ঝাঁকুনি তত্ত্বের ব্যাংক ব্যবসায় by ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
বাংলাদেশে এখন বেসরকারি ব্যাংকের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশে কেন এত ব্যাংক, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এখানে এসে প্রশ্ন রেখে গেছে। তারা সরকারের কাছে বারবার জানতে চেয়েছে, বাংলাদেশে কেন এত বেশি ব্যাংক? এর সুনির্দিষ্ট জবাব কেউ দিতে পারেননি। তবে এর একটা জবাব বোধ করি বেভুলা অর্থমন্ত্রীর কাছে আছে। নতুন বেশ কিছু ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন যখন তার কাছে এলো, তখন তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় আরো কিছু ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিতে হবে। আমরা তখনই প্রমাদ গুনেছিলাম। কারণ, এর আগেও আওয়ামী লীগ সরকার তার দলীয় লোকদের ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছিল। সেসব ব্যাংকের মালিকেরা লাখ লাখ গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে পগার পার হয়ে গিয়েছিলেন। লাখ লাখ অসহায় গ্রাহক দীর্ঘ দিন রাজপথে আন্দোলন করেছেন। নিজেদের গচ্ছিত টাকার জন্য হাহাকার করেছেন। বিধান অনুযায়ী এর সমাধানের দায়দায়িত্ব ছিল সরকারের। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে সেই টাকা পাওয়ার জন্য দীর্ঘকাল ধরে অশ্রুভেজা চোখে তারা এ দুয়ার থেকে ও দুয়ারে দৌড়াদৌড়ি করেছেন, কোনো ফল হয়নি।
এবারো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাষায় ‘জন্ডিসে আক্রান্ত’ অর্থমন্ত্রী আগা-পাছ-তলা বিবেচনা না করেই যখন ঘোষণা দিলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় আরো কিছু ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হবে, তখন আবারো চমকে উঠতে হলো। এমনিতেই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো সরকারের লোকেরা ফোকলা করে দিয়েছে। এসব ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। শুধু সোনালী ব্যাংক থেকে এক হলমার্কই প্রায় চার হাজার কোটি টাকা যখন লোপাট করে দিলো, তখন হলমার্কের লুটেরাদের প্রতি পরম স্নেহে ‘জন্ডিসগ্রস্ত’ অর্থমন্ত্রী বলে বসলেন, চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয়। এরপর একে একে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যেতে থাকল। দেখা গেল, সরকার নিয়ন্ত্রিত সব ব্যাংকের অবস্থা একই। সোনালী ব্যাংকের কেলেঙ্কারির পর অন্য সব ব্যাংককে ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে এলো বেসিক ব্যাংক। দেখা গেল, এই ব্যাংক থেকেও লুট হয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর তার পেছনে ছিলেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী বিরাট কানেকশনের লোক শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। তার দুর্নীতি নিয়ে পত্রিকার পাতা ভরে ডজন ডজন সপ্রমাণ রিপোর্ট ছাপা হলো, কিন্তু তিনি থাকলেন বহাল তবিয়তে। এখনো নির্বিঘ্ন আছেন। সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোর এই লুটের টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার নিজে। এ জন্য প্রতি বছর বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এ বছরও বরাদ্দ আছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। যদিও এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা চেয়েছে লোকসানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংকও লাইনে আছে।
এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে ‘রাজনৈতিক বিবেচনা’য় সরকার দলের লোকদের নতুন করে অর্ধডজনেরও বেশি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছে। তার একটি ফার্মার্স ব্যাংক। এর মালিক আমাদের আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিতে এক আলোচিত ব্যক্তিত্ব ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় তিনি পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেছেন। তারপর বাংলাদেশ সরকারে তার আত্তীকরণ হয়। ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চ তৈরি করে সরকারি আমলাদের দলীয় কর্মসূচিতে নামিয়ে এনে তিনি আওয়ামী আলোতে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার জনক তিনি। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মতো আমলাদের মদদে রাজাকার বাহিনী তৈরি হয়েছিল। আজ যদি রাজাকারের বিচার হয়, তবে তাদের যারা রাজাকার বানিয়েছিল, সেই মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মতো আমলাদেরও বিচার হওয়া উচিত। এবার আওয়ামী লীগের প্রথম দফায় তিনি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের মদদ ও সহযোগিতায় ২০০৭ সালের এক-এগারোর যে সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তারা মখা আলমগীরের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চালায়। তা নিয়ে তিনি একটি বেশ মোটাসোটা বই লিখেছেন। কিন্তু পরে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মরহুম আবদুল জলিল জানিয়েছিলেন, ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা ছিল আওয়ামী লীগ ও জেনারেল মইনের মধ্যকার একটি ‘আঁতাতের নির্বাচন’। কিন্তু তা সত্ত্বেও মখা আলমগীর ওই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ও তাকে নির্যাতনকারী জেনারেল মইন গংয়ের বিচার দাবি করতে থাকেন। তবে একসময় তিনি পরিস্থিতি উপলব্ধি করে চুপ মেরে যান। আর তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ইতর মামলা দায়ের করতে থাকেন। তার মধ্যে আছে তার স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাইয়ের মামলাও। একজন সাক্ষর মানুষ এত নিচে নামতে পারেন, তা মখা আলমগীরের এসব কর্মকাণ্ড না দেখলে বোঝা যেত না।
এই মখা আলমগীর কিছু দিনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ২০১২ সাল থেকে। এ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি পুলিশের সব অমানবিক নির্যাতনের পক্ষে নির্লজ্জ ওকালতি শুরু করেন। এমন কথাও বলেন যে, আক্রান্ত হলে পুলিশ কি বসে বসে আঙুল চুষবে? কী ভাষা! এ রকম অভিযোগই তার বিরুদ্ধে এনেছিল ১/১১-এর সরকার। তবে কি তারা মখার ওপর নির্যাতন করে ঠিক কাজই করেছিল? তাদেরও তো তাহলে আঙুল চোষার কথা নয়। মখা কাহিনীর এখানেই শেষ নয়। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে নির্মাণত্রুটির কারণে ধসে পড়েছিল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেতার মালিকানাধীন আটতলা গার্মেন্ট ভবন ‘রানা প্লাজা’। সে দিন হরতাল ডেকেছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট। রানা প্লাজায় ফাটল দেখা গিয়েছিল আগেই। ফলে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এখানে একটি ব্যাংক শাখা ভাড়ায় ছিল। পরিত্যক্ত ঘোষণার পর সে শাখা সরিয়ে নেয়া হয়। সেখানে আটতলাজুড়েই ছিল গার্মেন্ট। ভবনে ফাটল ধরায় গার্মেন্টশ্রমিকেরাও কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৩ এপ্রিল সব গার্মেন্টশ্রমিককে ফোন করে জানিয়ে দেয়া হয়, কাল কাজ হবে। অনেকে কাজে আসতে রাজি হচ্ছিলেন না। তখন তাদের হুমকি দেয়া হয়, কাজে না এলে চাকরি যাবে। আসল লক্ষ্য ছিল, এই গার্মেন্টশ্রমিকদের নিয়ে হরতালবিরোধী মিছিল বের করা। আর বিরোধী দলের ডাকা হরতাল যে হচ্ছে না, তা দেখানো। বাইরে হরতালের পক্ষে ও বিরুদ্ধে মিছিল হচ্ছিল। এর মধ্যে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল আটতলা রানা প্লাজা। তাতে ১২ শ’রও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। কিন্তু এই ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হিসেবে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর চোখ কপালে তোলার মতো একটি কারণ উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, হরতালের সময় বিএনপির লোকেরা বিল্ডিংয়ের পিলার ধরে ঝাঁকুনি দেয়ায় ভবনটি ভেঙে পড়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ তো বটেই, সারা বিশ্বে তাক লেগে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তরুণেরা এ কথার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের পিলার ধরে ধাক্কাধাক্কি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। কই, ভবন তো পড়ে না, নড়ে না। তার পর থেকে জনাব মখা আলমগীর ‘ঝাঁকুনি তাত্ত্বিক’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
