মাহে রমজানে অহংকার বর্জন by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
মানব চরিত্রে যেসব দোষ-ত্রুটি রয়েছে, তন্মধ্যে গর্ব ও অহংকার একটি অত্যন্ত জঘন্য স্বভাব। এটি ইসলামি নৈতিকতা ও মূলনীতির পরিপন্থী। অহংকার শুধু একটি কবিরা গুনাহই নয়; বরং এটি আরও অনেক কবিরা গুনাহের জন্মদাতা। কারণ, এটি মানুষকে সত্য উপলব্ধিতে বাধা দেয়, অন্ধকারের পথে পরিচালিত করে এবং পশুর স্তরে নামিয়ে দেয়। অহংকার মানে অহমিকা, দম্ভ, বড়াই, নিজেকে বড় মনে করা, গৌরববোধ করা প্রভৃতি। বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড়, উন্নত ও শ্রেষ্ঠ মনে করাকে অহংকার বলে। অহংকার মানুষের অন্তরে লুকায়িত থাকে এবং তার কথাবার্তা, চালচলন, আচার-আচরণ ও যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে মোটেই পছন্দ করেন না, তাই রোজাদারদের কখনো অহংকার করতে নেই। এই মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আন-নাহল, আয়াত-২৩)
মাহে রমজান মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় গর্ব, অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম ‘রমজান’। এ মাসে রোজাদারদের দম্ভ বা অহমিকা প্রদর্শন তাকে হীন ও নীচু এবং সমাজে ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় করে তোলে। মানুষ বিভিন্ন সময় নানা বিষয়ে অহংকার করে থাকে, যা ইসলাম পরিপন্থী বিনয় ও নম্রতার সম্পূর্ণ বিপরীত। কোনো কোনো বিত্তশালী লোক তার অর্থবিত্ত ও ধনসম্পদের গর্ব করে। নারীরা সাধারণত রূপ-সৌন্দর্যের বড়াই করে থাকে। ক্ষমতাবান লোকেরা তাদের ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও পদমর্যাদার অহংকার করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এসবের জন্য গর্ব বা অহংকার করার কিছুই নেই। প্রকাশ্য অহংকারের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কোরো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তুমি চালচলনে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নিচু কর।’ (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৮-১৯)
পৃথিবীর সব মানুষ এক আল্লাহর সৃষ্টি। সুতরাং বংশের গৌরব মানুষের কৃত্রিম সৃষ্টি। ‘আশরাফুল মাখলুখাত’ বলে আল্লাহ দয়া করে সবকিছু তাঁর অধীন করে দিয়েছেন। সম্পদ মানুষের চিরস্থায়ী নয়। ধনসম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ, মানুষ আমানতদার মাত্র। সম্পদ মানুষের জন্য পরীক্ষার বস্তু; এসব নিয়ে গৌরব করার কিছু নেই। মানুষের রূপ-সৌন্দর্য আল্লাহ প্রদত্ত, যাকে যেমন খুশি সৃষ্টি করেছেন। ক্ষমতার অহংকার করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা কারও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। আজ যে রাজা, কাল সে প্রজা। এসব কিছুর প্রকৃত মালিক মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, যিনি সর্বশক্তিমান। ক্ষমতার অহংকার করা তাঁরই সাজে, মানুষের নয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তুমি বলো, হে আল্লাহ, তুমি সাম্রাজ্যের মালিক! তুমি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করো এবং যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নাও, যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করো এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত করো, কল্যাণ তোমার হাতেই, নিশ্চয়ই তুমি প্রত্যেকের ওপর শক্তিশালী।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-২৬)
মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, ধনসম্পদ, শক্তি-সামর্থ্য সবকিছুই অত্যন্ত সীমিত। কোনো মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অভাবমুক্ত নয়। সবারই কোনো না কোনো অভাব-অনটন ও অসম্পূর্ণতা আছে। একমাত্র আল্লাহই অভাবমুক্ত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। অহংকার গর্ব করা একমাত্র আল্লাহরই শোভা পায়, অন্য কারও নয়। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘অহংকার আমার পরিচ্ছদ, এ পোশাক যে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চেষ্টা করে, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (মুসলিম)
