যে কারণে মোদির না আসাই ভালো by বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম
বাংলাদেশ
প্রতিদিনের শুরু থেকে প্রিয় নঈম নিজাম যেমন জড়িত, ঠিক তেমনি আমিও শুরু
থেকেই লিখে চলেছি। দু-একবার মনে হয়েছে এ পত্রিকায় আর না লেখাই উচিত। একবার
কোনো লেখা না ছাপার কারণে কয়েক মাসের জন্য বন্ধ রেখেছিলাম। নিয়মিত লিখলেই
যে পত্রিকা কারও পক্ষে যাবে তা নয়, স্বার্থহানি হলে পক্ষে থাকে না- এটা
পাঠকদের বোঝানো যায় না। রাজনীতি, মিটিং-মিছিল করি তাই কোনো কোনো পত্রিকায়
প্রায়ই খবর ছাপা হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনে সে খবর কেউ খুঁজে না পেলেই প্রশ্ন
করে, কী ব্যাপার প্রতিদিনে খবর নেই কেন? সাপ্তাহিক লেখা আর আমাদের
কর্মকাণ্ডের খবর এক জিনিস নয়- এটা অনেককে বোঝানো যায় না। মঙ্গলবারে দু-এক
সপ্তাহ নিয়মিত না লিখলে দু-চারশ পাঠক তো কমবে। কিন্তু তারপরেও কেন তারা
আমাদের খবর ছাপে না বা গুরুত্ব দেয় না তা আমি জানব কী করে? গত ৪২ দিন
মতিঝিলের ফুটপাতে আছি। কোনো দিন নাই যে কোনো না কোনো পত্র-পত্রিকা,
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় খবর বের হয়নি। কেউ ছোট কেউ বড় কোনো না কোনো আকারে
প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনও করেছে, হয়তো অন্যদের চেয়ে কম করেছে।
কিন্তু ৮ মার্চ অবস্থানের ৪০ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ ও
নেতা-কর্মীরা বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যে অমূল্য মতামত দিয়েছে যা
অনেক পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে ছেপেছে। অথচ বাংলাদেশ প্রতিদিনে সে খবর
স্থান পায়নি। কতজনের কত প্রশ্ন, কিন্তু জবাব দিতে পারি না।
দু-কথা লিখতে চেয়েছিলাম এক স্বনামধন্য সাংবাদিক ও টকশো উপস্থাপক বা উপস্থাপিকা মুন্নী সাহা সম্পর্কে। আমরা কুয়োর ব্যাঙ জাহাজের খবর রাখি না, কার খোটার জোর কত তাও জানি না। জীবনে কত সাংবাদিক দেখেছি, ভারতের প্রখ্যাত কলামিস্ট খুশবন্ত সিং, কুলদীপ নায়ার, সম্পাদক রাজেন্দ্র সারীন, হিরণ্ময় কার্লেকার, আনন্দ বাজারের বরুণ সেনগুপ্ত, অভীক সরকার, তার বাবা অশোক সরকার, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ওপর গবেষক প্রবীণ সাংবাদিক-সাহিত্যিক অমিতাভ চক্রবর্তী, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদা শংকর রায়, মনোজ বোস, প্রবোধ কুমার সান্যাল, সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত। আমাদের দেশের কত কত বিখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয় উঠাবসা, কত উপস্থাপককে চিনি জানি। কিন্তু মুন্নী সাহার মতো কড়কড়ে কণ্ঠের রাগঢাক না করা কোনো উপস্থাপক দেখিনি। একদিন তিনি জনাব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে বলেছিলেন, আপনাকে তো লোকে বিশ্ব বেহায়া বলে। একটা রাজনৈতিক নেতাকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষিপ্ত লোকজন কত কথাই তো বলে। শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদীনের বলা আর কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপকের সরাসরি বিব্রতকর অশ্লীল কথা বলা এক কথা নয়। কিন্তু তাকে বুঝাবে কে? খেয়াল নেই, কয়েক মাস আগে সরাসরি প্রচারে তার এক ক্যামেরাম্যান আমার বাসায় গিয়েছিল। সে অনুষ্ঠানে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ছিলেন। তিনি