চীন-ভারত কূটনৈতিক টানাপোড়েনের নেপথ্যে
চীন ও ভারতের মধ্যে হু হু করে বাণিজ্য বাড়ছে। কিন্তু নানা কারণে দেশ দুটির মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী দেশ দুটির মধ্যে বিরাজমান সীমান্ত সমস্যা, কাশ্মীর ও আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা।
কাশ্মীর নিয়ে গত মাসে চীন ভারতের একজন শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তাকে তাদের দেশে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি চীনের সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ছিন্ন করে।
অতীতেও দেশ দুটির মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক খুব যে ভালো ছিল তা-ও নয়। ১৯৬২ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত সীমান্ত-যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধের পর দেশ দুটির মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময়ে দেশ দুটির শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক সফরও বেশ কমই হয়েছে। তবে নিম্নপর্যায়ে কিছু সফর হয়েছে।
চীন কয়েক দশক ধরেই কাশ্মীর বিষয়ে বেশ নমনীয় ভূমিকা পালন করে আসছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা ছিল একবারেই ভিন্ন। ভারতীয় সেনাবাহিনী গত ২০ বছর ধরে কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে এবং কাশ্মীর অশান্ত করার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে। তবে গত বছর চীন কাশ্মীর বিষয়ে একটু আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করার ইঙ্গিত দেয়। তারা কাশ্মীরের অধিবাসীদের ভিন্ন ভিসা দিতে শুরু করে। এ বিষয়টিকে ভারত মোটেও ভালোভাবে নেয়নি।
ভারত কাশ্মীরকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে দাবি করে। এ ভূখণ্ডের ব্যাপারে বিদেশি যেকোনো রাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপকে তারা নেতিবাচক হিসেবেই দেখে থাকে। কাশ্মীরকে পাকিস্তানও নিজেদের বলেই দাবি করে আসছে।
চীনের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের অন্যতম প্রধান কারণ দালাই লামা। তিব্বতের এই ধর্মগুরুকে ভারত আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে চীন দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। ১৯৫০ সালে দালাই লামা পালিয়ে ভারতে চলে আসেন। দালাই লামাকে চীন একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলেই মনে করে। বেইজিংয়ের অভিযোগ, দালাই লামা ভারতের হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত ধর্মশালায় আস্তানা গেড়ে চীনের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সচল রাখছে।
গত বছর ভারত দালাই লামাকে দেশটির সীমান্তবর্তী রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ সফরের অনুমতি দেওয়ায় চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এ ছাড়া এই বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ওই রাজ্য সফর করেন। মনমোহন সিংয়ের অরুণাচল সফরের পর বেইজিং তাঁর সমালোচনা করে। বেইজিংয়ের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর এ অঞ্চলে আরও উত্তেজনা বাড়িয়েছে। অরুণাচল নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং এ দ্বন্দ্ব নিরসনের ব্যাপারে দেশ দুটি ঐকমত্যের কাছাকাছি রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের একটা বড় অংশ চীন নিজের বলে দাবি করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ককেও চীন খুব ভালোভাবে নিচ্ছে না। তারা এ নিয়ে বেশ চিন্তিত। ২০০৮ সালে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বেসামরিক পরমাণু চুক্তি হয়েছে, সেটাকেই অনেক বিশ্লেষক দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন। এ চুক্তি একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছে; অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অবনতির কারণ হয়েছে। দিল্লি-ওয়াশিংটনের মধ্যকার এই পরমাণু সহযোগিতা চুক্তিকে বেইজিং এ অঞ্চলে তাদের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতকে দাঁড় করানো একটি কৌশল হিসেবে দেখছে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বেইজিংও ভারতের চির শত্রু পাকিস্তানকে একটি নতুন পরমাণু চুল্লি নির্মাণের প্রস্তাব দেয়।
ভারত ও চীনের মধ্যে বৈশ্বিক সম্পদ আহরণ নিয়েও তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিশেষ করে দেশ দুটি তাদের অগ্রসরমাণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য জ্বালানি সম্পদ আহরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
এ ছাড়া ইদানীং চীন দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ আধিপত্য বিস্তারের কৌশল হিসেবে তারা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। আর এ নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়েছে। চীন শুধু ভারতের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকেই অর্থনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে না; বরং বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের সঙ্গেও শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক মানের বন্দর নির্মাণে সহায়তা করছে চীন। এর মাধ্যমে চীন ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে একটি বন্দর যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগ্রহী।
এ দেশগুলো একসময় ভারতের প্রভাব বলয় হিসেবেই চিহ্নিত হতো। কিন্তু চীনের এ কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত আশঙ্কা করছে, বেইজিং এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব কমাতে কাজ করছে। তবে অনেক ভারতীয় কর্মকর্তা এ সন্দেহকে অতিরঞ্জিত বলে উল্লেখ করেছেন।
