গদ্য কবিতা- 'লীলা আমার বোন' by নান্নু মাহবুব
সেদিন হঠৎ এক সবুজ কুকুর হয়ে ‘কিঁউ’ বলে বিদ্যুৎগতিতে পিছিয়ে আসি তোমাদের মিষ্টির দোকানের সামনে থেকে। চোখের সামনে ভাসতে থাকে উল্কার মতো উড়ে যাওয়া চ্যালাকাঠ, কালো, অঙ্গার-অঙ্গার। তাই দেখে ছাদসমান উঁচু-উঁচু মিষ্টির আলমিরার আড়াল থেকে এক রুটিরঙ ধেড়ে টিকটিকি হেসে ওঠে যেন কিছুই দেখেনি। পাশেই বনখেসারির হালকাসবুজ বনের মধ্যে দিয়ে ভোঁতা এক রেলগাড়ি চলে যায় আর আমার পাশের রেলরাস্তা ঘেঁষে-ওঠা বোকা এক পলাশের মাথা থেকে হাজার হাজার কমলাপাখি আকাশে ওড়ার জন্য একসাথে ঝাপটে ওঠে। হিরিঝিরি বৃষ্টিবাতাসে নদীর ধার ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের হাঁটন্ত দেহটাকে দেখি। সবুজ চকচকে ধাতব আঁশে সমস্ত দেহ ঢেকে আছে। একটু ঝনঝন শব্দ হচ্ছে নাকি? আর্মাডিলো বা ঐ রকম প্রাণীদের মতো! একটু গর্ব হয়। কতক্ষণ এরকম থাকি কে জানে!
শাদা একটা বলের মতো কিছু পড়ে আছে দেখে মাটি শুঁকতে শুঁকতে এগিয়ে যাই। কুৎসিত ন্যাকড়াকাণ্ড ছাড়া কিছু নয়। মুহূর্তে মনের মধ্যে এই নদীটির শৈশব ভেসে ওঠে। ন্যাকড়া জড়ানো মানুষের ভ্রূণ পড়ে থাকতে দেখতাম প্রায়শই। দু’এক ছোপলা রক্ত-রক্ত দাগ। সাড়ে পয়তাল্লিশ লক্ষ মানবভ্রূণ এই নদীতে ফেলা হয়। তাদের গর্ভনিশ্বাসে শুকিয়ে যায় এই একদা স্রোতস্বিনী নদী। খুন আর খুন। মাঝরাতে কোনো গোস্তের দোকানের পচন্ত আড়ালে শুয়ে শুয়ে আমি এই নদীটির মাটি-চাপা বীভৎস গোঙানি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাই। আর স্বপ্ন দেখি।
স্বপ্ন দেখি বাতাসকে স্তব্ধ করে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় মেহগনি বনের ওপরে এক সবুজ থালার মতো চাঁদ। সেই চাঁদের শরীর জুড়ে পুরাণের জলছবি, জীবন্ত, বোঝা যায়। বনের উল্টোদিকে একরাশ ভেজা সোনা ছড়িয়ে সূর্য নরম লাল মাখনের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেছে এক অনন্তর ঘাসপথ। সে পথের শেষপ্রান্তে স্ফটিকোজ্জ্বল আকাশনীল দরোজা। আরো গভীরে তার লোকালয়। মানুষের পৃথিবীর ছবি। তোমার বাবা, তোমাদের বাগান, তোমাদের ঈষৎ জংধরা লোহার গেট। তার ওপর ঝাপড়ে আসা তাজা বাগানবিলাসের ঝাঁক ঝাঁক কুঁড়ি। তুমি যেদিন সেই বেবুনটার বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে হসপিটালের ছাদ থেকে উড়ে গেলে গ্রানাডায়, মক্কার প্রপাত যেন ডুবিয়ে দিল আমাকে, সেই থেকে আমি রোজরাতে স্বপ্ন দেখি তোমাকে।
