নাইজেরিয়ায় দাঙ্গায় নিহত পাঁচ শতাধিক



নাইজেরিয়ায় গত রোববার ভোররাতে মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পাঁচ শতাধিক লোক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক শ। হতাহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। কয়েকটি সূত্র প্রাথমিকভাবে নিহতের সংখ্যা প্রায় এক শ বলে জানালেও গতকাল সোমবার স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, প্লাতেউ প্রদেশের জোস শহরের পার্শ্ববর্তী তিনটি গ্রামে মুসলিম সম্প্রদায়ের ফিলানি গোত্রের লোকেরা তাদের প্রতিপক্ষ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বেরোম গোত্রের ওপর হামলা চালালে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নতুন করে যাতে কোনো সংঘাত না বাধে সে জন্য ওই এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সাঁজোয়া যান ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেখানে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে কমপক্ষে ৯৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার জের ধরে নাইজেরিয়ার অন্যান্য প্রদেশেও জাতিগত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপি।
জানা গেছে, ঐতিহাসিকভাবেই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত ফিলানি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ভুক্ত বেরোম গোত্রের মধ্যে বহু বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বহুবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে একটি গরু চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ হয়। ওই সময় বেরোম গোত্রের হামলায় ফিলানি গোত্রের শতাধিক লোক নিহত হয়। এ ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই ফিলানিরা রোববার ভোররাতে বেরোমদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামলার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দা ফ্রাঙ্ক তাতগুন বলেছেন, ভোররাতে হামলাকারীরা তিনটি গ্রাম ঘিরে ফেলে। তাদের সবার হাতে চাপাতি জাতীয় ধারালো অস্ত্র। তারা শণ ও বাঁশের তৈরি কুঁড়েঘরে প্রথমে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রাণ বাঁচাতে লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে। নারী ও শিশুসহ সবাই যখন পালাচ্ছিল, তখন তাদের বন্য জানোয়ার শিকারের জন্য ব্যবহার করার ফাঁদ ও মাছধরার জাল দিয়ে আটকে ফেলা হয়। এরপর নারী-শিশুনির্বিশেষে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রঘটনার দিন প্রাথমিকভাবে নিহতের সংখ্যা প্রায় এক শ বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করলেও গতকাল প্লাতেউ প্রদেশের রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। রাজ্য সরকারের উপদেষ্টা ড্যান মানজাং বলেছেন, তাঁরা এ পর্যন্ত ৯৫ জনকে হামলাকারী সন্দেহে আটক করছেন। একই সঙ্গে তিনি এ হামলায় পাঁচ শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
গণমাধ্যমকর্মীরা বলেছেন, সাধারণত নাইজেরিয়ার জাতিগত দাঙ্গায় নিহতদের সঠিক সংখ্যা জানা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। সর্বশেষ হামলার ঘটনায় বহু লোককে মেরে লাশ গুম করা হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি ছাড়পত্র ছাড়াই অসংখ্য মৃতদেহ তড়িঘড়ি করে কবর দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে আসল তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই ধামাচাপা পড়ে যায়। এদিকে পুনরায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় প্লাতেউ প্রদেশের রাস্তায় রাস্তায় নিরাপত্তাকর্মীরা টহল দিচ্ছে।
প্লাতেউর কমিশনার ফর ইনফরমেশন গ্রেগরি ইয়েনলং বলেন, সৈন্যরা সবখানে সতর্ক পাহারায় রয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত। তবে রেডক্রসের একজন মুখপাত্র বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো নাজুক। তাঁরা উদ্ধার-তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। গুরুতর আহতদের তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন।
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়ায় এমন এক সময় এ জাতিগত দাঙ্গার আগন জ্বলে উঠল, যখন সে দেশের প্রেসিডেন্ট উমারু ইয়ারআদুয়া অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে গুডলাক জোনাথন সরকার চালাচ্ছেন।
জোনাথনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.