আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েও আসামি

ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও মামলার আসামি হয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাজিদ সিয়াম (২৬)। গ্রেপ্তারের পর সহপাঠীদের থানা ও আদালতে ধরনা দিয়ে সিয়াম ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসামি হয়েছে। আদালত বিষয়টি অনুধাবন করে পরদিনই তাকে জামিন দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী মাসুদুর রহমান।

সিয়াম সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া গ্রামের খুরশিদের ছেলে। তিনি ফেনী ইউনিভার্সিটির বিবিএ ডিপার্টমেন্টের ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সিয়ামের আইনজীবী মাসুদুর রহমান বলেন, সিয়াম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা জনৈক মো. আবদুল হান্নান (৩২) বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে সিয়ামকে ৭৭ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওই মামলায় ৪ঠা অক্টোবর শুক্রবার ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করে র?্যাব-৭। পরে রাতভর ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শনিবার বিকালের দিকে তাকে আদালতে নিলে সেখানেও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ফটকে অবস্থান নিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এ সময় আদালতে সিয়ামের জামিন চায় আইনজীবী। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা লোকমান সিয়ামের ৭ দিনের জামিন মঞ্জুর করেন। সন্ধ্যায় সিয়ামের জামিন আদেশের পরে তাকে নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে নিয়ে আদালত চত্বর ত্যাগ করেন সহপাঠীরা।
আইনজীবী বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে সিয়ামকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে সিয়ামের মেডিকেল সার্টিফিকেটের তথ্য আদালতে উপস্থাপন করতে আদেশ দিয়েছেন বিচারক। জামিন শুনানিকালে আদালত প্রাঙ্গণে ফেনী ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক কাজী মনিরুল ইসলাম, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান আলি আকবর সিয়ামসহ ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মামলার বাদী আবদুল হান্নান বলেন, এ মামলার ব্যাপারে আমি তেমন কিছু জানি না। মামলায় কারা আসামি হয়েছে তাও জানি না। এজাহারে শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। আমি সিয়াম নামে কাউকে কখনো দেখিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেনীর সমন্বয়ক আব্দুল কাইয়ুম সোহাগ বলেন, সিয়াম আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেও ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলার আসামি হয়েছেন। এভাবে যেন আর কাউকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা না হয় সেদিকে সবার নজর রাখতে হবে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.