সূর্যের কাছাকাছি বৃহস্পতি: একটি ভিন্ন দৃষ্টি by মাহবুবুল ইসলাম ও অসিত সাহা
গত
২৫ মার্চ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে
একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘সূর্যের কাছাকাছি সরে এসেছে বৃহস্পতি’। প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স ডেইলিতে। সেখানে বলা হয়েছে,
মহাকাশ বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যাবিষয়ক ইউরোপের খ্যাতনামা গবেষণা
সাময়িকী অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকসে সম্প্রতি এ বিষয় একটি
গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি করেছেন সুইডেনের লুন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের
একদল গবেষক। গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্যের সঙ্গে আরও কিছু তথ্যের
সংযোজন প্রয়োজন।
প্রথমত, ‘উৎপত্তির সময় বৃহস্পতি গ্রহ এখনকার মতো বড় ছিল না। আকারে এটি ছিল পৃথিবীর চেয়ে ছোট বা সমান। ক্রমে এটি মহাজাগতিক ধূলিকণা সঞ্চয় করে আকারে বড় হয়।’ এখানে উল্লেখ্য, এই মহাজাগতিক ধূলিকণা সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত বিচ্ছুরিত আলোক শক্তির বস্তুতে রূপান্তরিত হওয়া কণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আইনস্টাইনের E = mc2 সূত্র দ্বারা আলোক শক্তির বস্তুতে রূপান্তর ব্যাখ্যা করা যায়। গবেষকেরা যাকে মহাজাগতিক ধূলিকণা বা সৌরকণা বলছেন, সেই রূপান্তরিত গ্রহাণুপুঞ্জ বৃহস্পতির সঙ্গে নিরন্তর সংযুক্ত হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, সূর্যের মধ্যে ঘূর্ণমান গ্যাসমণ্ডলের মহাকর্ষ বলের কারণে গ্রহটি তার কক্ষপথের দূরত্ব ও কক্ষপথের ব্যাসার্ধ কমিয়েছে। কথাটি ‘সূর্যের মধ্যে ঘূর্ণমান গ্যাসীয় কণা’ হবে না; হবে সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণমান গ্যাসীয় কণা।
তৃতীয়ত, ‘বৃহস্পতি গ্রহ তার আগের অবস্থান থেকে সূর্যের চার গুণ কাছে সরে এসেছে।’ বাক্যটি বোধগম্য নয়। অর্থাৎ বাক্যটিতে প্রকাশগত অসংগতি থেকে গেছে। বৃহস্পতি সূর্যের কাছে আসার কারণ আকারে বড় বৃহস্পতির সঙ্গে সূর্যের আকর্ষণ বৃদ্ধি, যা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র Fg = GMm/r2 দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।
চতুর্থত, ‘সৌরজগতে মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে থাকা অসংখ্য গ্রহাণুকে বলা হয় গ্রহাণুপুঞ্জ।’ এখানে বলা প্রয়োজন, গ্রহাণু রয়েছে বৃহস্পতির কক্ষপথেও। এদের নাম দেওয়া হয়েছে ট্রোজান গ্রহাণু। ট্রোজান গ্রহাণু দুই অংশে বিভক্ত। এর একটি বৃহস্পতির সামনে দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, অন্যটি পেছন থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পেছনের চেয়ে সামনের অংশে ৫০ শতাংশ বেশি গ্রহাণু রয়েছে। সৌরজগতে প্রতিসমতা লক্ষ করা যায়। ফলে বিজ্ঞানীদের দাবি, ট্রোজানের দুই অংশেই সমান গ্রহাণু ছিল।
সৌরজগৎ বলতে আমরা বুঝি সৌর আলো যত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তত দূরকে। আর গ্রহাণু সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা হচ্ছে, গ্রহাণুগুলো সমগ্র সৌরজগতেই বিরাজমান। উল্লেখিত গবেষণা তথ্যে বৃহস্পতির সামনে ও পেছনে যে পার্থক্যের কথা বলা হয়েছে, তার কারণ হচ্ছে সূর্যের আলো সরাসরি সামনের অংশে থাকায় এই অংশের সৌরকণায় উৎপাদনশীলতা বর্তমান। কিন্তু পেছনের অংশে সূর্যের আলোর অবর্তমানে নতুন গ্রহাণু সৃষ্টি করতে পারে না। অথচ দুই দিকের গ্রহাণুর প্রতিই বৃহস্পতির আকর্ষণ সমান। এই গ্রহাণুপুঞ্জ নিরন্তর বৃহস্পতির সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। ফলে পেছনের দিকের গ্রহাণুর সংখ্যা কম।
