আমরা কেন পারছি না by এস এম মাসুম বিল্লাহ
লেখক: এস এম মাসুম বিল্লাহ |
নিউজিল্যান্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্য |
মন
যেন এক ঝলসে যাওয়া সিনাই পর্বত! ওয়েলিংটনে পা দিয়েই আবেগি ও সাংস্কৃতিক
ঝাঁকি আমাকে হন্যে করে ফেলল। আশপাশের রূপ-রস-গন্ধ-শব্দ-স্পর্শ তাই তেমন
অনুধাবন করা যায়নি। তবুও এক সময় এদিক-ওদিক যাওয়া পড়ে! কী শান্ত,
স্নিগ্ধ হয়ে আছে পাহাড়, সাগর, ঝরনা আর বন! আমি তাকিয়ে থাকি। কবি রুমি
বলেছিলেন, ‘সৌন্দর্য আমাদের চারপাশ ঘিরে থাকে৷ তা আস্বাদন করতে হলে এর
ভেতরে প্রবেশ করতে হয়৷’ নিউজিল্যান্ড এর সার্থক প্রয়োগ বটে! সবুজ বাংলাকে
মনে পড়ে। জীবনানন্দকে মনে পড়ে। জীবনানন্দ নিউজিল্যান্ডের রূপ দেখলে কী
একই কবিতা লিখতেন? ‘রূপ আমি দেখিয়াছি তাই, পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে চাই না
আর!’
প্রকৃতি, প্রাণী, উদ্ভিদ, মানুষ সবাই ভাগ করে নিয়েছে দেশটি। লম্বা সাদা মেঘের দেশ এটি মাওরি ভাষায় যার নাম আও-তে-রোয়া। পাহাড়ের বুক বিদীর্ণ করে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি। পাহাড় এমন যত্ন করে কাটা যেন তার রূপে কোনো আঁচড় না পড়ে! পাহাড় অখুশি নয়। মানুষের ওপর তার আস্থা আছে! সে জানে আরও বড় মহৎ কিছু তাকে দিয়ে হচ্ছে। শুধু পাহাড় নয়, অন্য সবার ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য।
আমরা কেন বাংলার রূপ ধরে রাখতে পারছি না? ভেবে দেখলাম—অপরিণামদর্শীর মতো দেশটাকে শুষে নিচ্ছি আমরা মানুষ নামের প্রাণীরা। ‘আখ মাড়াইয়ের মতো নারীর জানু চেপে উৎপাদন করে চলেছি সন্তান৷’ ভূমি, পাহাড়, নদী আর বন বিরান করে দিয়েছি। কেড়ে নিয়েছি পাহাড়ের কান্না, নদীর বিরহ, বনের ঔদার্য আর প্রাণিকুলের নির্লিপ্ততা। নদী ও নারী শুষে নিয়ে এখন আমরা বিরস, বর্গি যেন। আমাদের নদীও আর নারীর মতো কথা কয় না৷
এক ঢাকা শহরকে যে মাত্রায় শোষণ করছি আমরা, ঢাকার মাটির যদি কণ্ঠ থাকত, তাহলে চিত্কার করে বলত, ‘দয়া করে আমাকে একটু বৃষ্টির স্বাদ নিতে দিন৷ আমার ভেতরটা জ্বলছে৷ একটু ইট, বালু, সুড়কি, কংক্রিট আমার বুকটা থেকে সরান৷ আমার পানির স্তরটা একটু বাড়াই, প্লিজ!’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমাদের হৃদয় রড-সিমেন্টের বড় বিজ্ঞাপন।
ভেবে দেখলাম, এখানকার মানুষের দর্শন ভিন্ন। সব প্রজাতির কল্পিত পার্লামেন্টে নিউজিলান্ডের মানুষেরা নিজেদের একটা সদস্যমাত্র ভাবে। ইন্টার-জেনারেশনাল ইকুইটির কী প্রসন্ন প্রয়োগ সবখানে! বর্তমান প্রজন্ম ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে একটা দায় অনুভব করে। একটা চড়ুই পাখিও বিনা কারণে ভূপাতিত হবে না—এই এদের মুক্তির দর্শন! আমার উপলব্ধিতে হয়তো রং আছে। কিন্তু যে বাংলার রং নিয়ে বড় হয়েছি, তাও তো দিনে দিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে! এখন ফরিদা পারভিনের কিন্নরী কণ্ঠে কি ‘এই অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুঁয়ে, নির্ভয়ে নীলাকাশ রয়েছে নুয়ে’ শোনা যায়? হয়তো যায়, কিন্তু দেখা কী যায়?
