৭ বছর বন্ধ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম: আ'লীগ নেতাদের দখলের দ্বন্দ্ব by আমিনুল ইসলাম লিটন

সাবেক স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগ নেতাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ঝিনাইদহের ক্রীড়াঙ্গন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দীর্ঘ ৭ বছর বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম মাঠে সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ। নেই খেলার কোনো প্রতিযোগিতাও। ফুটবল, ভলিবল এমনকি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সবই দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের পদ দখলের মামলা দিয়ে ঝিনাইদহ ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন ঝুলে আছে ২০১৮ সাল থেকে। মামলা জটিলতায় নির্বাচন না হওয়ায় ক্রীড়া সংস্থা চলছিল জেলা প্রশাসকের পরিচালনায়। পেশাদার খেলোয়াড়দের যাতায়াত না থাকায় জেলার একমাত্র বৃহৎ খেলার মাঠ ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামটি খাঁ খাঁ করছে। জনমানবহীন স্টেডিয়ামের কোনো সংস্কার কাজ করা হয় না। মাঠের গ্যালারি, ড্রেসিং রুম আর ক্রীড়া সংস্থার অবকাঠামোগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। স্টেডিয়ামের মেইন গেটের সামনে এখন হাঁটু পানি। সেখানে জলকেলি করে হাঁসের দল। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, পেশাদার খেলোয়াড়দের নিয়ে বেশ ভালোই চলছি ঝিনাইদহ জেলা ক্রীড়া সংস্থা। কিন্তু ১৪ বছর আগে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্রীড়া সংস্থা দখলে নেয়ায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে খেলার মান। এক সময় ক্লাব ভিত্তিক সব ধরনের খেলার প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে ক্রীড়া সংস্থায় কাউন্সিলর বানানো নিয়ে যুবলীগ নেতা রাশিদুর রহমান রাসেল ও আওয়ামী লীগ নেতা জীবন কুমার বিশ্বাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধে চরমে। সেই দ্বন্দ্ব গড়ায় উচ্চ আদালতে। মামলা হওয়ায় স্টেডিয়ামে সব ধরনের প্রতিযোগিতাসহ খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। খেলোয়াড়দের পরিবর্তে আমলাদের নিয়ে গঠিত হয় ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটি।

এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের মাঝে। এদিকে খেলাধুলা বা বড় ধরনের কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন না থাকলেও ক্রীড়া সংস্থার খরচ থেমে নেই। ২০১৪ সালের ১০ই মে থেকে ২০২৪ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রীড়া সংস্থার জনতা ব্যাংকে জমা হয় মোট ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ২২শে সেপ্টম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকে ক্রীড়া সংস্থার আরেকটা অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের ১০ই জুন একটিতে ২ লাখ ও আর একটিতে ৪ লাখ দু’টি চেকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই টাকা কোন খাতে ব্যয় দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে তার হিসাব জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নেই। দীর্ঘদিন আভ্যন্তরীণ অডিট না হওয়ায় ক্রীড়া খাতে বেশুমার লুটপাট হয়েছে এমন অভিযোগও তুলেছেন এলাকার খেলোয়াড়রা। ঝিমিয়ে পড়া ঝিনাইদহের ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে জেলার সাবেক ফুটবলার ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক আহসান উদ্দীন আফাঙ্গীর জানান, ক্রীড়া সংস্থার নেতৃত্ব পেশাদার খেলোয়াড়দের হাতে ফিরে না আসা পর্যন্ত এই মাঠে প্রাণবন্ত পরিবেশ আর ফিরে আসবে না। ঝিনাইদহবাসীর প্রাণের দাবি দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন দিয়ে খেলার পরিবেশ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি গঠন হলে কেবল জেলা ক্রীড়ায় প্রাণ ফিরতে পারে। এ জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুম চলে গেলে আশা করা যায় ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম আবারো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। আবারো এই মাঠে খেলোয়াড়দের পদচারণা শুরু হবে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.