তৃতীয় পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করছে বিশ্ব!

২০২৫ সাল। নতুন বছর। কিন্তু বিশ্ব ক্রমশ তৃতীয় পারমাণবিক যুগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অধিক পরিমাণের পারমাণবিক অস্ত্র, অধিক পরিমাণে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের হাতে থাকবে এসব অস্ত্র। অস্ত্রশস্ত্রের কোনো সীমা নাও থাকতে পারে। পারমাণবিক প্রথম যুগটি ছিল যথেষ্ট ভয়াবহ। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একে অন্যকে হাজার হাজার যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে মোকাবিলা করেছে। শীতল যুদ্ধের পরে দ্বিতীয় পারমাণবিক যুগ ছিল অপেক্ষাকৃত শান্ত। নাটকীয়ভাবে কমে গিয়েছিল পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ। তবে এ সময়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া। পারমাণবিক অস্ত্রের তৃতীয় যুগটি হতে পারে আরেকটি শীতল যুদ্ধের মধ্যে। এ সময়ে অধিক পরিমাণে বিশৃংখল পরিস্থিতি এবং আরও শত্রুতা বাড়তে পারে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর মধ্য দিয়ে নতুন পারমাণবিক যুগের একটি মাইলফলক হয়ে আছে রাশিয়া। চীনের প্রেসিডেন্টও তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে ২০২১ সাল থেকে সতর্ক করে আসছে পেন্টাগন। কিভাবে এসব হুমকির জবাব দেয়া হবে সে বিষয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন ২০২৫ সালে সম্ভবত আরও একটি উত্তেজনাকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

পারমাণবিক অস্ত্র সীমিত করার জন্য অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ বিষয়ক শেষ চুক্তিটির ‘নিউ স্টার্ট’ মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর রাশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি নিয়ে কোনো কাজ কি যুক্তরাষ্ট্রের করা উচিত? নিউ স্টার্ট চুক্তির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধান এরই মধ্যে স্থগিত করেছে রাশিয়া। এর প্রেক্ষিতে নতুন করে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির আশা খুব সামান্যই থাকে। এক্ষেত্রে চীনকে মানতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। একই সঙ্গে এ বিষয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপই বন্ধ করে দিয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো, পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ সম্ভবত কোনো আনুষ্ঠানিক সীমা দিয়ে আটকানো হবে না।
পুরনো দ্বিশক্তি বিশিষ্ট পারমাণবিক প্রতিযোগিতা আরও জটিল আকার ধারণ করবে। তা পরিণত হবে ত্রিপক্ষীয় প্রতিযোগিতায়। এক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীন খুব নিবিড়ভাবে একসঙ্গে কাজ করবে। একেতো পারমাণবিক অস্ত্রধার উত্তর কোরিয়া এবং সন্দেহ করা হয় যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম- এই দুটি দেশ আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে রাশিয়া ও চীনের। ট্রাম্পের অধীনে যদি দেখা যায় তারা পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে বাধা দিচ্ছে না, তখন অন্য দেশগুলোও পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে চাইবে। সৌদি আরব তো ঘোষণাই দিয়েছে যে, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হয় তাহলে তারাও পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হবে। নিজেদের মতো করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিষয়ে সম্প্রতি বিতর্ক হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়।

অন্যদিকে ইউক্রেনও ঘোষণা দিয়েছে তারা ন্যাটোতে যোগ দিতে না পারলে তারাও পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া প্রত্যেকের কাছে কমপক্ষে ৫০০০ করে পারমাণবিক অস্ত্র আছে। উভয় দেশই দাবি করে তারা নিউ স্টার্ট চুক্তির সীমাবদ্ধতাকে মেনে চলে। কৌশলগত এবং দূরপাল্লার বিষয় এর মধ্যে অন্যতম। উভয়েই ১৫৫০টি কৌশলগত অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং ৭০০ লঞ্চার- যেমন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, সাবমেরিন চালিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং দূরপাল্লার বোম্বার মোতায়েন করতে অনুমতিপ্রাপ্ত। অন্যদিকে ছোটখাট ‘ট্যাকটিক্যাল’ পারমাণবিক অস্ত্র ও বিভিন্ন রকম অস্ত্রের মজুদের বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। পেন্টাগনের প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, বর্তমানে চীনের কাছে আছে ৫০০ যুদ্ধাস্ত্র। তা ২০৩০ সালের মধ্যে এক হাজারের বেশি হতে পারে। ২০৩৫ সালের মধ্যে তা হতে পারে ১৫০০। অন্যদিকে বৃটেন, ফ্রান্স, চীন, পাকিস্তান, ইসরাইল এবং উত্তর কোরিয়ার কাছে আছে আরও ছোটখাট অস্ত্রশস্ত্র। এমন বাড়বাড়ন্ত সময়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছেও পারমাণবিক বাটন পছন্দের হতে পারে। তিনিও পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের উদ্যোগ নিতে পারেন। এর মধ্যে থাকতে পারে আধুনিক বোম্বার, সহ সাবমেরিন চালিত ক্ষেপণাস্ত্র, প্রভৃতি। কর্মকর্তারা এসব নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। এসব অস্ত্রের আপলোড করতে দ্রুতই সক্ষম হবেন এমন অনুমতি তাড়াতাড়ি নতুন প্রেসিডেন্টের কাছে চাইতে পারে পেন্টাগন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.