প্রশ্নবিদ্ধ অক্সফোর্ড : বর্তমান ও অতীত by শফিক রেহমান
লন্ডনের প্রভাবশালী দৈনিক দি গার্ডিয়ান কিছুকাল আগে একটি লিস্ট ছাপিয়েছে যা অক্সফোর্ড ও ঢাকা ইউনিভার্সিটিপ্রেমীদের হতাশ করবে।
৮ অক্টোবর ২০০৯-এ প্রকাশিত এই লিস্টে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের টপ ইউনিভার্সিটির র্যাংকিংস টেবিলে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অবস্থান নিচে পড়ে গেছে। এই লিস্টে আরো দেখা গেছে, এশিয়ার কিছু ইউনিভার্সিটির অবস্থান এগিয়েছে এবং ভবিষ্যতে তারা আমেরিকার আইভি লিগ (Ivy League) এবং ইংল্যান্ডের অক্সবৃজ (অক্সফোর্ড ও কেমবৃজ) ইউনিভার্সিটিকে চ্যালেঞ্জ করবে। লেখাপড়া এবং সামাজিকভাবে শীর্ষ অবস্থানের কারণে আমেরিকার আটটি ইউনিভার্সিটিকে সম্মিলিতভাবে আইভি লিগ বলা হয়। এরা হলো : হার্ভার্ড, ইয়েল, পৃন্সটন, কলাম্বিয়া, ব্রাউন, কর্নেল, পেনসেলভিনিয়া ও ডার্টমাউথ কলেজ।
কিউএস/টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাংকিংস (QS/Times Higher Education Rankings)-এ গত বছর অক্সফোর্ড ছিল চতুর্থ। এ বছর তার অবস্থান নিচে নেমে ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডনের সাথে হয়েছে যুগ্ম পঞ্চম। প্রতিদ্বন্দ্বী কেমবৃজ হয়েছে বিশ্বে দ্বিতীয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, (সংক্ষেপে UCL বা ইউসিএল) অক্সফোর্ডকে ছাড়িয়ে হয়েছে চতুর্থ- ইয়েল, কেমবৃজ ও হার্ভার্ডের পরেই।
যারা এখনো আমেরিকার বদলে উচ্চশিক্ষার জন্য বিলাত গমন-এ আগ্রহী, তারা আশ্বস্ত হবেন জেনে যে, বিশ্বের টপ ১০টি ইউনিভার্সিটির মধ্যে বৃটেনের রয়েছে চারটি এবং টপ ১০০টির মধ্যে বৃটেনের ১৮টি। তবে নর্থ আমেরিকান ইউনিভার্সিটিগুলোর অবস্থানে অবনতি ঘটেছে। ২০০৮-এ টপ ১০০-এর মধ্যে ৪২টি ছিল নর্থ আমেরিকান। ২০০৯-এ টপ ১০০-র মধ্যে সংখ্যাটি কমে হয়েছে ৩৬। গত বছরের তুলনায় টপ ১০০-র মধ্যে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সংখ্যা ১৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬। এশিয়ান ইউনিভার্সিটিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ওপরে আছে টোকিও ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং ২২ এবং তারপরে আছে হংকং ইউনিভার্সিটি, র্যাংকিং ২৪।
জাপান, সাউথ কোরিয়া ও হংকংয়ের ইউনিভার্সিটিগুলোর ক্রমশক্তিমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বৃটেনের ইউনিভার্সিটিগুলো আরো বেশি সরকারি সাহায্য চেয়েছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিদায়ী ভাইস-চান্সেলর জন হুড বলেছেন, আগামী দশ বছরে এক বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি দরকার হবে অক্সফোর্ডের নচেৎ অক্সফোর্ডের কিছু অংশ আর ওয়ার্ল্ড ক্লাস থাকবে না। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে পরপর চার বছর অক্সফোর্ডের বাজেট ঘাটতি হবে।
এই র্যাংকিংসের ভিত্তি ৯,০০০ একাডেমিক্স (শিক্ষাবিদ) ওপরে গৃহীত একটি আন্তর্জাতিক জরিপ। এই সার্ভেতে অংশগ্রহণকারী একাডেমিক্সরা বিবেচনা করেছেন, প্রতিষ্ঠানের রিসার্চগুলো কতটা প্রভাবশালী, শিক্ষাদান পদ্ধতির গুণগত মান এবং বিদেশ থেকে স্টাফ ও ছাত্র সংগ্রহে পারদর্শিতা।
শিক্ষাদান পদ্ধতির মান বিবেচনায় দেখা হয় শিক্ষক-ছাত্রের আনুপাতিক সংখ্যা কত।
র্যাংকিংস টেবিল প্রকাশের সময়ে টাইমস হায়ার এডুকেশন ম্যাগাজিনের ডেপুটি এডিটর ফিল ব্যাটি বলেন, সুনাম বিষয়ে অক্সফোর্ডের স্কোর ভালো ছিল। কিন্তু টিচারদের মানের কিছু নিম্নমুখী পরিবর্তন ঘটেছে। এশিয়ার কয়েকটি দেশে উচ্চশিক্ষায় অনেক খরচ করা হচ্ছে এবং তাই তাদের ইউনিভার্সিটিগুলো ওপরে উঠে যাচ্ছে।
আগেই বলেছি এই র্যাংকিংয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিপ্রেমীরা হতাশ হয়েছেন। অতীতে ধারণা করা হতো অক্সফোর্ডই বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ইউনিভার্সিটি। এই আত্মপ্রসাদে ভুগতেন অক্সফোর্ডের ছাত্র-শিক্ষক-স্টাফরা। এখন ৯,০০০ একাডেমিক্সের জরিপ কষ্টিপাথরে তাদের বর্তমান সত্যটা মেনে নিতে হচ্ছে- অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অবস্থান নিম্নমুখী।
আর এরই পাশাপাশি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষক-স্টাফরাও হয়তো হতাশ হয়েছেন। কারণ তারা ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ ভাবতে ভালোবাসেন। সুতরাং অক্সফোর্ডের নিম্নমুখিতায় তারা দুঃখিত হতে পারেন এটা ভেবে যে বিশ্ববাসীর চোখে ঢাকা ইউনিভার্সিটির অবস্থানও হয়তো বা নেমে গেছে।
কিন্তু আসলে কি তাই?
উত্তরটা আমরা জানি না। শুধু এটুকু আমরা জানি, বিশ্বের টপ ১০০টি ইউনিভার্সিটির মধ্যে ঢাকা ইউনিভার্সিটির নাম নেই। গত বছরেও ছিল না।
কিন্তু তার আগে?
সেই উত্তরও আমরা জানি না।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি কি আদৌ বিশ্বের টপ ১০০ অথবা টপ ১,০০০ ইউনিভার্সিটির মধ্যে কোনো বছরে স্থান পেয়েছিল?
সেই উত্তরও আমরা জানি না।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি কি আদৌ কোনো কালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল?
এই উত্তরে হয়তো অনেকেই বলবেন, হ্যা, ছিল।
কিন্তু কেন ছিল? কেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি এক সময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড রূপে (এই ভূখণ্ডে, বিদেশে নয়) পরিচিত হয়েছিল?
এর উত্তর হয়তো হবে, অক্সফোর্ডের মতোই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে রেসিডেনশিয়াল হল ছিল এবং আছে।
কিন্তু অক্সফোর্ডের মতো লেখাপড়ার উচু মান আদৌ ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে কোনো কালে ছিল কি? আজ টোকিও এবং হংকং ইউনিভার্সিটি যখন চ্যালেঞ্জ করছে অক্সফোর্ড ও কেমবৃজকে, তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটির অবস্থানটা কি?
এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটা আমাদের, বিশেষত যারা ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সচেতন সদস্য, তাদের জানতে হবে। কারণ এই সঠিক উত্তরের ওপর ভিত্তি করে অ্যালামনাই সদস্যদের সক্রিয় হতে হবে, বিশ্বে ঢাকা ইউনিভার্সিটির মান একটি গ্রহণযোগ্য লেভেলে নিতে। টপ ১০০-র মধ্যে না হোক, টপ ১,০০০-এর মধ্যে নিতে।
কিন্তু অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সচেষ্ট হবেন কি? প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে তারা কি এখনো আত্মপ্রসাদে ভুগবেন?