বিএনপির এক ইফতার মাহফিলে যাওয়ায় মুন্নী সাহা জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি তো তাদের ইফতার মাহফিলের শিরোমণি, মধ্যমণি ছিলেন। আপনি বিএনপি সম্পর্কে বলুন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক কম করে আমার থেকে ১০-১২ বছরের বড়। আমরাও খুব সংযত হয়ে তার সঙ্গে কথা বলি। অনুষ্ঠানের সঙ্গে আমাকে সংযুক্ত করলে বলেছিলাম, মুন্নী সাহা আপনি কি জানেন, শিরোমণি আর মধ্যমণির আভিধানিক পার্থক্য কি? দুষ্টের শিরোমণি আর ভালোবাসার অাঁধার মধ্যমণি জানি না তার বোধোদয় হবে কিনা। কিছু দিন আগে কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীককে প্রসঙ্গ ছাড়াই বলে বসেছিলেন, আপনি তো ওয়ানম্যান পার্টি। ক্ষুব্ধ জেনারেল ইবরাহিম প্রতিবাদ করেছিলেন, অনুষ্ঠান থেকে চলে যেতে চেয়েছিলেন। মুন্নী সাহা তার বক্তব্য প্রত্যাহার করায় সে যাত্রায় বেঁচে যান। জাতির শ্রেষ্ঠ গৌরব একজন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে কতখানি সম্মান করা উচিত সে বোধও খুব একটা নেই। শুনেছি, অনেককেই তিনি তাচ্ছিল্য করে এটা ওটা বলেন, কেন বলেন, কীভাবে বলেন- এসবের কোথায় অন্তর্নিহিত শক্তি কিছুই জানি না। যে চ্যানেলের তিনি সর্বেসর্বা, তার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান একটা ভালো পরিবারের সন্তান ও জনাব ফিরোজ কবির অসাধারণ সজ্জন ব্যক্তি। তার ভাই সরকার কবির উদ্দিন রেডিও পাকিস্তান এবং টিভিতে খবর পড়তেন। অমন নামকরা খবর পাঠক আমাদের দেশে খুব বেশি ছিল না। ঢাকা রেডিওতে ২৫ শে মার্চ রাতের শেষ খবর পড়তে গিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তান রেডিওতে আমার জীবনের শেষ খবর পড়া হলো। যদিও এসব ত্যাগী মানুষের কোনো কোনো কথায় স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠার ঘটনাকে অনেক সময় গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা হয় না। তবু তারা আছেন, তাদের এসব ঐতিহাসিক ভূমিকা জাতির হৃদয়পটে থাকবে চিরদিন। রাজনীতি করা মানুষ তাই বর্তমান ঘটনা প্রবাহের চাপে অনেক কিছু করতে চাইলেও করতে পারি না, লিখতে চাইলেও লিখতে পারি না। আজ ভারতের বিস্ময় জাগানো রাজনীতিবিদ, প্রায় ৩২-৩৩ বছর পর একক দল নিয়ে ক্ষমতায় আসার প্রাণপুরুষ শ্রী নরেন্দ্র দামাদোর দাস মোদির বাংলাদেশ সফরের বিষয় দু-চার কথা আলোচনা করি।
প্রায় সবাই জানেন, মহান ভারতের অনেক নেতা-নেত্রীর সঙ্গে আমার একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস, কমিউনিস্ট পার্টি, জনতা পার্টি, ভারতীয় জনতা পার্টি ও আরও অনেক দলের সঙ্গে কমবেশি উঠাবসা ছিল, এখনো যতটা সম্ভব চিঠিপত্র এবং দূরালাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ আছে। গত বছর যখন ভারতের লোকসভার নির্বাচন হয়, নির্বাচনের আগে ভারতের অনেক পণ্ডিতের ধারণা ছিল অবশ্যই বিজেপি লোকসভায় বেশি সিট পাবে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কারণ সরকার গঠন করতে যেহেতু অন্য দলের সমর্থন লাগবে, সেহেতু তারা গুজরাটের দাঙ্গার অভিযোগে অভিযুক্ত নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন করবে না। তাই বিজেপির সরকার হলেও শ্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হবেন না। তাদের যুক্তি খুব একটা ফেলনা ছিল না। এ নিয়ে ভারতীয় অনেক কূটনীতিকও আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু