মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য by আবুল বাসার
গুপ্ত মহাবিশ্বের খোঁজে: ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির আদ্যোপান্ত by আবদুল গাফফার।
প্রচ্ছদ: মাহবুব রহমান।
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা।
প্রকাশকাল: জানুয়ারি, ২০১৯।
১৯২ পৃষ্ঠা, দাম: ৩৫০ টাকা।
ধরা যাক, বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দা শার্লক হোমস দুর্ধর্ষ কোনো খুনের তদন্তে নেমেছেন। সহকারী ওয়াটসনকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে দেখলেন, খুনের মোটিভ আছে, প্রমাণ আছে, কিন্তু খোদ মৃতদেহটাই নেই। এমন ঘোরতর রহস্যময় ঘটনার সামনে ভুরু কুঁচকে কপাল ছাড়িয়ে মাথার চাঁদিতে উঠলেও শার্লক হোমসকে দোষ দেওয়া যায় না। বিজ্ঞানেও এই মুহূর্তে ঠিক এমনই এক রহস্যের নাম ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি, বাংলায় যাদের বলা হয় গুপ্তবস্তু আর গুপ্তশক্তি।
গুপ্তবস্তু নিয়ে জটিল রহস্যটার শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালটেকে কোমা ক্লাস্টার গ্যালাক্সি নিয়ে কাজ করছিলেন সুইস জ্যোতির্বিদ ফ্রিটজ জুইকি। তাঁর ইচ্ছা ছিল, ৩২ কোটি আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সিগুলোর গতিবেগ মেপে তাদের ভর নির্ণয় করা। সেটি করতে গিয়েই অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করলেন জুইকি। দেখা গেল, গ্যালাক্সির নক্ষত্রগুলো যে গতিতে চললে তারা গ্যালাক্সির চারপাশে স্থিতিশীলভাবে ঘুরতে পারবে, তার তুলনায় তাদের গতি অনেক গুণ বেশি। আসলে এ গতিবেগে চললে গ্যালাক্সি থেকে নক্ষত্রগুলোর ছিটকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। এই গতিবেগ তখনই সম্ভব, যদি গ্যালাক্সিগুলোর মহাকর্ষ টান অনেক গুণ বেশি হয়; মানে গ্যালাক্সিগুলোর ভর অনেক বেশি হয়। কিন্তু গণনায় পাওয়া ভর থেকে তা প্রায় ৪০০ ভাগ কম। তাহলে বাকি ভরগুলো গেল কোথায়? এর বছরখানেক আগেও ঠিক একই ফল পেয়েছিলেন ডাচ বিজ্ঞানী জ্যান ওর্ট। তবে ওর্ট বুঝতে না পারলেও এখানে গভীর অন্তর্দৃষ্টি কাজে লাগালেন জুইকি। তিনি বুঝতে পারলেন, এর একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে, যদি গ্যালাক্সিগুলোতে দৃশ্যমান ভরের চেয়ে আরও ৪০০ গুণ ভর অদৃশ্য থাকে। সেই অজানা-অদৃশ্য বস্তুদের তিনি নাম দিলেন ‘ডার্ক ম্যাটার’।
তবে বিদেশি বলেই হয়তো মার্কিন বিজ্ঞানীরা তাঁর কথায় তেমন পাত্তা দিলেন না। এমনকি বৈপ্লবিক এ আবিষ্কারের কারণে হাসির খোরাকও হলেন। এরপর ডার্ক ম্যাটারের কথাটা সরকারি দপ্তরের মতো লাল ফিতায় ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে রইল বহুকাল।
১৯৭০-এর দশকে বিষয়টি আবারও আলোচনায় উঠে এল কজন বিজ্ঞানীর গবেষণার কারণে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ভেরা রুবিন। মজার ব্যাপার হলো, তাঁদের গবেষণায় ডার্ক ম্যাটার-রহস্য সমাধানের বদলে আরও ঘনীভূত হলো। অনেকবার চুলচেরা হিসাব-নিকাশ করে দেখা গেছে, মহাবিশ্বের মাত্র ৪ শতাংশ বস্তু আমরা দেখতে পাই, বাকি ৯৬ শতাংশ আমাদের কাছে অধরা। সেগুলোই হলো ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি। ত্রিশের দশক থেকে এ পর্যন্ত অজানা-অদৃশ্য এ বস্তু সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা গেছে। তাতে আরও গভীর হয়েছে আমাদের অজানাটাই। কারণ, খুঁজে পাওয়া যায়নি ওই রহস্যময় বস্তু ও শক্তিটি। তাই ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জিই এখন বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ কারণে অনেক দিন ধরেই ডার্ক ম্যাটারের হদিস জানতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা।
ইংরেজিতে এ বিষয়ে বেশ কিছু বই প্রকাশিত হলেও বাংলায় তার পরিমাণ অতি নগণ্য। সেই প্রেক্ষাপটে গুপ্ত মহাবিশ্বের খোঁজে বাংলা ভাষার পাঠকদের চাহিদা মেটাবে নিঃসন্দেহে। বইটির বিশেষত্ব এর সহজ-সরল ভঙ্গি। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো সাধারণ পাঠকের জন্য মেদহীন ভাষায় তুলে ধরার কাজটি এ দেশে শুরু করেছিলেন শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন। সেই ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাওয়া যাবে এ বইয়েও। তাই যাঁরা বিজ্ঞানের তত্ত্ব সেভাবে না জানলেও তার নিগূঢ় তত্ত্ব জানতে চান, তাঁদের কাছেও সহজবোধ্য মনে হবে বইটি। এ জন্য লেখক আবদুল গাফফারকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। গুপ্ত মহাবিশ্বে সবাইকে স্বাগত।