হয়তো তাই। আমরা বাংলাদেশিরা আমাদের দেশ, জাতি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, প্রভৃতি বিষয়ে আত্মপ্রসাদে ভুগেই চলেছি। আমরা দেখতে চাই না বিশ্বের বিভিন্ন পারফরমেন্স র্যাংকিংসে আমাদের র্যাংক কত নিচে। পনের কোটি মানুষের এই দেশে এখন অনেক সরকারি ও বেসরকারি ইউনিভার্সিটি আছে। ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংসে এসব ইউনিভার্সিটি না থাকুক কিন্তু এসব ইউনিভার্সিটিতে বিশ্ব আদৃত কিছু শিক্ষক, প্রশংসিত কিছু ছাত্র ও মানবসমাজের জন্য উপকারী কিছু রিসার্চ সৃষ্টিতে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সদস্যরা যদি দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ হন তা হলে এক যুগ পরে হয়তো কিছু আমরা পাবো।
হয়তো সে দিন ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষকরা অক্সফোর্ডে গিয়ে আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে সগর্বে বলতে পারবেন, আমি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে এসেছি।
এ লক্ষ্যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সদস্যরা ঢাকা ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংস এইম (Dhaka University Rankings Aim) নামে একটি বিশেষ সেল গঠনের পর ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ও সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় কাজ শুরু করতে পারেন।
ইউনিভার্সিটির র্যাংকিংস ২০০৯
১ হার্ভার্ড, ইউএস
২ কেমবৃজ, ইউকে
৩ ইয়েল, ইউএস
৪ ইউসিএল, লন্ডন, ইউকে
৫ ইমপিরিয়াল কলেজ, লন্ডন, ইউকে
৬ অক্সফোর্ড, ইউকে
৭ শিকাগো, ইউএস
৮ পৃন্সটন, ইউএস
৯ এমআইটি, ম্যাসাচুসেটস, ইউএস
১০ ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেক, ইউএস
১১ কলাম্বিয়া, ইউএস
১২ পেনসেলভিনিয়া, ইউএস
১৩ জনস হপকিন্স, ইউএস
১৪ ডিউক, ইউএস
১৬ স্ট্যানফোর্ড, ইউএস
১৭ ন্যাশনাল, অস্ট্রেলিয়া
১৮ ম্যাকগিল, কানাডা
১৯ এসএফআইটি, জুরিখ, সুইজারল্যান্ড
২০ এডিনবরা, ইউকে
ঢাকা ইউনিভার্সিটির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে স্বাভাবিক কারণে অতীতের ঘটনাগুলো মনে পড়ছে। মনে পড়ছে বহু সতীর্থের কথা, যাদের অনেকে আজ প্রয়াত, অবসরপ্রাপ্ত ও অসুস্থ। কেউ কেউ এখনো সক্রিয়। কিন্তু আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে অনেকের বলয় হয়ে গেছে ভিন্ন। প্রবাসে থাকার কারণেও অনেকের সাথে সম্পর্ক হয়েছে ছিন্ন। মনে পড়ছে বিটলসের লেখা ও মেরি হপকিন্সের গাওয়া একটি বিখ্যাত গান
Those were the days my friend :
Those were the days, my friend!
We thought they'd never end.
We'd sing and dance forever and a day.
We'd live the life we'd choose
We'd fight and never lose.
Then, the years went rushing by us,
We lost our starry notions on the way
If, by chance, I'd see you in the tavern,
We'd smile at one another and we'd say,
Those were the days, my friend!
Oh yes, those were the days.
পুরনো সেই চমৎকার দিনগুলো, বন্ধু আমার!
আমরা ভেবেছিলাম সেই দিনগুলো কখনোই ফুরাবে না।
আমরা গান গেয়ে যাবো। চিরদিন নাচবো।
যে জীবনটা আমরা বেছে নেব, সেভাবেই কাটাবো।
আমরা ঝগড়া করবো কিন্তু কখনো হারবো না।
কিন্তু তারপর, বছরগুলো দ্রুত আমাদের পেরিয়ে গেল,
আমাদের আকাশ কুসুম স্বপ্ন হারিয়ে গেল।
যদি, বাই চান্স,
কোনো রেস্টুরেন্টে আমাদের দেখা হয়ে যায়
আমরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসবো
আর আমরা বলবো,
পুরনো সেই চমৎকার দিনগুলো, বন্ধু আমার!
হ্যা, পুরনো সেই চমৎকার দিনগুলো।
হ্যা, সেই দিনগুলোর কিছু ঘটনা, কিছু প্রধান চরিত্রের স্মৃতি এখন ভীষণ নাড়া দিচ্ছে।
আপনি কি তাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন?
তারা কে ছিল?
তাদের সেই সময়, ১৯৫২ থেকে ১৯৫৬, কেমন ছিল?
শুনুন তাহলে।
আকর্ষণীয় বক্তা : সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। ইকনমিক্সের ছাত্র। পরে ব্যারিস্টার। ছয় ফিট লম্বা, টকটকে ফর্শা সুপুরুষ, চোস্ত পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরনে চমৎকার বাংলা-ইংরেজিতে আবেগময় ভাষায় বক্তৃতা দিতেন। সেই সময়ে তিনি দক্ষিণপন্থীরূপে পরিচিত হলেও তার বক্তৃতা শোনার জন্য আমতলায় সমবেত হতো সকলপন্থী ছাত্রছাত্রী। পরে লন্ডনে তিনি বামপন্থী, বাংলাদেশে অ্যাডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে বড় ভূমিকা রাখেন। প্রয়াত।
ভোজনপ্রিয় : ফারুক আহমদ চৌধুরী (এখন ফারুক চৌধুরী)। ইংরেজির ছাত্র। খাদ্যের প্রতি তার দুর্বলতার কারণে তিনি অনেকের প্রিয় ছিলেন। তাকে সেই সময়ের টপ রেস্টুরেন্ট রেক্স-এ অন্য ছাত্ররা নিমন্ত্রণ করে খাওয়াত এবং দেখত কিভাবে তিনি তার প্লেট সাফ করেন। ভালো টেনিস প্লেয়ার ছিলেন। পরবর্তীকালে হন রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র সচিব ও সফল লেখক-কলামিস্ট।
লাইব্রেরিপ্রিয় : মোজাফফর আহমদ। ইকনমিক্সের ছাত্র। আজিমপুরে থাকতেন এবং সেখান থেকে সাইকেল চালিয়ে ইউনিভার্সিটিতে আসা-যাওয়া করতেন। তার সাইকেলের সামনে-পেছনে গাদাগাদা বই থাকত। ইউনিভার্সিটিতে এসেই তিনি লাইব্রেরিতে ঢুকে যেতেন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে থাকতেন। তবে তার অনার্স ও এমএ-র রেজাল্ট তাকে হতাশ করেছিল। সুশীল সমাজের অন্যতম প্রবক্তা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। প্রয়াত।
বাকপ্রিয় : আবুল মাল আবদুল মুহিত। ইংরেজির ছাত্র। হাসিমুখে সারাক্ষণ কথা বলতেন। পড়াশোনা ও টেনিসে ভালো ছিলেন। এসএম হলের ছাত্র পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেনাতন্ত্রের ঘোর বিদ্বেষী মুহিত পরে সেনাপতি এরশাদের আমলে অর্থ উপদেষ্টা হন এবং বর্তমানে হাসিনা আমলে অর্থমন্ত্রী।
ক্যারিসম্যাটিক : এজেডএম ওবায়দুল্লাহ খান (ডাকনাম শিন্টু)। ইংরেজির ছাত্র। নামের আগে প্রায়ই বৃলিয়ান্ট বিশেষণটি যুক্ত হতো। ডিবেটে অনেক পুরস্কার পেতেন। প্রগতিশীল কবি রূপে খ্যাতিমান হন এবং পরে স্বৈরাচারী ও কবি খ্যাতি পেতে আগ্রহী এরশাদের আমলে মন্ত্রী হন। প্রয়াত।
ফ্যাসিনেটিং : আবিদ হুসেন। ইংরেজির ছাত্র। কমরেড নামে পরিচিত। তুখোড় বক্তা ও ছাত্ররাজনীতিতে বিতর্কিত। ভালো অভিনেতা। নিজেকে যৌন অভিজ্ঞ ও প্রফেসর অফ সেক্সোলজি দাবি করতেন। সেক্স বিষয়ে সহপাঠীদের লেসন দিতে উৎসাহী ছিলেন। পরে ব্যারিস্টার এবং বিবিসি-র ব্রডকাস্টার হয়েছিলেন। আর হ্যা, বহু নারীগমন করেছিলেন। প্রয়াত।
পাইওনিয়ার অভিনেত্রী : জহরত আরা (খুকি ডাকনামে পরিচিত)। পলিটিকাল সায়েন্সের ছাত্রী। ভালো অভিনেত্রী। বাংলাদেশের প্রথম মুভি মুখ ও মুখোশ-এর নায়িকা। বর্তমানে নরিচ, ইংল্যান্ড প্রবাসী।
হস্তরেখা বিশারদ : জহির রায়হান। বাংলার ছাত্র। তখন লেখক এবং হস্তরেখা বিশারদ রূপে খ্যাতিমান হয়েছিলেন। বিশেষত ছাত্রীদের হাত দেখতে তিনি ভালোবাসতেন। পরে সমাজসচেতন মুভি ডিরেক্টর রূপে নাম করেছিলেন। তার মুভি জীবন থেকে নেয়া স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশাল প্রভাব ফেলেছিল। তিনি তার নিজের হাতের রেখায় জানতে পারেননি যে তার অকালমৃত্যু হবে স্বাধীনতার মাত্র দেড় মাস পরেই।
সুগায়িকা : খালেদা ফ্যান্সি খানম ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী ও ফর্শা - প্লাস তিনি ছিলেন সুগায়িকা। অনেকেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ড. কুদরাত-এ-খুদার পুত্র মনজুর-এ-খুদার সাথে বিয়ে হয়। বহু বছর টরন্টোতে ছিলেন। এখন ঢাকাবাসী। তবে মাইনাস হয়ে গেছেন সঙ্গীতভুবন থেকে।
ত্রিরত্ন : কাসেম, আশরাফ (ডাকনাম চানু) ও সিদ্দিক ছিলেন ত্রিরত্ন নামে পরিচিত। প্রথম দু’জন সায়েন্স ও তৃতীয়জন ইকনমিক্সের ছাত্র ছিলেন। কাসেম (এক চোখ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল ব্যাডমিন্টন কর্কের আঘাতে) ছিলেন ফুটবল ব্লু। আশরাফ ও সিদ্দিক ছিলেন হকি ব্লু। আশরাফ সব প্রগতিশীল আন্দোলন ও নির্বাচনের পোস্টার আকতেন। সিদ্দিক রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন। তিনজনই প্রয়াত।
