প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা নাকি রাজনীতি by হারুন ইবনে শাহাদাত
গত
২৪ জানুয়ারি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ইন্তেকাল করেছেন। এই ঘটনা শোনার
পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসে গিয়েছিলেন শোক
ও সমবেদনা জানাতে। ভেতর থেকে গেট বন্ধ থাকায় তিনি ফিরে এসেছেন। কোকো
ইন্তেকাল করেছেন মালেশিয়ায়। তিনি ১/১১ এর সরকারের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে
সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আওয়ামী সরকারের নানা মামলার কারণে তিনি আর দেশে
ফিরতে পারেননি। এখন দেশের যে অবস্থা তাতে প্রতিদিন শোকের সাগরে ভাসছে
অসংখ্য মা। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের নির্যাতনে এবং দুর্বৃত্তদের
ছোঁড়া পেট্রোল বোমার আগুনে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে অসংখ্য ‘কোকো’। প্রতিটি
দিন-রাতই এখন শোকের। আগুনে ঝলসে যাওয়া মানুষের মুখগুলো চোখের সামনে থেকে
সরে না। রাতের শান্তির ঘুমও উধাও। পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর ক্রসফয়ার
নাটকে নিহত ইমরুল, মতিউর, জনির মতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিহত
বিপ্লবী তরুণদের অতৃপ্ত-আত্মার শ্লোগানে ঘুম ভেঙে যায়। সারাটা দিন তাদের
স্বজনদের আর্তনাদের আহাজারি কানে বাজে। কষ্ট আরো বেড়ে যায়, যখন ভাবি কথিত
বন্দুকযুদ্ধ কিংবা ক্রসফায়ার যে নামেই ডাকা হোক না কেন, গুলিটা বের হয়েছে
পুলিশের বন্দুক থেকেই। ওই গুলি বন্দুক আর যে হাতে নিয়ে বন্দুকের টিগার
চাপা হয়েছে সব কিছুর উৎস এদেশের খেটে যাওয়া গায়ের রক্ত পানি করা অর্থ।
নিহতরা এদেশেরই সন্তান। তারা চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারী নন। রাজনৈতিক কর্মী। আর
ইমরুল কায়েসদের মতো অনেকেই ছিলেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধি। তাহলে কেন তাদের মরতে হচ্ছে জনগণের ট্যাক্সের টাকা কেনা
গুলিতে? কি তাদের অপরাধ? পুলিশের খাতায় তারা ‘বিরাট অপরাধী’ গত ৫ জানুয়ারির
ভোটারবিহীন নির্বাচন প্রতিহত করতে তিনি গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। মৃত্যুর
আগ-মুর্হূত পর্যন্ত জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য ছিলেন আন্দোলনের মাঠে। এমন
অপরাধেই চে গুয়েভারা ও লেনসন ম্যান্ডেলা স্বৈরাচারী শাসকদের তালিকায়
হয়েছিলেন ‘মোস্টওয়ানটেড দাগী সন্ত্রাসী’ আসামি। কালের পাতা পাল্টে যাওয়ার
পর ইতিহাসে তাদের নাম লেখা আছে নিপীড়িত গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতাদের
তালিকায়। তাই ইমরুল মতিউর ,জনিদের যে নামেই ডাকা হোক না কেন আসলে তারা
সংগ্রামী মানুষের প্রেরণার উৎস। গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সাথে দেখা না হওয়ায় খালেদা জিয়াকে শত শত আত্মা ধন্যবাদ জানিয়েছে। খালেদা
জিয়ার আহবানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতরা সেইদিন জেনেছেন তিনি শুধু আরাফাত
রহমান কোকোর মা নন, সত্যিকারেই দেশনেত্রী। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবর
শোনে সমবেদনা জানাতে ছুটে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলমান সংকট
সমাধানে আজ এই সমবেদনা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য বেশি প্রয়োজন।
