মাদারীপুরের পথে-প্রান্তরে -প্রান্তকথা by শান্ত নূরুননবী
গানপাগল মিল্লাত হোসেন পথে পথে গেয়ে চলেছেন, ‘শাহ মাদারের নামের জেলা/ মাদারীপুর ভাই...।’ গান থেকেই জানা যাচ্ছে, মাদারীপুর জন্ম দিয়েছে বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি ফজলুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর খলিল, সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাস, হাজি শরিয়ত উল্লাহ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই চালিয়েছিলেন এ অঞ্চল থেকেই। মাদারীপুরের খেজুরের গুড়ের বিশিষ্ট্য স্বাদ। আর আছে কদম বাড়ি গণেশ পাগলা আশ্রম।
বাংলা ১৩০০ শতকের মাঝামাঝিতে এখানে এক পাগলের আবির্ভাব ঘটে। জনশ্রুতি আছে, অসাধ্য সাধনের ক্ষমতা ছিল তাঁর। যা বলতেন, তা-ই ফলত। তাঁর নামে গড়ে ওঠা এই আশ্রমে প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসে এখানে হয় কুম্ভ মেলা। সাতক্ষীরা, যশোর, মেহেরপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল তো বটেই, ওপার বাংলা থেকেও ভক্তকুল মিছিল আকারে আসে ঢাক বাজাতে বাজাতে। লক্ষ লক্ষ ভক্তের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে মাদারীপুরের গণেশ পাগলা আশ্রম।
আবৃত্তিপাগল একজন সংগঠক উদ্ভাস-এর কুমার লাভলুর সঙ্গে অনেক ঘোরাঘুরি হলো এই শহরে। বড় নীরব এই শহর। যানজট নেই, ঠেলাঠেলি নেই, নেই শব্দদূষণের যন্ত্রণা। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁর বাঁধানো কূলে ‘শিশিরের শব্দের মতো সন্ধ্যা আসে’ পুরো দিনের ক্লান্তি মুছে দিয়ে হূদয়ে শান্তি জোগাতে। অনতিদূরে লঞ্চঘাটের আলোগুলো মায়ার ইশারা সৃষ্টি করে যেন। কুমার লাভলুর আমন্ত্রণে সুদৃশ্য শকুনী লেকের পারে স্বাধীনতা অঙ্গনে হাজির হই। ১৯৪৭ সালের দিকে এখান থেকে মাটি তুলে জমি উঁচু করে নতুন মাদারীপুর শহরের পত্তন করা হয়। লেকের চতুর্দিকের পরিধি ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার। তখন অসংখ্য শকুন থাকত এখানে। শকুনদের আবাস আজ শকুনী লেক।
স্বাধীনতা চত্বর হলো মাদারীপুরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সমাবেশের ক্ষুদ্র ময়দান। পাশেই মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন, জীর্ণ, সংকীর্ণ। নাটক তো দূরের কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করারও উপযুক্ত নয়। তবুও এর ভেতর নিয়মিত চলে সংস্কৃতির নামে প্রগতির চর্চা, ডাল-পালা মেলে মাদরীপুরবাসীর সুকুমার অনুভূতি। লেকের অপর পাড়ে শিল্পকলা একাডেমী ভবনে চলছিল একটি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। সীমা সাহা, জবা দে, রিতু, নিতু, প্রিয়াঙ্কার গানের জাদু ঢাকা থেকে আসা রহিমা, মিজান ও শহীদের মতো আমাকেও আবিষ্ট করে। পৃষ্ঠপোষকতা নেই, ভালো মিলনায়তন নেই, তাতে কী? আছে মানুষের ভালোবাসা, শিল্পের প্রতি, সৌন্দর্যচর্চার প্রতি মাদারীপুরের মানুষের অদম্য আকর্ষণ।
মাদারীপুরের পরিচিত মুখ, সাংবাদিক পলাশের কাছে জানলাম, শহরসংলগ্ন চরমুগুরিয়ার বানরগুলো ভালো নেই। খাদ্যাভাব চরমে উঠেছে এই প্রাণীগুলোর। জঠর জ্বালায় অস্থির ওরা বাড়ি-ঘরে অনুপ্রবেশ করে আজকাল। রান্নাঘর, শোবার ঘর ওলট-পালট করে খাবার খোঁজে। বানরগুলোর জন্য মায়া আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু আর কত সওয়া যায়। মাদারীপুর লিগ্যাল এইডের কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ‘এখন মানুষ নিজের মা-বাপরেই খাইতে দিতে পারে না, বানরদের কী খাওয়াইব?’ এর আগে বানরদের খাওয়ানোর জন্য সরকারি বরাদ্দ ছিল, এখন তাও বন্ধ। কেন বন্ধ, তা কেউ বলতে পারে না। অথচ এখনো চরমুগুরিয়ায় বানর আছে প্রায় আড়াই হাজার। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমায় চরমুগুরিয়ায় বানরের কাণ্ডকারখানা দেখতে। তারাই হাতে করে কলা, চীনা বাদাম ইত্যাদি নিয়ে যায়। বানরেরা তাই দর্শনার্থী দেখলে খুশি লুকিয়ে রাখে না। তবে বানরকে এভাবে খাবার দেওয়া ওদের জন্য কোনো বিপদ ডেকে আনবে কি না, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ কারও নেই। একবার আড়িয়াল খাঁর ওপারে বানরগুলোর জন্য বিকল্প অভয়ারণ্য গড়ে তোলার কথা শোনা গিয়েছিল। সে রকম কোনো বাস্তব উদ্যোগ আদৌ নেওয়া হয়েছে কি না জানা যায়নি। এখন এলাকাবাসী বানরের উত্পাত থেকে যেমন মুক্তি চায়, তেমনি চায় প্রাণীগুলোর বাসস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা। কেবল কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে উদাসীন।
মাদারীপুর থেকে ফেরার পথে দেখি, এম এম হাফিজ পাবলিক লাইব্রেরির ভেতর অনেক পাঠক একাগ্র পাঠে মগ্ন। বইপাঠের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যায়নি একেবারে। ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরি থেকেই পরিচালিত হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মাদারীপুর শাখার কার্যক্রম।
বইয়ের প্রসঙ্গ আসতেই স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রতন কুমার দাসের কাছে জানলাম ডা. আব্দুল বারি সম্পর্কে। তিনি ইতিহাসের এক জীবন্ত ভাণ্ডার। তাঁর দেখা না হলে নিভৃতে থাকা দেশের এই জ্ঞানী ব্যক্তির সম্পর্কে হয়তো কোনো দিন জানাই হতো না।
অন্ধকার চেম্বারে মোমের আলো জ্বালিয়ে ভক্ত-বন্ধুদের ইতিহাসের নানা সত্য শুনিয়ে যাচ্ছিলেন আব্দুল বারি। তাঁর কথা বলার সময় অন্য দিকে তাকানো বারণ, নোট নেওয়া নিষেধ; তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে মনোযোগ দিয়ে। বললেন, ‘নারীজাগরণে আপনাদের রংপুরের বেগম রোকেয়ার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু তাঁরও আগে, বাংলার নারী উন্নয়নে নবাব ফয়জুন্নেছা, কামিনী রায় বা আমাদের কুসুম কুমারীদের কথা আমরা একবারও উচ্চারণ করব না কেন! তেমনি ধরেন আজকে আমাদের ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার পেছনে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে ভুলতেই বসেছি।’ তাঁর ক্ষেদ, গান্ধীজির অহিংস আলোর ঝাপটায় নেতাজি হারিয়ে যাচ্ছেন। তাই তিনি বাংলায় নেতাজিকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বই লিখেছেন। গতানুগতিক জীবনীগ্রন্থ নয় এটি। তিনি বলেন, নেতাজিকে নিয়ে এটাই প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা বই। ৩৬৮ পৃষ্ঠার এই মূল্যবান বইটি প্রকাশ করেছে ঢাকার বিভাস। বইতে আছে নেতাজির জীবন, সংগ্রাম, বিশ্বাস ও আদর্শের চমকপ্রদ বিবরণ। বইয়ের পাতায় পাতায় আছে নেতাজিসহ তাঁর সহযোদ্ধা এবং তাঁর স্মৃতিবিজড়িত আসবাব, পোশাক, অস্ত্র, স্থান, দলিল, চিঠি ইত্যাদির অসংখ্য সাদা-কালো ফটোগ্রাফ। কত কষ্টই না করেছেন তিনি বইটি লিখতে! ঘুরেছেন এশিয়া-আমেরিকার নানা দেশ। কিন্তু রয়ে গেছেন মাদারীপুরে, মাটির টানে।
তিনি জানান, ‘আমি যা তার থাইকা বেশি কিছু লেখছি। এইটা কোনো নামকরা কেউ লিখলে লোকে আগ্রহ করে কিনত। তবে আমি বাজারে বেচতে চাই না। যারা সত্যিকারের ইতিহাস জানতে চায়, তাদের হাতে পৌঁছালেই খুশি হতাম।’ আরও বই লিখেছেন তিনি। বিস্মৃত বাঙালী, বাংলার নারী (৪৭ পূর্ব), অগ্নিযুগের বাঙালী বিপ্লবী ও বৃহত্তর মাদারীপুরের ইতিহাস প্রকাশের কাজ চলছে। ইতিহাস বয়ানের এক সহজ, সরল, আকর্ষণীয় ভাষা তাঁর আয়ত্তে। যেন কালের সাক্ষী কেউ গল্প শোনাচ্ছেন পাঠককে। কামনা করি, ডা. আব্দুল বারির বই ইতিহাসপ্রেমী মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যাক।