ধনী কবি : কবিদের সাধারণত অভাবী হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলার ছাত্র হাসান হাফিজুর রহমান ছিলেন খুব উদ্যমী সম্পাদক ও বিদ্রোহী কিন্তু ধনী কবি। সুবিখ্যাত একুশের সঙ্কলন তিনি সম্পাদনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ইতিহাসের এবং দৈনিক বাংলা’র সম্পাদনা তিনি করেন। জামালপুরের বিত্তশালী পরিবারে জন্ম হয়েছিল এবং মধুকে পাচশ টাকার সবুজ নোটে বিল পরিশোধ করতেন। সেই যুগে পাচশ টাকা ছিল বর্তমানের পাচ হাজারের চেয়ে বেশি। তার অ্যাকাউন্টে অনেকেই খেত। প্রয়াত।
লাজুক কবি : শামসুর রাহমান ছিলেন ইংরেজির ছাত্র। ফর্শা, সুদর্শন ও অতি লাজুক কবি। সম্ভবত তিনিই প্রথম যিনি রহমান নামের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে রাহমান নামে পরিচিত হয়েছিলেন। প্রয়াত।
ব্রাদার : লতিফুর রহমান ছিলেন ইংরেজির ছাত্র। তার ডাক নাম ছিল শান্তি। কিন্তু তার বন্ধুরা তাকে ব্রাদার নামে ডাকত। পরবর্তীকালে তিনি হয়েছিলেন সফল উকিল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (২০০১)। তিনি তার আত্মজীবনীতে জানিয়েছেন অনার্সে খারাপ রেজাল্টের ব্যর্থতাকে মেনে না নিয়ে তিনি আইন পড়েন, সিভিল সার্ভিস-বিমুখী হন, আইন পেশায় ভালো করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। অনার্সে রেজাল্ট ভালো হলে তার জীবনের গতিপথ অন্য হতো এবং তিনি হয়তো প্রধান উপদেষ্টা হতেন না।
দম্পতি দিলারা ও হাশেম : ইউনিভার্সিটিতে প্রায় সব ছাত্রছাত্রী যখন কুমার-কুমারী, তখন দিলারা ও হাশেম দম্পতি ছিল তাদের ঈর্ষার পাত্রীপাত্র। দিলারা ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী ও সুন্দরী। হাশেম ছিলেন সুপুরুষ। পরবর্তীকালে দিলারা হন ঔপন্যাসিক ও ভয়েস অফ আমেরিকার ব্রডকাস্টার। হাশেম হন সফল বিজনেসম্যান। দিলারা ও হাশেম দু’জনাই ছিলেন ওয়াশিংটন প্রবাসী। খুব অল্প বয়সে জুটি বাধলেও দু’জনার দুটি পথ যায় বেকে। দুইজনা বিচ্ছিন্ন কিন্তু সফল জীবনযাপন করেন। দিলারার সারনেইম হাশেম এখনো আছে। হাশেম প্রয়াত।
৮ অক্টোবর ২০০৯-এ প্রকাশিত এই লিস্টে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের টপ ইউনিভার্সিটির র্যাংকিংস টেবিলে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অবস্থান নিচে পড়ে গেছে। এই লিস্টে আরো দেখা গেছে, এশিয়ার কিছু ইউনিভার্সিটির অবস্থান এগিয়েছে এবং ভবিষ্যতে তারা আমেরিকার আইভি লিগ (Ivy League) এবং ইংল্যান্ডের অক্সবৃজ (অক্সফোর্ড ও কেমবৃজ) ইউনিভার্সিটিকে চ্যালেঞ্জ করবে। লেখাপড়া এবং সামাজিকভাবে শীর্ষ অবস্থানের কারণে আমেরিকার আটটি ইউনিভার্সিটিকে সম্মিলিতভাবে আইভি লিগ বলা হয়। এরা হলো : হার্ভার্ড, ইয়েল, পৃন্সটন, কলাম্বিয়া, ব্রাউন, কর্নেল, পেনসেলভিনিয়া ও ডার্টমাউথ কলেজ।
কিউএস/টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাংকিংস (QS/Times Higher Education Rankings)-এ গত বছর অক্সফোর্ড ছিল চতুর্থ। এ বছর তার অবস্থান নিচে নেমে ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডনের সাথে হয়েছে যুগ্ম পঞ্চম। প্রতিদ্বন্দ্বী কেমবৃজ হয়েছে বিশ্বে দ্বিতীয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, (সংক্ষেপে UCL বা ইউসিএল) অক্সফোর্ডকে ছাড়িয়ে হয়েছে চতুর্থ- ইয়েল, কেমবৃজ ও হার্ভার্ডের পরেই।
যারা এখনো আমেরিকার বদলে উচ্চশিক্ষার জন্য বিলাত গমন-এ আগ্রহী, তারা আশ্বস্ত হবেন জেনে যে, বিশ্বের টপ ১০টি ইউনিভার্সিটির মধ্যে বৃটেনের রয়েছে চারটি এবং টপ ১০০টির মধ্যে বৃটেনের ১৮টি। তবে নর্থ আমেরিকান ইউনিভার্সিটিগুলোর অবস্থানে অবনতি ঘটেছে। ২০০৮-এ টপ ১০০-এর মধ্যে ৪২টি ছিল নর্থ আমেরিকান। ২০০৯-এ টপ ১০০-র মধ্যে সংখ্যাটি কমে হয়েছে ৩৬। গত বছরের তুলনায় টপ ১০০-র মধ্যে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সংখ্যা ১৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬। এশিয়ান ইউনিভার্সিটিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ওপরে আছে টোকিও ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং ২২ এবং তারপরে আছে হংকং ইউনিভার্সিটি, র্যাংকিং ২৪।
জাপান, সাউথ কোরিয়া ও হংকংয়ের ইউনিভার্সিটিগুলোর ক্রমশক্তিমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বৃটেনের ইউনিভার্সিটিগুলো আরো বেশি সরকারি সাহায্য চেয়েছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিদায়ী ভাইস-চান্সেলর জন হুড বলেছেন, আগামী দশ বছরে এক বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি দরকার হবে অক্সফোর্ডের নচেৎ অক্সফোর্ডের কিছু অংশ আর ওয়ার্ল্ড ক্লাস থাকবে না। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে পরপর চার বছর অক্সফোর্ডের বাজেট ঘাটতি হবে।
এই র্যাংকিংসের ভিত্তি ৯,০০০ একাডেমিক্স (শিক্ষাবিদ) ওপরে গৃহীত একটি আন্তর্জাতিক জরিপ। এই সার্ভেতে অংশগ্রহণকারী একাডেমিক্সরা বিবেচনা করেছেন, প্রতিষ্ঠানের রিসার্চগুলো কতটা প্রভাবশালী, শিক্ষাদান পদ্ধতির গুণগত মান এবং বিদেশ থেকে স্টাফ ও ছাত্র সংগ্রহে পারদর্শিতা।
শিক্ষাদান পদ্ধতির মান বিবেচনায় দেখা হয় শিক্ষক-ছাত্রের আনুপাতিক সংখ্যা কত।
র্যাংকিংস টেবিল প্রকাশের সময়ে টাইমস হায়ার এডুকেশন ম্যাগাজিনের ডেপুটি এডিটর ফিল ব্যাটি বলেন, সুনাম বিষয়ে অক্সফোর্ডের স্কোর ভালো ছিল। কিন্তু টিচারদের মানের কিছু নিম্নমুখী পরিবর্তন ঘটেছে। এশিয়ার কয়েকটি দেশে উচ্চশিক্ষায় অনেক খরচ করা হচ্ছে এবং তাই তাদের ইউনিভার্সিটিগুলো ওপরে উঠে যাচ্ছে।
আগেই বলেছি এই র্যাংকিংয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিপ্রেমীরা হতাশ হয়েছেন। অতীতে ধারণা করা হতো অক্সফোর্ডই বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ইউনিভার্সিটি। এই আত্মপ্রসাদে ভুগতেন অক্সফোর্ডের ছাত্র-শিক্ষক-স্টাফরা। এখন ৯,০০০ একাডেমিক্সের জরিপ কষ্টিপাথরে তাদের বর্তমান সত্যটা মেনে নিতে হচ্ছে- অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অবস্থান নিম্নমুখী।
আর এরই পাশাপাশি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষক-স্টাফরাও হয়তো হতাশ হয়েছেন। কারণ তারা ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ ভাবতে ভালোবাসেন। সুতরাং অক্সফোর্ডের নিম্নমুখিতায় তারা দুঃখিত হতে পারেন এটা ভেবে যে বিশ্ববাসীর চোখে ঢাকা ইউনিভার্সিটির অবস্থানও হয়তো বা নেমে গেছে।
কিন্তু আসলে কি তাই?
উত্তরটা আমরা জানি না। শুধু এটুকু আমরা জানি, বিশ্বের টপ ১০০টি ইউনিভার্সিটির মধ্যে ঢাকা ইউনিভার্সিটির নাম নেই। গত বছরেও ছিল না।
কিন্তু তার আগে?
সেই উত্তরও আমরা জানি না।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি কি আদৌ বিশ্বের টপ ১০০ অথবা টপ ১,০০০ ইউনিভার্সিটির মধ্যে কোনো বছরে স্থান পেয়েছিল?
সেই উত্তরও আমরা জানি না।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি কি আদৌ কোনো কালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল?
এই উত্তরে হয়তো অনেকেই বলবেন, হ্যা, ছিল।
কিন্তু কেন ছিল? কেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি এক সময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড রূপে (এই ভূখণ্ডে, বিদেশে নয়) পরিচিত হয়েছিল?
এর উত্তর হয়তো হবে, অক্সফোর্ডের মতোই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে রেসিডেনশিয়াল হল ছিল এবং আছে।
কিন্তু অক্সফোর্ডের মতো লেখাপড়ার উচু মান আদৌ ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে কোনো কালে ছিল কি? আজ টোকিও এবং হংকং ইউনিভার্সিটি যখন চ্যালেঞ্জ করছে অক্সফোর্ড ও কেমবৃজকে, তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটির অবস্থানটা কি?
এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটা আমাদের, বিশেষত যারা ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সচেতন সদস্য, তাদের জানতে হবে। কারণ এই সঠিক উত্তরের ওপর ভিত্তি করে অ্যালামনাই সদস্যদের সক্রিয় হতে হবে, বিশ্বে ঢাকা ইউনিভার্সিটির মান একটি গ্রহণযোগ্য লেভেলে নিতে। টপ ১০০-র মধ্যে না হোক, টপ ১,০০০-এর মধ্যে নিতে।
কিন্তু অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সচেষ্ট হবেন কি? প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে তারা কি এখনো আত্মপ্রসাদে ভুগবেন?
হয়তো তাই। আমরা বাংলাদেশিরা আমাদের দেশ, জাতি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, প্রভৃতি বিষয়ে আত্মপ্রসাদে ভুগেই চলেছি। আমরা দেখতে চাই না বিশ্বের বিভিন্ন পারফরমেন্স র্যাংকিংসে আমাদের র্যাংক কত নিচে। পনের কোটি মানুষের এই দেশে এখন অনেক সরকারি ও বেসরকারি ইউনিভার্সিটি আছে। ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংসে এসব ইউনিভার্সিটি না থাকুক কিন্তু এসব ইউনিভার্সিটিতে বিশ্ব আদৃত কিছু শিক্ষক, প্রশংসিত কিছু ছাত্র ও মানবসমাজের জন্য উপকারী কিছু রিসার্চ সৃষ্টিতে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সদস্যরা যদি দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ হন তা হলে এক যুগ পরে হয়তো কিছু আমরা পাবো।
হয়তো সে দিন ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষকরা অক্সফোর্ডে গিয়ে আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে সগর্বে বলতে পারবেন, আমি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে এসেছি।
এ লক্ষ্যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সদস্যরা ঢাকা ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংস এইম (Dhaka University Rankings Aim) নামে একটি বিশেষ সেল গঠনের পর ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ও সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় কাজ শুরু করতে পারেন।
ইউনিভার্সিটির র্যাংকিংস ২০০৯
১ হার্ভার্ড, ইউএস
২ কেমবৃজ, ইউকে
৩ ইয়েল, ইউএস
৪ ইউসিএল, লন্ডন, ইউকে
৫ ইমপিরিয়াল কলেজ, লন্ডন, ইউকে
৬ অক্সফোর্ড, ইউকে
৭ শিকাগো, ইউএস
৮ পৃন্সটন, ইউএস
৯ এমআইটি, ম্যাসাচুসেটস, ইউএস
১০ ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেক, ইউএস
১১ কলাম্বিয়া, ইউএস
১২ পেনসেলভিনিয়া, ইউএস
১৩ জনস হপকিন্স, ইউএস
১৪ ডিউক, ইউএস
১৬ স্ট্যানফোর্ড, ইউএস
১৭ ন্যাশনাল, অস্ট্রেলিয়া
১৮ ম্যাকগিল, কানাডা
১৯ এসএফআইটি, জুরিখ, সুইজারল্যান্ড
২০ এডিনবরা, ইউকে
ঢাকা ইউনিভার্সিটির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে স্বাভাবিক কারণে অতীতের ঘটনাগুলো মনে পড়ছে। মনে পড়ছে বহু সতীর্থের কথা, যাদের অনেকে আজ প্রয়াত, অবসরপ্রাপ্ত ও অসুস্থ। কেউ কেউ এখনো সক্রিয়। কিন্তু আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে অনেকের বলয় হয়ে গেছে ভিন্ন। প্রবাসে থাকার কারণেও অনেকের সাথে সম্পর্ক হয়েছে ছিন্ন। মনে পড়ছে বিটলসের লেখা ও মেরি হপকিন্সের গাওয়া একটি বিখ্যাত গান
Those were the days my friend :
Those were the days, my friend!
We thought they'd never end.
We'd sing and dance forever and a day.
We'd live the life we'd choose
We'd fight and never lose.
Then, the years went rushing by us,
We lost our starry notions on the way
If, by chance, I'd see you in the tavern,
We'd smile at one another and we'd say,
Those were the days, my friend!
Oh yes, those were the days.
পুরনো সেই চমৎকার দিনগুলো, বন্ধু আমার!
আমরা ভেবেছিলাম সেই দিনগুলো কখনোই ফুরাবে না।
আমরা গান গেয়ে যাবো। চিরদিন নাচবো।
যে জীবনটা আমরা বেছে নেব, সেভাবেই কাটাবো।
আমরা ঝগড়া করবো কিন্তু কখনো হারবো না।
কিন্তু তারপর, বছরগুলো দ্রুত আমাদের পেরিয়ে গেল,
আমাদের আকাশ কুসুম স্বপ্ন হারিয়ে গেল।
যদি, বাই চান্স,
কোনো রেস্টুরেন্টে আমাদের দেখা হয়ে যায়
আমরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসবো
আর আমরা বলবো,
পুরনো সেই চমৎকার দিনগুলো, বন্ধু আমার!
হ্যা, পুরনো সেই চমৎকার দিনগুলো।
হ্যা, সেই দিনগুলোর কিছু ঘটনা, কিছু প্রধান চরিত্রের স্মৃতি এখন ভীষণ নাড়া দিচ্ছে।
আপনি কি তাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন?
তারা কে ছিল?
তাদের সেই সময়, ১৯৫২ থেকে ১৯৫৬, কেমন ছিল?
শুনুন তাহলে।
আকর্ষণীয় বক্তা : সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। ইকনমিক্সের ছাত্র। পরে ব্যারিস্টার। ছয় ফিট লম্বা, টকটকে ফর্শা সুপুরুষ, চোস্ত পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরনে চমৎকার বাংলা-ইংরেজিতে আবেগময় ভাষায় বক্তৃতা দিতেন। সেই সময়ে তিনি দক্ষিণপন্থীরূপে পরিচিত হলেও তার বক্তৃতা শোনার জন্য আমতলায় সমবেত হতো সকলপন্থী ছাত্রছাত্রী। পরে লন্ডনে তিনি বামপন্থী, বাংলাদেশে অ্যাডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে বড় ভূমিকা রাখেন। প্রয়াত।
ভোজনপ্রিয় : ফারুক আহমদ চৌধুরী (এখন ফারুক চৌধুরী)। ইংরেজির ছাত্র। খাদ্যের প্রতি তার দুর্বলতার কারণে তিনি অনেকের প্রিয় ছিলেন। তাকে সেই সময়ের টপ রেস্টুরেন্ট রেক্স-এ অন্য ছাত্ররা নিমন্ত্রণ করে খাওয়াত এবং দেখত কিভাবে তিনি তার প্লেট সাফ করেন। ভালো টেনিস প্লেয়ার ছিলেন। পরবর্তীকালে হন রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র সচিব ও সফল লেখক-কলামিস্ট।
লাইব্রেরিপ্রিয় : মোজাফফর আহমদ। ইকনমিক্সের ছাত্র। আজিমপুরে থাকতেন এবং সেখান থেকে সাইকেল চালিয়ে ইউনিভার্সিটিতে আসা-যাওয়া করতেন। তার সাইকেলের সামনে-পেছনে গাদাগাদা বই থাকত। ইউনিভার্সিটিতে এসেই তিনি লাইব্রেরিতে ঢুকে যেতেন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে থাকতেন। তবে তার অনার্স ও এমএ-র রেজাল্ট তাকে হতাশ করেছিল। সুশীল সমাজের অন্যতম প্রবক্তা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। প্রয়াত।
বাকপ্রিয় : আবুল মাল আবদুল মুহিত। ইংরেজির ছাত্র। হাসিমুখে সারাক্ষণ কথা বলতেন। পড়াশোনা ও টেনিসে ভালো ছিলেন। এসএম হলের ছাত্র পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেনাতন্ত্রের ঘোর বিদ্বেষী মুহিত পরে সেনাপতি এরশাদের আমলে অর্থ উপদেষ্টা হন এবং বর্তমানে হাসিনা আমলে অর্থমন্ত্রী।
ক্যারিসম্যাটিক : এজেডএম ওবায়দুল্লাহ খান (ডাকনাম শিন্টু)। ইংরেজির ছাত্র। নামের আগে প্রায়ই বৃলিয়ান্ট বিশেষণটি যুক্ত হতো। ডিবেটে অনেক পুরস্কার পেতেন। প্রগতিশীল কবি রূপে খ্যাতিমান হন এবং পরে স্বৈরাচারী ও কবি খ্যাতি পেতে আগ্রহী এরশাদের আমলে মন্ত্রী হন। প্রয়াত।
ফ্যাসিনেটিং : আবিদ হুসেন। ইংরেজির ছাত্র। কমরেড নামে পরিচিত। তুখোড় বক্তা ও ছাত্ররাজনীতিতে বিতর্কিত। ভালো অভিনেতা। নিজেকে যৌন অভিজ্ঞ ও প্রফেসর অফ সেক্সোলজি দাবি করতেন। সেক্স বিষয়ে সহপাঠীদের লেসন দিতে উৎসাহী ছিলেন। পরে ব্যারিস্টার এবং বিবিসি-র ব্রডকাস্টার হয়েছিলেন। আর হ্যা, বহু নারীগমন করেছিলেন। প্রয়াত।
পাইওনিয়ার অভিনেত্রী : জহরত আরা (খুকি ডাকনামে পরিচিত)। পলিটিকাল সায়েন্সের ছাত্রী। ভালো অভিনেত্রী। বাংলাদেশের প্রথম মুভি মুখ ও মুখোশ-এর নায়িকা। বর্তমানে নরিচ, ইংল্যান্ড প্রবাসী।