এ ক্ষেত্রে পেছনের তুলনায় সামনে ৫০ শতাংশ গ্রহাণু বেশি থাকার একটা গাণিতিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সূর্যের আলো থেকে বৃহস্পতির চারদিকে যে গ্রহাণুর সৃষ্টি হয়, বৃহস্পতি একবার আবর্তনের মাধ্যমে তা নিজের দিকে টেনে নেয়। একটি পূর্ণ আবর্তনের মধ্যবর্তী সময়েই (আবর্তনকাল) এ ঘটনা ঘটে। সৃষ্ট গ্রহাণুগুলো যদি বৃহস্পতি টেনে নিতে না পারত, তবে তা জমে বৃহস্পতির চারদিকে মেঘ সৃষ্টি হতো।
গবেষকেরা বলছেন, ক্রমে বৃহস্পতি মহাজাগতিক ধূলিকণা সঞ্চয় করে আকারে বড় হয়। এখান থেকেই আমরা গ্রহ সৃষ্টির রহস্য খুঁজে পাই। ধূলিকণা বা বস্তুকণার মধ্যে যেগুলো সূর্যমুখী, সেগুলোতে সূর্যের আলো পড়ায় তাদের মধ্যে চার্জ সৃষ্টি হয়। কিন্তু নিচের দিকের বস্তুকণাগুলোর ওপর সূর্যের আলো না পড়ায় চার্জ সৃষ্টি হয় না। এই চার্জযুক্ত গ্রহাণুগুলো ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করছে, যার ফলে চার্জহীন গ্রহাণুর সঙ্গে বৈদ্যুতিক বিস্ফোরণ (বজ্রাঘাত) ঘটে নতুন উপাদান সৃষ্টি হয়, যা আকারে গ্রহাণুর চেয়ে বড়। এই বড় আকারের কণিকা তার চারদিকের গ্রহাণুকে আকর্ষণ করে বৃদ্ধি পায়। এভাবেই নতুন গ্রহের সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয়। সৌরজগতের এই খেলা অবিরাম গতিতে চলছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের গবেষণা তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে বলা যায়, বৃহস্পতি কোনো এক সময় সূর্যের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। ফলে সূর্যের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এ ক্ষেত্রে সূর্য যে একসময় আলো দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে বলে ধারণা প্রচলিত আছে, সেই ধারণা আর কার্যকর থাকছে না। সূর্য থেকে প্রতি মুহূর্তে আলো বিচ্ছুরিত হয়ে সূর্যের শক্তির যে ক্ষয় হচ্ছে, সূর্য তা পুনরায় ফিরে পাবে।
প্রথমত, ‘উৎপত্তির সময় বৃহস্পতি গ্রহ এখনকার মতো বড় ছিল না। আকারে এটি ছিল পৃথিবীর চেয়ে ছোট বা সমান। ক্রমে এটি মহাজাগতিক ধূলিকণা সঞ্চয় করে আকারে বড় হয়।’ এখানে উল্লেখ্য, এই মহাজাগতিক ধূলিকণা সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত বিচ্ছুরিত আলোক শক্তির বস্তুতে রূপান্তরিত হওয়া কণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আইনস্টাইনের E = mc2 সূত্র দ্বারা আলোক শক্তির বস্তুতে রূপান্তর ব্যাখ্যা করা যায়। গবেষকেরা যাকে মহাজাগতিক ধূলিকণা বা সৌরকণা বলছেন, সেই রূপান্তরিত গ্রহাণুপুঞ্জ বৃহস্পতির সঙ্গে নিরন্তর সংযুক্ত হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, সূর্যের মধ্যে ঘূর্ণমান গ্যাসমণ্ডলের মহাকর্ষ বলের কারণে গ্রহটি তার কক্ষপথের দূরত্ব ও কক্ষপথের ব্যাসার্ধ কমিয়েছে। কথাটি ‘সূর্যের মধ্যে ঘূর্ণমান গ্যাসীয় কণা’ হবে না; হবে সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণমান গ্যাসীয় কণা।
তৃতীয়ত, ‘বৃহস্পতি গ্রহ তার আগের অবস্থান থেকে সূর্যের চার গুণ কাছে সরে এসেছে।’ বাক্যটি বোধগম্য নয়। অর্থাৎ বাক্যটিতে প্রকাশগত অসংগতি থেকে গেছে। বৃহস্পতি সূর্যের কাছে আসার কারণ আকারে বড় বৃহস্পতির সঙ্গে সূর্যের আকর্ষণ বৃদ্ধি, যা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র Fg = GMm/r2 দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।