কেন যেন আমার সব সময় মনে হয়েছে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের দিন ১৫ আগেও বিজেপির সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ উচ্চ পর্যায়ের একজন ঢাকায় এসেছিলেন। তার ধারণাও তেমনই ছিল। যেহেতু আমার সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল তাই তাকে আমি আমার মতো জানিয়েছিলাম। সেই কবে ভারতীয় একক দলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রায় লুপ্তির পথে ছিল যেটা আবার ফিরে এসেছে। তবে ইলেকশনের আগে কথা উঠেছিল যে কোনো নারী নেতৃত্বে ভারতে মিলঝুল সরকার হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তামিল নাড়ুর জয়ললিতা, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতি এরা মিলে শতাধিক সিট পেলে তাদের মধ্যে কেউ একজন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। কিন্তু কেন যেন আমার তেমন মনে হয়নি। লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস খুবই ভালো করেছিল। ৪২ আসনের ৩৮ আসন পেয়েছিল তারা। ২টি কংগ্রেস, ১টি বিজেপি, ১টি সিপিএম। অন্যদিকে তামিলনাড়ুর ৩৯ সিটের মধ্যে ৩৭টি পেয়েছিলেন জয়ললিতা। কিন্তু উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর দল লোকসভায় তেমন সুবিধা করতে পারেনি। সোয়াশ বছরের প্রবীণ দল কংগ্রেসের সিট নেমেছে ৫০ এর নিচে। পৃথিবীর এক আশ্চর্য ঘটনা। শ্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম লোকসভায় প্রবেশ করে এক অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছিলেন। কারণ ওর আগে তিনি কখনো লোকসভার সদস্য ছিলেন না। লোকসভায় প্রথমবার নির্বাচিত হয়েই নেতা হয়েছেন। তাই তিনি বলেছিলেন, আমি এখানে সম্পূর্ণ নতুন। কিছুই জানি না। ভুল হলে প্রবীণরা ক্ষমা করবেন। আপনাদের কাছ থেকে জেনেশুনে আস্তে আস্তে আমি শিখে নেব। সেই সময়টুকু আপনারা আমাকে দেবেন। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদি প্রথম জাতিসংঘে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে দেওয়া এক সম্বর্ধনায় প্রায় ২৪ হাজার লোকের মধ্যে এমন এক অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছিলেন যা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। একপর্যায়ে তিনি এও বলেছিলেন, 'ম্যায়নে চা বেস্তা বেস্তা ইহাতক পৌঁছ গিয়া। হাম পিছে নেহি দেখ্তা, হাম সিধা দেখ্তা।' শ্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে প্রায় ১৮-২০ বছরের প্রবীণ আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী সেই আমেরিকাতেই ১৪-১৫ জনের সামনে এক বক্তৃতা করে জীবনের সব কিছু খুইয়েছেন। মুসলমান হিসেবে তাকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছিলাম। তার জন্যও আমাকে নিদারুণ গালাগাল করেছেন। তা করুন, বড় ভাই হিসেবে জন্মেছেন, গালাগাল বা তিরস্কার করার তার জন্মগত অধিকার। তাই এসব নিয়ে কিছু ভাবি না। সারা জীবন আওয়ামী লীগ করেছেন। আওয়ামী লীগ তাকে ত্যাগ করেছে। মুসলমান হিসেবে তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তার জন্য এখনো আমি আমার জীবন বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করব না।