‘রাজনৈতিক বিবেচনা’য় এই ঝাঁকুনি তাত্ত্বিককে ফার্মার্স ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে, যেখানে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত করা হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে সঞ্চয়কারীদের টাকা লুটের জন্য নতুন নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। ভারতে সম্প্রতি ৩৪টি ব্যাংককে একীভূত করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৫টি ব্যাংককে সরকারি ব্যাংকের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। মালয়েশিয়া তাদের ১৬টি ব্যাংককে এখন ছয়টিতে নামিয়ে এনেছে, কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন ৫৬টিতে দাঁড়িয়েছে।
এগুলোর মধ্যে মখা আলমগীরের ফার্মার্স ব্যাংক বয়সে একেবারে শিশু। কিন্তু এর মধ্যেই এই ব্যাংকে আইন লঙ্ঘনের হিড়িক পড়ে গেছে। সম্প্রতি ঋণসংক্রান্ত তথ্য গোপন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এই ফার্মার্স ব্যাংককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। কিন্তু এই জরিমানার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে জরিমানার আদেশ চার মাস স্থগিত করিয়ে নেয়া হয়েছে। এই প্রথম কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক তার নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংকের জরিমানার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করল। আবার এই ব্যাংকের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকায় গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফার্মার্স ব্যাংকে একজন পরিদর্শক নিয়োগ করেছে। এই ব্যাংক চারটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিকে তথ্য গোপন করে ৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক নানা অনিয়মে জড়িত থাকার কারণে ফার্মার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতীকে অপসারণের আদেশ দিয়েছিল। সে আদেশও আদালতের মাধ্যমে স্থগিত করা হয়েছে।
ফার্মার্স ব্যাংকের এই অনিয়মের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশ্ন তোলায় খুব গোস্বা হয়েছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে পাল্টা আঘাত হানার ব্যবস্থা নিয়েছেন। জনাব আলমগীর পাবলিক অ্যাকাউন্টস বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। এই স্থায়ী কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজকর্মের ওপর একটি বিশেষ রিপোর্ট তৈরি করে তা কমিটির কাছে পাঠাতে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে। ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহারের এটি একটি নিকৃষ্ট নজির। এটি জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৮৮(২) ধারারও চূড়ান্ত লঙ্ঘন। কারণ তাতে বলা আছে, তেমন কেউ এই কমিটির সদস্য হবেন না, যার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বার্থ রয়েছে। সংসদবিষয়ক বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নিজামউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আলমগীরের উদ্যোগ অনৈতিক ও আপত্তিকর। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে রিপোর্ট চাইতে পারে, কিন্তু যেহেতু বিষয়টি আলমগীরের ব্যাংক নিয়ে; সে কারণেই এটি অনৈতিক। এ সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান বলেছেন, এটা ‘প্রতিশোধমূলক’। সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) হাফিজউদ্দিন বলেন, এই প্রতিষ্ঠান সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন সংস্থা। কেউ তাকে নির্দেশ দিতে পারে না, অনুরোধ করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তথ্য গোপন করে ফার্মার্স ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে সেপ্টেম্বর-নভেম্বর ২০১৫ তিন মাসে ৪০০ কোটি টাকা ভুয়া ঋণ দেয়া হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মখা আলমগীরকে চিঠি দেয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ জানুয়ারি ওই ব্যাংকে একজন পরিদর্শক নিয়োগ করে। এ দিকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তিনি কোনো ব্যাংকের চেয়ারম্যান হতে বা থাকতে পারেন না। এটি অসাংবিধানিক ও অবৈধ। শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকের অনুমোদন দিতে চায়নি, কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায়ের চাপে ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল এই ব্যাংকসহ ৯টি ব্যাংকের অনুমতি দিতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১২ সালের অক্টোবরে যখন আলমগীর এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে আবেদন করেন, তখন তিনি মন্ত্রী ছিলেন। ফলে তা আপনাআপনিই বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। এর আগে আওয়ামী লীগের আবদুল জলিল ও বিএনপির মির্জা আব্বাস মন্ত্রী হওয়ায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু আলমগীর মন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান থেকে যান।