প্রপাতের নিচে শুয়ে শুয়ে ওপরে তাকিয়ে যা যা দেখি - তোমার বাবার মুখ, তোমাদের বন্ধ গেটে লেপ্টে আছি শাদা কাগজের মতো আর দেখতে পাচ্ছি দূরে ঘর জুড়ে হলুদ আলোতে তোমার বাবার দেহ দীর্ঘ হতে হতে আকাশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে আর মেঝেতে শুয়ে-থাকা সবুজ নার্সের ছোট আলপনা। তারপর উঠে আসছে নার্স তোমার বাবার দেহের ওপরে। সবুজ নার্সের দেহ বড় হতে হতে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বন প্রান্তর আকাশ। তোমার বাবা তখন নেতানো খবরের কাগজের মতো মিশে যেতে চাইছেন মেঝেতে।
এইসব দৃশ্য চলে অনন্ত ব্রডওয়ে, চলে দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী জুড়ে। আর আলোয় ফালি-ফালি হয়ে নিজের টুকরোগুলো জোড়া লাগিয়ে আমি আবার গন্ধ শুঁকে শুঁকে হেঁটে যাই, আন্ধার-আন্ধার গলি, জবজবে শেয়াকুল বন, বৃষ্টি-লেপ্টানো কদমপ্রান্তর, তারপর আড়াল হতে হতে আবার সেই নদীপথ, নদীর ধার ঘেঁষে এখন যেখানে বসে আছি।
একা আমি বসে আছি সবুজ বর্ম পরে, মৃত নদীটির ধারে, একদা স্রোতস্বিনী নদীটির ধারে।
========================
নান্নু মাহবুব
জন্ম
যশোর, ১১ জুন ১৯৬৪
nannumahbub@yahoo.com
কাব্যগ্রন্থ
রাত্রিকালীন ডাকঘর(১৯৯৫)
পুনরুত্থিত শহর(২০০৫)
যশোর, ১১ জুন ১৯৬৪
nannumahbub@yahoo.com
কাব্যগ্রন্থ
রাত্রিকালীন ডাকঘর(১৯৯৫)
পুনরুত্থিত শহর(২০০৫)
====================
কবিতা- 'উৎসর্গ' by অসীম সাহা তিনটি কবিতা' by বদরে মুনীর কবিতা- 'সেরগেই এসেনিন বলছে' by আবদুল মান্নান সৈয়দ কবিতা-মোহাম্মদ রফিক এর কপিলা থেকে ও অঙ্গীকার কবিতা- 'সেতু' by বায়েজীদ মাহবুব উপন্যাস- 'রৌরব' by লীসা গাজী »»» (পর্ব-এক) # (পর্ব-দুই) # (পর্ব-তিন) # (পর্ব-চার শেষ) গল্প- 'পান্নালালের বাস্তু' by সিউতি সবুর গল্প- 'গোপন কথাটি' by উম্মে মুসলিমা আহমদ ছফার অগ্রন্থিত রচনা কর্ণফুলীর ধারে আলোচনা- 'খানিক ছফানামা' by কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর প্রবন্ধ- অল্পবিদ্যা কংকরবোমা : 'ফ্রয়েড, এডোয়ার্ড স.
কবিতা- 'উৎসর্গ' by অসীম সাহা তিনটি কবিতা' by বদরে মুনীর কবিতা- 'সেরগেই এসেনিন বলছে' by আবদুল মান্নান সৈয়দ কবিতা-মোহাম্মদ রফিক এর কপিলা থেকে ও অঙ্গীকার কবিতা- 'সেতু' by বায়েজীদ মাহবুব উপন্যাস- 'রৌরব' by লীসা গাজী »»» (পর্ব-এক) # (পর্ব-দুই) # (পর্ব-তিন) # (পর্ব-চার শেষ) গল্প- 'পান্নালালের বাস্তু' by সিউতি সবুর গল্প- 'গোপন কথাটি' by উম্মে মুসলিমা আহমদ ছফার অগ্রন্থিত রচনা কর্ণফুলীর ধারে আলোচনা- 'খানিক ছফানামা' by কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর প্রবন্ধ- অল্পবিদ্যা কংকরবোমা : 'ফ্রয়েড, এডোয়ার্ড স.
bdnews24 এর সৌজন্যে
লেখকঃ নান্নু মাহবুব
এই কবিতা'টি পড়া হয়েছে...
লেখকঃ নান্নু মাহবুব
এই কবিতা'টি পড়া হয়েছে...
No comments