রাজনৈতিক আলোচনা- 'নির্মানবীয় রাজনীতি ও জনসমাজের বিপজ্জনক নীরবতা' by নূরুল কবীর

প্রতিশ্রুতি রক্ষার সঙ্গে মানবীয় মর্যাদার প্রশ্নটি একান্তভাবে সম্পর্কিত। প্রাণীকূলে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো জীব-জানোয়ার কিংবা পশুপাখি কি একে অন্যকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়?

আপন আপন প্রজাতিকে সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য কি নিজেদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তোলে তারা? নিজেদের ভেতরে নেতা নির্বাচন করে? নেতৃত্ব লাভের জন্য প্রতিযোগিতা হয় প্রার্থীদের মধ্যে? ভোট সংগ্রহের জন্য প্রতিযোগী প্রার্থীদের কি কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে হয়? আমরা জানি না। প্রাণীবিজ্ঞানের কোনো গবেষণাই জন্তু-জানোয়ার, পশু-পাখির ব্যাপারে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর আমাদের সামনে এখনো হাজির করেনি। কিন্তু মানুষের মধ্যে এসব আছে। ব্যক্তি মানুষ নিজেদের সুখ-সুবিধা ও নিরাপত্তার জন্য সমাজবদ্ধ হয়েছে।
ইতিহাসের নানান পর্বে গড়ে তুলেছে নানান সংগঠন। রাষ্ট্রও তেমনি একটি সংগঠন। নির্মাণ করেছে নানান ধরনের রাজনীতি। রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বাস্তবায়নের জন্য উদ্ভাবন করেছে নানান কৌশল। কৌশল বাস্তবায়নের জন্য জন্ম দিয়েছে রাজনৈতিক দল ও তার নেতৃত্বের ধারণা। নেতৃত্ব অর্জনের জন্য নির্বাচন। নির্বাচনে জয়লাভের জন্য প্রতিশ্রুতি। ইত্যাদি, ইত্যাদি। এগুলো সবই মানুষের গভীর চিন্তাশীলতার প্রমাণ – অপরাপর প্রাণী থেকে যা তাকে মোটা দাগে আলাদা করেছে। এই মানুষের রয়েছে মানবীয় মর্যাদাবোধ। মানবীয় মর্যাদাবোধের সঙ্গে, আগেই বলা হয়েছে, প্রতিশ্রুতি রক্ষার রয়েছে সরাসরি যোগাযোগ। এ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মানুষ মানুষ থাকে না – অধঃপতিত হয় অমানুষে। অন্য কথায় স্থূল পাশবিক জীবনে ফিরে যায় মানুষ। মানুষের এই পশ্চাৎগামিতা নির্মানবীয়, কেননা তার অভীষ্ট হওয়ার কথা আরো সৃষ্টিশীল, উন্নততর ভবিষ্যৎ।
বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতি এখন এক বেদনাদায়ক নির্মানবীয় পরিস্থিতিতে অধঃপতিত হয়েছে। কারণ, রাজনীতির প্রধান প্রধান সংগঠন ও তাদের নেতৃত্ব মানুষকে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না। আপন মানবীয় মর্যাদা বিসর্জন না দিয়ে, নিদেনপক্ষে ক্ষুণ্ণ না করে, একজন ব্যক্তি মানুষ যেমন অন্য একজন ব্যক্তি মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারে না, কোনো রাজনৈতিক দলও তেমনি আপন মানবীয় মর্যাদা বিসর্জন না দিয়ে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বিস্মৃত হতে পারে না। এ কথা সত্য, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কোনো ব্যক্তি নানান অনিবার্য কারণে যথার্থই অনন্যোপায় হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত ব্যক্তির সামনে তার যথার্থ ব্যাখ্যা হাজির করা চাই – যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা। যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা ছাড়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার অর্থই নিজের মানবীয় মর্যাদা বিসর্জন দেওয়া, নিজেকে অমানুষে অধঃপতিত করা। রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ আমাদের দেশের গোটা জনগোষ্ঠীর উন্নততর বিকাশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে বলে বুলিবাগিশী করে, সে দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের জন্য সাধারণ নির্বাচনের আগে নানান প্রতিশ্রুতি হাজির করে নিজের শাসন ক্ষমতা অর্জনের পক্ষে জনতার ‘সম্মতি’ প্রার্থনা করে এবং তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ করে। কিন্তু ক্ষমতারোহনের পরপরই রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বিস্মৃত হতে থাকে ইতিপূর্বে