(পিএইচডি শিক্ষার্থী, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটন)
প্রকৃতি, প্রাণী, উদ্ভিদ, মানুষ সবাই ভাগ করে নিয়েছে দেশটি। লম্বা সাদা মেঘের দেশ এটি মাওরি ভাষায় যার নাম আও-তে-রোয়া। পাহাড়ের বুক বিদীর্ণ করে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি। পাহাড় এমন যত্ন করে কাটা যেন তার রূপে কোনো আঁচড় না পড়ে! পাহাড় অখুশি নয়। মানুষের ওপর তার আস্থা আছে! সে জানে আরও বড় মহৎ কিছু তাকে দিয়ে হচ্ছে। শুধু পাহাড় নয়, অন্য সবার ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য।
আমরা কেন বাংলার রূপ ধরে রাখতে পারছি না? ভেবে দেখলাম—অপরিণামদর্শীর মতো দেশটাকে শুষে নিচ্ছি আমরা মানুষ নামের প্রাণীরা। ‘আখ মাড়াইয়ের মতো নারীর জানু চেপে উৎপাদন করে চলেছি সন্তান৷’ ভূমি, পাহাড়, নদী আর বন বিরান করে দিয়েছি। কেড়ে নিয়েছি পাহাড়ের কান্না, নদীর বিরহ, বনের ঔদার্য আর প্রাণিকুলের নির্লিপ্ততা। নদী ও নারী শুষে নিয়ে এখন আমরা বিরস, বর্গি যেন। আমাদের নদীও আর নারীর মতো কথা কয় না৷
এক ঢাকা শহরকে যে মাত্রায় শোষণ করছি আমরা, ঢাকার মাটির যদি কণ্ঠ থাকত, তাহলে চিত্কার করে বলত, ‘দয়া করে আমাকে একটু বৃষ্টির স্বাদ নিতে দিন৷ আমার ভেতরটা জ্বলছে৷ একটু ইট, বালু, সুড়কি, কংক্রিট আমার বুকটা থেকে সরান৷ আমার পানির স্তরটা একটু বাড়াই, প্লিজ!’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমাদের হৃদয় রড-সিমেন্টের বড় বিজ্ঞাপন।
ভেবে দেখলাম, এখানকার মানুষের দর্শন ভিন্ন। সব প্রজাতির কল্পিত পার্লামেন্টে নিউজিলান্ডের মানুষেরা নিজেদের একটা সদস্যমাত্র ভাবে। ইন্টার-জেনারেশনাল ইকুইটির কী প্রসন্ন প্রয়োগ সবখানে! বর্তমান প্রজন্ম ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে একটা দায় অনুভব করে। একটা চড়ুই পাখিও বিনা কারণে ভূপাতিত হবে না—এই এদের মুক্তির দর্শন! আমার উপলব্ধিতে হয়তো রং আছে। কিন্তু যে বাংলার রং নিয়ে বড় হয়েছি, তাও তো দিনে দিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে! এখন ফরিদা পারভিনের কিন্নরী কণ্ঠে কি ‘এই অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুঁয়ে, নির্ভয়ে নীলাকাশ রয়েছে নুয়ে’ শোনা যায়? হয়তো যায়, কিন্তু দেখা কী যায়?
(পিএইচডি শিক্ষার্থী, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটন)
No comments