প্রথম দেখাতেই পিটার টার্গেট করে মেরিনাকে by নুরুজ্জামান লাবু
এটিএম
জালিয়াতির পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকায় এসেছিল পোলিশ নাগরিক পিটার। লন্ডন প্রবাসী
নাবির ছিল তার পথপ্রদর্শক। নাবিরের সঙ্গেই গুলশানের হোটেল হলিডে প্লানেটে
উঠে পিটার। সেখানেই পিটারের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় মেরিনার মেরিনা তখন হলিডে
প্লানেট হোটেলের অভ্যর্থনাকারী হিসেবে কর্মরত। প্রতিদিন টুকটাক কথা বলতে
বলতেই দু’জনেই একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়। পিটারের উদ্দেশ্য ছিল মেরিনাকে
বিয়ে করতে পারলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে আপাতত এদেশেই স্থায়ী আবাস গড়া।
আর মেরিনার উদ্দেশ্য ছিল ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও ইউরোপিয়ান নাগরিক পিটারকে
প্রেমের জালে আটকাতে পারলে একদিকে যেমন অর্থকষ্ট দূর হবে, অন্যদিকে ইউরোপেও
পাড়ি জমানো যাবে। ধীরে ধীরে দুজনেই জড়িয়ে পড়ে প্রেমে, তারপর একসঙ্গে থাকা।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড জালিয়াতি চক্রের হোতা পিটারের স্ত্রী হিসেবে মেরিনা এখন আলোচনার তুঙ্গে। তবে মেরিনাই তার আসল নাম কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রোজিনা ওরফে রোমানা নামেও অনেকেই চেনেন তাকে। গুলশানের হোটেল হলিডে প্লানেটে জমা থাকা পাসপোর্টে রোজিনার নাম উল্লেখ রয়েছে। কেরানীগঞ্জে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেরিনা ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ-ইউডা থেকে পড়াশুনা করেছেন। পড়াশুনা শেষ না হতেই পার্টটাইম চাকরি করেছেন একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে। পারিবারিকভাবে বিয়েও হয় এক যুবকের সঙ্গে। কিন্তু কিছুটা বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন মেরিনা। এ কারণে এক কন্যা সন্তানের মা হলেও বিচ্ছেদ হয়ে যায় স্বামীর সঙ্গে। তারপর থেকে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। ট্রাভেল এজেন্সি ছেড়ে যোগ দেন হোটেল হলিডে প্লানেটের অভ্যর্থনাকারী হিসেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১৩ই ডিসেম্বর ঢাকায় এসে হোটেল হলিডে প্লানেটে উঠে আন্তর্জাতিক ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি চক্রের অন্যতম হোতা পিটার। নিজেকে পরিচয় দেয় ব্যবসায়ী হিসেবে। সেখানেই অভ্যর্থনাকারী হিসেবে কর্মরত রোজিনা ওরফে রোমানা ওরফে মেরিনার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। কয়েক মাসের মধ্যেই জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। জালিয়াতির টাকায় পিটার দু’হাতে খরচ করতো। এসব দেখে সত্যি ব্যবসায়ী এবং অঢেল টাকার মালিক হিসেবে পিটারকে প্রেমের জালে আটকাতে চান মেরিনা। পিটারও ঢাকায় একজন ‘পার্টনার’ খুঁজছিলো। রোজিনা ওরফে মেরিনার সঙ্গে লং ড্রাইভে যেতো নিয়মিত। রোজিনা ওরফে মেরিনাও কাজ শেষে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ও বারে পার্টিতে যেতো পিটারের সঙ্গে। ঢাকায় আসার চার মাসের মাথায় পিটারের সঙ্গে থাকা শুরু করেন রোজিনা ওরফে মেরিনা। মাস তিনেক হলিডে প্লানেটের পাঁচ তলার ৫০৫ নম্বর স্যুটে থাকতেন। ওই কক্ষের প্রতি দিনের ভাড়া ছিল ৪ হাজার টাকা করে। প্রায় মাস তিনেক তারা ওই কক্ষেই থেকেছেন। হলিডে প্লানেট হোটেলের এক কর্মকর্তা জানান, পিটার ও মেরিনা তাদের জানিয়েছিল তারা বিয়ে করেছে। তারপরও হোটেলে একসঙ্গে দিনের পর দিন থাকাটা অশোভনীয় মনে হওয়ায় তাদের হোটেল ছেড়ে কোনো বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে বলা হয়। গত অক্টোবর মাসে তারা হোটেল ছেড়ে গুলশানের ২ নম্বর এভিনিউর ১১২ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর প্লটের একটি বাসা ভাড়া নেয়। প্রায় দেড় লাখ টাকা ভাড়া দিয়ে আলিশান ওই বাসায় থাকতো পিটার ও রোজিনা ওরফে রোমানা। গতকাল ওই বাসায় গিয়ে পিটারের বাসাটি তালাবদ্ধ দেখা যায়। ওই ভবনের বাসিন্দারা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