প্রদত্ত যাবতীয় সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিশ্রুতি। অর্থাৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের মানবীয় মর্যাদাবোধ বিলীন করে দিয়ে এরা মানবীয় মর্যাদাবোধবিবর্জিত স্থূল নির্মানবীয় সংগঠনে পর্যবসিত হয়। ফলে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নততর বিকাশ তো দূরের কথা, ক্রমশই তা পাশবিক স্তরে অধঃপতিত হতে থাকে। এ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রাক-নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও নির্বাচনোত্তর ক্রিয়াকলাপ তার এক জ্বলন্ত প্রমাণ।
লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দলটির নেতৃত্ব পরিষ্কারভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, জনগণ তাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে তারা ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা’ গড়ে তুলবেন।
এই প্রতিশ্রুতিটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এ দেশে শাসকশ্রেণীর রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে শিষ্টাচার, আরো নির্দিষ্ট করে বললে, গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার, ক্রমশই বিলুপ্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে। একটি সমাজে আপন আপন রাজনৈতিক-ভাবাদর্শিক কর্মসূচি নিয়ে গড়ে ওঠে নানান রাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিটি সংগঠনই দাবি করে, দেশের নাগরিকদের সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও সমৃদ্ধির জন্য তার অনুসৃত ভাবাদর্শ ও প্রণীত কর্মসূচিই সর্বোত্তম। এমতাবস্থায় নানান ভাবাদর্শ ও কর্মসূচির ভেতর প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নানান দল সমাজের নানান অংশের ভেতর জনপ্রিয়তা অর্জন করবে – সেটাই স্বাভাবিক। এখানে পরস্পরের ভেতর ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার সুযোগ কোথায়? প্রত্যেকেই আপন আপন ভাবাদর্শ ও কর্মসূচির প্রতি জনসমর্থন আদায়ে পরিশ্রম করবে এবং অধিকাংশ মানুষের সমর্থিত ভাবাদর্শ ও কর্মসূচির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংগঠন কর্তৃক সরকার গঠিত হবে। এটাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
আমাদের দেশে বিষয়গুলো এভাবে অগ্রসর হচ্ছে না বহুদিন। এখানে শাসকশ্রেণীর ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো একে অন্যকে আপন আপন রাজনৈতিক ভাবাদর্শ কিংবা সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে দুর্বল করার পরিবর্তে গায়ের জোরে, বিশেষত রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করে, রাজনীতির জগৎ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে নিজের নিরঙ্কুশ প্রভাব জারি রাখতে বদ্ধপরিকর। এহেন ভাবনা ও তৎপরতার ভেতর একে অন্যের প্রতি ন্যূনতম শিষ্টাচার প্রদর্শন করতেও অনিচ্ছুক। এখানে পরমতসহিষ্ণুতা, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের অন্যতম প্রধান ভিত্তি, এক বিরল বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায়, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিকে আমাদের মানুষ স্বভাবতই স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতারোহণের পর লীগ তার প্রতিশ্রুতি বিস্মৃত হয়েছে। ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দলের প্রতি সহিষ্ণুতা প্রদর্শন তো দূরের কথা, সমাজ থেকে গায়ের জোরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য দলটি যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে।
লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপপ্রধান নেতা, প্রবীণ রাজনীতিক, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী জনসমক্ষে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, ‘জাতীয়তাবাদী দলের অস্তিত্ব রক্ষা করতে দেওয়া হবে না!’