চতুর্থত, ‘সৌরজগতে মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে থাকা অসংখ্য গ্রহাণুকে বলা হয় গ্রহাণুপুঞ্জ।’ এখানে বলা প্রয়োজন, গ্রহাণু রয়েছে বৃহস্পতির কক্ষপথেও। এদের নাম দেওয়া হয়েছে ট্রোজান গ্রহাণু। ট্রোজান গ্রহাণু দুই অংশে বিভক্ত। এর একটি বৃহস্পতির সামনে দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, অন্যটি পেছন থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পেছনের চেয়ে সামনের অংশে ৫০ শতাংশ বেশি গ্রহাণু রয়েছে। সৌরজগতে প্রতিসমতা লক্ষ করা যায়। ফলে বিজ্ঞানীদের দাবি, ট্রোজানের দুই অংশেই সমান গ্রহাণু ছিল।
সৌরজগৎ বলতে আমরা বুঝি সৌর আলো যত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তত দূরকে। আর গ্রহাণু সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা হচ্ছে, গ্রহাণুগুলো সমগ্র সৌরজগতেই বিরাজমান। উল্লেখিত গবেষণা তথ্যে বৃহস্পতির সামনে ও পেছনে যে পার্থক্যের কথা বলা হয়েছে, তার কারণ হচ্ছে সূর্যের আলো সরাসরি সামনের অংশে থাকায় এই অংশের সৌরকণায় উৎপাদনশীলতা বর্তমান। কিন্তু পেছনের অংশে সূর্যের আলোর অবর্তমানে নতুন গ্রহাণু সৃষ্টি করতে পারে না। অথচ দুই দিকের গ্রহাণুর প্রতিই বৃহস্পতির আকর্ষণ সমান। এই গ্রহাণুপুঞ্জ নিরন্তর বৃহস্পতির সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। ফলে পেছনের দিকের গ্রহাণুর সংখ্যা কম।
এ ক্ষেত্রে পেছনের তুলনায় সামনে ৫০ শতাংশ গ্রহাণু বেশি থাকার একটা গাণিতিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সূর্যের আলো থেকে বৃহস্পতির চারদিকে যে গ্রহাণুর সৃষ্টি হয়, বৃহস্পতি একবার আবর্তনের মাধ্যমে তা নিজের দিকে টেনে নেয়। একটি পূর্ণ আবর্তনের মধ্যবর্তী সময়েই (আবর্তনকাল) এ ঘটনা ঘটে। সৃষ্ট গ্রহাণুগুলো যদি বৃহস্পতি টেনে নিতে না পারত, তবে তা জমে বৃহস্পতির চারদিকে মেঘ সৃষ্টি হতো।
গবেষকেরা বলছেন, ক্রমে বৃহস্পতি মহাজাগতিক ধূলিকণা সঞ্চয় করে আকারে বড় হয়। এখান থেকেই আমরা গ্রহ সৃষ্টির রহস্য খুঁজে পাই। ধূলিকণা বা বস্তুকণার মধ্যে যেগুলো সূর্যমুখী, সেগুলোতে সূর্যের আলো পড়ায় তাদের মধ্যে চার্জ সৃষ্টি হয়। কিন্তু নিচের দিকের বস্তুকণাগুলোর ওপর সূর্যের আলো না পড়ায় চার্জ সৃষ্টি হয় না। এই চার্জযুক্ত গ্রহাণুগুলো ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করছে, যার ফলে চার্জহীন গ্রহাণুর সঙ্গে বৈদ্যুতিক বিস্ফোরণ (বজ্রাঘাত) ঘটে নতুন উপাদান সৃষ্টি হয়, যা আকারে গ্রহাণুর চেয়ে বড়। এই বড় আকারের কণিকা তার চারদিকের গ্রহাণুকে আকর্ষণ করে বৃদ্ধি পায়। এভাবেই নতুন গ্রহের সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয়। সৌরজগতের এই খেলা অবিরাম গতিতে চলছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের গবেষণা তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে বলা যায়, বৃহস্পতি কোনো এক সময় সূর্যের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। ফলে সূর্যের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এ ক্ষেত্রে সূর্য যে একসময় আলো দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে বলে ধারণা প্রচলিত আছে, সেই ধারণা আর কার্যকর থাকছে না। সূর্য থেকে প্রতি মুহূর্তে আলো বিচ্ছুরিত হয়ে সূর্যের শক্তির যে ক্ষয় হচ্ছে, সূর্য তা পুনরায় ফিরে পাবে।
No comments