কাশ্মীর নিয়ে গত মাসে চীন ভারতের একজন শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তাকে তাদের দেশে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি চীনের সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ছিন্ন করে।
অতীতেও দেশ দুটির মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক খুব যে ভালো ছিল তা-ও নয়। ১৯৬২ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত সীমান্ত-যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধের পর দেশ দুটির মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময়ে দেশ দুটির শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক সফরও বেশ কমই হয়েছে। তবে নিম্নপর্যায়ে কিছু সফর হয়েছে।
চীন কয়েক দশক ধরেই কাশ্মীর বিষয়ে বেশ নমনীয় ভূমিকা পালন করে আসছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা ছিল একবারেই ভিন্ন। ভারতীয় সেনাবাহিনী গত ২০ বছর ধরে কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে এবং কাশ্মীর অশান্ত করার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে। তবে গত বছর চীন কাশ্মীর বিষয়ে একটু আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করার ইঙ্গিত দেয়। তারা কাশ্মীরের অধিবাসীদের ভিন্ন ভিসা দিতে শুরু করে। এ বিষয়টিকে ভারত মোটেও ভালোভাবে নেয়নি।
ভারত কাশ্মীরকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে দাবি করে। এ ভূখণ্ডের ব্যাপারে বিদেশি যেকোনো রাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপকে তারা নেতিবাচক হিসেবেই দেখে থাকে। কাশ্মীরকে পাকিস্তানও নিজেদের বলেই দাবি করে আসছে।
চীনের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের অন্যতম প্রধান কারণ দালাই লামা। তিব্বতের এই ধর্মগুরুকে ভারত আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে চীন দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। ১৯৫০ সালে দালাই লামা পালিয়ে ভারতে চলে আসেন। দালাই লামাকে চীন একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলেই মনে করে। বেইজিংয়ের অভিযোগ, দালাই লামা ভারতের হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত ধর্মশালায় আস্তানা গেড়ে চীনের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সচল রাখছে।
গত বছর ভারত দালাই লামাকে দেশটির সীমান্তবর্তী রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ সফরের অনুমতি দেওয়ায় চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এ ছাড়া এই বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ওই রাজ্য সফর করেন। মনমোহন সিংয়ের অরুণাচল সফরের পর বেইজিং তাঁর সমালোচনা করে। বেইজিংয়ের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর এ অঞ্চলে আরও উত্তেজনা বাড়িয়েছে। অরুণাচল নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং এ দ্বন্দ্ব নিরসনের ব্যাপারে দেশ দুটি ঐকমত্যের কাছাকাছি রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের একটা বড় অংশ চীন নিজের বলে দাবি করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ককেও চীন খুব ভালোভাবে নিচ্ছে না। তারা এ নিয়ে বেশ চিন্তিত। ২০০৮ সালে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বেসামরিক পরমাণু চুক্তি হয়েছে, সেটাকেই অনেক বিশ্লেষক দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন। এ চুক্তি একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছে; অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অবনতির কারণ হয়েছে। দিল্লি-ওয়াশিংটনের মধ্যকার এই পরমাণু সহযোগিতা চুক্তিকে বেইজিং এ অঞ্চলে তাদের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতকে দাঁড় করানো একটি কৌশল হিসেবে দেখছে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বেইজিংও ভারতের চির শত্রু পাকিস্তানকে একটি নতুন পরমাণু চুল্লি নির্মাণের প্রস্তাব দেয়।
ভারত ও চীনের মধ্যে বৈশ্বিক সম্পদ আহরণ নিয়েও তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিশেষ করে দেশ দুটি তাদের অগ্রসরমাণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য জ্বালানি সম্পদ আহরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
এ ছাড়া ইদানীং চীন দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ আধিপত্য বিস্তারের কৌশল হিসেবে তারা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। আর এ নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়েছে। চীন শুধু ভারতের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকেই অর্থনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে না; বরং বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের সঙ্গেও শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক মানের বন্দর নির্মাণে সহায়তা করছে চীন। এর মাধ্যমে চীন ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে একটি বন্দর যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগ্রহী।
এ দেশগুলো একসময় ভারতের প্রভাব বলয় হিসেবেই চিহ্নিত হতো। কিন্তু চীনের এ কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত আশঙ্কা করছে, বেইজিং এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব কমাতে কাজ করছে। তবে অনেক ভারতীয় কর্মকর্তা এ সন্দেহকে অতিরঞ্জিত বলে উল্লেখ করেছেন।
No comments