দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

(বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নতুন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার নবগঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। এ ছাড়া সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় দেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে মন্ত্রী-সচিবদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। বৈঠকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সমকালকে বলেন, বৈঠকে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী দিনে মন্ত্রীদের করণীয় সম্পর্কে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কাজের ক্ষেত্রে কোনটা গুরুত্ব দিতে হবে সে বিষয়েও বেশ কিছু নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময়ে তিনি বলেন, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে_ এ সরকার জনগণের সরকার। বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কম কথা বলে কাজ বেশি করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। এ ছাড়া বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপরও জোর দিয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না। এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতেই মন্ত্রী ও সচিবদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুুল মুহিত বিগত সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী ৫৪ প্রতিষ্ঠানের আয়কর সুবিধার তথ্য তুলে ধরেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের নাশকতায় দেশে যে ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত পুষিয়ে নিতে মন্ত্রী ও সচিবদের আন্তরিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের আমলে উন্নয়নমূলক কাজে কিছুটা স্থবিরতা এসেছে। এটি যাতে সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। এডিপি প্রকল্পগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটি যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় সেজন্য তদারকি বাড়াতে হবে। কাজের মাধ্যমে সরকারের ক্লিন ইমেজ বজায় রাখতে হবে। এ সরকার জনগণের সরকার। জনগণের সঠিক সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রথম কাজ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। এ জন্য যত কঠোর হতে হয় সরকার হবে। কঠোর হস্তে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলন করে কিছুই করতে পারবে না। ইতিমধ্যে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের দ্রুত পুনর্বাসনে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে তারা সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবেন। আবার শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকাও পালন করবেন। সরকারের কর্মকাণ্ডে যেখানে সমালোচনা করা প্রয়োজন সেখানে সমলোচনা করবেন। আবার যেখানে পরামর্শ প্রয়োজন সেখানে তারা পরামর্শ দেবেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দিতে মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচন নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন। এর জবাব মন্ত্রীদের দিতে হবে। জাতির কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি অন্য যেসব ব্যাপারে বিএনপি মিথ্যাচার করছে তার কড়া জবাব দিতেও মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতির বিষয় মাঝে মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত নানাভাবে কুৎসা রটিয়েছে। তারা নির্বাচনকে বানচালের অপচেষ্টা করেছিল। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে_ এ সরকারের অধীনেই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গত রোববার তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ২৯ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রীর শপথের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়। এবারের মন্ত্রিসভায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে তিনজন সদস্য ঠাঁই পান।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ অধিবেশনের রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুমোদন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতির চিত্র, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং সাফল্য অর্জিত হয়েছে, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে যেসব খাতে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য থাকবে।
রাষ্ট্রপতি সংসদের প্রথম অধিবেশনে তার ভাষণে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন বলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

No comments

Powered by Blogger.