আলোচনা- 'ধর্মীয় আবেগের আচ্ছাদনে রাজনীতি' by এবিএম মূসা
সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে, সংবিধানের সংশোধন-সম্পর্কীয় উচ্চতর আদালতের দুটি রায়ের পর ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি।
ধর্মীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে রাজনৈতিক দলের নামকরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ, গত মঙ্গলবার বিভিন্ন পত্রিকার একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে না’।
এ নিয়ে চ্যানেল আইয়ের টক শোতে আলোচনা প্রসঙ্গে আমি বলেছি, সংবাদটি বিভ্রান্তিকর না হলেও অস্পষ্ট বটে। তার চেয়ে বিভ্রান্তিকর ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থান। উচ্চতর আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল আর রায়ের ব্যাখ্যা করে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া নিয়ে সরকারের কারও কারও মতামত প্রদান ধর্ম-রাজনীতি সম্পর্কবিষয়ক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
বাহাত্তরে মূল সংবিধান যখন রচিত হয়, তখন অবশ্যই পাকিস্তান আমলের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও ধর্মীয় বিধানের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্কের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। সবে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে। সেই যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি ও তাদের দোসররা পূর্ব পাকিস্তানে ইসলাম রক্ষার দোহাই দিয়ে নরহত্যা ও নারীধর্ষণ করেছিল। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাঠানো সাধারণ সেনাদের বোঝানো হয়েছিল, তারা পূর্ব পাকিস্তানে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে যাচ্ছে। তাই তারা সত্যিকারের ‘পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছিল। এই তিক্ত স্মৃতি নিয়ে বাহাত্তরের সংবিধান রচয়িতারা অসাম্প্রদায়িকতাকে গ্রহণ ও রাজনীতিতে ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রয়োগ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন। এই নিষিদ্ধকরণ রহিত হয়ে গেল পঁচাত্তরে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর, যখন অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শে অবিশ্বাসী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি ক্ষমতা দখল করল। বিতাড়িত পাকিস্তানি শাসকদের অপকৌশল অনুসরণে তারা ধর্মীয় লেবাসধারী রাজনীতি ও জনগণের ধর্মীয় আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল অবলম্বন করল। একাত্তরের পরাজিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতি অনুসরণকারী রাজনৈতিক দলগুলো আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ পেল। আওয়ামী লীগ পরবর্তী সময়ে, মানে এবার ক্ষমতায় এসে সেই লেবাসটি পুড়িয়ে ফেলার, ধর্মের নামে রাজনীতির ময়দান দখলের কৌশলটি বিনষ্ট করার কতিপয় পদক্ষেপ নেয়। এ অবস্থায় সামরিক একনায়কদের সহায়তায় অপশক্তি কর্তৃক ক্ষমতা দখলকারীদের গৃহীত কতিপয় পদক্ষেপ অকার্যকর করার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রায় সহায়কের ভূমিকা পালন করে। আদালত সরাসরি ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেন না। তবে, সংবিধানের মূল নীতির প্রধানত, অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ থেকে বিচ্যুতি অসাংবিধানিক ঘোষণা করলেন। আদালতের এই খড়্গে বলি হলো সাম্প্রদায়িক রাজনীতি; সোজা কথায় যাকে বলে ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করার ওপর পরোক্ষে বিধিনিষেধ কায়েম হলো। এই রায়ের ব্যাখ্যায় ধর্মীয় পরিচয়ে রাজনৈতিক দল বৈধ কি না, সেই প্রশ্নটি সামনে এসে গেল।