সূত্র জানায়, একসঙ্গে থাকার সময়ই গর্ভধারণ করেন রোজিনা ওরফে রোমানা। সন্তানের বিষয়টি প্রথমে জানতো না পিটার। পরে সন্তান সম্ভবা হওয়ার কারণে তারা নিজেরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ওই বাসায় ওঠে। চলতি মাসের প্রথমদিকেই সন্তান প্রসব করেন রোজিনা ওরফে মেরিনা। গুলশানের একটি হাসপাতালে সন্তান প্রসব হয় তার। ছেলে সন্তানের নাম রাখেন আলেকজান্ডার ওরফে অ্যালেক্স। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পিটার জানিয়েছে, তারা কেউ ধর্মান্তরিত হয়নি। পিটার শুধু স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রোজিনার জায়গায় মেরিনা করে দিয়েছিলো। ডাকতো মেরি বলে। সূত্র জানায়, রোজিনা ওরফে মেরিনার লিভটুগেদার ও পিটারের সঙ্গে বিয়ের সবকিছুই জানতো তার পরিবার। কিন্তু বিপুল অর্থের মোহে তারা বিষয়টি মেনে নিয়েছিলো সহজেই। জালিয়াতি করে আয় করা পিটারের বিপুল পরিমাণ অর্থ রোজিনা ওরফে মেরিনা তার মায়ের বাসায় দিয়েছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পিটার জানিয়েছে, কার্ড জালিয়াতির ঘটনা গণমাধ্যমে আসার পরপরই তার দুই বন্ধু বুলগেরিয়ান রোমিও ও ইউক্রেনিয়ান অ্যান্ডারসন ওরফে অ্যান্ডি দেশ ছেড়ে চলে যায়। পিটারও চলে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু নিজের নবজাতক সন্তানকে ফেলে যেতে মন চায়নি তার। আর তার পাসপোর্টের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভিসা বাড়ানোর আবেদন করেছিলো, কিন্তু সেই কাগজপত্র হাতে পায়নি বিধায় সে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতেই গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে তাকে। পিটার বলেছে, তার জালিয়াতির সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সে জানতোও না এসব কথা। তবে গোয়েন্দারা রোজিনা ওরফে মেরিনাকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে। সদ্য সন্তান প্রসব করায় তাকে গোয়েন্দা হেফাজতে নেয়া হয়নি। কিন্তু তাকে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে রোজিনা ওরফে মেরিনা এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পিটারের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তারা খুঁজে পাননি। তার স্ত্রীর কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কিনা তা খোঁজ করে দেখা হচ্ছে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রোজিনা ওরফে মেরিনা সাংবাদিক পরিচয় শুনেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আরও কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
এদিকে এটিএম বুথ থেকে টাকা জালিয়াতির ঘটনায় থমাস পিটারসহ তিন ব্যাংক কর্মকর্তার প্রথম দফার ছয় দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে গতকাল। আজ তাদের আদালতে সোপর্দ করে আবারও রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পিটারের সহযোগীদের নাম-ঠিকানা যাচাই বাছাই করার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে পিটারের এই কাজে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারেরও চেষ্টা চলছে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, পিটারের কাছ থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে পিটারের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর বনানী ও মিরপুর এলাকার বিভিন্ন বুথ থেকে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের টাকা খোয়া যায়। গ্রাহকের কাছে ডেবিট কার্ড ও পাসওয়ার্ড গচ্ছিত থাকলেও তাদের মোবাইল ম্যাসেজে টাকা উত্তোলন হওয়ার নোটিফিকেশন আসে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা নিজ নিজ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানালে বিষয়টি সবার নজরে আসে। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পায়। এর প্রেক্ষিতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল)-এর পক্ষ থেকে বনানী থানায় তথ্য-প্রযুক্তি আইন ও পেনালকোডের ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া, সিটি ব্যাংকের পক্ষ থেকেও পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুটো মামলাই তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবি। গত ২২শে ফেব্রুয়ারি পুলিশ গুলশান এলাকার বাসা থেকে থমাস পিটার ও সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা মকসেদ আলী ওরফে মাকসুদ, রেজাউল করিম ওরফে শাহীন ও রেফাজ আহমেদ ওরফে রনিকে গ্রেপ্তার করে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড জালিয়াতি চক্রের হোতা পিটারের স্ত্রী হিসেবে মেরিনা এখন আলোচনার তুঙ্গে। তবে মেরিনাই তার আসল নাম কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রোজিনা ওরফে রোমানা নামেও অনেকেই চেনেন তাকে। গুলশানের হোটেল হলিডে প্লানেটে জমা থাকা পাসপোর্টে রোজিনার নাম উল্লেখ রয়েছে। কেরানীগঞ্জে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেরিনা ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ-ইউডা থেকে পড়াশুনা করেছেন। পড়াশুনা শেষ না হতেই পার্টটাইম চাকরি করেছেন একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে। পারিবারিকভাবে বিয়েও হয় এক যুবকের সঙ্গে। কিন্তু কিছুটা বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন মেরিনা। এ কারণে এক কন্যা সন্তানের মা হলেও বিচ্ছেদ হয়ে যায় স্বামীর সঙ্গে। তারপর থেকে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। ট্রাভেল এজেন্সি ছেড়ে যোগ দেন হোটেল হলিডে প্লানেটের অভ্যর্থনাকারী হিসেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১৩ই ডিসেম্বর ঢাকায় এসে হোটেল হলিডে প্লানেটে উঠে আন্তর্জাতিক ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি চক্রের অন্যতম হোতা পিটার। নিজেকে পরিচয় দেয় ব্যবসায়ী হিসেবে। সেখানেই অভ্যর্থনাকারী হিসেবে কর্মরত রোজিনা ওরফে রোমানা ওরফে মেরিনার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। কয়েক মাসের মধ্যেই জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। জালিয়াতির টাকায় পিটার দু’হাতে খরচ করতো। এসব দেখে সত্যি ব্যবসায়ী এবং অঢেল টাকার মালিক হিসেবে পিটারকে প্রেমের জালে আটকাতে চান মেরিনা। পিটারও ঢাকায় একজন ‘পার্টনার’ খুঁজছিলো। রোজিনা ওরফে মেরিনার সঙ্গে লং ড্রাইভে যেতো নিয়মিত। রোজিনা ওরফে মেরিনাও কাজ শেষে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ও বারে পার্টিতে যেতো পিটারের সঙ্গে। ঢাকায় আসার চার মাসের মাথায় পিটারের সঙ্গে থাকা শুরু করেন রোজিনা ওরফে মেরিনা। মাস তিনেক হলিডে প্লানেটের পাঁচ তলার ৫০৫ নম্বর স্যুটে থাকতেন। ওই কক্ষের প্রতি দিনের ভাড়া ছিল ৪ হাজার টাকা করে। প্রায় মাস তিনেক তারা ওই কক্ষেই থেকেছেন। হলিডে প্লানেট হোটেলের এক কর্মকর্তা জানান, পিটার ও মেরিনা তাদের জানিয়েছিল তারা বিয়ে করেছে। তারপরও হোটেলে একসঙ্গে দিনের পর দিন থাকাটা অশোভনীয় মনে হওয়ায় তাদের হোটেল ছেড়ে কোনো বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে বলা হয়। গত অক্টোবর মাসে তারা হোটেল ছেড়ে গুলশানের ২ নম্বর এভিনিউর ১১২ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর প্লটের একটি বাসা ভাড়া নেয়। প্রায় দেড় লাখ টাকা ভাড়া দিয়ে আলিশান ওই বাসায় থাকতো পিটার ও রোজিনা ওরফে রোমানা। গতকাল ওই বাসায় গিয়ে পিটারের বাসাটি তালাবদ্ধ দেখা যায়। ওই ভবনের বাসিন্দারা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
