কেন অসম্ভব? by মীর আব্দুল আলীম
বোমা-ই
ঠেকিয়ে দেবে বোমা। সে ধরনেরই বোমা আবিষ্কার করেছে গাইবান্ধার আমার বাংলা
বিদ্যাপীঠের সপ্তম ও নবম শ্রেণীর পাঁচ শিক্ষার্থী। তাদের এ আবিষ্কার সবাইকে
রীতিমতো চমকে দিয়েছে। গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি স্থানীয় স্বাধীনতা প্রাঙ্গণে
অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমেলায় তাদের আবিষ্কৃত এ বোমার সফল প্রদর্শনী
হয়েছে। এ পাঁচ শিক্ষার্থীর ভাবনা খুবই পজেটিভ। একটি বিষয় লক্ষণীয়, আমরা
সবাই নিজেদের রক্ষায় প্রস্তুত করে নিচ্ছি নিজেকে। জঙ্গিবাদ, আগুনে পোড়ানো,
জানমাল রক্ষার দাওয়াই শিখতে হচ্ছে আমাদের। জীবন কিংবা সম্পদের ক্ষতি হবে- এ
ভাবনা নিয়েই আমরা প্রতিনিয়তই ঘর থেকে বের হচ্ছি। কেউ বলে সকাল সকাল ঘর
থেকে কাজে বের হলে ঝুঁকি কম, আবার কেউ বলছে, দুপুরে। বিপদ বেশি সন্ধ্যায় আর
রাতে। সময়ক্ষণ ভেবে এখন চলছে দেশের মানুষ। এ ভাবনা, আতঙ্ক এখন কোমলমতি
শিশুদের ভেতরেও ঢুকে পড়েছে। তাই খুদে শিক্ষার্থীরা বোমা, পেট্রলবোমা নিয়ে
ভাবছে। তারাও বাঁচার পথ খুঁজছে। অভিনব এ বোমার পাঁচ কারিগর হলেন, সাকোয়াত
সিদ্দিক রবিন, প্রতীক সরকার রিতুল, সাইফ সাইফুল্যা নাঈম, মাহমুদুল হাসান
সান ও আশিকুর রহমান স্মরণ। তাদের দলনেতা নবম শ্রেণীর ছাত্র নাঈম। বাস,
ট্রাক, বাসাবাড়ি বা যে কোন প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা ছুড়ে আগুন
ধরিয়ে দিলে ওদের এ বোমা পাল্টা নিক্ষেপ করলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে আগুন
নিয়ন্ত্রণে আসবে। বোমা তৈরির উপকরণ বলতে খাবার সোডা, ভিনেগার ও একটি কাচের
বোতল। একটি কাচের বোতলে কিছু ভিনেগার ও খাবার সোডা ঢুকিয়ে বোতলের মুখটা
বন্ধ করে দিলেই হয়ে যায় প্রতিরক্ষামূলক এ বোমা। পরীক্ষামূলকভাবে তারা মেলার
এক কোনায় পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর তাদের তৈরি বোমা দিয়ে তা
মুহূর্তের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভিনেগার ও খাবার সোডা কার্বন
ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে। একটি
মাঝারি বাসের জন্য ১০ থেকে ১৫টি বোমা ব্যবহার করলেই আগুন নেভানো সম্ভব।
আগুনের ভয়াবহতা অনুযায়ী বোমার সংখ্যা বা আকৃতি বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
প্রতিটি আগুন নিরোধক ওই বোমা তৈরি করতে মাত্র ৪০ টাকা খরচ হবে। কিন্তু বিষয়
তা নয়, বিষয় হলো এভাবে আর কত দিন? বাড়ছে পোড়া লাশের সংখ্যা, বাড়ছে গুলিতে
লাশের সংখ্যাও। মানুষের কষ্ট দেখেও তা লাঘবে সমঝোতার ব্যাপারে আলোচনায় না
বসা এক আশ্চর্যের বিষয়। সব সম্ভবের দেশে এটা কেন অসম্ভব বুঝতে পারছি না। এর
পেছনে রহস্যইবা কি? কেন কোমলমতি শিশুরা বোমা নিয়ে ভাববে? দেশের প্রতি,
মানুষের প্রতি ভালবাসা থেকেই তাদের এ চেষ্টা- এটা বলা যায় নিশ্চিত করে।
কিন্তু পৃথিবীতে কত কিছু আছে ভাবার, সেসব দূরে ঠেলে এই শিশুদের বোমা নিয়ে
ভাবতে হচ্ছে। আমাদের রাজনীতিকরা তাদের এ ভাবনায় ঠেলে দিয়েছেন। আমরা এমন
ভাবনা চাই না। আমরা চাই জনগণের স্বার্থে সরকারকে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে
আলোচনায় বসতে হবে। দেশের কোন নাগরিক যেন এভাবে জ্বলে-পুড়ে শেষ না হয় তার
নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে।
No comments