জাতীয়তাবাদী দল কোনো বেআইনি রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তা ছাড়া, জাতীয়তাবাদী দল যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভাবাদর্শ ও নীতিমালার চর্চা করে চলেছে, আওয়ামী লীগও প্রায় অভিন্ন ভাবাদর্শ ও নীতিমালাই অনুসরণ করে চলেছে। উভয় দলের কাছেই ‘গণতন্ত্র’ শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল ছাড়া অন্য তাৎপর্য বহন করে বলে প্রতীয়মান হয় না। গণমানুষের ব্যাপক রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরিপূরক নীতিমালা এবং কর্মসূচি উভয় দলের মধ্যেই অনুপস্থিত। উভয়েই জনস্বার্থবিরোধী বাজার-অর্থনীতির প্রবক্তা। এমনকি, সংগঠনের ভেতরকার অগণতান্ত্রিক আবহের ক্ষেত্রেও ভীষণ সাযুজ্য রয়েছে উভয় দলের ভেতর। নেতৃত্ব নির্বাচনে পরিবারতন্ত্রের প্রকোপও উভয় দলেই সমানভাবে বিদ্যমান। ব্যাপক অর্থে, একটিকে অন্যের চেয়ে উত্তম গণ্য করার সুযোগ নিতান্তই সামান্য। তবুও লীগ কেন জাতীয়তাবাদী দলকে মিত্র হিসেবে বিবেচনা না করে তার অস্তিত্ব বিপন্ন করতেই উৎসাহী? – ক্ষমতা। রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষাই এই নির্মানবিক উৎসাহের পেছনে সক্রিয় রয়েছে। ফলে, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতক শিবিরের প্রতি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনাগ্রহী। প্রতিশ্রুতি রক্ষার সঙ্গে নিজেদের মানবীয় মর্যাদা রক্ষার অমোচনীয় সমীকরণ এখানেই অর্থহীন হয়ে পড়ে লীগের কাছে। তার রাজনীতি পর্যবসিত হয় রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের, কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার, অমানবীয়, অর্থাৎ পাশবিক সংগ্রামে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অস্তিত্ব বিপন্ন করার সাজেদাকৃত সদম্ভ ঘোষণা যে কথার কথা নয়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ঘোষণার রেশ বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই – জাতীয়তাবাদী দলের নেতা ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের প্রতি ক্ষমতাসীনদের নির্মানবিক আচরণের ভেতর।
লুৎফুজ্জামান বাবর একটি ভয়ঙ্কর মামলায় অভিযুক্ত আসামি। অভিযোগ রয়েছে, পার্শ্ববর্তী একটি দেশের ভেতরে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য সে দেশের একটি বিদ্রোহী রাজনৈতিক গ্রুপকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বাবর ১০ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ করার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গুরুতর অভিযোগ বৈকি। এ অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন বিচারের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার যথাযথ শাস্তি হওয়াও প্রয়োজন। কেননা, অন্য একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিপ্লব-বিদ্রোহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্তি বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু তদন্ত ও বিচারের নামে বাবরের প্রতি সরকারের আচরণকে কোনো অবস্থাতেই স্বচ্ছ ও আইনানুগ হিসেবে আখ্যায়িত করার সুযোগ নেই।
দৈনিক পত্র-পত্রিকায় ২ নভেম্বর প্রকাশিত বাবরের একটি ছবিতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, তিনি ভীষণ অসুস্থ। তাকে যখন একটি আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনো তার নাক দিয়ে রক্তের ধারা বয়ে চলেছে। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়ও রক্ত গড়িয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায়, সরকারপক্ষের উকিলরা বাবরকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান। রীতিমতো হৈচৈ করে দাবি জানান তারা। বাবরের পক্ষাবলম্বী উকিলরা ‘মানবিক কারণে’ রিমান্ড মঞ্জুরের বিরোধিতা করেন। কেননা, পুলিশ রিমান্ড মানেই অভিযুক্তের ওপর আরো শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক নিপীড়ন – এ কথা এ দেশের কারোরই আর অজানা নেই। কিন্তু সরকারপক্ষের জোর দাবির মুখে আদালত গুরুতর অসুস্থ বাবরের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রের বিদ্যমান আইনকানুন অনুযায়ী, সরকারের হেফাজতে থাকা কোনো অভিযুক্ত আসামি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমেই সরকারি খরচ ও তত্ত্বাবধানে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু বর্তমান ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গুরুতর অসুস্থ বাবরকে চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরিবর্তে পুলিশ রিমান্ডে, অর্থাৎ আরো অসুস্থ হয়ে পড়ার দিকে, ঠেলে দিচ্ছে সরকার। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এ অবৈধ ও নির্মানবিক আচরণ ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দলের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করার ক্ষমতাসীন দলের প্রকাশ্য ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈকি।
