খাস্তগীরের নিয়োগ বাতিল, মেরিটাইম সচিবের পদত্যাগ

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত কূটনীতিক খোরশেদ আলম খাস্তগীরের নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে  সমর্থনকারী মালয়েশিয়া প্রবাসীদের দমনে কুয়ালালামপুরের কাজাং থানায় রিপোর্ট (মামলা) এবং আন্দোলনকারীদের পাসপোর্ট বাতিলের সুপারিশ করার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে রোববার এ সিদ্ধান্ত আসে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচারিত অভিন্ন বার্র্তায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে খাস্তগীরের নিয়োগ বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এ নিয়ে গতকাল মানবজমিন বিস্তারিত রিপোর্ট করে। এদিকে নাটকীয়ভাবে রোববার পদত্যাগ করেছেন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান হিসেবে (সচিব পদমর্যাদা) কর্মরত অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল মো. খুরশেদ আলম। ২০০৯ সাল থেকে চুক্তিতে ছিলেন তিনি। বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের আমলের সব চুক্তি বাতিলে বর্তমান সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও খুরশেদ আলম ছিলেন বহাল তবিয়তে। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সেগুনবাগিচায়। ওদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র  জানায়, কাঠমাণ্ডুস্থ সার্ক ও ঢাকাস্থ বিমসটেক সচিবালয়ে পরিচালক পদে বাংলাদেশের দু’জন কূটনীতিককের নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। বিদায়ী সরকারের শেষ সময়ে নিয়োগ দু’টি হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ ওই দু’টি নিয়োগ পুনর্বিবেচনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রোববার সন্ধ্যায় নিশ্চিত হয়েছে মানবজমিন। বলা হয়েছে, যে দুই কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছিলেন তারাসহ পরিচালক পদমর্যাদার আগ্রহী অন্য কর্মকর্তাদের পরীক্ষা দিতে হবে। সে পর্যন্ত নিয়োগ দু’টি স্থগিত থাকবে। পরীক্ষায় যারা যোগ্য বিবেচিত হবেন তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত। সেখানে ওই দুই কর্মকর্তাও আসতে পারেন।

বাহরাইনে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন খাস্তগীর, যা জানা গেল: ওদিকে দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে মানবজমিন-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পড়ুয়া এবং শিক্ষকরা এক সমাবেশ থেকে দেশে চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন ও সহমর্মিতা জানান। ১৯শে জুলাইয়ের ওই সমাবেশ থেকে মালয়েশিয়ান নাগরিক এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করা হয়। এই যখন অবস্থা তখন কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন ছাত্র-শিক্ষকদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে কাজাং থানায় রিপোর্ট করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা নানামুখি হেনস্তার শিকার হন। মামলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর। শুধু তাই নয়, খোরশেদ আলম খাস্তগীর দেশের আন্দোলনকারীদেরও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পররাষ্ট্র ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বিএফএসএ) হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে (ফাঁস হওয়া চ্যাটে দেখা যায়) তিনি আন্দোলনে সমর্থনকারী মালয়েশিয়া প্রবাসীদের পাসপোর্ট বাতিলের সুপারিশ করেন। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে আর পতিত স্বৈরশাসনের পক্ষে নগ্নভাবে অবস্থান গ্রহণকারী সেই খাস্তগীরকে ১০ দিন আগে পোল্যান্ডে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের ঘোষণা দেয় ছাত্র-জনতার  রক্তের উত্তরাধিকার বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিতর্কিত ওই কূটনীতিককে পদায়নের ঘোষণায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয় মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মধ্যে। তার নিয়োগ বাতিলের দাবি উঠে। স্মরণ করা যায়, বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু তার অতীত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় মানামা। সেগুনবাগিচায় আলোচনা আছে, মাস্কাটে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর থাকা অবস্থায় একটি দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন খোরশেদ আলম খাস্তগীর। তিনি গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। কিন্তু মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর ড্রাইভারকে সব দায় নিতে হয়েছে। যদিও ড্রাইভিং সিট ছেড়ে দেয়া ছাড়া পেশাদার সেই ড্রাইভারের দায় ছিল সামান্যই!

পোল্যান্ডে ৫ মাস ধরে ঝুলে ছিল খাস্তগীরের এগ্রিমো: বাহরাইনে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর পোল্যান্ডে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে খোরশেদ আলম খান্তগীরকে প্রস্তাব করে শেখ হাসিনা সরকার, যা শেষ পর্যন্ত বহাল রাখে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার! সেগুনবাগিচা এটা নিশ্চিত করেছে যে, পোল্যান্ডে প্রায় ৫ মাস ধরে ঝুলে ছিল বিতর্কিত ওই কূটনীতিকের এগ্রিমো। পরবর্তীতে অবশ্য খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে গ্রহণে অনাপত্তি জ্ঞাপন করে পোল্যান্ড। যার প্রেক্ষিতে ২৫শে সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার নিয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। মিস্টার আলম বিসিএস (ফরেন অ্যাফেয়ার্স) ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা। ২০০১ সালে তিনি ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইউরোপ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তাছাড়া জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন, নিউ ইয়ের্কে প্রথম সচিব ও মাস্কাটে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.