গত আগস্টে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির এডিশনাল সেক্রেটারি প্রদ্যুৎ গুহের একমাত্র ছেলের বিয়ে ছিল। আমি যখন ভারতে নির্বাসনে তখন প্রদ্যুৎ গুহ পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের জনপ্রিয় সভাপতি ছিলেন। অনেক বছর মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে আছেন। বাঘা দা বলতে অজ্ঞান। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার কারণে আগস্ট মাসে কোনো অনুষ্ঠানে যাই নাই। ৩ বা ৪ আগস্ট ছিল প্রদ্যুৎ গুহের ছেলের বিয়ে। সেখানে থাকা-খাওয়া সব ব্যবস্থা তারাই করেছিলেন। কিন্তু তারপরও তাদের ব্যবস্থাপনায় থাকতে পারিনি। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও মানুষ মানুষের কতটা আপন হতে পারে তা শর্মিলা বকশী মিলুকে না দেখলে বোঝা যায় না। আগে দিলি্লর এয়ারপোর্ট পালামে ছিল। এখন হারিয়ানার গোরগাওয়ে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তার পাশেই মিলুর বিশাল ফ্ল্যাট বাড়ি। মিলু বাপ-মায়ের এক সন্তান। একই ভবনের একতলা নিচে মিলুর মা ড. অরুণা চক্রবর্তী থাকেন। সেটাও ৪-৫ হাজার স্কয়ার ফুটের বাড়ি। আমার ছোট ভাইয়েরা কয়েকবার লটবহর নিয়ে মিলুর বাড়িতে থেকেছে। তাই এবার শক্ত করে ধরেছিল, দাদা তোমাকে এবার আমাদের বাড়িতে থাকতে হবে। মেয়েটাকে না করতে পারিনি। তাই সরকারি গাড়িতেই ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সে যে কি অসাধারণ যত্ন করেছে বলতে পারব না। শরীয়তপুরের ডিঙ্গামানিক মিলুর পূর্ব পুরুষের বাড়ি। ওর ইচ্ছে ওর বাপ-দাদার ভিটায় একবার সে যাবে। আজ ১৫-২০ বছর ধরে বলছি, যখন খুশি এসে ঘুরে যা। মাঝে একবার এসেছিল। কিন্তু সময় হয়নি। এক ছেলে এক মেয়ে স্বামী নিয়ে ছোট সংসার। কলেজে পড়িয়ে সময় পায় না। মজার ব্যাপার, যখন ওর বাড়িতে ছিলাম, আসার আগের দিন ছিল ভাইফোঁটা। ১৮ বছর আগে পাকিস্তান থেকে আসা কমর মহসীনের গুজরাটে বিয়ে হয়। তাকে গুজরাটের গভর্নর শ্রী স্বরূপ সিং বিদায়ের সময় তার মেয়ে পরিচয় দিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে ভাই বানিয়ে এসেছিলেন।
সেই থেকে সে প্রতি বছর তাকে ভাইফোঁটা দেয়। সেবারও সে ফোঁটা দেবে কিনা বা দিতে পারবেন কিনা- এ নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা চলছিল। ৮ আগস্ট ছিল সেই শুভ দিন। আমি ছিলাম মিলুর গোরগাওয়ের বাড়িতে। হিসেব করে দেখলাম ১৮ বছর ধরে এক মুসলমান বোন হিন্দু ভাই নরেন্দ্র মোদিকে ভাইফোঁটা দিচ্ছে আর ৩৬ বছর ধরে এক হিন্দু বোন মিলু তার মুসলমান ভাই কাদের সিদ্দিকীকে ভাইফোঁটা দিয়ে চলেছে। কি আশ্চর্য মিল। আগের দিন নরেন্দ্র মোদি নেপাল সফরে ছিলেন। ঢাকায় ফিরে খবর পেয়েছিলাম শ্রী নরেন্দ্র মোদি তার মুসলমান বোনের ভাইফোঁটা ঠিকই নিয়েছেন। সত্যিই তিনি এক আশ্চর্য মানুষ। একেবারে নিজের দক্ষতা যোগ্যতায় এতদূর এসেছেন। তাই আমাদের দেশ সফরে এসে সাধারণ মানুষের কোনো ভালোবাসা পাবেন না। বরং বিনা ভোটে জবরদখলকারী সরকারের আহ্বানে এসে বিব্রতকর অবস্থায় পড়লে তা হবে আমাদের জন্য মর্মবেদনার কারণ।
