বিশ্বে পণ্যবাজার ক্রমেই তেতে উঠছে
সারা বিশ্বে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বেড়ে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতির চাপ। আর দেশে দেশে খাদ্যমূল্য নিয়ে দাঙ্গা বাধার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মিসরের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে গতকাল জ্বালানি তেলের দর ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার অতিক্রম করেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের খুব অল্পই মিসর জোগান দেয়।
কিন্তু লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরকে সংযুক্তকারী সুয়েজ খাল ও ২০০ মাইল দীর্ঘ সুমেদ পাইপলাইন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে তেল সরবরাহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি পথ। প্রতিদিন এ দুই পথে ২১ লাখ ব্যারেল পরিবাহিত হয়। যদি এ পথ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তেলবাহী ট্যাংকারগুলোকে আফ্রিকার দক্ষিণ ঘুরে ছয় হাজার মাইল পথ বাড়তি পারি দিয়ে ইউরোপে যেতে হবে।
তবে জ্বালানি তেলের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়ে চলা। গতকাল ভারতের খাদ্যের মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের শেষে এসে দেশটির খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার ১৭ শতাংশ অতিক্রম করে গেছে। অথচ দ্বিতীয় সপ্তাহেই এই হার ছিল সাড়ে ১৫ শতাংশ।
সবজি, ফল ও দুধের দাম বেড়ে চলার প্রভাবে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আরও উর্ধ্বমুখী হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর বার্ষিক ভিত্তিতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এসে ভারতে পেঁয়াজের দাম ১৩০ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে।
শুধু ভারতই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই খাদ্যের দাম বাড়ছে অনেক দ্রুত গতিতে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে দাম বাড়ছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
তবে যে কারণেই দাম বাড়ুক না কেন, তা সহসা কমে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না কেউ। বরং ভবিষ্যতে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার এবং দেশে দেশে খাদ্য নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কাটি জোরদার হচ্ছে।
ইতিমধ্যে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক ও আলজেরিয়ায় এ রকম দাঙ্গা বেধেছে। অচিরেই তা আফ্রিকার অন্য দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চিনির দাম বিশ্ববাজারে ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। গম, ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম এখন ৩০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাবে আর্জেন্টিনায় ভুট্টার ফলন কমে যেতে পারে। আর দেশটি বিশ্বে ভুট্টার দ্বিতীয় বৃহত্তম আর সয়াবিনের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক।
প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও মধ্য আমেরিকায় কফির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টিজনিত কারণে ব্রাজিলের সয়াবিনে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার ব্রাজিল বিশ্বের মোট চিনি রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দেয়। বৈরী আবহাওয়া দেশটি থেকে চিনি আমদানিকারকদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বন্যা। এতে দেশটির ইক্ষু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিউইয়র্কে গত বুধবার অশোধিত চিনির দাম প্রতি পাউন্ড ৩০ সেন্টের ওপরে উঠে গেছে, যা ১৯৮০ সালের পর সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ ও তুষারপাতের প্রভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গম রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে দেবে যা অনিবার্যভাবেই বিশ্বে গমের জোগান কমিয়ে দিয়ে দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। প্যারিসে প্রতি টন গমের দাম উঠেছে ২৬৯ দশমিক ৭৫ ইউরোতে যা কি না ২০০৮ সালের মার্চের পর সর্বোচ্চ। প্যারিসের দরকে ইউরোপের জন্য নির্দেশক দর ধরা হয়। কারবারিরা আশঙ্কা করছেন, খুব শিগগির গমের দর টনপ্রতি ৩০০ ইউরো ছাড়িয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে গমের বাজারের অবস্থা ২০০৭-০৮ সময়কালের খাদ্য সংকটের চেয়েও খারাপ হয়ে পড়বে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভুট্টা ও সয়াবিনের মজুদও সম্প্রতিকালের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এই খবর এই দুই পণ্যের বাজার দরকে আরও চড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম পণ্যের বাজার হিসেবে পরিচিত শিকাগো কমোডিটি এক্সচেঞ্জে প্রতি বুশেল ভুট্টা ছয় ডলার ৭৪ সেন্ট ছাড়িয়ে গেছে যা ২০০৮ সালের জুলাইর পর সর্বোচ্চ। আর সয়াবিনের দর বুশেল প্রতি ১৪ ডলার ৫২ সেন্টে গিয়ে ঠেকেছে।
প্রতিকূল আবহাওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে দাম বাড়লেও পণ্য বাজারে ফাটকা কারবার এই দামকে আরও উসকে দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে যেখানে বিশ্বে পণ্যের কারবারে তিন শতাংশ ছিল হেজ ফান্ড, সেখানে ২০১০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশে।
শেয়ারবাজারের মতো পণ্য বাজারেও ফাটকা কারবারিরা উঁচু মুনাফার প্রত্যাশায় প্রচুর টাকা ঢালতে শুরু করেছে। এর ফলে বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম।
সূত্র: ফাইনান্সিয়াল টাইমস ও ইকোনমিক টাইমস
মিসরের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে গতকাল জ্বালানি তেলের দর ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার অতিক্রম করেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের খুব অল্পই মিসর জোগান দেয়।
কিন্তু লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরকে সংযুক্তকারী সুয়েজ খাল ও ২০০ মাইল দীর্ঘ সুমেদ পাইপলাইন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে তেল সরবরাহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি পথ। প্রতিদিন এ দুই পথে ২১ লাখ ব্যারেল পরিবাহিত হয়। যদি এ পথ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তেলবাহী ট্যাংকারগুলোকে আফ্রিকার দক্ষিণ ঘুরে ছয় হাজার মাইল পথ বাড়তি পারি দিয়ে ইউরোপে যেতে হবে।
তবে জ্বালানি তেলের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়ে চলা। গতকাল ভারতের খাদ্যের মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের শেষে এসে দেশটির খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার ১৭ শতাংশ অতিক্রম করে গেছে। অথচ দ্বিতীয় সপ্তাহেই এই হার ছিল সাড়ে ১৫ শতাংশ।
সবজি, ফল ও দুধের দাম বেড়ে চলার প্রভাবে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আরও উর্ধ্বমুখী হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর বার্ষিক ভিত্তিতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এসে ভারতে পেঁয়াজের দাম ১৩০ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে।
শুধু ভারতই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই খাদ্যের দাম বাড়ছে অনেক দ্রুত গতিতে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে দাম বাড়ছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
তবে যে কারণেই দাম বাড়ুক না কেন, তা সহসা কমে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না কেউ। বরং ভবিষ্যতে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার এবং দেশে দেশে খাদ্য নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কাটি জোরদার হচ্ছে।
ইতিমধ্যে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক ও আলজেরিয়ায় এ রকম দাঙ্গা বেধেছে। অচিরেই তা আফ্রিকার অন্য দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চিনির দাম বিশ্ববাজারে ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। গম, ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম এখন ৩০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাবে আর্জেন্টিনায় ভুট্টার ফলন কমে যেতে পারে। আর দেশটি বিশ্বে ভুট্টার দ্বিতীয় বৃহত্তম আর সয়াবিনের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক।
প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও মধ্য আমেরিকায় কফির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টিজনিত কারণে ব্রাজিলের সয়াবিনে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার ব্রাজিল বিশ্বের মোট চিনি রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দেয়। বৈরী আবহাওয়া দেশটি থেকে চিনি আমদানিকারকদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বন্যা। এতে দেশটির ইক্ষু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিউইয়র্কে গত বুধবার অশোধিত চিনির দাম প্রতি পাউন্ড ৩০ সেন্টের ওপরে উঠে গেছে, যা ১৯৮০ সালের পর সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ ও তুষারপাতের প্রভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গম রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে দেবে যা অনিবার্যভাবেই বিশ্বে গমের জোগান কমিয়ে দিয়ে দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। প্যারিসে প্রতি টন গমের দাম উঠেছে ২৬৯ দশমিক ৭৫ ইউরোতে যা কি না ২০০৮ সালের মার্চের পর সর্বোচ্চ। প্যারিসের দরকে ইউরোপের জন্য নির্দেশক দর ধরা হয়। কারবারিরা আশঙ্কা করছেন, খুব শিগগির গমের দর টনপ্রতি ৩০০ ইউরো ছাড়িয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে গমের বাজারের অবস্থা ২০০৭-০৮ সময়কালের খাদ্য সংকটের চেয়েও খারাপ হয়ে পড়বে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভুট্টা ও সয়াবিনের মজুদও সম্প্রতিকালের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এই খবর এই দুই পণ্যের বাজার দরকে আরও চড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম পণ্যের বাজার হিসেবে পরিচিত শিকাগো কমোডিটি এক্সচেঞ্জে প্রতি বুশেল ভুট্টা ছয় ডলার ৭৪ সেন্ট ছাড়িয়ে গেছে যা ২০০৮ সালের জুলাইর পর সর্বোচ্চ। আর সয়াবিনের দর বুশেল প্রতি ১৪ ডলার ৫২ সেন্টে গিয়ে ঠেকেছে।
প্রতিকূল আবহাওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে দাম বাড়লেও পণ্য বাজারে ফাটকা কারবার এই দামকে আরও উসকে দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে যেখানে বিশ্বে পণ্যের কারবারে তিন শতাংশ ছিল হেজ ফান্ড, সেখানে ২০১০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশে।
শেয়ারবাজারের মতো পণ্য বাজারেও ফাটকা কারবারিরা উঁচু মুনাফার প্রত্যাশায় প্রচুর টাকা ঢালতে শুরু করেছে। এর ফলে বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম।
সূত্র: ফাইনান্সিয়াল টাইমস ও ইকোনমিক টাইমস
No comments