পাচারের সুবিধার্থে ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপানো হয়েছিল -প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্রিফিং

এস আলম গ্রুপকে পাচারে সাহায্য করতে আওয়ামী লীগের পতনের কিছুদিন আগে ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপানো হয়েছিল। পাচার হওয়া এসব টাকা দেশে ফেরত আনার চেষ্টা শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিষয়ে আগামী ১০ই ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু হবে। প্রথমে পাচার হওয়া টাকা কোথায় রয়েছে- তা শনাক্ত করে টাকাগুলো দেশে আনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম।

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

শফিকুল আলম বলেন, যে টাকাগুলো বাইরে চলে গেছে এটা আমাদের সরকারের অন্যতম কমিটমেন্ট যে টাকাগুলো আমরা দেশে আনার চেষ্টা করব। এ কারণে ১০ই ডিসেম্বর থেকে আমাদের কাজ শুরু হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল যেসব প্রতিষ্ঠানে যারা এগুলো নিয়ে কাজ করেন, তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। আগে তো ট্রেস করতে হবে এই টাকাগুলো কোথায় তারা চুরি করে নিয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, কীভাবে টাকাগুলো ফেরত আনা যায়? এটা অবশ্যই কষ্টসাধ্য কাজ। তবে এটা আমাদের টপ প্রায়োরিটির মধ্যে একটা, যে টাকাগুলো আমাদের আনতেই হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বৈরাচার পতনের ছয় মাস আগে ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছিল। আমাদের গভর্নর বলেছেন যে, ওই পুরো ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল এস আলমকে পাচারে সাহায্য করা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার তারল্য-সহায়তার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই টাকা কিছু ব্যাংককে সাপোর্ট দেয়ার জন্য ছাপানো হচ্ছে। এটা অনেকটা চৌবাচ্চার পানির মতো। একদিক থেকে আসবে, অন্যদিক থেকে বেরিয়ে যাবে। এটা মার্কেটে অতিরিক্ত টাকা হিসেবে থাকবে না। বিধি মেনেই এটা করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্র হস্তান্তর বিষয়ে তিনি বলেন, উনারা এই রিপোর্টটার নাম দিয়েছেন ডিসেকশন অব অ্যা ডেভেলপমেন্ট ন্যারেটিভ। উন্নয়নের যে গল্পটা হয়েছিল, উনারা এটাকে পোস্টমর্টেম করেছেন। এর মাধ্যমে একটা ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। আমাদের চোখের সামনে দিয়ে একটা লুটপাট চলেছে। এটা মানুষের ট্যাক্সের টাকা। খুব যে বেশি লোক এটা করেছেন তা নয়, এখানে পলিটিশিয়ান, আমলা ও কিছু ব্যবসায়ী ছিলেন। সবার যোগসাজশে এটা করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত এটাকে অনেকে বৈধতা দিয়েছে। আপনারা হয়তো জানেন, আমাদের মধ্যে অনেক সাংবাদিক এটার বৈধতা দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, প্রফেসর ড. ইউনূস বলেছেন- এই লুটপাটের চিত্র আমাদের টেক্সটবুকে আসা উচিত। কলেজে কিংবা ইউনিভার্সিটিতে জানা উচিত, গত ১৫ বছর কীভাবে লুটপাট চলেছে।
ড. ইউনূসের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের সমাজের একটা অংশের অনেকে এই সময়টায় নিশ্চুপ ছিলেন। তারা হয়তো বুঝছিলেন কি হচ্ছে। আমাদের মনে আছে, কথিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা যখন প্রেস কনফারেন্স করলেন, উনি একরকম বীরত্বের সুরেই বলছিলেন, তার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকা বানিয়েছে। স্যার (ড. ইউনূস) বলেছেন, এটা একটা হিস্টোরিক ডকুমেন্ট, ল্যান্ডমার্ক ডকুমেন্ট। আমরা আশা করছি, ডকুমেন্টটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে। এটা ৪০০ পৃষ্ঠার একটা ডকুমেন্ট। এখানে ৩০টা অধ্যায় আছে। প্রত্যেকটা অধ্যায় বাংলাদেশে ইকোনমির বিভিন্ন সেক্টর ধরে করা হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে ড. ইউনূসের মিটিং হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমরা অনেক কিছু ডিজিটালাইজেশনে যাচ্ছি। এটা এনবিআর চেয়ারম্যান আপনাদের জানাবেন।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.