তার পূর্ববতী সরকারের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং অবৈধ কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে এ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। এই অপ্রিয় সরকার দেশ চালাতে সম্পূর্ণই ব্যর্থ। তাদের আহ্বানে বা আমন্ত্রণে বিপুল ভোটে নির্বাচিত একজন মহান নেতার আমাদের দেশে আসা উচিত না। বিশেষ করে আমাদের স্বাধীনতার জন্যে যে দেশের ১৪ হাজার বীর সেনার রক্ত আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। আমরা সেই দেশের নেতাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ১৬ কোটি মানুষ দুই হাত প্রসারিত করে উন্মুখ হয়ে আছি। তাই আমরা আশা করি, আমাদের উষ্ণ বুক তার সানি্নধ্য থেকে বঞ্চিত হবে না। আমরা ১৬ কোটি জনগণ তাকে হৃদয়ের সমগ্র উত্তাপ দিয়ে গ্রহণ করতে চাই- এ জন্য একটি জনপ্রিয় নির্বাচিত সরকারের আমন্ত্রণের অপেক্ষায় তাকে থাকতেই হবে। এই সরকারের দেশের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই শ্রী মোদির সফরে কেউ যদি রাস্তায় নেমে নিন্দাবাদ জানায় আমরা মুখ দেখাতে পারব না, বড় লজ্জায় পড়ব। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আশা করব ভারতের একজন সফল নেতা আমার দেশবাসীকে তেমন লজ্জায় ফেলবেন না।
লেখক : রাজনীতিক।
দু-কথা লিখতে চেয়েছিলাম এক স্বনামধন্য সাংবাদিক ও টকশো উপস্থাপক বা উপস্থাপিকা মুন্নী সাহা সম্পর্কে। আমরা কুয়োর ব্যাঙ জাহাজের খবর রাখি না, কার খোটার জোর কত তাও জানি না। জীবনে কত সাংবাদিক দেখেছি, ভারতের প্রখ্যাত কলামিস্ট খুশবন্ত সিং, কুলদীপ নায়ার, সম্পাদক রাজেন্দ্র সারীন, হিরণ্ময় কার্লেকার, আনন্দ বাজারের বরুণ সেনগুপ্ত, অভীক সরকার, তার বাবা অশোক সরকার, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ওপর গবেষক প্রবীণ সাংবাদিক-সাহিত্যিক অমিতাভ চক্রবর্তী, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদা শংকর রায়, মনোজ বোস, প্রবোধ কুমার সান্যাল, সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত। আমাদের দেশের কত কত বিখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয় উঠাবসা, কত উপস্থাপককে চিনি জানি। কিন্তু মুন্নী সাহার মতো কড়কড়ে কণ্ঠের রাগঢাক না করা কোনো উপস্থাপক দেখিনি। একদিন তিনি জনাব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে বলেছিলেন, আপনাকে তো লোকে বিশ্ব বেহায়া বলে। একটা রাজনৈতিক নেতাকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষিপ্ত লোকজন কত কথাই তো বলে। শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদীনের বলা আর কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপকের সরাসরি বিব্রতকর অশ্লীল কথা বলা এক কথা নয়। কিন্তু তাকে বুঝাবে কে? খেয়াল নেই, কয়েক মাস আগে সরাসরি প্রচারে তার এক ক্যামেরাম্যান আমার বাসায় গিয়েছিল। সে অনুষ্ঠানে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ছিলেন। তিনি বিএনপির এক ইফতার মাহফিলে যাওয়ায় মুন্নী সাহা জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি তো তাদের ইফতার মাহফিলের শিরোমণি, মধ্যমণি ছিলেন। আপনি বিএনপি সম্পর্কে বলুন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক কম করে আমার থেকে ১০-১২ বছরের বড়। আমরাও খুব সংযত হয়ে তার সঙ্গে কথা বলি। অনুষ্ঠানের সঙ্গে আমাকে সংযুক্ত করলে বলেছিলাম, মুন্নী সাহা আপনি কি জানেন, শিরোমণি আর মধ্যমণির আভিধানিক পার্থক্য কি? দুষ্টের শিরোমণি আর ভালোবাসার অাঁধার মধ্যমণি জানি না তার বোধোদয় হবে কিনা। কিছু দিন আগে কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীককে প্রসঙ্গ ছাড়াই বলে বসেছিলেন, আপনি তো ওয়ানম্যান পার্টি। ক্ষুব্ধ জেনারেল ইবরাহিম প্রতিবাদ করেছিলেন, অনুষ্ঠান থেকে চলে যেতে চেয়েছিলেন। মুন্নী সাহা