হস্তরেখা বিশারদ : জহির রায়হান। বাংলার ছাত্র। তখন লেখক এবং হস্তরেখা বিশারদ রূপে খ্যাতিমান হয়েছিলেন। বিশেষত ছাত্রীদের হাত দেখতে তিনি ভালোবাসতেন। পরে সমাজসচেতন মুভি ডিরেক্টর রূপে নাম করেছিলেন। তার মুভি জীবন থেকে নেয়া স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশাল প্রভাব ফেলেছিল। তিনি তার নিজের হাতের রেখায় জানতে পারেননি যে তার অকালমৃত্যু হবে স্বাধীনতার মাত্র দেড় মাস পরেই।
সুগায়িকা : খালেদা ফ্যান্সি খানম ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী ও ফর্শা - প্লাস তিনি ছিলেন সুগায়িকা। অনেকেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ড. কুদরাত-এ-খুদার পুত্র মনজুর-এ-খুদার সাথে বিয়ে হয়। বহু বছর টরন্টোতে ছিলেন। এখন ঢাকাবাসী। তবে মাইনাস হয়ে গেছেন সঙ্গীতভুবন থেকে।
ত্রিরত্ন : কাসেম, আশরাফ (ডাকনাম চানু) ও সিদ্দিক ছিলেন ত্রিরত্ন নামে পরিচিত। প্রথম দু’জন সায়েন্স ও তৃতীয়জন ইকনমিক্সের ছাত্র ছিলেন। কাসেম (এক চোখ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল ব্যাডমিন্টন কর্কের আঘাতে) ছিলেন ফুটবল ব্লু। আশরাফ ও সিদ্দিক ছিলেন হকি ব্লু। আশরাফ সব প্রগতিশীল আন্দোলন ও নির্বাচনের পোস্টার আকতেন। সিদ্দিক রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন। তিনজনই প্রয়াত।
ধনী কবি : কবিদের সাধারণত অভাবী হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলার ছাত্র হাসান হাফিজুর রহমান ছিলেন খুব উদ্যমী সম্পাদক ও বিদ্রোহী কিন্তু ধনী কবি। সুবিখ্যাত একুশের সঙ্কলন তিনি সম্পাদনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ইতিহাসের এবং দৈনিক বাংলা’র সম্পাদনা তিনি করেন। জামালপুরের বিত্তশালী পরিবারে জন্ম হয়েছিল এবং মধুকে পাচশ টাকার সবুজ নোটে বিল পরিশোধ করতেন। সেই যুগে পাচশ টাকা ছিল বর্তমানের পাচ হাজারের চেয়ে বেশি। তার অ্যাকাউন্টে অনেকেই খেত। প্রয়াত।
লাজুক কবি : শামসুর রাহমান ছিলেন ইংরেজির ছাত্র। ফর্শা, সুদর্শন ও অতি লাজুক কবি। সম্ভবত তিনিই প্রথম যিনি রহমান নামের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে রাহমান নামে পরিচিত হয়েছিলেন। প্রয়াত।
ব্রাদার : লতিফুর রহমান ছিলেন ইংরেজির ছাত্র। তার ডাক নাম ছিল শান্তি। কিন্তু তার বন্ধুরা তাকে ব্রাদার নামে ডাকত। পরবর্তীকালে তিনি হয়েছিলেন সফল উকিল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (২০০১)। তিনি তার আত্মজীবনীতে জানিয়েছেন অনার্সে খারাপ রেজাল্টের ব্যর্থতাকে মেনে না নিয়ে তিনি আইন পড়েন, সিভিল সার্ভিস-বিমুখী হন, আইন পেশায় ভালো করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। অনার্সে রেজাল্ট ভালো হলে তার জীবনের গতিপথ অন্য হতো এবং তিনি হয়তো প্রধান উপদেষ্টা হতেন না।
দম্পতি দিলারা ও হাশেম : ইউনিভার্সিটিতে প্রায় সব ছাত্রছাত্রী যখন কুমার-কুমারী, তখন দিলারা ও হাশেম দম্পতি ছিল তাদের ঈর্ষার পাত্রীপাত্র। দিলারা ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী ও সুন্দরী। হাশেম ছিলেন সুপুরুষ। পরবর্তীকালে দিলারা হন ঔপন্যাসিক ও ভয়েস অফ আমেরিকার ব্রডকাস্টার। হাশেম হন সফল বিজনেসম্যান। দিলারা ও হাশেম দু’জনাই ছিলেন ওয়াশিংটন প্রবাসী। খুব অল্প বয়সে জুটি বাধলেও দু’জনার দুটি পথ যায় বেকে। দুইজনা বিচ্ছিন্ন কিন্তু সফল জীবনযাপন করেন। দিলারার সারনেইম হাশেম এখনো আছে। হাশেম প্রয়াত।
সাড়া জাগানো পাচটি প্রেম
এক. শান্তিনিকেতন থেকে আসা রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা ফরিদা বারি মালিকের (ডাকনাম বীথি) সাথে আমানুল্লাহ খান (ইউ নেভার ক্যান টেল-এর নায়ক, ডাক নাম শহীদ)-এর প্রেম। শহীদ ছিলেন দেখাশোনা, চলাফেরায় সাহেবি গোছের। বীথি ছিলেন রাবীন্দ্রিক বাঙালি গোছের। তাদের এই অপ্রত্যাশিত প্রেমে opposite attracts (অপজিট এট্রাক্টস) ফ্যাক্টরটির সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। তাদের বিয়ে হয়েছিল। শহীদ ও বীথি উভয়ই প্রয়াত।
দুই. অভিনেত্রী কামেলা শরাফি ও সাংবাদিক দাউদ খান মজলিশের প্রেম। কামেলা ছিলেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়ক কলিম শরাফির স্ত্রী। কামেলা দাউদের বিয়ে হয়েছিল। ছাত্র অবস্থাতেই She for the second and he for the first time (শি ফর দি সেকেন্ড, অ্যান্ড হি ফর দি ফার্স্ট টাইম) ঘটনার সাথে আমরা প্রথম পরিচিত হই। দু’জনাই প্রয়াত।
তিন. ইকনমিক্সের ছাত্র সৈয়দ ইশতিয়াক আহমদের সাথে ইতিহাসের ছাত্রী সুফিয়া আহমেদের প্রেম। ইশতিয়াক ছিলেন দক্ষিণপন্থী ছাত্রনেতা এবং অনুষ্ঠিতব্য এসএম হলের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী। তার বিজয় ছিল অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু নমিনেশন পেপার সাবমিশনের দিন দেখা গেল তিনি নিজের নমিনেশন পেপার দাখিল করেননি। বোমা পড়ার মতো জানা গেল ইশতিয়াক-সুফিয়ার গভীর প্রেমের কথা। বুঝলাম, Love conquers all. সবার ওপরে প্রেমই বিজয়ী হয়। এর পর তিনি সস্ত্রীক (সুফিয়া) বিলেতে চলে যান আইন পড়তে। ইশতিয়াক প্রয়াত। সুফিয়া আহমদ ন্যাশনাল প্রফেসর।
চার. ওবায়দুল্লাহ খান ও পুতুলের প্রেম। এমএ পাস করে নতুন টিচার ওবায়দুল্লাহ প্রেমে পড়েছিলেন ছাত্রী পুতুলের। পুতুল তাতে সাড়া না দেয়ায় ওবায়দুল্লাহ ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মেডিক্যাল হসপিটালে অচেতন ওবায়দুল্লাহকে ট্রান্সফার করা হয়। এর পর পুতুল সাড়া দেন। ওবায়দুল্লাহ সিএসপি হন। তাদের বিয়ে হয়। বুঝলাম, আত্মহত্যা প্রচেষ্টার (আত্মহত্যার নয়) সাথে প্রেমে সাফল্যের একটা সম্ভাবনা থাকে। তবে এ ধরনের প্রচেষ্টা খুব রিস্কি - শিন্টু তখন পরলোকে যেতে পারতেন। শিন্টু আবার প্রেমে পড়েন, দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এখন তিনি পরলোকে।
পাচ. ইকনমিক্সের শফিক রেহমানের সাথে ইকনমিক্সের তালেয়া খান। বিয়ে না হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন দি পাকিস্তান অবজার্ভার-এ তাদের বিয়ের খবর ছাপা হয়েছিল। সম্ভবত এই মিথ্যা খবর প্রকাশের পেছনে ছিলেন তালেয়ার পাণিপ্রার্থী অন্য কোনো ছাত্র। প্রেমের পথ যে কুসুমাস্তীর্ণ নয় সেটা শফিক ও তালেয়া তখনই টের পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তাদের বিয়ে হয় এবং লন্ডনে চলে যান। তালেয়া হন লন্ডনে স্কুল ডেপুটি হেড মিস্ট্রেস ও পরে ঢাকায় ডেমক্রেসিওয়াচের নির্বাহী পরিচালক। শফিক রেহমান হন চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট, লেখক এবং বাংলাদেশে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিন-এর প্রবর্তক।
এক. শান্তিনিকেতন থেকে আসা রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা ফরিদা বারি মালিকের (ডাকনাম বীথি) সাথে আমানুল্লাহ খান (ইউ নেভার ক্যান টেল-এর নায়ক, ডাক নাম শহীদ)-এর প্রেম। শহীদ ছিলেন দেখাশোনা, চলাফেরায় সাহেবি গোছের। বীথি ছিলেন রাবীন্দ্রিক বাঙালি গোছের। তাদের এই অপ্রত্যাশিত প্রেমে opposite attracts (অপজিট এট্রাক্টস) ফ্যাক্টরটির সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। তাদের বিয়ে হয়েছিল। শহীদ ও বীথি উভয়ই প্রয়াত।