শুধু বাবরের ব্যাপারেই নয়, কিংবা নয় শুধু জাতীয়তাবাদী দলের ব্যাপারেই, সমাজের ভিন্নমতাবলম্বী অপরাপর ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রতিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভিন্ন নির্মানবিক আচরণের অনেক উদাহরণ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের ওপর নির্মম পুলিশি নির্যাতন এবং সংগঠনটির মিছিলের ওপর ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সন্ত্রাসী হামলা স্মরণযোগ্য।
‘রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা’ সঞ্চারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই শুধু নয়, ক্ষমতাসীন লীগ সরকার নানামুখী আরো বহু প্রতিশ্রুতিই আজ বিস্মৃত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধ করা, পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ করা সেসব প্রতিশ্রুতির অন্যতম। ওদিকে, জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী দলও জনগণকে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিরন্তর ভঙ্গ করে চলেছে। নির্বাচনী ইশতেহারে এ দলটি পরিষ্কারভাবে কথা দিয়েছিল, নির্বাচনে জয়লাভ করতে ব্যর্থ হলেও তারা জাতীয় সংসদের অধিবেশন বর্জন করবে না, সংসদে জনগণের স্বার্থের তরফে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। তারাও কথা রাখেনি।
এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার অমানবীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ ও জনমত সংগঠিত করা গণতন্ত্রপরায়ণ সিভিল সোসাইটি বা জনসমাজের অন্যতম প্রধান মানবীয় কর্তব্য। কিন্তু আমাদের জনসমাজ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী সরকার ও বিরোধী দলের মানবিক মর্যাদাবোধহীন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যাপারে রীতিমতো নীরবতা অবলম্বন করে চলেছে। অন্তত তাৎপর্যপূর্ণ কোনো সংগঠিত প্রতিবাদের, প্রতিরোধ তো দূরের কথা, লেশমাত্রও সমাজে অনুপস্থিত। এই নীরবতা ভীষণ বিপজ্জনক। এ নীরবতার ওপর ভিত্তি করেই এ দেশের শাসকশ্রেণী গণতন্ত্রবিরোধী, ফলে গণস্বার্থবিরোধী, রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার দিকে এগিয়ে যাবে। সমাজে ভিন্নমত পোষণ ও প্রচারের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পরিসর আরো সংকুচিত হয়ে পড়বে, যার অবশ্যম্ভাবী কুফল হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথ আরও কন্টকাকীর্ণ হয়ে পড়া – যা কোনো সুস্থ চিন্তাশীল নাগরিকের কাম্য হতে পারে না। অতএব, সাধু সাবধান।
==========================
আলোচনা- 'সত্য প্রকাশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ত্রিমুখী অভিযান by নূরুল কবীর  খাদ্য আলোচনা- 'খাদ্য উৎপাদনের বাধা দূর করাই ক্ষুধার বিরোদ্ধে প্রধান সংগ্রাম' by ফরিদা আক্তার  রাজনৈতিক আলোচনা- ' কোন পথে ক্ষমতা! হস্তান্তর নয় রূপান্তর চাই   আলোচনা- 'শিল্পনীতি-২০১০:সামর্থ্যের অপব্যবহারে পঙ্গ  আলোচনা- যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষাকারী ইসরাইল লবি ইভটিজং আলোচনা- নারী উৎপীড়ক সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া  রাজনৈতিক আলোচনা- 'ছাত্ররাজনীতি তার হারানো গৌরব ফিরে পাক by ফরহাদ মাহমুদ  আলোচনা- 'দেশ কাঁপানো নূরজাহান' by আবদুল হামিদ মাহবুব  ইতিহাস- 'বাংলা ভাষার স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ' by রফিকুল ইসলাম  গল্পালোচনা- 'অরণ্যে যুদ্ধ' by অরুন্ধতী রায়  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা আর ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ  নিবন্ধ- 'আইলা, কৃষি এবং কোপেনহেগেন প্রাপ্তি'  গল্পিতিহাস- 'এত যে সফলতা, তবুও বিফলতা' by সনৎ কুমার সাহা  আলোচনা- 'মুনাফার মালা গলায় ঝুলিয়ে পুঁজিবাদীরা মানবজাতি ধবংসের ব্যবস্থা করছে by বদরুদ্দীন উমর  গল্পালোচনা- 'স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি' by লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান  আলোচনা- 'টেলিভিশন কি পত্রিকার প্রতিদ্বন্দ্বী


সাপ্তাহিক বুধবার এর সৌজন্যে
লেখকঃ নূরুল কবীর


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.