কয়লা বাদ দিলে কোন জ্বালানি -জ্বালানি by নাসরিন সিরাজ
৫/৮/২০১২-এর প্রথম আলোয় ‘কয়লা আমাদের ভবিষ্যৎ নয়, অতীত’ শিরোনামে আমার একটি অভিমত প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটিতে দেখিয়েছিলাম, কয়লা ক্ষতিকারক জ্বালানি বলে বিবেচিত হওয়ায় এবং কয়লাবিরোধী আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে ইউরোপ ও আমেরিকায় সরকার ও ব্যাংকগুলো এই খাতে বিনিয়োগ অলাভজনক মনে করছে; সেখানে একের পর এক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হচ্ছে। লেখাটিতে কয়লার মতো বাতিল জ্বালানি নয় বরং নতুন প্রজন্মের কথা চিন্তা করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে বাংলাদেশের সরকার তথা জনগণ ও বিনিয়োগকারীর মন দেওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেছিলাম। বিষয়টির পক্ষে জোর দিতে আবার লিখতে বসা।
এবার আরেকটি আন্তর্জাতিক অধিবেশনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা লিখব। ‘সাউথইস্ট এশিয়ান রিনিউয়েবল এনার্জি পিপল্স অ্যাসেমব্লি’ শিরোনামে অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯ অক্টোবর-২ নভেম্বর, ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায়। এতে বিশ্বের ১১টি দেশের ৮০টি সংগঠনের ১৩০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এই অধিবেশনে যোগ দিয়ে যে উপলব্ধি হয়েছে তা হচ্ছে, শুধু নতুন প্রযুক্তি কেনার ক্ষমতা তৈরি কাজের কথা নয়। দেশের জনগণকে যদি জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো থেকে অন্ধকারে রাখা হয়, যদি নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবক হিসেবে জনগণকে সক্ষম করে তোলা না হয়, তাহলে আমাদের আসল সংকট নিরসন হবে না। বাংলাদেশ বাতিল প্রযুক্তির ক্রেতাই থেকে যাবে। লাভ আবারও যাবে মুনাফালোভীদের কাছে। সাধারণের কাছে নয়।
প্রথমে বলছি মালয়েশিয়ার কালিমাস্তান দ্বীপ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের কথা। এই দ্বীপবাসীরা মাত্র দুই বছর ধরে তাদের গ্রামে বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে। এদের কথা শুনলে বুঝতে পারবেন ‘উন্নত বিশ্ব’ গরিব মানুষকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে গবেষণাগারের গিনিপিগ বানিয়েছে। জলস্রোত এই দ্বীপবাসীদের নতুন বিদ্যুতের উৎস। বিশাল আকারের বাঁধ তৈরি করে নদীর স্রোত আটকে বিদ্যুৎ তৈরির বিশাল প্রকল্প নয়, তারা ব্যবহার করে এনজিওগুলোর বিতরণ করা ছোট প্ল্যান্ট। গ্রামের আশপাশের ঝরনায় বসানোর উপযোগী এগুলো। ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির নেতিবাচক দিক ও প্রযুক্তি আদান-প্রদান’ বিষয়ে আলোচনায় যা উঠে এসেছে তা হচ্ছে, কাঁচা পণ্যের ব্যবসায়ীদের ফ্রিজ ব্যবহার করে পণ্য মজুত করার সুবিধা হয়েছে; ছাত্ররা রাত জেগে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে; বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য মাকে আর মাঠে মাঠে দৌড়াতে হচ্ছে না। কারণ, বাচ্চারা খেলাধুলা ছেড়ে টেলিভিশনের সামনেই অবসর সময়ে বসে থাকে। অসুবিধা খালি একটাই। তাদের নিরবচ্ছিন্ন ও ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি চাই। বিদ্যুৎ সরবরাহ তো সবাই-ই চায়। কিন্তু ওই এলাকার ৮০ শতাংশ লোকই শিক্ষা-দীক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত।
যাঁদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে, তাঁরা কেউ দ্বাদশ শ্রেণীর বেশি পড়েননি। এলাকাটি এতই গরিব যে কর্মসংস্থানের অভাব বলে ওই এলাকার পুরুষেরা গ্রামে প্রায় থাকেনই না, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশে দিনমজুর হিসেবে অভিবাসন করেন। এখানে নতুন প্রযুক্তি এনে দিয়েছে এনজিও। সুবিধাভোগীদের প্রকৌশলী বা বিজ্ঞানী বানানোর প্রকল্প নেই এনজিওগুলোর। তারা কমিউনিটিকে যন্ত্র ইনস্টলমেন্ট ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দরকারি কিছু প্রশিক্ষণ দিয়েছে মাত্র। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ান ছোট ওয়াটার প্ল্যান্টের টার্বাইন বানানোর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এনজিওগুলোর যোগাযোগ আছে। অ্যাসেমব্লিতে একজনকে উপস্থিতও দেখলাম। তিনি জেনে নিচ্ছিলেন যন্ত্র ব্যবহারে কমিউনিটির সুবিধা-অসুবিধাগুলো। যেগুলোর ভিত্তিতে যন্ত্রকে আরও উন্নত করা হবে।
অনেকে বলতে পারেন উন্নত বিশ্বের ফেলে দেওয়া প্রযুক্তি দিয়ে বা গবেষণার গিনিপিগ হিসেবে টুকটাক সাহায্য পেয়েও হয়তো অল্প অল্প করে উন্নতি করা সম্ভব। এই অধিবেশনে নারীদের অভিজ্ঞতাগুলো শোনার পর এই দাবির অসারতা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। আলোচনা থেকেই জানতে পারি, নতুন প্রযুক্তি নারীদের লিঙ্গ নির্ধারিত বৈষম্যমূলক সামাজিক ভূমিকা ও অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি। কালিমাস্তান দ্বীপাঞ্চলের ওই জলবিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো নারীরা চালান না। কমিউনিটি সম্মিলিতভাবে যেখানে প্ল্যান্টের মালিক, সেখানে কমিটিতে নারীরা অংশগ্রহণ করেন না। এমনকি আন্তর্জাতিক অধিবেশনে অংশগ্রহণের বিষয়টি ‘নারী দূরে ভ্রমণ করতে পারে না’ কিংবা ‘সংসার ও চাষের মাঠে নারীর কর্মব্যস্ততা রয়েছে’ এই অজুহাতে খারিজ হয়ে যায়। নতুন প্রযুক্তি চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে এমনকি উদ্ভাবন থেকে নারীরা রয়েছে অনেক অনেক দূরে। কালিমাস্তানে কর্মরত একজন এনজিওকর্মী বায়োগ্যাস ব্যবহার করে উনুন জ্বালান, এ রকম কয়েকজন নারীর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন আমাকে। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তি সুবিধাভোগী নারীরা বরং এখন আগের তুলনায় বেশি অবরুদ্ধ। কারণ, সাধারণ উনুনের জ্বালানি জোগাড় করতে নারীরা আগে ঘরের বাইরে যেতে পারতেন, সেটা এখন আর তাঁরা পারছেন না। আবার, উন্নত চুলা ব্যবহারের ফলে নারীদের অবসর সময় বেড়েছে। কিন্তু তখন প্রশ্ন উঠেছে, অবসরে সোপ অপেরা দেখলে নারীর এতে কী লাভ হলো? ফিলিপাইনের যাঁর সঙ্গে কথা হলো, তিনি কাজ করেন নবায়নযোগ্য জ্বালানিচালিত গাড়ি নিয়ে। তাঁর সংগঠন নারীদের গাড়ি চালনা ও মেরামতের কাজ শেখায়, ‘সবুজ-পরিচ্ছন্ন’ জ্বালানির গাড়ি বিক্রি করে। তিনি বলেন, যেভাবে প্রাইভেট গাড়ির চাহিদা বাড়ছে, তাতে বিকল্প জ্বালানির পাশাপাশি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কথা না ভাবলে আমাদের আর চলবে না। অনেক লোক এক গাড়িতে চড়লেই একমাত্র বিদ্যুতের চাহিদা কমবে। ফ্লাইওভার বানিয়ে প্রাইভেট গাড়ির জন্য বিকল্প রাস্তা তৈরি রাজকোষের অপচয় বলে তিনি মনে করেন।