শান্ত নূরুননবী: লেখক ও উন্নয়নকর্মী।
বাংলা ১৩০০ শতকের মাঝামাঝিতে এখানে এক পাগলের আবির্ভাব ঘটে। জনশ্রুতি আছে, অসাধ্য সাধনের ক্ষমতা ছিল তাঁর। যা বলতেন, তা-ই ফলত। তাঁর নামে গড়ে ওঠা এই আশ্রমে প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসে এখানে হয় কুম্ভ মেলা। সাতক্ষীরা, যশোর, মেহেরপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল তো বটেই, ওপার বাংলা থেকেও ভক্তকুল মিছিল আকারে আসে ঢাক বাজাতে বাজাতে। লক্ষ লক্ষ ভক্তের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে মাদারীপুরের গণেশ পাগলা আশ্রম।
আবৃত্তিপাগল একজন সংগঠক উদ্ভাস-এর কুমার লাভলুর সঙ্গে অনেক ঘোরাঘুরি হলো এই শহরে। বড় নীরব এই শহর। যানজট নেই, ঠেলাঠেলি নেই, নেই শব্দদূষণের যন্ত্রণা। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁর বাঁধানো কূলে ‘শিশিরের শব্দের মতো সন্ধ্যা আসে’ পুরো দিনের ক্লান্তি মুছে দিয়ে হূদয়ে শান্তি জোগাতে। অনতিদূরে লঞ্চঘাটের আলোগুলো মায়ার ইশারা সৃষ্টি করে যেন। কুমার লাভলুর আমন্ত্রণে সুদৃশ্য শকুনী লেকের পারে স্বাধীনতা অঙ্গনে হাজির হই। ১৯৪৭ সালের দিকে এখান থেকে মাটি তুলে জমি উঁচু করে নতুন মাদারীপুর শহরের পত্তন করা হয়। লেকের চতুর্দিকের পরিধি ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার। তখন অসংখ্য শকুন থাকত এখানে। শকুনদের আবাস আজ শকুনী লেক।
স্বাধীনতা চত্বর হলো মাদারীপুরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সমাবেশের ক্ষুদ্র ময়দান। পাশেই মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন, জীর্ণ, সংকীর্ণ। নাটক তো দূরের কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করারও উপযুক্ত নয়। তবুও এর ভেতর নিয়মিত চলে সংস্কৃতির নামে প্রগতির চর্চা, ডাল-পালা মেলে মাদরীপুরবাসীর সুকুমার অনুভূতি। লেকের অপর পাড়ে শিল্পকলা একাডেমী ভবনে চলছিল একটি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। সীমা সাহা, জবা দে, রিতু, নিতু, প্রিয়াঙ্কার গানের জাদু ঢাকা থেকে আসা রহিমা, মিজান ও শহীদের মতো আমাকেও আবিষ্ট করে। পৃষ্ঠপোষকতা নেই, ভালো মিলনায়তন নেই, তাতে কী? আছে মানুষের ভালোবাসা, শিল্পের প্রতি, সৌন্দর্যচর্চার প্রতি মাদারীপুরের মানুষের অদম্য আকর্ষণ।
মাদারীপুরের পরিচিত মুখ, সাংবাদিক পলাশের কাছে জানলাম, শহরসংলগ্ন চরমুগুরিয়ার বানরগুলো ভালো নেই। খাদ্যাভাব চরমে উঠেছে এই প্রাণীগুলোর। জঠর জ্বালায় অস্থির ওরা বাড়ি-ঘরে অনুপ্রবেশ করে আজকাল। রান্নাঘর, শোবার ঘর ওলট-পালট করে খাবার খোঁজে। বানরগুলোর জন্য মায়া আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু আর কত সওয়া যায়। মাদারীপুর লিগ্যাল এইডের কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ‘এখন মানুষ নিজের মা-বাপরেই খাইতে দিতে পারে না, বানরদের কী খাওয়াইব?’ এর আগে বানরদের খাওয়ানোর জন্য সরকারি বরাদ্দ ছিল, এখন তাও বন্ধ। কেন বন্ধ, তা কেউ বলতে পারে না। অথচ এখনো চরমুগুরিয়ায় বানর আছে প্রায় আড়াই হাজার। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমায় চরমুগুরিয়ায় বানরের কাণ্ডকারখানা দেখতে। তারাই হাতে করে কলা, চীনা বাদাম ইত্যাদি নিয়ে যায়। বানরেরা তাই দর্শনার্থী দেখলে খুশি লুকিয়ে রাখে না। তবে বানরকে এভাবে খাবার দেওয়া ওদের জন্য কোনো বিপদ ডেকে আনবে কি না, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ কারও নেই। একবার আড়িয়াল খাঁর ওপারে বানরগুলোর জন্য বিকল্প অভয়ারণ্য গড়ে তোলার কথা শোনা গিয়েছিল। সে রকম কোনো বাস্তব উদ্যোগ আদৌ নেওয়া হয়েছে কি না জানা যায়নি। এখন এলাকাবাসী বানরের উত্পাত থেকে যেমন মুক্তি চায়, তেমনি চায় প্রাণীগুলোর বাসস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা। কেবল কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে উদাসীন।
মাদারীপুর থেকে ফেরার পথে দেখি, এম এম হাফিজ পাবলিক লাইব্রেরির ভেতর অনেক পাঠক একাগ্র পাঠে মগ্ন। বইপাঠের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যায়নি একেবারে। ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরি থেকেই পরিচালিত হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মাদারীপুর শাখার কার্যক্রম।
বইয়ের প্রসঙ্গ আসতেই স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রতন কুমার দাসের কাছে জানলাম ডা. আব্দুল বারি সম্পর্কে। তিনি ইতিহাসের এক জীবন্ত ভাণ্ডার। তাঁর দেখা না হলে নিভৃতে থাকা দেশের এই জ্ঞানী ব্যক্তির সম্পর্কে হয়তো কোনো দিন জানাই হতো না।
অন্ধকার চেম্বারে মোমের আলো জ্বালিয়ে ভক্ত-বন্ধুদের ইতিহাসের নানা সত্য শুনিয়ে যাচ্ছিলেন আব্দুল বারি। তাঁর কথা বলার সময় অন্য দিকে তাকানো বারণ, নোট নেওয়া নিষেধ; তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে মনোযোগ দিয়ে। বললেন, ‘নারীজাগরণে আপনাদের রংপুরের বেগম রোকেয়ার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু তাঁরও আগে, বাংলার নারী উন্নয়নে নবাব ফয়জুন্নেছা, কামিনী রায় বা আমাদের কুসুম কুমারীদের কথা আমরা একবারও উচ্চারণ করব না কেন! তেমনি ধরেন আজকে আমাদের ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার পেছনে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে ভুলতেই বসেছি।’ তাঁর ক্ষেদ, গান্ধীজির অহিংস আলোর ঝাপটায় নেতাজি হারিয়ে যাচ্ছেন। তাই তিনি বাংলায় নেতাজিকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বই লিখেছেন। গতানুগতিক জীবনীগ্রন্থ নয় এটি। তিনি বলেন, নেতাজিকে নিয়ে এটাই প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা বই। ৩৬৮ পৃষ্ঠার এই মূল্যবান বইটি প্রকাশ করেছে ঢাকার বিভাস। বইতে আছে নেতাজির জীবন, সংগ্রাম, বিশ্বাস ও আদর্শের চমকপ্রদ বিবরণ। বইয়ের পাতায় পাতায় আছে নেতাজিসহ তাঁর সহযোদ্ধা এবং তাঁর স্মৃতিবিজড়িত আসবাব, পোশাক, অস্ত্র, স্থান, দলিল, চিঠি ইত্যাদির অসংখ্য সাদা-কালো ফটোগ্রাফ। কত কষ্টই না করেছেন তিনি বইটি লিখতে! ঘুরেছেন এশিয়া-আমেরিকার নানা দেশ। কিন্তু রয়ে গেছেন মাদারীপুরে, মাটির টানে।
তিনি জানান, ‘আমি যা তার থাইকা বেশি কিছু লেখছি। এইটা কোনো নামকরা কেউ লিখলে লোকে আগ্রহ করে কিনত। তবে আমি বাজারে বেচতে চাই না। যারা সত্যিকারের ইতিহাস জানতে চায়, তাদের হাতে পৌঁছালেই খুশি হতাম।’ আরও বই লিখেছেন তিনি। বিস্মৃত বাঙালী, বাংলার নারী (৪৭ পূর্ব), অগ্নিযুগের বাঙালী বিপ্লবী ও বৃহত্তর মাদারীপুরের ইতিহাস প্রকাশের কাজ চলছে। ইতিহাস বয়ানের এক সহজ, সরল, আকর্ষণীয় ভাষা তাঁর আয়ত্তে। যেন কালের সাক্ষী কেউ গল্প শোনাচ্ছেন পাঠককে। কামনা করি, ডা. আব্দুল বারির বই ইতিহাসপ্রেমী মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যাক।
শান্ত নূরুননবী: লেখক ও উন্নয়নকর্মী।
No comments