এখন তাহলে কী দাঁড়াবে? ক্ষমতার অপব্যবহারকারী মহীউদ্দীন খান আলমগীরেরই জয় হবে, নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি পদক্ষেপ জয়ী হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com
এবারো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাষায় ‘জন্ডিসে আক্রান্ত’ অর্থমন্ত্রী আগা-পাছ-তলা বিবেচনা না করেই যখন ঘোষণা দিলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় আরো কিছু ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হবে, তখন আবারো চমকে উঠতে হলো। এমনিতেই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো সরকারের লোকেরা ফোকলা করে দিয়েছে। এসব ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। শুধু সোনালী ব্যাংক থেকে এক হলমার্কই প্রায় চার হাজার কোটি টাকা যখন লোপাট করে দিলো, তখন হলমার্কের লুটেরাদের প্রতি পরম স্নেহে ‘জন্ডিসগ্রস্ত’ অর্থমন্ত্রী বলে বসলেন, চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয়। এরপর একে একে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যেতে থাকল। দেখা গেল, সরকার নিয়ন্ত্রিত সব ব্যাংকের অবস্থা একই। সোনালী ব্যাংকের কেলেঙ্কারির পর অন্য সব ব্যাংককে ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে এলো বেসিক ব্যাংক। দেখা গেল, এই ব্যাংক থেকেও লুট হয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর তার পেছনে ছিলেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী বিরাট কানেকশনের লোক শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। তার দুর্নীতি নিয়ে পত্রিকার পাতা ভরে ডজন ডজন সপ্রমাণ রিপোর্ট ছাপা হলো, কিন্তু তিনি থাকলেন বহাল তবিয়তে। এখনো নির্বিঘ্ন আছেন। সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোর এই লুটের টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার নিজে। এ জন্য প্রতি বছর বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এ বছরও বরাদ্দ আছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। যদিও এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা চেয়েছে লোকসানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংকও লাইনে আছে।
এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে ‘রাজনৈতিক বিবেচনা’য় সরকার দলের লোকদের নতুন করে অর্ধডজনেরও বেশি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছে। তার একটি ফার্মার্স ব্যাংক। এর মালিক আমাদের আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিতে এক আলোচিত ব্যক্তিত্ব ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় তিনি পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেছেন। তারপর বাংলাদেশ সরকারে তার আত্তীকরণ হয়। ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চ তৈরি করে সরকারি আমলাদের দলীয় কর্মসূচিতে নামিয়ে এনে তিনি আওয়ামী আলোতে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার জনক তিনি। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মতো আমলাদের মদদে রাজাকার বাহিনী তৈরি হয়েছিল। আজ যদি রাজাকারের বিচার হয়, তবে তাদের যারা রাজাকার বানিয়েছিল, সেই মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মতো আমলাদেরও বিচার হওয়া উচিত। এবার আওয়ামী লীগের প্রথম দফায় তিনি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের মদদ ও সহযোগিতায় ২০০৭ সালের এক-এগারোর যে সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তারা মখা আলমগীরের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চালায়। তা নিয়ে তিনি একটি বেশ মোটাসোটা বই লিখেছেন। কিন্তু পরে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মরহুম আবদুল জলিল জানিয়েছিলেন, ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা ছিল আওয়ামী লীগ ও জেনারেল মইনের মধ্যকার একটি ‘আঁতাতের নির্বাচন’। কিন্তু তা সত্ত্বেও মখা আলমগীর ওই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ও তাকে নির্যাতনকারী জেনারেল মইন গংয়ের বিচার দাবি করতে থাকেন। তবে একসময় তিনি পরিস্থিতি উপলব্ধি করে চুপ মেরে যান। আর তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ইতর মামলা দায়ের করতে থাকেন। তার মধ্যে আছে তার স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাইয়ের মামলাও। একজন সাক্ষর মানুষ এত নিচে নামতে পারেন, তা মখা আলমগীরের এসব কর্মকাণ্ড না দেখলে বোঝা যেত না।
এই মখা আলমগীর কিছু দিনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ২০১২ সাল থেকে। এ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি পুলিশের সব অমানবিক নির্যাতনের পক্ষে নির্লজ্জ ওকালতি শুরু করেন। এমন কথাও বলেন যে, আক্রান্ত হলে পুলিশ কি বসে বসে আঙুল চুষবে? কী ভাষা! এ রকম অভিযোগই তার বিরুদ্ধে এনেছিল ১/১১-এর সরকার। তবে কি তারা মখার ওপর নির্যাতন করে ঠিক কাজই করেছিল? তাদেরও তো তাহলে আঙুল চোষার কথা নয়। মখা কাহিনীর এখানেই শেষ নয়। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে নির্মাণত্রুটির কারণে ধসে পড়েছিল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেতার মালিকানাধীন আটতলা গার্মেন্ট ভবন ‘রানা প্লাজা’। সে দিন হরতাল ডেকেছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট। রানা প্লাজায় ফাটল দেখা গিয়েছিল আগেই। ফলে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এখানে একটি ব্যাংক শাখা ভাড়ায় ছিল। পরিত্যক্ত ঘোষণার পর সে শাখা সরিয়ে নেয়া হয়। সেখানে আটতলাজুড়েই ছিল গার্মেন্ট। ভবনে ফাটল ধরায় গার্মেন্টশ্রমিকেরাও কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৩ এপ্রিল সব গার্মেন্টশ্রমিককে ফোন করে জানিয়ে দেয়া হয়, কাল কাজ হবে। অনেকে কাজে আসতে রাজি হচ্ছিলেন না। তখন তাদের হুমকি দেয়া হয়, কাজে না এলে চাকরি যাবে। আসল লক্ষ্য ছিল, এই গার্মেন্টশ্রমিকদের নিয়ে হরতালবিরোধী মিছিল বের করা। আর বিরোধী দলের ডাকা হরতাল যে হচ্ছে না, তা দেখানো। বাইরে হরতালের পক্ষে ও বিরুদ্ধে মিছিল হচ্ছিল। এর মধ্যে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল আটতলা রানা প্লাজা। তাতে ১২ শ’রও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। কিন্তু এই ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হিসেবে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর চোখ কপালে তোলার মতো একটি কারণ উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, হরতালের সময় বিএনপির লোকেরা বিল্ডিংয়ের পিলার ধরে ঝাঁকুনি দেয়ায় ভবনটি ভেঙে পড়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ তো বটেই, সারা বিশ্বে তাক লেগে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তরুণেরা এ কথার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের পিলার ধরে ধাক্কাধাক্কি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। কই, ভবন তো পড়ে না, নড়ে না। তার পর থেকে জনাব মখা আলমগীর ‘ঝাঁকুনি তাত্ত্বিক’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
‘রাজনৈতিক বিবেচনা’য় এই ঝাঁকুনি তাত্ত্বিককে ফার্মার্স ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে, যেখানে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত করা হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে সঞ্চয়কারীদের টাকা লুটের জন্য নতুন নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। ভারতে সম্প্রতি ৩৪টি ব্যাংককে একীভূত করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৫টি ব্যাংককে সরকারি ব্যাংকের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। মালয়েশিয়া তাদের ১৬টি ব্যাংককে এখন ছয়টিতে নামিয়ে এনেছে, কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন ৫৬টিতে দাঁড়িয়েছে।
