ইউপিএর পথে হাঁটছেন মোদি

দুই বছর আগে যে কারণে মনমোহন সিং সরকারের সমালোচনা করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে ঠিক সেই পথেই হাঁটলেন নরেন্দ্র মোদি। পার্লামেন্টকে এড়িয়ে বাজেট অধিবেশনের আগেই বাড়িয়ে দিলেন ট্রেনের যাত্রীভাড়া ও পণ্যমাশুল। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রেল মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার দেশজুড়ে চলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। সব ধরনের ট্রেনে সব শ্রেণিতে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ হারে যাত্রীভাড়া বাড়ানো হয়েছে। পণ্যমাশুল বাড়ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। শুধু যাত্রীভাড়া বাবদই ভারতীয় রেলের বার্ষিক আয় বাড়বে ছয় হাজার কোটি রুপি। এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে দূরপাল্লার ট্রেনের তাপানুকূল প্রথম শ্রেণির টিকিটের দাম সংশ্লিষ্ট রুটে বিমানভাড়ার চেয়ে মাত্র কিছু টাকা কম হবে। ফলে ভাড়া বৃদ্ধিতে আদৌ লাভ হবে কি না, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দুই বছর আগে ২০১২ সালে বাজেট অধিবেশনের আগে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার ২০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। ৭ মার্চ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি টুইট করে ‘পার্লামেন্টকে এড়িয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ভাড়া বাড়ানোর’ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন। গত শুক্রবার সেই একই পথে হাঁটা মোদি সরকার অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থন করেছে। রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া বলেন, ইউপিএ সরকারই এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিল। কিন্তু ভোট এসে যাওয়ায় তা ঘোষণা করেনি। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খাড়গে সেই সিদ্ধান্ত পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারা সেটাই ঘোষণা করল। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি শনিবার বলেন, সিদ্ধান্তটা কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয়। মুখতার আব্বাস নাকভি বলেন, এখন খারাপ লাগতে পারে কিন্তু ভবিষ্যতে মানুষ বুঝবে, সিদ্ধান্তটা অর্থনীতির পক্ষে কতটা দরকারি ছিল।
দলের আরেক নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিং বলেন, সরকারের সামনে দুটো রাস্তা ছিল। ভাড়া না বাড়িয়ে ভোটব্যাংকের রাজনীতি করা অথবা প্রবৃদ্ধির স্বার্থে ভর্তুকি কমানো। সরকার যাই বলুক, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজধানীতে রেল ভবনের সামনে কংগ্রেস বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভ হয় অন্যত্রও। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ছোড়ে। কলকাতায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে বামপন্থীরা। প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। বারানসিতে বিক্ষোভ দেখায় সমাজবাদী পার্টি। ডিএমকে নেতা এম করুণানিধি বলেন, কংগ্রেস যেভাবে দেশ চালাত, বিজেপিও সেভাবেই দেশ চালাচ্ছে। আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ কটাক্ষ করে বলেন, ভালো দিন কেমন এসেছে, মানুষ তা বুঝতে পারছে। দিন যত এগোবে আরও বুঝবে। ভর্তুকি কমানোর যে রাস্তায় হেঁটেছিল কংগ্রেস সরকার, মোদিও সেই পথের পথিক হয়েছেন। রেলের ভাড়া ও পণ্যমাশুল বাড়ানো ছাড়াও ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। গ্যাসের দাম প্রতি মাসে সিলিন্ডারপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ইরাকে অশান্তির দরুন পেট্রল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধি অবধারিত। এই সিদ্ধান্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও অবধারিতভাবে বাড়িয়ে দেবে। অনাবৃষ্টির কারণে শস্য উৎপাদন এবার মার খাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। ফলে প্রবৃদ্ধির হার কমতে বাধ্য। এই আশঙ্কা করেই মোদি সম্প্রতি গোয়ায় দলীয় বৈঠকে কঠিন ও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বিপুল সমর্থনে জয়ী সরকারের কাছে অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও এটাই। রেলের ভাড়া ও মাশুল বৃদ্ধির পর তাই এখন মনে করা হচ্ছে, বাজেটও সাধারণ মানুষকে বিশেষ খুশি করতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.