আইনজ্ঞ বা সংবিধান বিশেষজ্ঞ না হয়েও এ সম্পর্কে উচ্চতম আদালতের রায় আমি সাধারণ বুদ্ধিমত্তায় এভাবেই ব্যাখ্যা করছি। এখন সেই রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্লেষণ হচ্ছে। সরকার বলছে, রায়ে সংবিধানের কতিপয় ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করায় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রায় কার্যকর করতে সংসদে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এখন শুধু ‘সংশোধিত’ সংবিধান পুস্তকাকারে প্রকাশ করতে হবে। সরকারের বক্তব্যের বিরোধীরা বলছেন, এমনকি সরকারি দলের কয়েকজন প্রবীণ সদস্য ও আদি-সংবিধানপ্রণেতারাও বলছেন, ‘সংসদ সার্বভৌম, সংবিধানের ধারা পরিবর্তন অথবা পরিমার্জন আদালতের আওতাধীন নয়।’ তাঁরা এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৪২(ক) অনুচ্ছেদের উল্লেখ করেছেন, যাতে বলা হয়েছে, ‘সংসদের আইন দ্বারা এই সংবিধানের কোন বিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণের দ্বারা সংশোধিত হইতে পারিবে।’ তাঁদের এই বক্তব্যের যুক্তি খণ্ডনকারীরা বলছেন, তাহলে সামরিক প্রজ্ঞাপন জারি করে যাঁরা সংবিধান কাটাছেঁড়া করেছেন, এমনকি মূল আদর্শ বা স্পিরিটকে অগ্রাহ্য করেছেন, তাঁদের ছাপানো বিধানগুলো বাতিল করার এখতিয়ার আদালতের আছে। কারণ, সংবিধান যেকোনো ধরনের বরখেলাপ বাতিল করার ক্ষমতা সংবিধানের রক্ষক উচ্চতম আদালতকে দিয়েছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে মহামান্য উচ্চ আদালত পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর কতিপয় ধারা সাংবিধানিক বিধানের বিচ্যুতি বলে রায় দিয়েছেন। এখন শুধু সেই রায় কার্যকর করতে হবে। তা হলেই ধর্মীয় আবেগ পুঁজি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
একই বিবেচনায় আমাদের মহামান্য উচ্চতম আদালত অতীতে অষ্টম সংশোধনীতে বিচারব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থাটি বাতিল করেছিলেন। কিন্তু সেই সংশোধনীর ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ২-ক অনুচ্ছেদ বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি। এই ধারাটিতে হস্তক্ষেপ বা মতামত প্রদান সংবেদনশীল মনে করে ‘বিবেচনায়’ আনেননি, ধর্মীয় আচ্ছাদনটি সরাসরি অপসারণ করেননি। এবার কোনো ধরনের আবেগ বা ‘সংবেদনশীলতা’ আমাদের বর্তমান বিজ্ঞ বিচারপতিরা ন্যায়নিষ্ঠতার পরিচয় দিয়ে বিবেচনায় আনেননি। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা যতই আদর্শ, নীতি, চেতনা ও মূল্যবোধের কথা বলুন না কেন, এই আবেগ নিয়ে ভাবতে হয়। তাই সংবিধানের ‘বিসমিল্লাহ’ আর ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’—এ দুটি বিধান নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও মনে হয় কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তিনি এ দুটি শব্দচয়নের সঙ্গে ধর্মীয় আবেগের সম্পর্ক রয়েছে মনে করেন। অন্যদিকে আদালতের রায় সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত নই বলে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না, দুটি সংশোধনী বাতিলের পর এ দুটির সাংবিধানিক অবস্থান কী হতে পারে। পুনর্মুদ্রিত সংবিধানে এতদসংশ্লিষ্ট ধারাগুলো থাকলে, সামরিক অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা অসাংবিধানিক পদক্ষেপ বিলুপ্ত করা না হলে, উচ্চ আদালতের রায়ের বরখেলাপ অথবা সাংঘর্ষিক হবে কি? এসব জটিল প্রশ্নই ধর্মরাজনীতি সংবিধানবিষয়ক আলোচনা ঘোলাটে করেছে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতিতে অন্যতম পরিবর্তন করা হয়েছিল (দ্বিতীয় ভাগ, ৮ {১-১ক}, অনুচ্ছেদে) ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস হইবে যাবতীয় কার্য্যাবলীর ভিত্তি’। এই অনুচ্ছেদটি