প্রয়োজন সম্মিলিত সিদ্ধান্ত by নজরুল ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী বছর থেকে ভর্তি পরীক্ষার নতুন
পদ্ধতি চালুর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার পক্ষে–বিপক্ষে বিতর্ক দেখা
দিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে কর্তৃপক্ষ আসন খালি থাকার দোহাই
দিচ্ছে। আর শিক্ষার্থীদের একাংশ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ
করছে। সবার জন্য গ্রহণযোগ্য ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি কী হতে পারে, সে সম্পর্কে
লিখেছেন শিক্ষাবিদ নজরুল ইসলাম
সম্প্রতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত
নিয়েছে, সেটা আমি সমর্থন করি। দ্বিতীয়বার যারা ভর্তি পরীক্ষা দেয়, তারা
প্রথমবার মনমতো বিভাগে ভর্তি হতে না পেরে ভালো বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য
পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ফলে দেখা যায়, প্রথমবার তারা ঠিকমতো ক্লাস
করে না, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়। তারা দ্বিতীয়বার
পরীক্ষা দিয়ে পছন্দের বিভাগে ভর্তি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের
অনেক আসন খালি হয়ে যায়, যেটা আর কোনোভাবে পূরণ করাও সম্ভব নয়। তবে কেউ
যদি অনিবার্য কারণে প্রথমবার পরীক্ষা দিতে না পারে, তাহলে সেটা বিবেচনা করা
যেতে পারে। তবে সেটার সত্যতা নিরূপণ করা খুব কঠিন। আর যারা প্রথমবার কোথাও
ভর্তি হতে পারেনি, তারা সাধারণত দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে
থাকে। এতে দেখা যায়, দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণকারীরা এক বছরের অধিক সময় ধরে
প্রস্তুতি নিতে পারে আর প্রথমবার অংশগ্রহণকারীরা প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ
পায় কয়েক মাস। এটা অসম প্রতিযোগিতা।
দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণের সুযোগ বহাল রেখে আরেকটি কাজ করা যেতে পারে: যারা দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের প্রাপ্ত নম্বর থেকে কিছু নম্বর কেটে নেওয়া যায়। তবে বাস্তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। উল্লেখ্য, এ ধরনের একটি ব্যবস্থা সম্ভবত মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। আমি যখন ইউজিসির চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন শিক্ষামন্ত্রী ও সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে একাধিকবার আমরা আলোচনা করেছিলাম। ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, সে ব্যাপারেও চিন্তার অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি। তবে এ কথাও ঠিক যে ভর্তি পরীক্ষা উঠিয়ে দিতে গেলে আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে হবে। পরীক্ষাপদ্ধতি আরও কার্যকর করতে হবে, সেটা করতে পারলে আমরা আবার সেই পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারব। অর্থাৎ ১০০০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা মেধানুসারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। কিন্তু আমাদের দেশে পরীক্ষার ফলাফল গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করা কঠিন।
দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণের সুযোগ বহাল রেখে আরেকটি কাজ করা যেতে পারে: যারা দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের প্রাপ্ত নম্বর থেকে কিছু নম্বর কেটে নেওয়া যায়। তবে বাস্তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। উল্লেখ্য, এ ধরনের একটি ব্যবস্থা সম্ভবত মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। আমি যখন ইউজিসির চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন শিক্ষামন্ত্রী ও সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে একাধিকবার আমরা আলোচনা করেছিলাম। ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, সে ব্যাপারেও চিন্তার অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি। তবে এ কথাও ঠিক যে ভর্তি পরীক্ষা উঠিয়ে দিতে গেলে আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে হবে। পরীক্ষাপদ্ধতি আরও কার্যকর করতে হবে, সেটা করতে পারলে আমরা আবার সেই পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারব। অর্থাৎ ১০০০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা মেধানুসারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। কিন্তু আমাদের দেশে পরীক্ষার ফলাফল গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করা কঠিন।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঠিকই বলেছেন, বাংলাদেশের সব পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদা আইনে পরিচালিত হয়। তারা কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা
নেবে নাকি আদৌ ভর্তি পরীক্ষা নেবে কি না, সে সিদ্ধান্ত তাদের। এ ক্ষেত্রে
মন্ত্রণালয়েরও কিছু বলার নেই, এটা একটা সমস্যাই বটে। কিন্তু জাতীয়
স্বার্থে আমাদের দেশের সব উপাচার্য একত্রে বসে ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে
একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যেমন, এ ক্ষেত্রে আমি শ্রীলঙ্কার
নজির দেখাতে চাই। সে দেশে ইউজিসি কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির
প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক (তাদের ক্ষেত্রে এ লেভেল)
পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমেই ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেখানে মেধার
ভিত্তিতে প্রথম ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রীলঙ্কার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তির ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে। আর বাকি ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী কোথায় ভর্তি
হবে, তা ঠিক করে দেয় ইউজিসি। এটা একধরনের আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা, যদি এটাকে
আমরা কোটা না বলি। যেমন, এই ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের এলাকায় অবস্থিত
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, যা ঠিক করে দেয় ইউজিসি। আমাদের দেশেও
(আন্তর্জাতিক পদ্ধতির) একটি অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সম্ভাবনা খতিয়ে
দেখা প্রয়োজন। যেমন, স্যাট পরীক্ষার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়। আর সে পরীক্ষা বিশ্বের যেকোনো
জায়গা থেকেই দেওয়া যাচ্ছে। এখন আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য ছোটাছুটি করে নানাভাবে হয়রানির শিকার
হচ্ছে। তাদের অভিভাবকদেরও নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে, এর আর্থিক দিক তো
আছেই। এই অভিন্ন পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া যেতে পারে। অথবা দেশের প্রতিটি
উপজেলা কেন্দ্রে এই পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ইদানীং এমন
একটা ব্যবস্থার বিষয়ে অনেকেই কথা বলছেন।
কথা হচ্ছে, সরকারের উচিত সব অংশীজনদের নিয়ে বসে একটি বাস্তব ও গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা, যাতে সবাই উপকৃত হয় এবং একই সঙ্গে শিক্ষার মানও নিশ্চিত হয়। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করা যাচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে একটি কাজের কাজ হয়েছে। মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সে জন্য ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিয়ে সম্মিলিত চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন জরুরি বলে আমি মনে করি।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম: সাবেক চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
কথা হচ্ছে, সরকারের উচিত সব অংশীজনদের নিয়ে বসে একটি বাস্তব ও গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা, যাতে সবাই উপকৃত হয় এবং একই সঙ্গে শিক্ষার মানও নিশ্চিত হয়। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করা যাচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে একটি কাজের কাজ হয়েছে। মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সে জন্য ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিয়ে সম্মিলিত চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন জরুরি বলে আমি মনে করি।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম: সাবেক চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
No comments