প্রবাদ আছে, ‘অহংকার পতনের মূল’। এটি মানবজীবনে ধ্বংসের প্রধান কারণ। অহংকারের কুফল ও পরিণতি বর্ণনাতীত। অহংকারের কারণে ফেরেশতাদের এককালের সাথি ইবলিশ অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়েছিল। আল্লাহর রোষানলে পড়ে জান্নাত থেকে অপদস্থ হয়ে বিতাড়িত হয়েছিল। আদিমানব সর্বপ্রথম নবী হজরত আদম (আ.)-কে সম্মানসূচক সিজদা না করার কারণ জিজ্ঞাসা করায় সে অহংকার করে বলেছিল, ‘আমি আদমের চেয়ে উত্তম, কেননা আমি আগুনের তৈরি এবং আদম মাটির তৈরি।’ অর্থাৎ তার মধ্যে বর্ণবাদের অহংকার ও বিদ্বেষ দানাবেঁধে উঠেছিল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, ‘আদমকে সিজদা কর’, তখন ইবলিশ ব্যতীত সবাই সিজদা করল; সে অস্বীকার ও অহংকার করল এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-৩৪) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘ইবলিশ বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম, আপনি আমাকে আগুন থেকে এবং তাকে (আদমকে) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত-১২) পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াতে বর্ণিত বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ধ্বংসের জন্য অহংকার একটি অন্যতম কারণ ছিল।
অহংকার মানে নিজেকে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করা, অন্যদের নিজের তুলনায় ক্ষুদ্র ও অধম মনে করে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে তার অবাধ্য হওয়া ও আদেশ অমান্য করা, এসবই অহংকারের লক্ষণ ও তার আওতাভুক্ত। ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন নিরহংকারের মূর্ত প্রতীক। তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছিল, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তাঁকে জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য করা হয়েছিল; কিন্তু তিনি ধৈর্যহারা হননি। আবার আল্লাহ যখন মক্কা বিজয় দান করলেন তখনো তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে অহংকার করলেন না; বরং বিনয় ও নম্রভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে অত্যাচারীদের ক্ষমা করে দিলেন।
অহংকারীর কতিপয় বৈশিষ্ট্য হলো সে নিজে যা পছন্দ করে, অন্যকে তা পছন্দ করতে দেয় না। সাধারণত সে বিদ্বেষপরায়ণ হয়। কোনো উপদেশকারীর উপদেশ গ্রহণ করতে পারে না; বরং উল্টো তার ঠাট্টা-বিদ্রূপের শিকার হয়। অহংকার বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনে প্রবেশ করে বংশ, বর্ণ, ভাষা, দেশ, জাতীয়তা ও সম্পদের প্রাচুর্যের ওপর মানুষকে মাতিয়ে তুলেছে। যদিও এগুলো আল্লাহরই সৃষ্টি; তথাপি এগুলো কোনো মর্যাদার মানদণ্ড বা মাপকাঠি নয়। প্রকৃতপক্ষে অহংকারীরা আল্লাহর আনুগত্য করে না। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে কঠিন শাস্তি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী ও স্বেচ্ছাচারীর অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেন।’ (সূরা আল-মুমিন, আয়াত-৩৫) তাই জান্নাত লাভ করতে হলে রোজাদারদের অন্তরকে পরিচ্ছন্ন ও অহংকারমুক্ত করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম)
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
মাহে রমজান মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় গর্ব, অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম ‘রমজান’। এ মাসে রোজাদারদের দম্ভ বা অহমিকা প্রদর্শন তাকে হীন ও নীচু এবং সমাজে ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় করে তোলে। মানুষ বিভিন্ন সময় নানা বিষয়ে অহংকার করে থাকে, যা ইসলাম পরিপন্থী বিনয় ও নম্রতার সম্পূর্ণ বিপরীত। কোনো কোনো বিত্তশালী লোক তার অর্থবিত্ত ও ধনসম্পদের গর্ব করে। নারীরা সাধারণত রূপ-সৌন্দর্যের বড়াই করে থাকে। ক্ষমতাবান লোকেরা তাদের ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও পদমর্যাদার অহংকার করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এসবের জন্য গর্ব বা অহংকার করার কিছুই নেই। প্রকাশ্য অহংকারের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কোরো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তুমি চালচলনে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নিচু কর।’ (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৮-১৯)
পৃথিবীর সব মানুষ এক আল্লাহর সৃষ্টি। সুতরাং বংশের গৌরব মানুষের কৃত্রিম সৃষ্টি। ‘আশরাফুল মাখলুখাত’ বলে আল্লাহ দয়া করে সবকিছু তাঁর অধীন করে দিয়েছেন। সম্পদ মানুষের চিরস্থায়ী নয়। ধনসম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ, মানুষ আমানতদার মাত্র। সম্পদ মানুষের জন্য পরীক্ষার বস্তু; এসব নিয়ে গৌরব করার কিছু নেই। মানুষের রূপ-সৌন্দর্য আল্লাহ প্রদত্ত, যাকে যেমন খুশি সৃষ্টি করেছেন। ক্ষমতার অহংকার করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা কারও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। আজ যে রাজা, কাল সে প্রজা। এসব কিছুর প্রকৃত মালিক মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, যিনি সর্বশক্তিমান। ক্ষমতার অহংকার করা তাঁরই সাজে, মানুষের নয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তুমি বলো, হে আল্লাহ, তুমি সাম্রাজ্যের মালিক! তুমি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করো এবং যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নাও, যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করো এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত করো, কল্যাণ তোমার হাতেই, নিশ্চয়ই তুমি প্রত্যেকের ওপর শক্তিশালী।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-২৬)
মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, ধনসম্পদ, শক্তি-সামর্থ্য সবকিছুই অত্যন্ত সীমিত। কোনো মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অভাবমুক্ত নয়। সবারই কোনো না কোনো অভাব-অনটন ও অসম্পূর্ণতা আছে। একমাত্র আল্লাহই অভাবমুক্ত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। অহংকার গর্ব করা একমাত্র আল্লাহরই শোভা পায়, অন্য কারও নয়। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘অহংকার আমার পরিচ্ছদ, এ পোশাক যে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চেষ্টা করে, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (মুসলিম)
প্রবাদ আছে, ‘অহংকার পতনের মূল’। এটি মানবজীবনে ধ্বংসের প্রধান কারণ। অহংকারের কুফল ও পরিণতি বর্ণনাতীত। অহংকারের কারণে ফেরেশতাদের এককালের সাথি ইবলিশ অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়েছিল। আল্লাহর রোষানলে পড়ে জান্নাত থেকে অপদস্থ হয়ে বিতাড়িত হয়েছিল। আদিমানব সর্বপ্রথম নবী হজরত আদম (আ.)-কে সম্মানসূচক সিজদা না করার কারণ জিজ্ঞাসা করায় সে অহংকার করে বলেছিল, ‘আমি আদমের চেয়ে উত্তম, কেননা আমি আগুনের তৈরি এবং আদম মাটির তৈরি।’ অর্থাৎ তার মধ্যে বর্ণবাদের অহংকার ও বিদ্বেষ দানাবেঁধে উঠেছিল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, ‘আদমকে সিজদা কর’, তখন ইবলিশ ব্যতীত সবাই সিজদা করল; সে অস্বীকার ও অহংকার করল এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-৩৪) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘ইবলিশ বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম, আপনি আমাকে আগুন থেকে এবং তাকে (আদমকে) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত-১২) পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াতে বর্ণিত বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ধ্বংসের জন্য অহংকার একটি অন্যতম কারণ ছিল।
অহংকার মানে নিজেকে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করা, অন্যদের নিজের তুলনায় ক্ষুদ্র ও অধম মনে করে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে তার অবাধ্য হওয়া ও আদেশ অমান্য করা, এসবই অহংকারের লক্ষণ ও তার আওতাভুক্ত। ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন নিরহংকারের মূর্ত প্রতীক। তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছিল, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তাঁকে জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য করা হয়েছিল; কিন্তু তিনি ধৈর্যহারা হননি। আবার আল্লাহ যখন মক্কা বিজয় দান করলেন তখনো তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে অহংকার করলেন না; বরং বিনয় ও নম্রভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে অত্যাচারীদের ক্ষমা করে দিলেন।
অহংকারীর কতিপয় বৈশিষ্ট্য হলো সে নিজে যা পছন্দ করে, অন্যকে তা পছন্দ করতে দেয় না। সাধারণত সে বিদ্বেষপরায়ণ হয়। কোনো উপদেশকারীর উপদেশ গ্রহণ করতে পারে না; বরং উল্টো তার ঠাট্টা-বিদ্রূপের শিকার হয়। অহংকার বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনে প্রবেশ করে বংশ, বর্ণ, ভাষা, দেশ, জাতীয়তা ও সম্পদের প্রাচুর্যের ওপর মানুষকে মাতিয়ে তুলেছে। যদিও এগুলো আল্লাহরই সৃষ্টি; তথাপি এগুলো কোনো মর্যাদার মানদণ্ড বা মাপকাঠি নয়। প্রকৃতপক্ষে অহংকারীরা আল্লাহর আনুগত্য করে না। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে কঠিন শাস্তি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী ও স্বেচ্ছাচারীর অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেন।’ (সূরা আল-মুমিন, আয়াত-৩৫) তাই জান্নাত লাভ করতে হলে রোজাদারদের অন্তরকে পরিচ্ছন্ন ও অহংকারমুক্ত করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম)
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
No comments