দুই. অভিনেত্রী কামেলা শরাফি ও সাংবাদিক দাউদ খান মজলিশের প্রেম। কামেলা ছিলেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়ক কলিম শরাফির স্ত্রী। কামেলা দাউদের বিয়ে হয়েছিল। ছাত্র অবস্থাতেই She for the second and he for the first time (শি ফর দি সেকেন্ড, অ্যান্ড হি ফর দি ফার্স্ট টাইম) ঘটনার সাথে আমরা প্রথম পরিচিত হই। দু’জনাই প্রয়াত।
তিন. ইকনমিক্সের ছাত্র সৈয়দ ইশতিয়াক আহমদের সাথে ইতিহাসের ছাত্রী সুফিয়া আহমেদের প্রেম। ইশতিয়াক ছিলেন দক্ষিণপন্থী ছাত্রনেতা এবং অনুষ্ঠিতব্য এসএম হলের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী। তার বিজয় ছিল অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু নমিনেশন পেপার সাবমিশনের দিন দেখা গেল তিনি নিজের নমিনেশন পেপার দাখিল করেননি। বোমা পড়ার মতো জানা গেল ইশতিয়াক-সুফিয়ার গভীর প্রেমের কথা। বুঝলাম, Love conquers all. সবার ওপরে প্রেমই বিজয়ী হয়। এর পর তিনি সস্ত্রীক (সুফিয়া) বিলেতে চলে যান আইন পড়তে। ইশতিয়াক প্রয়াত। সুফিয়া আহমদ ন্যাশনাল প্রফেসর।
চার. ওবায়দুল্লাহ খান ও পুতুলের প্রেম। এমএ পাস করে নতুন টিচার ওবায়দুল্লাহ প্রেমে পড়েছিলেন ছাত্রী পুতুলের। পুতুল তাতে সাড়া না দেয়ায় ওবায়দুল্লাহ ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মেডিক্যাল হসপিটালে অচেতন ওবায়দুল্লাহকে ট্রান্সফার করা হয়। এর পর পুতুল সাড়া দেন। ওবায়দুল্লাহ সিএসপি হন। তাদের বিয়ে হয়। বুঝলাম, আত্মহত্যা প্রচেষ্টার (আত্মহত্যার নয়) সাথে প্রেমে সাফল্যের একটা সম্ভাবনা থাকে। তবে এ ধরনের প্রচেষ্টা খুব রিস্কি - শিন্টু তখন পরলোকে যেতে পারতেন। শিন্টু আবার প্রেমে পড়েন, দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এখন তিনি পরলোকে।
পাচ. ইকনমিক্সের শফিক রেহমানের সাথে ইকনমিক্সের তালেয়া খান। বিয়ে না হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন দি পাকিস্তান অবজার্ভার-এ তাদের বিয়ের খবর ছাপা হয়েছিল। সম্ভবত এই মিথ্যা খবর প্রকাশের পেছনে ছিলেন তালেয়ার পাণিপ্রার্থী অন্য কোনো ছাত্র। প্রেমের পথ যে কুসুমাস্তীর্ণ নয় সেটা শফিক ও তালেয়া তখনই টের পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তাদের বিয়ে হয় এবং লন্ডনে চলে যান। তালেয়া হন লন্ডনে স্কুল ডেপুটি হেড মিস্ট্রেস ও পরে ঢাকায় ডেমক্রেসিওয়াচের নির্বাহী পরিচালক। শফিক রেহমান হন চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট, লেখক এবং বাংলাদেশে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিন-এর প্রবর্তক।
আগুন ঝরানো নেতা
: গাজীউল হক। সুপুরুষ, টকটকে ফর্শা ও সুদর্শন গাজীভাই ছিলেন রাষ্ট্রভাষা
আন্দোলনের অন্যতম বড় নায়ক। তার কণ্ঠ নিঃসৃত জোরালো স্লোগান রাষ্ট্রভাষা
বাংলা চাই অনুপ্রাণিত করত সবাইকে। পরবর্তীকালে সফল অ্যাডভোকেট। প্রয়াত।
সিগারেট বিক্রেতা : মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (ডাকনাম শেলি) আত্মনির্ভরশীলরূপে পরিচিত ছিলেন। ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি গলায় একটি ট্রে ঝুলিয়ে, সেই ট্রেতে রাখা সিগারেট, ম্যাচ, পান ইত্যাদি বিক্রি করতেন। পরবর্তীকালে সফল গবেষক, লেখক, বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (১৯৯৬)। প্রয়াত।
অলরাউন্ডার : দু’জন বিখ্যাত অলরাউন্ডারের প্রথম জন ছিলেন এ. ডাবলিউ শামসুল আলম (ফিজিক্সে ফার্স্ট ক্লাস, টেনিস ও বৃজ-এ চ্যাম্পিয়ন)। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রদূত। প্রয়াত।
দ্বিতীয় জন ছিলেন মোহাম্মদ আসাফউদ্দৌল্লাহ (লেখাপড়ায় উত্তম, গান-বাজনায় ভালো, খেলাধুলায় ও সাতারে পারদর্শী)। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের সচিব এবং ফখরুদ্দীন-মইন ইউ আহমেদ সরকার ও হাসিনা সরকারের কড়া কিন্তু জনপ্রিয় সমালোচক।
একনিষ্ঠ সংস্কৃতিসেবী : সনজীদা খাতুন। বাংলার ছাত্রী। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুগায়িকা ছিলেন এবং সব প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। এখনো ছায়ানটের প্রধান প্রেরণা।
ফটোগ্রাফার : রফিকুল ইসলাম। বাংলার ছাত্র। সেই সময়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটির যে গুটিকয়েক ছাত্র ক্যামেরার মালিক ছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলনের বহু দুর্লভ ছবি তার তোলা। ফটোগ্রাফি থেকে দূরে সরে গিয়ে হয়েছেন কবি নজরুল ইসলাম বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ভাইস-চান্সেলর।
টপ নাটক : জর্জ বার্নার্ড শ’-এর ইউ নেভার ক্যান টেল-এর বাংলা অনুবাদ করেছিলেন আইন বিভাগের প্রফেসর নুরুল মোমেন। কার্জন হলে অভিনীত এই নাটকটি ছিল সে সময়ের একটি মানদণ্ড। নায়কের ভূমিকায় সুঅভিনয় করেছিলেন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স বিভাগের ছাত্র আমানুল্লাহ খান, ডাকনাম শহীদ। নায়িকার ভূমিকায় ছিলেন মনিমুন্নেসা। উভয়েই প্রয়াত।
ঘটনাবহুল বছর : ১৯৫৪। এর আগে ১৯৫২-তে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হস্টেলে। ১৯৫৪-তে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব চলে আসে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। এ ছাড়া এই বছরেই দেশ জুড়ে বন্যাদুর্গতদের সেবায় ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা বড় ভূমিকা নেয়।
নকলের বছর : ১৯৫৫। অনার্স পরীক্ষার সময়ে কার্জন হল থেকে কিছু ছাত্র (ছাত্রী নয়) বহিষ্কৃত হয়েছিল নকলের অপরাধে। তবে অনেকে লঘু দোষে (কালির দোয়াতে নোট লিখে রাখা) দণ্ডিত হয়েছিল।
দু’টি গুডউইল মিশন : ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫। ১৯৫৪-তে আমার উদ্যোগে এবং আরো চার সহপাঠীর [শামসুল আলম (হনো), আজিমুর রহমান (হারুন), আখতার, সারোয়ার-উল হক]-এর উদ্যমে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম প্রাইভেট গুডউইল মিশন যায় সিলোন (এখন শ্রী লঙ্কা)-এ। পরের বছর আমরা দ্বিতীয় প্রাইভেট গুডউইল মিশনে যাই বার্মাতে। এবার তিনজন ছাত্র ও তিনজন ছাত্রী (জহরত আরা, রাজিয়া খান ও ইশরত আরা) আমাদের মিশনে ছিলেন। ছাত্রীদের ‘রক্ষাকবচ’ ছিলেন ড. নুরুল মোমেন। মিশনে বা তারপরে আমরা কেউই পারস্পরিক প্রেমে পড়িনি। শামসুল আলম, আজিমুর রহমান ও সারোয়ার-উল হক প্রয়াত।
সহজবোধ্য টিচার : ইকনমিক্সের ড. আবু মাহমুদ। তার পড়ানোটা ছিল খুব সহজবোধ্য। অন্যান্য ক্লাসে আমার উপস্থিতি খুব কম হলেও প্রগতিপন্থী ড. মাহমুদের ৯৫ শতাংশ ক্লাসে আমি অ্যাটেন্ড করেছিলাম। আর সেই কারণেই আমি ডিসকলেজিয়েট হইনি। ড. মাহমুদ ছিলেন ঠিক ওই সময়ে ডিপার্টমেন্ট হেড। তার ক্লাসে আমার উপস্থিতির প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। তিনি আমাকে অনার্স পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। প্রগতিপন্থী ড. আবু মাহমুদ পাকিস্তানপন্থী ছাত্রদের রোষানলে পড়ে নির্যাতিত হন কিন্তু কখনই আদর্শ বিচ্যুত হননি। প্রয়াত।
স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি টিচার : আইন বিভাগের ড. নুরুল মোমেনের চারপাশে ঘিরে থাকত গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রীরা, আইন শিখতে নয়। তার রসালো কথা শুনতে। তার অনূদিত নাটকে অংশ নিতে। প্রয়াত।
