বাগদাদে সশস্ত্র শক্তির মহড়া শিয়াদের

সুিন্ন জঙ্গিরা ইরাকের রাজধানী বাগদাদের দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে৷ এখন তারা বাগদাদ থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে৷ এ অবস্থায় প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদরের আহ্বানে তাঁর অনুগত হাজার হাজার যোদ্ধা গতকাল শনিবার বাগদাদের সদর সিটির বিভিন্ন সড়কে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছে৷ এতে দেশটিতে জাতিগত সহিংসতার আশঙ্কা বেড়েছে৷ খবর রয়টার্স, এএফপি ও সিএনএনের৷ সর্বশেষ খবরে বলা হয়, সুন্নি জঙ্গিরা গতকাল শনিবার দিনভর লড়াইয়ের পর ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ চৌকি দখল করে নিয়েছে৷ লড়াইয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৩০ জন সদস্য নিহত হয়েছে বলে জঙ্গিরা দাবি করেছে৷ এর আগে শুক্রবার সীমান্তবর্তী আল-কাইম শহরের কাছে ওই এলাকায় ঢোকে জঙ্গিরা৷ আল-কাইম শহরের পতন হয়েছে শুনে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনেক সদস্য চৌকি ছেড়ে পালিয়ে যায়৷ তবে ইরাকের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াডের অধিনায়কের গণমাধ্যম উপদেষ্টা সামির আল শওইয়ালি দাবি করেন, আল-কাইম এখনো ইরাকি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এর আগে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্টের (আইএসআইএল) সুন্নি জঙ্গিরা ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুলসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি এলাকার দখল নিয়েছে৷ তারা মসুলের বিভিন্ন ব্যাংক লুট করে এবং পলায়নপর সেনাদের অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নেয়৷ এদিকে দেশটির বৃহত্তম তেল শোধনাগার বাইজি এবং উত্তরাঞ্চলীয় তাল আফার বিমানবন্দরের দখল নিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর এখনো ব্যাপক লড়াই চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে৷ চলমান লড়াইয়ের ফলে ইরাকে জাতিগত বিভক্তি প্রকট হয়েছে৷ কুর্দি সম্প্রদায়ের লোকজন উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কিরকুক শহরসহ নিজেদের দখলসীমা সম্প্রসারণ করেছে৷ আর সুন্নিরা পশ্চিমে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে৷
শিয়া সম্প্রদায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার বিভিন্ন সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিতে যোদ্ধা ও স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠাচ্ছে৷ প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদরের পাশাপাশি ইরাকে শিয়া সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ গ্রান্ড আয়াতুল্লাহ আল-সিসতানি আইএসআইএলের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান৷ ওবামার হুঁশিয়ারি: মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তায় কোনো কাজ হবে না৷ ইরাকের রাজনৈতিক নেতাদের জাতিগত বিবাদ বর্জন করে রাষ্ট্রীয় ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ ওবামা বলেন, ‘মার্কিন সামরিক সহায়তা যত বেশিই দেওয়া হোক না কেন, তাতে ইরাকের ঐক্য অটুট থাকবে না৷ এ কথা আমি ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকিসহ দেশটির নেতৃত্বকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি৷ আমরা দেশটিকে সবার অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিয়েছিলাম৷ জাতিগত বিভেদ ভুলে কাজ করলে দেশটির শিশুদের জন্য একটি উন্নততর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল৷ কিন্তু আমরা আস্থার ভাঙন দেখতে পেলাম৷’ মার্কিন সেনারা ইরাক ছেড়ে যাওয়ার পর আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য মালিকির নেতৃত্বাধীন সরকার সেখানে সুন্নি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়েছে৷ এ জন্য মালিকিকে দায়ী করে দেশটির ক্ষমতা থেকে তাঁর আসন্ন বিদায়ের ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ মালিকি যুক্তরাষ্ট্রকে জঙ্গিদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানোর অনুরোধ জানালেও ওবামা প্রশাসন সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে৷ ইরাকি বাহিনীর সহায়তায় কেবল ৩০০ মার্কিন সামরিক উপদেষ্টা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা৷ এদিকে জাতিসংঘ বলেছে, চলতি বছরের সহিংসতায় ইরাকে অন্তত ১০ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে৷ গত সপ্তাহে জঙ্গিরা মসুল দখলের পর অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে৷

No comments

Powered by Blogger.