প্রচ্ছদ: মাহবুব রহমান।
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা।
প্রকাশকাল: জানুয়ারি, ২০১৯।
১৯২ পৃষ্ঠা, দাম: ৩৫০ টাকা।
ধরা যাক, বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দা শার্লক হোমস দুর্ধর্ষ কোনো খুনের তদন্তে নেমেছেন। সহকারী ওয়াটসনকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে দেখলেন, খুনের মোটিভ আছে, প্রমাণ আছে, কিন্তু খোদ মৃতদেহটাই নেই। এমন ঘোরতর রহস্যময় ঘটনার সামনে ভুরু কুঁচকে কপাল ছাড়িয়ে মাথার চাঁদিতে উঠলেও শার্লক হোমসকে দোষ দেওয়া যায় না। বিজ্ঞানেও এই মুহূর্তে ঠিক এমনই এক রহস্যের নাম ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি, বাংলায় যাদের বলা হয় গুপ্তবস্তু আর গুপ্তশক্তি।
গুপ্তবস্তু নিয়ে জটিল রহস্যটার শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালটেকে কোমা ক্লাস্টার গ্যালাক্সি নিয়ে কাজ করছিলেন সুইস জ্যোতির্বিদ ফ্রিটজ জুইকি। তাঁর ইচ্ছা ছিল, ৩২ কোটি আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সিগুলোর গতিবেগ মেপে তাদের ভর নির্ণয় করা। সেটি করতে গিয়েই অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করলেন জুইকি। দেখা গেল, গ্যালাক্সির নক্ষত্রগুলো যে গতিতে চললে তারা গ্যালাক্সির চারপাশে স্থিতিশীলভাবে ঘুরতে পারবে, তার তুলনায় তাদের গতি অনেক গুণ বেশি। আসলে এ গতিবেগে চললে গ্যালাক্সি থেকে নক্ষত্রগুলোর ছিটকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। এই গতিবেগ তখনই সম্ভব, যদি গ্যালাক্সিগুলোর মহাকর্ষ টান অনেক গুণ বেশি হয়; মানে গ্যালাক্সিগুলোর ভর অনেক বেশি হয়। কিন্তু গণনায় পাওয়া ভর থেকে তা প্রায় ৪০০ ভাগ কম। তাহলে বাকি ভরগুলো গেল কোথায়? এর বছরখানেক আগেও ঠিক একই ফল পেয়েছিলেন ডাচ বিজ্ঞানী জ্যান ওর্ট। তবে ওর্ট বুঝতে না পারলেও এখানে গভীর অন্তর্দৃষ্টি কাজে লাগালেন জুইকি। তিনি বুঝতে পারলেন, এর একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে, যদি গ্যালাক্সিগুলোতে দৃশ্যমান ভরের চেয়ে আরও ৪০০ গুণ ভর অদৃশ্য থাকে। সেই অজানা-অদৃশ্য বস্তুদের তিনি নাম দিলেন ‘ডার্ক ম্যাটার’।
তবে বিদেশি বলেই হয়তো মার্কিন বিজ্ঞানীরা তাঁর কথায় তেমন পাত্তা দিলেন না। এমনকি বৈপ্লবিক এ আবিষ্কারের কারণে হাসির খোরাকও হলেন। এরপর ডার্ক ম্যাটারের কথাটা সরকারি দপ্তরের মতো লাল ফিতায় ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে রইল বহুকাল।
১৯৭০-এর দশকে বিষয়টি আবারও আলোচনায় উঠে এল কজন বিজ্ঞানীর গবেষণার কারণে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ভেরা রুবিন। মজার ব্যাপার হলো, তাঁদের গবেষণায় ডার্ক ম্যাটার-রহস্য সমাধানের বদলে আরও ঘনীভূত হলো। অনেকবার চুলচেরা হিসাব-নিকাশ করে দেখা গেছে, মহাবিশ্বের মাত্র ৪ শতাংশ বস্তু আমরা দেখতে পাই, বাকি ৯৬ শতাংশ আমাদের কাছে অধরা। সেগুলোই হলো ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি। ত্রিশের দশক থেকে এ পর্যন্ত অজানা-অদৃশ্য এ বস্তু সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা গেছে। তাতে আরও গভীর হয়েছে আমাদের অজানাটাই। কারণ, খুঁজে পাওয়া যায়নি ওই রহস্যময় বস্তু ও শক্তিটি। তাই ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জিই এখন বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ কারণে অনেক দিন ধরেই ডার্ক ম্যাটারের হদিস জানতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা।
ইংরেজিতে এ বিষয়ে বেশ কিছু বই প্রকাশিত হলেও বাংলায় তার পরিমাণ অতি নগণ্য। সেই প্রেক্ষাপটে গুপ্ত মহাবিশ্বের খোঁজে বাংলা ভাষার পাঠকদের চাহিদা মেটাবে নিঃসন্দেহে। বইটির বিশেষত্ব এর সহজ-সরল ভঙ্গি। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো সাধারণ পাঠকের জন্য মেদহীন ভাষায় তুলে ধরার কাজটি এ দেশে শুরু করেছিলেন শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন। সেই ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাওয়া যাবে এ বইয়েও। তাই যাঁরা বিজ্ঞানের তত্ত্ব সেভাবে না জানলেও তার নিগূঢ় তত্ত্ব জানতে চান, তাঁদের কাছেও সহজবোধ্য মনে হবে বইটি। এ জন্য লেখক আবদুল গাফফারকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। গুপ্ত মহাবিশ্বে সবাইকে স্বাগত।
ডার্ক ম্যাটারের মধ্যে লুকিয়ে আছে অজানা অনেক কিছু |
No comments