সম্পূর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাসভিত্তিক ও সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে প্রশ্ন করতে হয়, সেই বিশ্বাসের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সম্পৃক্ত কি না। মূল সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদের সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ সাংঘর্ষিক কি না, সেই সংশয়ও দেখা দিতে পারে। এই সংশয় নিয়ে আলোচনায় উল্লেখ করা যেতে পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শপথ করেন, ‘ইন গড উই ট্রাস্ট।’ সংসদীয় গণতন্ত্রের পাদপীঠ গ্রেট ব্রিটেনে নতুন রাজা বা রানিকে গির্জায় আর্চবিশপের আশীর্বাদ নিতে হয়। জার্মানিতে একটি রাজনৈতিক দলের নামে রয়েছে ধর্মীয় পরিচয়। নামটি হলো ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি। এতদসত্ত্বেও সেসব দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কেউ আলোচনা করে না, ধর্ম-সম্পর্কীয় কোনো বিধান সংবিধানে কোনো অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
আমাদের দেশের রাজনীতির ইতিহাসেও দেখা যায়, অতীতে ধর্মীয় আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে অথবা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ধর্মকে রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করার চেষ্টা হয়েছে। প্রথম উদাহরণটি পাই আমরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদিপর্বে। পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। সেই সংবিধানে ধর্মীয় রাজনীতি অথবা ধর্ম-সম্পর্কীয় কোনো অনুচ্ছেদ ছিল না। তারও আগে ১৯৫০ সালে একটি সংবিধানের খসড়া তৈরি করেছিল লিয়াকত আলী খানের মুসলিম লীগ সরকার। সেই খসড়ার বিপিসি, বেসিক প্রিন্সিপাল তথা মূলনীতিতে বলা হয়েছিল, ‘পাকিস্তান হবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র।’ এই প্রস্তাবনায় পাকিস্তানকে ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণার বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করলে সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়। তিন বছর পর ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের আগে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্টের মেনিফেস্টোতে ২১ দফার একটি দফা ছিল, ‘কোরআন ও সুন্নাহর বিধানের বরখেলাপ কোন আইন প্রণয়ন করা হইবে না।’ আবার ধর্মীয় পরিচয়ধারী রাজনৈতিক দল নেজামে ইসলাম যুক্তফ্রন্টের শরিক ছিল।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনীতিতে জনগণের ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বাসকে হাতিয়ার করে সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মহলের, ধর্মীয় আবেগ পুঁজি করে যাঁরা পাকিস্তানি আমলে রাজনীতি করেছেন, তাঁদের ক্ষমতা স্বপ্রতিষ্ঠিত হয়। অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী জনগণ এবং তাদের পুরোধা আওয়ামী লীগ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের পর যেসব দলের রাজনৈতিক ব্যানার ও সাইনবোর্ড নিয়ে রাজনীতি করা নিষিদ্ধ হয়েছিল, পাকিস্তান আমলে সত্তরের নির্বাচনে যাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদের ক্ষমতায় আসার সুযোগ সৃষ্টি হলো। তারা ক্ষমতা হাতে পেয়েই বাংলাদেশকে ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু দুই দিন না যেতেই এই ঘোষণা বাতিল হয়ে গেল। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছিল, ১৫ আগস্ট তারা যে উদ্দেশ্যে যা-ই করুক না কেন, জনমন থেকে অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা বিলুপ্ত হয়নি।