বাস্তবোচিত সঠিক সিদ্ধান্ত
(বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি)
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন
অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপ ও সমঝোতার জন্য
তার দল ও জোটের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশের
অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার এ অবস্থান সাধুবাদ পেতে পারে। গত
সোমবার সমকালের 'টানা অবরোধ স্থগিত/বিচক্ষণ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই'
শিরোনামের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, দশম সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে না হলেও
বিএনপিকে মনে রাখতে হবে যে, এই নির্বাচন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার
বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষাপটে হয়েছে। এখনই সরকার পতনের আন্দোলনে সাড়া মিলবে বলে
মনে হয় না। আশার কথা, সরকারপক্ষও রাজপথে বিরোধীদের পরাস্ত করার পথ থেকে
সরে আসছে। বিএনপি এখন সংসদে নেই। তবে তারা একটি প্রধান রাজনৈতিক দল। তাই
তাদের সঙ্গে অবশ্যই সংলাপে বসতে হবে। সরকারের তরফে উচিত হবে তাদের
স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তাতে
অশান্তি সৃষ্টির সুযোগ কম। ১৮ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দুই দিন আগে তার
বৈঠকের পর ২৯ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে হরতাল
আহ্বান করা হবে_ এমন সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছিল। হরতাল না ডেকে ২০ ও ২৯
জানুয়ারি দেশব্যাপী গণসমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা
হয়েছে। গত দুই বছর ধরে এ জোটের তরফে একের পর এক অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি
পালনের আহ্বান জানানো হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে খালেদা জিয়া 'প্রহসন'
হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং নতুন সরকারকে 'অবৈধ' অভিহিত করে অনতিবিলম্বে এ
'বিপজ্জনক সরকারকে' সরিয়ে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি জনগণের
গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান অবস্থা
বিবেচনায় নিয়ে যে ধরনের রাজপথের কর্মসূচিতে জনগণের সমর্থন নেই, তা সম্পূর্ণ
পরিহার করেছেন। নতুন সরকার গঠনের পর কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী সংলাপের ওপর
জোর দিয়েছেন। গতকালও কূটনীতিকরা দ্রুত সংলাপ অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছেন। এখন
উভয় দিক থেকেই আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার
এবং জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এখন নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ও
স্থিতি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে চাই সব পক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা। একে অপরকে
ঘায়েল করার চিন্তা পরিহার করুন। দেশ ও জনগণের ওপরে কেউ থাকতে পারে না। এখন
অপেক্ষাকৃত সুস্থির সময় চলছে। আশা থাকবে যে, উভয় পক্ষ এ সময়ে নিজেদের অতীত
কর্মকাণ্ড ধৈর্যের সঙ্গে মূল্যায়ন করবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা প্রণয়নে তার
যথাযথ প্রতিফলন ঘটাবে। কোনো পক্ষেরই এখন এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা
হঠকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাতে দল, জোট কিংবা দেশের কোনো লাভ নেই।
No comments