সম্প্রতি সুন্দরবনের খুব কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। আমরা জানি, বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা ও সমাজকর্মীরা কয়লাকে বাতিল করেছেন। কয়লা না, বিকল্প জ্বালানি আমাদের বের করতে হবে। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে প্রতিবেশী যে মানুষগুলো, তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ‘গরিব’ বলে ‘উন্নত বিশ্বের’ পরীক্ষা-নিরীক্ষার বলি হওয়ার সুযোগ নেই। কোন জ্বালানি দিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ চলবে, সেটা আমাদেরই ঠিক করতে হবে।
নাসরিন সিরাজ: নৃবিজ্ঞানী, চলচ্চিত্রনির্মাতা।
এবার আরেকটি আন্তর্জাতিক অধিবেশনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা লিখব। ‘সাউথইস্ট এশিয়ান রিনিউয়েবল এনার্জি পিপল্স অ্যাসেমব্লি’ শিরোনামে অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯ অক্টোবর-২ নভেম্বর, ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায়। এতে বিশ্বের ১১টি দেশের ৮০টি সংগঠনের ১৩০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এই অধিবেশনে যোগ দিয়ে যে উপলব্ধি হয়েছে তা হচ্ছে, শুধু নতুন প্রযুক্তি কেনার ক্ষমতা তৈরি কাজের কথা নয়। দেশের জনগণকে যদি জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো থেকে অন্ধকারে রাখা হয়, যদি নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবক হিসেবে জনগণকে সক্ষম করে তোলা না হয়, তাহলে আমাদের আসল সংকট নিরসন হবে না। বাংলাদেশ বাতিল প্রযুক্তির ক্রেতাই থেকে যাবে। লাভ আবারও যাবে মুনাফালোভীদের কাছে। সাধারণের কাছে নয়।
প্রথমে বলছি মালয়েশিয়ার কালিমাস্তান দ্বীপ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের কথা। এই দ্বীপবাসীরা মাত্র দুই বছর ধরে তাদের গ্রামে বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে। এদের কথা শুনলে বুঝতে পারবেন ‘উন্নত বিশ্ব’ গরিব মানুষকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে গবেষণাগারের গিনিপিগ বানিয়েছে। জলস্রোত এই দ্বীপবাসীদের নতুন বিদ্যুতের উৎস। বিশাল আকারের বাঁধ তৈরি করে নদীর স্রোত আটকে বিদ্যুৎ তৈরির বিশাল প্রকল্প নয়, তারা ব্যবহার করে এনজিওগুলোর বিতরণ করা ছোট প্ল্যান্ট। গ্রামের আশপাশের ঝরনায় বসানোর উপযোগী এগুলো। ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির নেতিবাচক দিক ও প্রযুক্তি আদান-প্রদান’ বিষয়ে আলোচনায় যা উঠে এসেছে তা হচ্ছে, কাঁচা পণ্যের ব্যবসায়ীদের ফ্রিজ ব্যবহার করে পণ্য মজুত করার সুবিধা হয়েছে; ছাত্ররা রাত জেগে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে; বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য মাকে আর মাঠে মাঠে দৌড়াতে হচ্ছে না। কারণ, বাচ্চারা খেলাধুলা ছেড়ে টেলিভিশনের সামনেই অবসর সময়ে বসে থাকে। অসুবিধা খালি একটাই। তাদের নিরবচ্ছিন্ন ও ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি চাই। বিদ্যুৎ সরবরাহ তো সবাই-ই চায়। কিন্তু ওই এলাকার ৮০ শতাংশ লোকই শিক্ষা-দীক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত।
যাঁদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে, তাঁরা কেউ দ্বাদশ শ্রেণীর বেশি পড়েননি। এলাকাটি এতই গরিব যে কর্মসংস্থানের অভাব বলে ওই এলাকার পুরুষেরা গ্রামে প্রায় থাকেনই না, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশে দিনমজুর হিসেবে অভিবাসন করেন। এখানে নতুন প্রযুক্তি এনে দিয়েছে এনজিও। সুবিধাভোগীদের প্রকৌশলী বা বিজ্ঞানী বানানোর প্রকল্প নেই এনজিওগুলোর। তারা কমিউনিটিকে যন্ত্র ইনস্টলমেন্ট ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দরকারি কিছু প্রশিক্ষণ দিয়েছে মাত্র। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ান ছোট ওয়াটার প্ল্যান্টের টার্বাইন বানানোর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এনজিওগুলোর যোগাযোগ আছে। অ্যাসেমব্লিতে একজনকে উপস্থিতও দেখলাম। তিনি জেনে নিচ্ছিলেন যন্ত্র ব্যবহারে কমিউনিটির সুবিধা-অসুবিধাগুলো। যেগুলোর ভিত্তিতে যন্ত্রকে আরও উন্নত করা হবে।