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করলেন। সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ সংজ্ঞাটি বাদ দিলেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে, অর্থাৎ আল্লাহর দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রকে একটি সূক্ষ্ম ইসলামি রূপ দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপটি নিলেন। এরপর এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছিলেন একই কৌশল অবলম্বনে। কিন্তু তথাকথিত ‘ইসলামি’ দেশের রাষ্ট্রীয় নীতির অনুসরণে ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ নামটি দেননি। প্রশ্ন করা যেতে পারে, তাঁরা বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে যথেচ্ছাচারী পন্থায় এত কাটাছেঁড়া করলেন, ধর্মীয় পরিচয়ধারী রাজনৈতিক দলগুলোকে এত পৃষ্ঠপোষকতা করলেন, কিন্তু ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ বলে রাষ্ট্রকে পুরোপুরি ধর্মীয় লেবাস পরালেন না কেন? এর উত্তর হচ্ছে, তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, ধর্মীয় নামের ছদ্মাবরণে রাজনীতি করা গেলেও এ দেশে পুরোপুরি কোনো ধর্মীয় প্রথায় রাষ্ট্র পরিচালনা জনগণ মেনে নেবে না। অর্থাৎ, শত চেষ্টায় ‘নড়বড়ে’ করা গেলেও রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক কাঠামোটি বজায় রাখতে হবে। এর অন্যথা এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না।
উপরিউক্ত আলোচনার পটভূমিতে কথা বলছিলাম সংবিধান বিশেষজ্ঞ আমার অতিশ্রদ্ধেয় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে। তিনি ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে আলাপচারিতায় সামরিক শাসক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১ নম্বর প্রজ্ঞাপন ১৯৭৭ উল্লেখ করলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার, সাম্প্রতিককালে আমার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্য সংবিধান এত ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, অথচ এই অদ্ভুত তথ্যটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি, সেটি হলো, জিয়ার অধ্যাদেশে কাটাছেঁড়া করা সংবিধানে ১২ অনুচ্ছেদটি নেই। অনুচ্ছেদ ১১-এর পরই হলো অনুচ্ছেদ ১৩। বিলুপ্ত ১২ অনুচ্ছেদ ছিল ‘রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায় অসাম্প্রদায়িক নীতি অনুসরণ, কোনো নাগরিককে আপন ধর্ম নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী পালনে বাধা দেওয়া যাবে না। অন্যদিকে ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।’ আদালতের রায়ে মূলত এ ধারাটিই পুনঃস্থাপিত হলো। তাহলে স্বৈরশাসকদের সংবিধান ইসলামীকরণের কৌশলগুলো আপনাতেই অকার্যকর হয়ে যাবে।
এবার প্রশ্ন করি, ধর্মীয় আবেগকে রাজনীতিতে ব্যবহার কি শুধু ধর্মীয় পরিচয়ধারীরা করেন বা করেছেন? পাঠক, স্মরণ করুন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপি নির্বাচনী প্রচারের নামে ধর্মীয় পরিচয় না থাকলেও কাজে ‘ইসলাম’ ব্যবহার করেছে। একটি নির্বাচনে একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এক হাতে পবিত্র কোরআন আর অন্য হাতে গীতা জনসভায় উঁচু করে ধরে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে গীতা পড়তে হবে। আর বিএনপি জোট হলো ইসলামি পবিত্র গ্রন্থের একমাত্র হেফাজতকারী।’ একদল ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে, অন্যদল ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহ মহান’ শব্দদ্বয়-খচিত দলীয় পতাকা ওড়াবে। কিন্তু এদের কারও নামের আগে-পরে ধর্মীয় পরিচয় ‘ব্যানার’ নেই। সুতরাং, দলের নামে ইসলামি সংজ্ঞা ব্যবহারই কেবল ধর্মীয় লেবাসে রাজনীতি করা হয়—এই বক্তব্য যথার্থ নয়।
