মিসরে প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে সালাফিরা
নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মিসরে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কাজ চলছে, তাতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে দেশটির সালাফিপন্থীরা। মুরসি-পরবর্তী
মিসরের রাজনীতিতে এখন প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে অতি রক্ষণশীল
এই ইসলামপন্থীরা। দীর্ঘ দমন-নিপীড়নের পথ পাড়ি দিয়ে এই পর্যায়ে আসতে
হয়েছে সালাফিদের। সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকেও গোপনে কার্যক্রম চালাতে
হয়েছে তাদের। সে সময় সংগঠনটির সদস্যরা মসজিদে জড়ো হলেও তাঁদের ওপর
নজরদারি করা হতো। তবে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের কথিত ‘আরব বসন্ত’ নামের
বিপ্লবের পর মিসরে সবচেয়ে বড় উত্থান ঘটেছে কঠোর ইসলামি শরিয়াহ আইন চালুর
পক্ষে অবস্থান নেওয়া সালাফিদেরই। গত এক বছর আরেক ইসলামপন্থী সংগঠন মুসলিম
ব্রাদারহুড দেশটির ক্ষমতায় আসীন থাকলেও স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক-পরবর্তী
মিসরে সালাফিদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। হোসনি মোবারকের
পতনের পরপরই সালাফিরা প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দল গঠন করে, যার নাম আল-নুর
পার্টি। বিপ্লব-পরবর্তী প্রথম পার্লামেন্ট নির্বাচনে সালাফিরা দ্বিতীয়
বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা
ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (এফজেপি) পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে বিজয়ী
হয় আল-নুর পার্টি। এর পর থেকে মিসরের রাজনীতিতে সালাফিদের প্রাধান্য
লক্ষণীয়। মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে প্রণীত সংবিধানে সালাফিরা সমর্থন
দেয়। এরপর গত নভেম্বরে মুরসি যখন ডিক্রি জারির মাধ্যমে নিজের নির্বাহী
ক্ষমতা সুসংহত করেন, সালাফিরা অতি দ্রুততার সঙ্গে তাতে সমর্থন দেয়। তবে
সালাফিদের জন্য গত বছরটি ছিল পরীক্ষার বছর। ব্রাদারহুডের সঙ্গে তাদের
সম্পর্কে ধীরে ধীরে টানাপোড়েন শুরু হতে থাকে। সংগঠনটির অনেকেই অভিযোগ
তুলতে থাকেন, ব্রাদারহুড অন্য ইসলামপন্থীদের বাদ দিয়ে নিজের ক্ষমতা সুসংহত
করছে। বিষয়টি নিয়ে সালাফিদের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়। মুরসি-পরবর্তী
মিসরে আল-নুর পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটা সুসংহত হয়েছে। বর্তমানে
দেশটিতে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কাজ চলছে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ
‘খেলোয়াড়’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তারা। এ ক্ষেত্রে তারা যে রাজনৈতিক
সুবিধা পাচ্ছে, তা মুরসির আমলে তাদের ছিল না। মিসরের চলতি রাজনৈতিক
পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব যেভাবে এগোচ্ছে, আল-নুর পার্টির নতুন
অবস্থানের কারণে তাতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, তা বলা কঠিন। তবে চলমান
পরিস্থিতি মিসরে সালাফিপন্থীদের প্রথম ও সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলটিকে তার
অবস্থান শক্তিশালী করার সুযোগ করে দিয়েছে।
No comments