অনেকে বলতে পারেন উন্নত বিশ্বের ফেলে দেওয়া প্রযুক্তি দিয়ে বা গবেষণার গিনিপিগ হিসেবে টুকটাক সাহায্য পেয়েও হয়তো অল্প অল্প করে উন্নতি করা সম্ভব। এই অধিবেশনে নারীদের অভিজ্ঞতাগুলো শোনার পর এই দাবির অসারতা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। আলোচনা থেকেই জানতে পারি, নতুন প্রযুক্তি নারীদের লিঙ্গ নির্ধারিত বৈষম্যমূলক সামাজিক ভূমিকা ও অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি। কালিমাস্তান দ্বীপাঞ্চলের ওই জলবিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো নারীরা চালান না। কমিউনিটি সম্মিলিতভাবে যেখানে প্ল্যান্টের মালিক, সেখানে কমিটিতে নারীরা অংশগ্রহণ করেন না। এমনকি আন্তর্জাতিক অধিবেশনে অংশগ্রহণের বিষয়টি ‘নারী দূরে ভ্রমণ করতে পারে না’ কিংবা ‘সংসার ও চাষের মাঠে নারীর কর্মব্যস্ততা রয়েছে’ এই অজুহাতে খারিজ হয়ে যায়। নতুন প্রযুক্তি চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে এমনকি উদ্ভাবন থেকে নারীরা রয়েছে অনেক অনেক দূরে। কালিমাস্তানে কর্মরত একজন এনজিওকর্মী বায়োগ্যাস ব্যবহার করে উনুন জ্বালান, এ রকম কয়েকজন নারীর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন আমাকে। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তি সুবিধাভোগী নারীরা বরং এখন আগের তুলনায় বেশি অবরুদ্ধ। কারণ, সাধারণ উনুনের জ্বালানি জোগাড় করতে নারীরা আগে ঘরের বাইরে যেতে পারতেন, সেটা এখন আর তাঁরা পারছেন না। আবার, উন্নত চুলা ব্যবহারের ফলে নারীদের অবসর সময় বেড়েছে। কিন্তু তখন প্রশ্ন উঠেছে, অবসরে সোপ অপেরা দেখলে নারীর এতে কী লাভ হলো? ফিলিপাইনের যাঁর সঙ্গে কথা হলো, তিনি কাজ করেন নবায়নযোগ্য জ্বালানিচালিত গাড়ি নিয়ে। তাঁর সংগঠন নারীদের গাড়ি চালনা ও মেরামতের কাজ শেখায়, ‘সবুজ-পরিচ্ছন্ন’ জ্বালানির গাড়ি বিক্রি করে। তিনি বলেন, যেভাবে প্রাইভেট গাড়ির চাহিদা বাড়ছে, তাতে বিকল্প জ্বালানির পাশাপাশি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কথা না ভাবলে আমাদের আর চলবে না। অনেক লোক এক গাড়িতে চড়লেই একমাত্র বিদ্যুতের চাহিদা কমবে। ফ্লাইওভার বানিয়ে প্রাইভেট গাড়ির জন্য বিকল্প রাস্তা তৈরি রাজকোষের অপচয় বলে তিনি মনে করেন।
সম্প্রতি সুন্দরবনের খুব কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। আমরা জানি, বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা ও সমাজকর্মীরা কয়লাকে বাতিল করেছেন। কয়লা না, বিকল্প জ্বালানি আমাদের বের করতে হবে। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে প্রতিবেশী যে মানুষগুলো, তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ‘গরিব’ বলে ‘উন্নত বিশ্বের’ পরীক্ষা-নিরীক্ষার বলি হওয়ার সুযোগ নেই। কোন জ্বালানি দিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ চলবে, সেটা আমাদেরই ঠিক করতে হবে।
নাসরিন সিরাজ: নৃবিজ্ঞানী, চলচ্চিত্রনির্মাতা।
No comments