এগুলোর মধ্যে মখা আলমগীরের ফার্মার্স ব্যাংক বয়সে একেবারে শিশু। কিন্তু এর মধ্যেই এই ব্যাংকে আইন লঙ্ঘনের হিড়িক পড়ে গেছে। সম্প্রতি ঋণসংক্রান্ত তথ্য গোপন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এই ফার্মার্স ব্যাংককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। কিন্তু এই জরিমানার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে জরিমানার আদেশ চার মাস স্থগিত করিয়ে নেয়া হয়েছে। এই প্রথম কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক তার নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংকের জরিমানার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করল। আবার এই ব্যাংকের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকায় গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফার্মার্স ব্যাংকে একজন পরিদর্শক নিয়োগ করেছে। এই ব্যাংক চারটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিকে তথ্য গোপন করে ৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক নানা অনিয়মে জড়িত থাকার কারণে ফার্মার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতীকে অপসারণের আদেশ দিয়েছিল। সে আদেশও আদালতের মাধ্যমে স্থগিত করা হয়েছে।
ফার্মার্স ব্যাংকের এই অনিয়মের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশ্ন তোলায় খুব গোস্বা হয়েছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে পাল্টা আঘাত হানার ব্যবস্থা নিয়েছেন। জনাব আলমগীর পাবলিক অ্যাকাউন্টস বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। এই স্থায়ী কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজকর্মের ওপর একটি বিশেষ রিপোর্ট তৈরি করে তা কমিটির কাছে পাঠাতে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে। ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহারের এটি একটি নিকৃষ্ট নজির। এটি জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৮৮(২) ধারারও চূড়ান্ত লঙ্ঘন। কারণ তাতে বলা আছে, তেমন কেউ এই কমিটির সদস্য হবেন না, যার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বার্থ রয়েছে। সংসদবিষয়ক বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নিজামউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আলমগীরের উদ্যোগ অনৈতিক ও আপত্তিকর। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে রিপোর্ট চাইতে পারে, কিন্তু যেহেতু বিষয়টি আলমগীরের ব্যাংক নিয়ে; সে কারণেই এটি অনৈতিক। এ সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান বলেছেন, এটা ‘প্রতিশোধমূলক’। সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) হাফিজউদ্দিন বলেন, এই প্রতিষ্ঠান সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন সংস্থা। কেউ তাকে নির্দেশ দিতে পারে না, অনুরোধ করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তথ্য গোপন করে ফার্মার্স ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে সেপ্টেম্বর-নভেম্বর ২০১৫ তিন মাসে ৪০০ কোটি টাকা ভুয়া ঋণ দেয়া হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মখা আলমগীরকে চিঠি দেয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ জানুয়ারি ওই ব্যাংকে একজন পরিদর্শক নিয়োগ করে। এ দিকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তিনি কোনো ব্যাংকের চেয়ারম্যান হতে বা থাকতে পারেন না। এটি অসাংবিধানিক ও অবৈধ। শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকের অনুমোদন দিতে চায়নি, কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায়ের চাপে ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল এই ব্যাংকসহ ৯টি ব্যাংকের অনুমতি দিতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১২ সালের অক্টোবরে যখন আলমগীর এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে আবেদন করেন, তখন তিনি মন্ত্রী ছিলেন। ফলে তা আপনাআপনিই বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। এর আগে আওয়ামী লীগের আবদুল জলিল ও বিএনপির মির্জা আব্বাস মন্ত্রী হওয়ায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু আলমগীর মন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান থেকে যান।
এখন তাহলে কী দাঁড়াবে? ক্ষমতার অপব্যবহারকারী মহীউদ্দীন খান আলমগীরেরই জয় হবে, নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি পদক্ষেপ জয়ী হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com
No comments