সূত্র জানায়, একসঙ্গে থাকার সময়ই গর্ভধারণ করেন রোজিনা ওরফে রোমানা। সন্তানের বিষয়টি প্রথমে জানতো না পিটার। পরে সন্তান সম্ভবা হওয়ার কারণে তারা নিজেরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ওই বাসায় ওঠে। চলতি মাসের প্রথমদিকেই সন্তান প্রসব করেন রোজিনা ওরফে মেরিনা। গুলশানের একটি হাসপাতালে সন্তান প্রসব হয় তার। ছেলে সন্তানের নাম রাখেন আলেকজান্ডার ওরফে অ্যালেক্স। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পিটার জানিয়েছে, তারা কেউ ধর্মান্তরিত হয়নি। পিটার শুধু স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রোজিনার জায়গায় মেরিনা করে দিয়েছিলো। ডাকতো মেরি বলে। সূত্র জানায়, রোজিনা ওরফে মেরিনার লিভটুগেদার ও পিটারের সঙ্গে বিয়ের সবকিছুই জানতো তার পরিবার। কিন্তু বিপুল অর্থের মোহে তারা বিষয়টি মেনে নিয়েছিলো সহজেই। জালিয়াতি করে আয় করা পিটারের বিপুল পরিমাণ অর্থ রোজিনা ওরফে মেরিনা তার মায়ের বাসায় দিয়েছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পিটার জানিয়েছে, কার্ড জালিয়াতির ঘটনা গণমাধ্যমে আসার পরপরই তার দুই বন্ধু বুলগেরিয়ান রোমিও ও ইউক্রেনিয়ান অ্যান্ডারসন ওরফে অ্যান্ডি দেশ ছেড়ে চলে যায়। পিটারও চলে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু নিজের নবজাতক সন্তানকে ফেলে যেতে মন চায়নি তার। আর তার পাসপোর্টের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভিসা বাড়ানোর আবেদন করেছিলো, কিন্তু সেই কাগজপত্র হাতে পায়নি বিধায় সে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতেই গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে তাকে। পিটার বলেছে, তার জালিয়াতির সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সে জানতোও না এসব কথা। তবে গোয়েন্দারা রোজিনা ওরফে মেরিনাকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে। সদ্য সন্তান প্রসব করায় তাকে গোয়েন্দা হেফাজতে নেয়া হয়নি। কিন্তু তাকে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে রোজিনা ওরফে মেরিনা এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পিটারের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তারা খুঁজে পাননি। তার স্ত্রীর কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কিনা তা খোঁজ করে দেখা হচ্ছে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রোজিনা ওরফে মেরিনা সাংবাদিক পরিচয় শুনেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আরও কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
এদিকে এটিএম বুথ থেকে টাকা জালিয়াতির ঘটনায় থমাস পিটারসহ তিন ব্যাংক কর্মকর্তার প্রথম দফার ছয় দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে গতকাল। আজ তাদের আদালতে সোপর্দ করে আবারও রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পিটারের সহযোগীদের নাম-ঠিকানা যাচাই বাছাই করার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে পিটারের এই কাজে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারেরও চেষ্টা চলছে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, পিটারের কাছ থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে পিটারের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর বনানী ও মিরপুর এলাকার বিভিন্ন বুথ থেকে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের টাকা খোয়া যায়। গ্রাহকের কাছে ডেবিট কার্ড ও পাসওয়ার্ড গচ্ছিত থাকলেও তাদের মোবাইল ম্যাসেজে টাকা উত্তোলন হওয়ার নোটিফিকেশন আসে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা নিজ নিজ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানালে বিষয়টি সবার নজরে আসে। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পায়। এর প্রেক্ষিতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল)-এর পক্ষ থেকে বনানী থানায় তথ্য-প্রযুক্তি আইন ও পেনালকোডের ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া, সিটি ব্যাংকের পক্ষ থেকেও পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুটো মামলাই তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবি। গত ২২শে ফেব্রুয়ারি পুলিশ গুলশান এলাকার বাসা থেকে থমাস পিটার ও সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা মকসেদ আলী ওরফে মাকসুদ, রেজাউল করিম ওরফে শাহীন ও রেফাজ আহমেদ ওরফে রনিকে গ্রেপ্তার করে।
No comments