মূল কথা হচ্ছে, উচ্চ আদালতের রায় অনুসরণে পুনরুদ্ধার করা পুনর্মুদ্রিত সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপনের বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে। তখন ধর্মীয় নামাঙ্কিত কোনো ব্যানার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, অথবা সেই অনুচ্ছেদের বিধানের বিচ্যুতি ঘটেছে কি না, তা নির্বাচন কমিশন বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করবে। সরকার অথবা সরকারের প্রধানমন্ত্রী অথবা কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির ধর্মীয় আবেগ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সাংঘর্ষিক অবস্থান নিয়ে দুর্ভাবনা করতে হবে না। আদালতের রায় কার্যকর করা হলে ধর্মীয় আচ্ছাদনে রাজনীতি নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে তা নিরসনের দায়িত্ব স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চিন্ত থাকতে পারে।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক। ==================================
অদ্ভুত ফিচার- 'সাপের সঙ্গে বসবাস' কিশোর আলোচনা- 'দুর্ভাগা হিরোশিমা-নাগাসাকি' by মীর আমজাদ আলী কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'আবিষ্কার কাজী' by মাসুম বিল্লাহ কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'ছায়াহীন আগন্তুক' by আমিনুল ইসলাম আকন্দ কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'জায়ান্ট হান্টার' by মহিউদ্দিন আকবর গল্প- 'হাসে বাঁকা চাঁদ' by আহসান হাবিব বুলবুল গল্প- 'বড়বাড়ির জঙ্গলে' by শরীফ আবদুল গোফরান গল্প- 'পরিবর্তন' by বিশ্বাস আবুল কালাম গল্প- 'মিতুর জ্যোৎস্না রাত' by আবদুল্লাহ আল হোসাইন গল্প- 'জিয়ানার আনন্দ-অভিমান' by বেগম রাজিয়া হোসাইন গল্প- 'এক মুঠো স্বপ্ন' by কাজী রিচি ইসলাম গল্প- 'মাটির গন্ধ' by জুবায়ের হুসাইন গল্প- 'বোকাইকে কেউ বুঝি ডাকলো' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ গল্প- 'নাকিবের একা একা ঝিল দেখা' by হারুন ইবনে শাহাদাত গল্প- 'উসামার বায়না ও আইলার জন্য ভালোবাসা' by চেমনআরা গল্প- 'উরুমকিতে আর্তনাদ' by আহমদ মতিউর রহমান গল্প- 'টবের গোলাপ' by দিলারা মেসবাহ রম্য গল্প- 'তুচ্ছ ঘটনা' by মোহাম্মদ লিয়াকত আলী গল্প- 'নদী কত দূর' by অজিত হরি সাহু, অনুবাদ- হোসেন মাহমুদ
প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ এবিএম মূসা
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
অদ্ভুত ফিচার- 'সাপের সঙ্গে বসবাস' কিশোর আলোচনা- 'দুর্ভাগা হিরোশিমা-নাগাসাকি' by মীর আমজাদ আলী কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'আবিষ্কার কাজী' by মাসুম বিল্লাহ কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'ছায়াহীন আগন্তুক' by আমিনুল ইসলাম আকন্দ কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'জায়ান্ট হান্টার' by মহিউদ্দিন আকবর গল্প- 'হাসে বাঁকা চাঁদ' by আহসান হাবিব বুলবুল গল্প- 'বড়বাড়ির জঙ্গলে' by শরীফ আবদুল গোফরান গল্প- 'পরিবর্তন' by বিশ্বাস আবুল কালাম গল্প- 'মিতুর জ্যোৎস্না রাত' by আবদুল্লাহ আল হোসাইন গল্প- 'জিয়ানার আনন্দ-অভিমান' by বেগম রাজিয়া হোসাইন গল্প- 'এক মুঠো স্বপ্ন' by কাজী রিচি ইসলাম গল্প- 'মাটির গন্ধ' by জুবায়ের হুসাইন গল্প- 'বোকাইকে কেউ বুঝি ডাকলো' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ গল্প- 'নাকিবের একা একা ঝিল দেখা' by হারুন ইবনে শাহাদাত গল্প- 'উসামার বায়না ও আইলার জন্য ভালোবাসা' by চেমনআরা গল্প- 'উরুমকিতে আর্তনাদ' by আহমদ মতিউর রহমান গল্প- 'টবের গোলাপ' by দিলারা মেসবাহ রম্য গল্প- 'তুচ্ছ ঘটনা' by মোহাম্মদ লিয়াকত আলী গল্প- 'নদী কত দূর' by অজিত হরি সাহু, অনুবাদ- হোসেন মাহমুদ
প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ এবিএম মূসা
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
No comments