প্রতিদিন আগুনে পুড়ছে মানুষ, পুলিশ আর সরকার দলীয় ক্যাডারদের গুলিতে নিহত
হচ্ছে তরুণ-তাজা প্রাণ। তারাও কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। আতঙ্কিত দেশবাসী
বন্দী জীবনযাপন করছে। ধ্বংস হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এই সমবেদনার ‘রাজনীতির’
চেয়ে এই বাস্তব সমস্যার সমাধান দেশের জন্য বেশি জরুরি। একথা অস্বীকার করার
কোনো উপায় নেই। আর একটি ছোট্ট প্রশ্ন। আরাফাত রহমান কোকোর এই অকালে চলে
যাওয়া কি স্বাভাবিক মৃত্যু? দেশবাসী দেখেছেন, ১/১১ এর সেনাসমর্থিত সরকারের
সাজানো মামলায় যেদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়,। সেদিন তিনি ছিলেন সুস্থ-সবল
তরুণ। কয়েকদিন পর তাকে আদালতে তোলা হলো হুইল চেয়ারে করে। অসুস্থ হওয়ায়
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়। আজকের
প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রী -এমপির নামেই সেনাসমর্থিত সরকার একাধিক মামলা
করেছিল। কিন্তু সেই সব মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার হলেও কোকো,
তারেক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহার হয়নি। বরং
তাদেরকে নির্মূল করার নীলনকশার অংশ হিসেবে আরো মামলা করা হয়েছে। মামলা
মাথায় নিয়েই চলে গেলেন আরাফাত রহমান কোকো। খালেদা জিয়াকে শুনতে হলো, ‘
চোরের মা’,‘ কুপুত্রের মা’র মতো গালি। গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম প্রধান
শর্ত বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। কারণ এখানে কেউ রাজা নয় আবার সবাই
প্রজা। ধরে নেয়া হয়, যাদের মধ্যে মানুষের প্রতি ভারোবাসা এবং দেশপ্রেম
প্রবল তারাই রাজনীতি করেন। প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মীই সম্মানিত ব্যক্তি, তারা
চোর গুন্ডা, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ( ব্যতিক্রমও যে আছে তা স্বীকার করছি)
নন। সরকার যখন ক্ষমতার জোরে নাগরিকদের অধিকার হরণ করতে যায়, বিরোধীদলের
নেতা-কর্মীরা তার প্রতিবাদ জানায়। সরকার যদি মনে করে, তারা নাগরিক অধিকার
হরণ করতে নয়, সুশাসন ও উন্নয়নের লক্ষ্যেই কাজ করছে, কিন্তু বিরোধীদল ভুল
বুঝছে- তখনই সংলাপের প্রশ্ন আসে। দমনপীড়িন এবং রাজনৈতিক দলের
নেতা-কর্মীদের সাথে চোর-গুন্ডাদের মতো আচরণ স্বৈরাচারী মানসিকতার
বহিঃপ্রকাশ। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শুধু আরাফাত রহমান কোকোর জন্য
সমবেদনা নয়, দেশবাসী চায় দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সমবেদনা। দেশ ও
মানুষ বাঁচাতে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সংলাপের বিকল্প নেই । জনগণ চায়
রাজনৈতিক মামলায় বিরোধীদলের বন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তি। গণতন্ত্র
প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিহত প্রতিটি পরিবারের মাথায় দুই নেত্রীর সমবেদনার
হাত। এদেশের সাধারণ মানুষ ক্ষমতা চায় না। তারা চায় শান্তি। নিরাপত্তা। আর
এর দায়িত্ব নিতে হবে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের।
হারুন ইবনে শাহাদাত: সাংবাদিক
harunibnshahadat@gmail.com
বাংলাদেশের রাজনীতি নয়ে কিছুই বলা যাবে না। এটা আকাশের কাল মেঘের মত। এখন প্রস্থিতিগুলো খুবই ঘোলাটে অবস্থায় আছে। এটিনিউজ
ReplyDelete