ছাত্রোপকারী টিচার : ফিলসফির ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব অকাতরে সাহায্য করতেন ছাত্রছাত্রীদের। তিনি চিরকুমার ছিলেন। ছাত্রছাত্রীরাই ছিল তার জীবনসঙ্গী। একাত্তরে শহীদ।
বাংলিশ টিচার : ইকনমিক্সের ড. মজহারুল হক ছিলেন সদ্য ইংল্যান্ড ফেরত। তিনি ইকনমিক্সের চাইতে শুদ্ধ ইংরেজি বলার ওপর লেকচার দিতে পছন্দ করতেন। তিনি শিখিয়েছিলেন Joan Robinson-এর উচ্চারণ জোন রবিনসন (জোয়ান নয়), ক্যাম্বেল (Campbell, ক্যাম্পবেল নয়), হিউজ (Hughes, হিউজেস নয়), ইয়েন (Ian, আয়ান নয়), গ্রেহাম (Graham, গ্রাহাম নয়)।
নকল ফ্রেঞ্চ টিচার : মশিয়ে পেরোশো। সুদর্শন ও সুবক্তা, ফ্রান্স থেকে আসা মশিয়ে পেরোশো, পলিটিকাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন। তার চমৎকার শিক্ষকতায় প্রচণ্ডভাবে আকৃষ্ট হয়েছিল অনেকে। পরে সবাই হতাশ হয়েছিল জেনে যে, নকল সার্টিফিকেট জমা দেয়ার অভিযোগে তিনি পদচ্যুত হয়েছেন। তিনি আর ক্লাস নেননি। পরে তিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ডেমরা রোড নির্মাণকাজে অংশ নেন। সেখানে তিনি কোদাল হাতে হাসিমুখে পিচ ঢালতেন এবং তার গুণমুগ্ধ ছাত্রদের সাথে বিনা সঙ্কোচে কথা বলতেন।
অগ্রগামী ছাত্র সংগঠন : ছাত্র ইউনিয়ন। আমাদের সময়ে প্রতিটি হলে ছাত্র ইউনিয়ন অগ্রগামী ছিল। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ইসলামপন্থী দল। ছাত্রলীগ তখন খুব দুর্বল ছিল। ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল ছিল না।
ছাত্রদের যা ছিল : ব্যক্তিগত সাইকেল, হলের কমনরুমে রেডিও এবং দৈনিক পত্রিকা, পেন্সিল, ফাউন্টেইন পেন, দোয়াতের কালি (পার্কার কুইঙ্ক) ও ভালো কাগজের খাতা, ক্যাপস্টান, সিজার্স ও কিং স্টর্ক সিগারেট। অ্যালার্ম টেবিল ক্লক। অব্যাহত ইলেকটৃসিটি সাপ্লাই।
ছাত্রীদের ছিল : লো অথবা মিডিয়াম হিল শু অথবা স্যান্ডাল ও শাড়ি-ব্লাউজ, শীতকালে কালারফুল জ্যাকেট-ওভারকোট। ছাত্রদের ছিল কাবলি চপ্পল অথবা স্যান্ডাল ও জুতা, হাফ অথবা ফুল শার্ট, কটন ও কর্ডের ট্রাউজার্স ও পায়জামা, শীতকালে হাতে বোনা সোয়েটার ও মাফলার।
সবার প্রধান রাজনৈতিক আদর্শ ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা।
ছাত্রদের যা ছিল না : চাপাতি-পিস্তল প্রভৃতি অস্ত্র, মোটরসাইকেল, টিভি, বল পয়েন্ট, সিডি বা এমপি থৃ প্লেয়ার, বন্ড মুভি দেখার অভিজ্ঞতা, মোবাইল ফোন, ক্যাশ টাকার বান্ডল, বেনসন অ্যান্ড হেজেস সিগারেট, ইয়াবা, ফেনসিডিল, বাংলা ও বিদেশি মদ, কোয়ার্টজ রিস্টওয়াচ, ক্যামেরা। ছাত্রীদের ছিল না বোরখা, নেকাব, থৃপিস, টপস, জিন্স ও স্নিকার্স। ছাত্রদের ছিল না টিশার্ট, জিন্স ও স্নিকার্স এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি সম্পৃক্ততা ও পৃষ্ঠপোষকতা।
আর ছিল না কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিপূজা।
ছাত্রদের লক্ষ্য ছিল : একাডেমিক ইয়ারগুলোর (চার বছর) মধ্যেই ভালো ডিগ্রি অর্জন করে, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে সিএসপি হয়ে কাঙ্ক্ষিত ছাত্রী অথবা প্রেমিকাকে বিয়ে করা, অ্যান্ড লিভ হ্যাপিলি এভার আফটার। যদি কাঙ্ক্ষিত নারীকে বিয়ে করা সম্ভব না হয় তাহলে চাদ সওদাগর জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর অথবা কোনো জাদরেল আমলার কন্যাকে বিয়ে করে ক্যারিয়ার মজবুত করা।
ছাত্রদের লক্ষ্য ছিল না : কোনো ছাত্রীকে ধর্ষণ অথবা গণধর্ষণ করা কিংবা ধর্ষণের ছবি ধারণ করে মোবাইলে প্রচার করা, টেন্ডারবাজি করা, চল্লিশোর্ধ্ব বয়সেও ছাত্রনেতা হওয়া, রাজনৈতিক নেতা হওয়া, সাধারণ নির্বাচনে নমিনেশন পাওয়া, এমপি ও মন্ত্রী হওয়া।
সিগারেট বিক্রেতা : মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (ডাকনাম শেলি) আত্মনির্ভরশীলরূপে পরিচিত ছিলেন। ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি গলায় একটি ট্রে ঝুলিয়ে, সেই ট্রেতে রাখা সিগারেট, ম্যাচ, পান ইত্যাদি বিক্রি করতেন। পরবর্তীকালে সফল গবেষক, লেখক, বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (১৯৯৬)। প্রয়াত।
অলরাউন্ডার : দু’জন বিখ্যাত অলরাউন্ডারের প্রথম জন ছিলেন এ. ডাবলিউ শামসুল আলম (ফিজিক্সে ফার্স্ট ক্লাস, টেনিস ও বৃজ-এ চ্যাম্পিয়ন)। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রদূত। প্রয়াত।
দ্বিতীয় জন ছিলেন মোহাম্মদ আসাফউদ্দৌল্লাহ (লেখাপড়ায় উত্তম, গান-বাজনায় ভালো, খেলাধুলায় ও সাতারে পারদর্শী)। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের সচিব এবং ফখরুদ্দীন-মইন ইউ আহমেদ সরকার ও হাসিনা সরকারের কড়া কিন্তু জনপ্রিয় সমালোচক।
একনিষ্ঠ সংস্কৃতিসেবী : সনজীদা খাতুন। বাংলার ছাত্রী। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুগায়িকা ছিলেন এবং সব প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। এখনো ছায়ানটের প্রধান প্রেরণা।
ফটোগ্রাফার : রফিকুল ইসলাম। বাংলার ছাত্র। সেই সময়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটির যে গুটিকয়েক ছাত্র ক্যামেরার মালিক ছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলনের বহু দুর্লভ ছবি তার তোলা। ফটোগ্রাফি থেকে দূরে সরে গিয়ে হয়েছেন কবি নজরুল ইসলাম বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ভাইস-চান্সেলর।
টপ নাটক : জর্জ বার্নার্ড শ’-এর ইউ নেভার ক্যান টেল-এর বাংলা অনুবাদ করেছিলেন আইন বিভাগের প্রফেসর নুরুল মোমেন। কার্জন হলে অভিনীত এই নাটকটি ছিল সে সময়ের একটি মানদণ্ড। নায়কের ভূমিকায় সুঅভিনয় করেছিলেন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স বিভাগের ছাত্র আমানুল্লাহ খান, ডাকনাম শহীদ। নায়িকার ভূমিকায় ছিলেন মনিমুন্নেসা। উভয়েই প্রয়াত।
ঘটনাবহুল বছর : ১৯৫৪। এর আগে ১৯৫২-তে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হস্টেলে। ১৯৫৪-তে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব চলে আসে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। এ ছাড়া এই বছরেই দেশ জুড়ে বন্যাদুর্গতদের সেবায় ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা বড় ভূমিকা নেয়।
নকলের বছর : ১৯৫৫। অনার্স পরীক্ষার সময়ে কার্জন হল থেকে কিছু ছাত্র (ছাত্রী নয়) বহিষ্কৃত হয়েছিল নকলের অপরাধে। তবে অনেকে লঘু দোষে (কালির দোয়াতে নোট লিখে রাখা) দণ্ডিত হয়েছিল।
দু’টি গুডউইল মিশন : ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫। ১৯৫৪-তে আমার উদ্যোগে এবং আরো চার সহপাঠীর [শামসুল আলম (হনো), আজিমুর রহমান (হারুন), আখতার, সারোয়ার-উল হক]-এর উদ্যমে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম প্রাইভেট গুডউইল মিশন যায় সিলোন (এখন শ্রী লঙ্কা)-এ। পরের বছর আমরা দ্বিতীয় প্রাইভেট গুডউইল মিশনে যাই বার্মাতে। এবার তিনজন ছাত্র ও তিনজন ছাত্রী (জহরত আরা, রাজিয়া খান ও ইশরত আরা) আমাদের মিশনে ছিলেন। ছাত্রীদের ‘রক্ষাকবচ’ ছিলেন ড. নুরুল মোমেন। মিশনে বা তারপরে আমরা কেউই পারস্পরিক প্রেমে পড়িনি। শামসুল আলম, আজিমুর রহমান ও সারোয়ার-উল হক প্রয়াত।