তার বক্তব্য প্রত্যাহার করায় সে যাত্রায় বেঁচে যান। জাতির শ্রেষ্ঠ গৌরব একজন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে কতখানি সম্মান করা উচিত সে বোধও খুব একটা নেই। শুনেছি, অনেককেই তিনি তাচ্ছিল্য করে এটা ওটা বলেন, কেন বলেন, কীভাবে বলেন- এসবের কোথায় অন্তর্নিহিত শক্তি কিছুই জানি না। যে চ্যানেলের তিনি সর্বেসর্বা, তার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান একটা ভালো পরিবারের সন্তান ও জনাব ফিরোজ কবির অসাধারণ সজ্জন ব্যক্তি। তার ভাই সরকার কবির উদ্দিন রেডিও পাকিস্তান এবং টিভিতে খবর পড়তেন। অমন নামকরা খবর পাঠক আমাদের দেশে খুব বেশি ছিল না। ঢাকা রেডিওতে ২৫ শে মার্চ রাতের শেষ খবর পড়তে গিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তান রেডিওতে আমার জীবনের শেষ খবর পড়া হলো। যদিও এসব ত্যাগী মানুষের কোনো কোনো কথায় স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠার ঘটনাকে অনেক সময় গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা হয় না। তবু তারা আছেন, তাদের এসব ঐতিহাসিক ভূমিকা জাতির হৃদয়পটে থাকবে চিরদিন। রাজনীতি করা মানুষ তাই বর্তমান ঘটনা প্রবাহের চাপে অনেক কিছু করতে চাইলেও করতে পারি না, লিখতে চাইলেও লিখতে পারি না। আজ ভারতের বিস্ময় জাগানো রাজনীতিবিদ, প্রায় ৩২-৩৩ বছর পর একক দল নিয়ে ক্ষমতায় আসার প্রাণপুরুষ শ্রী নরেন্দ্র দামাদোর দাস মোদির বাংলাদেশ সফরের বিষয় দু-চার কথা আলোচনা করি।
প্রায় সবাই জানেন, মহান ভারতের অনেক নেতা-নেত্রীর সঙ্গে আমার একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস, কমিউনিস্ট পার্টি, জনতা পার্টি, ভারতীয় জনতা পার্টি ও আরও অনেক দলের সঙ্গে কমবেশি উঠাবসা ছিল, এখনো যতটা সম্ভব চিঠিপত্র এবং দূরালাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ আছে। গত বছর যখন ভারতের লোকসভার নির্বাচন হয়, নির্বাচনের আগে ভারতের অনেক পণ্ডিতের ধারণা ছিল অবশ্যই বিজেপি লোকসভায় বেশি সিট পাবে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কারণ সরকার গঠন করতে যেহেতু অন্য দলের সমর্থন লাগবে, সেহেতু তারা গুজরাটের দাঙ্গার অভিযোগে অভিযুক্ত নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন করবে না। তাই বিজেপির সরকার হলেও শ্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হবেন না। তাদের যুক্তি খুব একটা ফেলনা ছিল না। এ নিয়ে ভারতীয় অনেক কূটনীতিকও আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু কেন যেন আমার সব সময় মনে হয়েছে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের দিন ১৫ আগেও বিজেপির সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ উচ্চ পর্যায়ের একজন ঢাকায় এসেছিলেন। তার ধারণাও তেমনই ছিল। যেহেতু আমার সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল তাই তাকে আমি আমার মতো জানিয়েছিলাম। সেই কবে ভারতীয় একক দলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রায় লুপ্তির পথে ছিল যেটা আবার ফিরে এসেছে। তবে ইলেকশনের আগে কথা উঠেছিল যে কোনো নারী নেতৃত্বে ভারতে মিলঝুল সরকার হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তামিল নাড়ুর জয়ললিতা, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতি এরা মিলে শতাধিক সিট পেলে তাদের মধ্যে কেউ একজন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। কিন্তু কেন যেন আমার তেমন মনে হয়নি। লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস খুবই ভালো করেছিল। ৪২ আসনের ৩৮ আসন পেয়েছিল তারা। ২টি কংগ্রেস, ১টি বিজেপি, ১টি সিপিএম। অন্যদিকে তামিলনাড়ুর ৩৯ সিটের মধ্যে ৩৭টি পেয়েছিলেন জয়ললিতা। কিন্তু উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর দল লোকসভায় তেমন সুবিধা করতে পারেনি। সোয়াশ বছরের প্রবীণ দল কংগ্রেসের সিট নেমেছে ৫০ এর নিচে। পৃথিবীর এক আশ্চর্য ঘটনা। শ্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম লোকসভায় প্রবেশ করে এক অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছিলেন। কারণ ওর আগে তিনি কখনো লোকসভার সদস্য ছিলেন না। লোকসভায় প্রথমবার নির্বাচিত হয়েই নেতা হয়েছেন। তাই তিনি বলেছিলেন, আমি এখানে সম্পূর্ণ নতুন। কিছুই জানি না। ভুল হলে প্রবীণরা ক্ষমা করবেন। আপনাদের কাছ থেকে জেনেশুনে আস্তে আস্তে আমি শিখে নেব। সেই সময়টুকু আপনারা আমাকে দেবেন। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদি প্রথম জাতিসংঘে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে দেওয়া এক সম্বর্ধনায় প্রায় ২৪ হাজার লোকের মধ্যে এমন এক অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছিলেন যা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। একপর্যায়ে তিনি এও বলেছিলেন, 'ম্যায়নে চা বেস্তা বেস্তা ইহাতক পৌঁছ গিয়া। হাম পিছে নেহি দেখ্তা, হাম সিধা দেখ্তা।' শ্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে প্রায় ১৮-২০ বছরের প্রবীণ আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী সেই আমেরিকাতেই ১৪-১৫ জনের সামনে এক বক্তৃতা করে জীবনের সব কিছু খুইয়েছেন। মুসলমান হিসেবে তাকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছিলাম। তার জন্যও আমাকে নিদারুণ গালাগাল করেছেন। তা করুন, বড় ভাই হিসেবে জন্মেছেন, গালাগাল বা তিরস্কার করার তার জন্মগত অধিকার। তাই এসব নিয়ে কিছু ভাবি না। সারা জীবন আওয়ামী লীগ করেছেন। আওয়ামী লীগ তাকে ত্যাগ করেছে। মুসলমান হিসেবে তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তার জন্য এখনো আমি আমার জীবন বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করব না।
গত আগস্টে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির এডিশনাল সেক্রেটারি প্রদ্যুৎ গুহের একমাত্র ছেলের বিয়ে ছিল। আমি যখন ভারতে নির্বাসনে তখন প্রদ্যুৎ গুহ পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের জনপ্রিয় সভাপতি ছিলেন। অনেক বছর মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে আছেন। বাঘা দা বলতে অজ্ঞান। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার কারণে আগস্ট মাসে কোনো অনুষ্ঠানে যাই নাই। ৩ বা ৪ আগস্ট ছিল প্রদ্যুৎ গুহের ছেলের বিয়ে। সেখানে থাকা-খাওয়া সব ব্যবস্থা তারাই করেছিলেন। কিন্তু তারপরও তাদের ব্যবস্থাপনায় থাকতে পারিনি। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও মানুষ মানুষের কতটা আপন হতে পারে তা শর্মিলা বকশী মিলুকে না দেখলে বোঝা যায় না। আগে দিলি্লর এয়ারপোর্ট পালামে ছিল। এখন হারিয়ানার গোরগাওয়ে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তার পাশেই মিলুর বিশাল ফ্ল্যাট বাড়ি। মিলু বাপ-মায়ের এক সন্তান। একই ভবনের একতলা নিচে মিলুর মা ড. অরুণা চক্রবর্তী থাকেন। সেটাও ৪-৫ হাজার স্কয়ার ফুটের বাড়ি। আমার ছোট ভাইয়েরা কয়েকবার লটবহর নিয়ে মিলুর বাড়িতে থেকেছে। তাই এবার শক্ত করে ধরেছিল, দাদা তোমাকে এবার আমাদের বাড়িতে থাকতে হবে। মেয়েটাকে না করতে পারিনি। তাই সরকারি গাড়িতেই ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সে যে কি অসাধারণ যত্ন করেছে বলতে পারব না। শরীয়তপুরের ডিঙ্গামানিক মিলুর পূর্ব পুরুষের বাড়ি। ওর ইচ্ছে ওর বাপ-দাদার ভিটায় একবার সে যাবে। আজ ১৫-২০ বছর ধরে বলছি, যখন খুশি এসে ঘুরে যা। মাঝে একবার এসেছিল। কিন্তু সময় হয়নি। এক ছেলে এক মেয়ে স্বামী নিয়ে ছোট সংসার। কলেজে পড়িয়ে সময় পায় না। মজার ব্যাপার, যখন ওর বাড়িতে ছিলাম, আসার আগের দিন ছিল ভাইফোঁটা। ১৮ বছর আগে পাকিস্তান থেকে আসা কমর মহসীনের গুজরাটে বিয়ে হয়। তাকে গুজরাটের গভর্নর শ্রী স্বরূপ সিং বিদায়ের সময় তার মেয়ে পরিচয় দিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে ভাই বানিয়ে এসেছিলেন।
সেই থেকে সে প্রতি বছর তাকে ভাইফোঁটা দেয়। সেবারও সে ফোঁটা দেবে কিনা বা দিতে পারবেন কিনা- এ নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা চলছিল। ৮ আগস্ট ছিল সেই শুভ দিন। আমি ছিলাম মিলুর গোরগাওয়ের বাড়িতে। হিসেব করে দেখলাম ১৮ বছর ধরে এক মুসলমান বোন হিন্দু ভাই নরেন্দ্র মোদিকে ভাইফোঁটা দিচ্ছে আর ৩৬ বছর ধরে এক হিন্দু বোন মিলু তার মুসলমান ভাই কাদের সিদ্দিকীকে ভাইফোঁটা দিয়ে চলেছে। কি আশ্চর্য মিল। আগের দিন নরেন্দ্র মোদি নেপাল সফরে ছিলেন। ঢাকায় ফিরে খবর পেয়েছিলাম শ্রী নরেন্দ্র মোদি তার মুসলমান বোনের ভাইফোঁটা ঠিকই নিয়েছেন। সত্যিই তিনি এক আশ্চর্য মানুষ। একেবারে নিজের দক্ষতা যোগ্যতায় এতদূর এসেছেন। তাই আমাদের দেশ সফরে এসে সাধারণ মানুষের কোনো ভালোবাসা পাবেন না। বরং বিনা ভোটে জবরদখলকারী সরকারের আহ্বানে এসে বিব্রতকর অবস্থায় পড়লে তা হবে আমাদের জন্য মর্মবেদনার কারণ।
তার পূর্ববতী সরকারের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং অবৈধ কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে এ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। এই অপ্রিয় সরকার দেশ চালাতে সম্পূর্ণই ব্যর্থ। তাদের আহ্বানে বা আমন্ত্রণে বিপুল ভোটে নির্বাচিত একজন মহান নেতার আমাদের দেশে আসা উচিত না। বিশেষ করে আমাদের স্বাধীনতার জন্যে যে দেশের ১৪ হাজার বীর সেনার রক্ত আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। আমরা সেই দেশের নেতাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ১৬ কোটি মানুষ দুই হাত প্রসারিত করে উন্মুখ হয়ে আছি। তাই আমরা আশা করি, আমাদের উষ্ণ বুক তার সানি্নধ্য থেকে বঞ্চিত হবে না। আমরা ১৬ কোটি জনগণ তাকে হৃদয়ের সমগ্র উত্তাপ দিয়ে গ্রহণ করতে চাই- এ জন্য একটি জনপ্রিয় নির্বাচিত সরকারের আমন্ত্রণের অপেক্ষায় তাকে থাকতেই হবে। এই সরকারের দেশের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই শ্রী মোদির সফরে কেউ যদি রাস্তায় নেমে নিন্দাবাদ জানায় আমরা মুখ দেখাতে পারব না, বড় লজ্জায় পড়ব। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আশা করব ভারতের একজন সফল নেতা আমার দেশবাসীকে তেমন লজ্জায় ফেলবেন না।
লেখক : রাজনীতিক।
No comments