। ইসির নির্বাচন পরিচালনা বিভাগ-২ এর উপসচিব মো. সামসুল আলম স্বাক্ষরিত সংশোধিত চিঠি সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে পাঠানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী সহায়তা চেয়ে একইভাবে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তবে সেখানে সেনানিবাসে সেনাসদস্যদের অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। নতুন চিঠিতে এই বাক্যটি প্রতিস্থাপিত হয়েছে এভাবে-তারা (সেনাবাহিনী) মূলত সেনানিবাসের অভ্যন্তরে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুরোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ জানান, স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে ২৬শে এপ্রিল থেকে ২৯শে এপ্রিল পর্যন্ত সেনা মোতায়েন থাকবে। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য এবং জনমনে যাতে কোন ভীতি না থাকে, ভোটাররা যাতে সুন্দরভাবে নির্বিঘ্নে নিশ্চিতে ভোট দিতে পারে সেজন্য আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে সেনা মোতায়েন নিয়ে নাটকীয়তা চলে নির্বাচন কমিশনে। ১৯শে এপ্রিল ইসির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক হয়। ওই দিন বিকালে কমিশনরা একটি বৈঠকে প্রাথমিকভাবে ২৬ থেকে ২৯শে এপ্রিল পর্যন্ত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে একমত হন। সোমবার বিকাল পর্যন্ত পাঁচ নির্বাচন কমিশনারের দুইজন মতামত দেননি। পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে ছিলেন। অন্য একজন নির্বাচন কমিশনার সিইসির অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। তবে অপর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী পরিষ্কারভাবে কিছু জানাননি। অবশিষ্ট দুই নির্বাচন কমিশনার সোমবার পর্যন্ত তাদের মতামত সিইসির কাছে পাঠাননি। ফলে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্তে পড়ে নির্বাচান কমিশন। নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানায়, মূলত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পরামর্শ করে। তাই তাদের ওপর কমিশন আস্থা রাখছে। ওই বৈঠক থেকে বের হয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের জানান, সেনা মোতায়েনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এ ছাড়া প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনাররা বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তারা যা করা দরকার সবকিছুই করবেন। উল্লেখ্য, গত ১৯শে মার্চ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এই তিন সিটির ভোটগ্রহণ হবে ২৮শে এপ্রিল।
নির্বাচন কমিশনের এমন ইউটার্নে বিস্ময় তৈরি হয়েছে চারদিকে। তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশিষ্টজনেরা। আর জনসাধারণ হয়ে পড়েছেন আতঙ্কিত। নিজেদের ভোট দিতে পারবেন কি-না এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসির সিদ্ধান্ত ভোটারদের সঙ্গে ঠাট্টা ছাড়া আর কিছু না। কারণ ভোটারদের স্বস্তির কথা চিন্তা করেই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ ছাড়া প্রধান বিরোধী জোট বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল শুরু থেকেই সেনা মোতায়েনের পক্ষে ছিলেন। এমনকি সিইসির সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রার্থীদের মতবিনিময় সভায় বেশির ভাগ প্রার্থী সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। অপরদিকে সেনাবাহিনী ছাড়াই সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, সিইসি হুকুম করলেই সেনা মোতায়েন হবে তা ঠিক নয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সেনা মোতায়েন ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে দাবি করেছিলেন। তার মতে, আগের সিটি নির্বাচনগুলো সেনা মোতায়েন ছাড়াই অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। তাই এবারও সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই।
গতকাল সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টেই থাকবে। কারণ, ক্যান্টনমেন্ট হচ্ছে ঢাকা মহানগরের মাঝখানে অবস্থিত। সেখান থেকে উত্তর এবং দক্ষিণে যেতে সহজ হবে। তাই তাদের ক্যান্টনমেন্টেই অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান নিলেও রিটার্নিং কর্মকর্তার ডাকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সাড়া দেবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনাবাহিনী ব্যবহারের সিদ্ধান্ত লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি রাস্তায় সেনাবাহিনীর টহল ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর পাশে সেনাবাহিনীর অবস্থান করানোর দাবি করেছেন। গতকাল বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব সম্পূর্ণ অবাস্তব এবং মানুষের মন ভোলানোর জন্য এই সশস্ত্র বাহিনীর তথাকথিত মোতায়েনের কথা বলা হচ্ছে। বাস্তবে এটার কোন মূল্য নেই। কারণ কোন কেন্দ্রে যদি গণ্ডগোল হয় বা আশেপাশে গণ্ডগোল হয় তবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে কামরাঙ্গীর চরেই হোক বা ধোলাইপাড়ে যেতে লাগবে এক ঘণ্টা। গণ্ডগোল তো একঘণ্টা লেগে থাকে না। স্ট্রাইকিং ফোর্স সেনানিবাসে থাকলে তারা শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে কোন প্রকার অবদান রাখতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। তবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেক্ষেত্রে আমাদের বলার কিছু নেই। আমরা চাই নির্বাচন অবাধ ও নির্বিঘ্নে হোক। সেনাবাহিনীর সেনানিবাসে অবস্থান সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, এটা কোন কাজে আসবে না। যে উদ্দেশ্যে সেনা চাওয়া হয়েছে সে উদ্দেশ্য সাধন হবে না। এটা আইওয়াশ ছাড়া কোন কিছু না। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট না এটা সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বোঝাই যাচ্ছে। যেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সব দল সব ব্যক্তি দাবি করতেছে তাদের অসুবিধা কি? দিতে আপত্তি কেন? কারণটা কি? যেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় এটা সবারই কাম্য হওয়া উচিত। যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করা দরকার। তারা সিদ্ধান্ত নিতে এতদিন সময় নিল। এখন বলছে তারা ক্যান্টনমেন্টে থাকবে এগুলো তো উনাদের জন্য ঠাট্টা করা হচ্ছে আর কি! সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সেনাবাহিনী পথেঘাটে দৃশ্যমান থাকলে লোকের একটা আস্থার জায়গা তৈরি হবে। ভোটকেন্দ্রে কোন ধরনের হাঙ্গামা হবে না। সেনাবাহিনী দৃশ্যমান থাকলে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তারা যদি ক্যান্টনমেন্টে বসে থাকে দৃশ্যমান না থাকে তাহলে সেনা মোতায়েনের যে উদ্দেশ্য সেটা তো অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এটা তো স্পষ্ট যে সরকারি দল যা চাইবে সেটাই তো হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারি দলের লোক যা চাইছে সেটাই তো হচ্ছে। ফলে সেনাবাহিনী থাকছে না। ইসির সিদ্ধান্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কি? নির্বাচনের দুইদিন আগে এ কথাটা অবাস্তব হয়ে যাচ্ছে। ফিল্ডটা যেভাবে আছে ওভাবেই থাকছে। সমান করার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন এটা নিয়ে খেলা করছে। সেনা যদি ব্যবহার করতে হয় তবে তাদের সেনানিবাসের বাইরে থাকতে হবে। কাজে লাগাতে হবে। উপজেলা নির্বাচনে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে ছিল। কিন্তু তাদের ব্যবহার করা হয়নি। এটা নির্ভর করে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করবে তারা সেনাবাহিনী ছাড়াই নির্বাচন করবে তবে তারা সব কিছুর যেন দায় নেয়। কারণ উপজেলা নির্বাচনে শেষদিকে অনেক অনিয়ম-সহিংসতা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এর দায় নেয়নি। নাগরিক হিসাবে আমরা এসব শুনতে চাই না। নির্বাচন কমিশনের এমন আচরণে প্রার্থীরা আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। এভাবে তারা চোখে ধুলা দিচ্ছেন। এবং মাধ্যম হিসাবে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করছেন।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত জানানোর পরের দিন বুধবার হঠাৎ করে চিঠি দিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশন। ইসির নির্বাচন পরিচালনা বিভাগ-২ এর উপসচিব মো. সামসুল আলম স্বাক্ষরিত সংশোধিত চিঠি সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে পাঠানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী সহায়তা চেয়ে একইভাবে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তবে সেখানে সেনানিবাসে সেনাসদস্যদের অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। নতুন চিঠিতে এই বাক্যটি প্রতিস্থাপিত হয়েছে এভাবে-তারা (সেনাবাহিনী) মূলত সেনানিবাসের অভ্যন্তরে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুরোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ জানান, স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে ২৬শে এপ্রিল থেকে ২৯শে এপ্রিল পর্যন্ত সেনা মোতায়েন থাকবে। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য এবং জনমনে যাতে কোন ভীতি না থাকে, ভোটাররা যাতে সুন্দরভাবে নির্বিঘ্নে নিশ্চিতে ভোট দিতে পারে সেজন্য আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে সেনা মোতায়েন নিয়ে নাটকীয়তা চলে নির্বাচন কমিশনে। ১৯শে এপ্রিল ইসির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক হয়। ওই দিন বিকালে কমিশনরা একটি বৈঠকে প্রাথমিকভাবে ২৬ থেকে ২৯শে এপ্রিল পর্যন্ত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে একমত হন। সোমবার বিকাল পর্যন্ত পাঁচ নির্বাচন কমিশনারের দুইজন মতামত দেননি। পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে ছিলেন। অন্য একজন নির্বাচন কমিশনার সিইসির অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। তবে অপর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী পরিষ্কারভাবে কিছু জানাননি। অবশিষ্ট দুই নির্বাচন কমিশনার সোমবার পর্যন্ত তাদের মতামত সিইসির কাছে পাঠাননি। ফলে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্তে পড়ে নির্বাচান কমিশন। নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানায়, মূলত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পরামর্শ করে। তাই তাদের ওপর কমিশন আস্থা রাখছে। ওই বৈঠক থেকে বের হয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের জানান, সেনা মোতায়েনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এ ছাড়া প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনাররা বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তারা যা করা দরকার সবকিছুই করবেন। উল্লেখ্য, গত ১৯শে মার্চ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এই তিন সিটির ভোটগ্রহণ হবে ২৮শে এপ্রিল।
No comments