সহজবোধ্য টিচার : ইকনমিক্সের ড. আবু মাহমুদ। তার পড়ানোটা ছিল খুব সহজবোধ্য। অন্যান্য ক্লাসে আমার উপস্থিতি খুব কম হলেও প্রগতিপন্থী ড. মাহমুদের ৯৫ শতাংশ ক্লাসে আমি অ্যাটেন্ড করেছিলাম। আর সেই কারণেই আমি ডিসকলেজিয়েট হইনি। ড. মাহমুদ ছিলেন ঠিক ওই সময়ে ডিপার্টমেন্ট হেড। তার ক্লাসে আমার উপস্থিতির প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। তিনি আমাকে অনার্স পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। প্রগতিপন্থী ড. আবু মাহমুদ পাকিস্তানপন্থী ছাত্রদের রোষানলে পড়ে নির্যাতিত হন কিন্তু কখনই আদর্শ বিচ্যুত হননি। প্রয়াত।
স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি টিচার : আইন বিভাগের ড. নুরুল মোমেনের চারপাশে ঘিরে থাকত গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রীরা, আইন শিখতে নয়। তার রসালো কথা শুনতে। তার অনূদিত নাটকে অংশ নিতে। প্রয়াত।
ছাত্রোপকারী টিচার : ফিলসফির ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব অকাতরে সাহায্য করতেন ছাত্রছাত্রীদের। তিনি চিরকুমার ছিলেন। ছাত্রছাত্রীরাই ছিল তার জীবনসঙ্গী। একাত্তরে শহীদ।
বাংলিশ টিচার : ইকনমিক্সের ড. মজহারুল হক ছিলেন সদ্য ইংল্যান্ড ফেরত। তিনি ইকনমিক্সের চাইতে শুদ্ধ ইংরেজি বলার ওপর লেকচার দিতে পছন্দ করতেন। তিনি শিখিয়েছিলেন Joan Robinson-এর উচ্চারণ জোন রবিনসন (জোয়ান নয়), ক্যাম্বেল (Campbell, ক্যাম্পবেল নয়), হিউজ (Hughes, হিউজেস নয়), ইয়েন (Ian, আয়ান নয়), গ্রেহাম (Graham, গ্রাহাম নয়)।
নকল ফ্রেঞ্চ টিচার : মশিয়ে পেরোশো। সুদর্শন ও সুবক্তা, ফ্রান্স থেকে আসা মশিয়ে পেরোশো, পলিটিকাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন। তার চমৎকার শিক্ষকতায় প্রচণ্ডভাবে আকৃষ্ট হয়েছিল অনেকে। পরে সবাই হতাশ হয়েছিল জেনে যে, নকল সার্টিফিকেট জমা দেয়ার অভিযোগে তিনি পদচ্যুত হয়েছেন। তিনি আর ক্লাস নেননি। পরে তিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ডেমরা রোড নির্মাণকাজে অংশ নেন। সেখানে তিনি কোদাল হাতে হাসিমুখে পিচ ঢালতেন এবং তার গুণমুগ্ধ ছাত্রদের সাথে বিনা সঙ্কোচে কথা বলতেন।
অগ্রগামী ছাত্র সংগঠন : ছাত্র ইউনিয়ন। আমাদের সময়ে প্রতিটি হলে ছাত্র ইউনিয়ন অগ্রগামী ছিল। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ইসলামপন্থী দল। ছাত্রলীগ তখন খুব দুর্বল ছিল। ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল ছিল না।
ছাত্রদের যা ছিল : ব্যক্তিগত সাইকেল, হলের কমনরুমে রেডিও এবং দৈনিক পত্রিকা, পেন্সিল, ফাউন্টেইন পেন, দোয়াতের কালি (পার্কার কুইঙ্ক) ও ভালো কাগজের খাতা, ক্যাপস্টান, সিজার্স ও কিং স্টর্ক সিগারেট। অ্যালার্ম টেবিল ক্লক। অব্যাহত ইলেকটৃসিটি সাপ্লাই।
ছাত্রীদের ছিল : লো অথবা মিডিয়াম হিল শু অথবা স্যান্ডাল ও শাড়ি-ব্লাউজ, শীতকালে কালারফুল জ্যাকেট-ওভারকোট। ছাত্রদের ছিল কাবলি চপ্পল অথবা স্যান্ডাল ও জুতা, হাফ অথবা ফুল শার্ট, কটন ও কর্ডের ট্রাউজার্স ও পায়জামা, শীতকালে হাতে বোনা সোয়েটার ও মাফলার।
সবার প্রধান রাজনৈতিক আদর্শ ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা।
ছাত্রদের যা ছিল না : চাপাতি-পিস্তল প্রভৃতি অস্ত্র, মোটরসাইকেল, টিভি, বল পয়েন্ট, সিডি বা এমপি থৃ প্লেয়ার, বন্ড মুভি দেখার অভিজ্ঞতা, মোবাইল ফোন, ক্যাশ টাকার বান্ডল, বেনসন অ্যান্ড হেজেস সিগারেট, ইয়াবা, ফেনসিডিল, বাংলা ও বিদেশি মদ, কোয়ার্টজ রিস্টওয়াচ, ক্যামেরা। ছাত্রীদের ছিল না বোরখা, নেকাব, থৃপিস, টপস, জিন্স ও স্নিকার্স। ছাত্রদের ছিল না টিশার্ট, জিন্স ও স্নিকার্স এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি সম্পৃক্ততা ও পৃষ্ঠপোষকতা।
আর ছিল না কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিপূজা।
ছাত্রদের লক্ষ্য ছিল : একাডেমিক ইয়ারগুলোর (চার বছর) মধ্যেই ভালো ডিগ্রি অর্জন করে, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে সিএসপি হয়ে কাঙ্ক্ষিত ছাত্রী অথবা প্রেমিকাকে বিয়ে করা, অ্যান্ড লিভ হ্যাপিলি এভার আফটার। যদি কাঙ্ক্ষিত নারীকে বিয়ে করা সম্ভব না হয় তাহলে চাদ সওদাগর জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর অথবা কোনো জাদরেল আমলার কন্যাকে বিয়ে করে ক্যারিয়ার মজবুত করা।
ছাত্রদের লক্ষ্য ছিল না : কোনো ছাত্রীকে ধর্ষণ অথবা গণধর্ষণ করা কিংবা ধর্ষণের ছবি ধারণ করে মোবাইলে প্রচার করা, টেন্ডারবাজি করা, চল্লিশোর্ধ্ব বয়সেও ছাত্রনেতা হওয়া, রাজনৈতিক নেতা হওয়া, সাধারণ নির্বাচনে নমিনেশন পাওয়া, এমপি ও মন্ত্রী হওয়া।
কিউএস/টাইমস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংস ২০১৬ :
এমআইটি, ম্যাসাচুসেটস, ইউএস
হার্ভার্ড, ইউএস
(যুগ্ম) স্ট্যানফোর্ড, ইউএস
(যুগ্ম) কেমবৃজ, ইউকে
ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেক, ইউএস
অক্সফোর্ড, ইউকে
ইউসিএল, লন্ডন, ইউকে
ইমপিরিয়াল কলেজ, লন্ডন, ইউকে
এসএফআইটি, জুরিখ, সুইজারল্যান্ড
শিকাগো, ইউএস
পৃন্সটন, ইউএস
ন্যাশনাল, সিংগাপুর
নানইয়াং টেক, সিংগাপুর
এসএফইউটি, লসান, সুইজারল্যান্ড
ইয়েল, ইউএস
জনস হপকিন্স, ইউএস
কর্নেল, ইউএস
পেনসেলভিনিয়া, ইউএস
কিংস কলেজ, ইউকে
ন্যাশনাল, অস্ট্রেলিয়া
এই সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংসে দেখা যাচ্ছে গত ছয় বছরে শীর্ষ ২০টির মধ্যে ১০টি ইউএসএ-তে, ৫টি ইউকে-তে, ২টি সুইজারল্যান্ডে, ২টি সিংগাপুরে এবং ১টি অস্ট্রেলিয়াতে। পশ্চিমের অক্সফোর্ড আগের ষষ্ঠ স্থানটি ধরে রেখেছে। শীর্ষ ৫০টির মধ্যে এগিয়ে এসেছে এশিয়ার কয়েকটি দেশ, সিংগাপুর, হং কং, জাপান, সাউথ কোরিয়া ও চায়না। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া দখল করেছে ৫টি স্থান। সরি, শীর্ষ ১০০-র মধ্যে ঢাকা ইউনিভার্সিটি নেই। বর্তমান সরকার কর্তৃক বহুল প্রচারিত ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ বাংলাদেশের একটি ইউনিভার্সিটিও ১০,০০০-এর মধ্যেও আছে কিনা সে বিষয়ে রিসার্চ করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী নহিদ একটি টিম নিয়োগ করতে পারেন।
২১ জানুয়ারি ২০১৬
এমআইটি, ম্যাসাচুসেটস, ইউএস
হার্ভার্ড, ইউএস
(যুগ্ম) স্ট্যানফোর্ড, ইউএস
(যুগ্ম) কেমবৃজ, ইউকে
ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেক, ইউএস
অক্সফোর্ড, ইউকে
ইউসিএল, লন্ডন, ইউকে
ইমপিরিয়াল কলেজ, লন্ডন, ইউকে
এসএফআইটি, জুরিখ, সুইজারল্যান্ড
শিকাগো, ইউএস
পৃন্সটন, ইউএস
ন্যাশনাল, সিংগাপুর
নানইয়াং টেক, সিংগাপুর
এসএফইউটি, লসান, সুইজারল্যান্ড
ইয়েল, ইউএস
জনস হপকিন্স, ইউএস
কর্নেল, ইউএস
পেনসেলভিনিয়া, ইউএস
কিংস কলেজ, ইউকে
ন্যাশনাল, অস্ট্রেলিয়া
এই সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংসে দেখা যাচ্ছে গত ছয় বছরে শীর্ষ ২০টির মধ্যে ১০টি ইউএসএ-তে, ৫টি ইউকে-তে, ২টি সুইজারল্যান্ডে, ২টি সিংগাপুরে এবং ১টি অস্ট্রেলিয়াতে। পশ্চিমের অক্সফোর্ড আগের ষষ্ঠ স্থানটি ধরে রেখেছে। শীর্ষ ৫০টির মধ্যে এগিয়ে এসেছে এশিয়ার কয়েকটি দেশ, সিংগাপুর, হং কং, জাপান, সাউথ কোরিয়া ও চায়না। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া দখল করেছে ৫টি স্থান। সরি, শীর্ষ ১০০-র মধ্যে ঢাকা ইউনিভার্সিটি নেই। বর্তমান সরকার কর্তৃক বহুল প্রচারিত ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ বাংলাদেশের একটি ইউনিভার্সিটিও ১০,০০০-এর মধ্যেও আছে কিনা সে বিষয়ে রিসার্চ করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী নহিদ একটি টিম নিয়োগ করতে পারেন।
২১ জানুয়ারি ২০১৬
No comments